“এই রাস্তায়, এখান থেকে চারটা বাসার পর।”
পুলিশ অফিসার কেমন যেন ইলেকট্রিক শক খাওয়ার মতো চমকে উঠল। বলল, “দোতলা বাসটা? সামনে নারকেল গাছ?”
“জি।”
পুলিশ অফিসার বলল, “মাই গড!”
আম্মু ভয় পাওয়া গলায় বললেন, “কী হয়েছে?”
পুলিশ অফিসার বলল, “আমরা কেউ জানি না কী হয়েছে ঐ বাসায়। টপ সিক্রেট। আমাদের ওপর দায়িত্ব প্রটেকশান দেওয়া। আপনাদের জন্যে কন্ট্রোল টিম অপেক্ষা করছে।
“কোথায়?”
“আপনাদের বাসার সামনে একটা ট্রেইলারে কন্ট্রোল সেন্টার তৈরি হয়েছে। সেখানে। চলেন আমাদের সাথে।”
আম্মু বললেন, “আমাদের জিনিসপত্র?”
“আমরা দেখব।” তারপর যে পুলিশটা তাদের আটকানোর চেষ্টা করছিল তাকে বলল, “এই মালপত্রগুলো দেখে রাখো। খবরদার যেন কিছু না হয়।”
“হবে না স্যার।”
ঠিক তারা যখন পুলিশ অফিসারের সাথে হাঁটতে শুরু করবে তখন অন্য-তিতুনি আব্বুর হাত ধরে বলল, “আব্বু।”
“কী হলো?”
“রিকশা ভাড়া।”
“ও, তাই তো।” তাড়াহুড়াতে আব্বু রিকশা ভাড়ার কথা ভুলেই যাচ্ছিলেন। বড় একটা নোট দিয়ে ভাংতির জন্যে আর অপেক্ষা করলেন না, পুলিশ অফিসারের সাথে হাঁটতে শুরু করলেন।
বাসার সামনে যাওয়ার আগে আরো কয়েকটা ব্যারিকেড পার হতে হলো। সবার শেষে দুজন মানুষ দাঁড়িয়েছিল, তারা পুলিশ অফিসারটিকে থামাল। পুলিশ অফিসার বলল, “এই বাসাটিতে এই ফ্যামিলি থাকে।”
একজন মানুষ বলল, “ঠিক আছে, আমি দেখছি।” তারপর চারজনকে নিয়ে তারা ট্রেইলারের ভেতরে ঢুকে গেল।
আব্বু-আম্মু বা অন্য কেউ এর আগে কখনো এ রকম ট্রেইলারে ঢুকেননি। ভেতরে ঢুকে অবাক হয়ে গেলেন। দেখতে একটা বাসার মতো কিন্তু এই বাসার প্রত্যেকটা স্কয়ার ইঞ্চি যন্ত্রপাতি দিয়ে ঠাসা। যন্ত্রপাতির নিজস্ব একটা শব্দ থাকে, সেই শব্দের জন্যে ভেতরে একটা বিচিত্র চাপা শব্দ। ট্রেইলারের ভেতরে বসার বিশেষ জায়গা নেই। এর মাঝে দুইজন বিদেশিসহ কয়েকজন বসেছিল, আব্বু-আম্মুকে বসানোর জন্যে দুইজন উঠে জায়গা করে দিল।
আবু-আম্মু কিংবা টোটন কিছুই বুঝতে পারছিল না। শুধু অন্য তিতুনি পুরোটা জানে, তাকে ধরার জন্যে এই আয়োজন এবং সে নিজেই এখন তাদের সামনে বসে আছে। আব্বু বললেন, “এখানে কী হচ্ছে আমাদের একটু বলবেন?”
জিন্স এবং টি-শার্ট পরা মানুষটি কিছু একটা বলতে যাচ্ছিল তখন টিশটাশ মেয়েটা বলল, “দাঁড়াও। এখানে দুজন বাচ্চা আছে তাদের সামনে কথা বলা কি ঠিক হবে?”
জিন্স-টি-শার্ট পরা ছেলেটা বলল, “আমার মনে হয় পুরো ফ্যামিলির সামনেই কথা বলা উচিত। ফ্যামিলির বড় মানুষদের থেকে হয়তো ছোটরাই আমাদেরকে বেশি ইনপুট দিতে পারবে।”
টিশটাশ মেয়েটা তখন বিদেশি দুইজনের সাথে কথা বলল, তারা আবার নিজেরা নিজেরা গুনগুন করে কিছুক্ষণ কথা বলল, তারপর মাথা নেড়ে সায় দিল। তখন জিন্স আর টি-শার্ট পরা ছেলেটা কথা বলতে শুরু করল। গলা পরিষ্কার করে বলল, “আমি শামীম। ডক্টর শামীম। মহাকাশ বিজ্ঞানে আমার পিএইচ.ডি আছে। আমি আই.এস.এ.এল.-এ কাজ করি। আই.এস.এ.এল. হচ্ছে ইন্টারন্যাশনাল সার্চ ফর এলিয়েন লাইফ। আমাদের টিম লোকাল সাপোর্ট নিয়ে এখন আপনাদের বাসাটাকে ঘিরে রেখেছে। মডার্ন টেকনোলজির সর্বোচ্চ ইলেকট্রনিক্স সার্ভেলেন্স দিয়ে আপনাদের বাসাটা ট্র্যাক করা হচ্ছে।”
আব্বু অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলেন, “কেন?”
“আমরা সন্দেহ করছি আপনাদের বাসায় এই মুহূর্তে একটা এলিয়েন লাইফ ফর্ম ঘুরে বেড়াচ্ছে।”
আব্বু-আম্মু এবং টোটন একসাথে চিৎকার করে উঠল এবং চিৎকার করতেই থাকল। শুধু অন্য-তিতুনি চুপচাপ বসে থেকে সবার মুখভঙ্গি একধরনের কৌতূহল নিয়ে দেখতে থাকল।
জিন্স-টি-শার্ট পরা শামীম অন্য-তিতুনির দিকে তাকিয়ে বলল, “খুকি।”
“আমার নাম তিতুনি।”
“তিতুনি, তুমি বুঝতে পেরেছ আমরা কি বলেছি? আমরা বলেছি যে তোমাদের বাসায়–”
অন্য-তিতুনি বলল, “আপনারা কী বলছেন আমি বুঝতে পারছি। আপনারা বলেছেন আমাদের বাসায় একটা এলিয়েন আছে।”
টিশটাশ মেয়েটা বলল, “খবরটা শুনে তুমি একটুও অবাক হলে, তাই ভেবেছিলাম তুমি বুঝতে পারোনি।”
অন্য-তিতুনি বলল, “আমি অবাক হই নাই কারণ আমি এটা আগে থেকে জানি। এই এলিয়েন তিন দিন থেকে আমার সাথে থাকে।”
ঘরের ভেতরে একটা বোমা ফেললেও কেউ এত অবাক হতো। একসাথে সবাই চিৎকার করে উঠল। বিদেশি দুইজন অন্য তিতুনির কথা বুঝতে পারেনি বলে তাদেরকে কথাটা অনুবাদ করে দিতে হলো, তখন তারা দুইজন সবার চাইতে জোরে চিৎকার করে উঠল। সবাই অন্য-তিতুনিকে ঘিরে দাঁড়িয়ে যায়। সবাই একসাথে কথা বলতে থাকে, সবাই কিছু না কিছু প্রশ্ন করে। বিদেশি দুইজনও গলার ভেতর থেকে ঘর্ঘর ধরনের একটা শব্দ করে অন্য-তিতুনিকে কী যেন জিজ্ঞেস করল। অন্য-তিতুনি কারো প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে আম্মুর দিকে তাকাল, আম্মু জিজ্ঞেস করলেন, “তুই কী বলছিস এসব?”
অন্য-তিতুনি বলল, “সত্যি আম্মু। খোদার কসম।”
আবার সবাই প্রশ্ন করতে থাকে। অন্য-তিতুনি কারো প্রশ্নের উত্তর দিয়ে আবার আম্মুর দিকে তাকাল, আম্মু জিজ্ঞেস করলেন, “এত বড় একটা ব্যাপার, আমাদেরকে কিছু বললি না?”
অন্য-তিতুনি মাথা চুলকে বলল, “আমি ভাবছিলাম তোমাদেরকে বলব, কিন্তু তোমরা ব্যাপারটা কীভাবে নাও, কী মনে করো বুঝতে পারি নাই।”