বব কার্লোস অসহায় মুখ করে আমার দিকে তাকাল। আমি ভালো কাপড়-পরা দেশি মানুষটিকে বললাম, কি বলছি বুঝিয়ে দিন।
লোকটা ছুটে কাছে এসে হড়বড় করে বব কার্লোসকে ইংরেজিতে অনুবাদ করে দিতে থাকে। আমি চোখ পাকিয়ে বললাম, বিজ্ঞানী যদি খারাপ হয় সেটা খুব ভয়ঙ্কর, বিজ্ঞানীদের হতে হয় ভালো। কিন্তু তুমি ভালো না, তুমি খারাপ, অনেক খারাপ। তাই তোমার কাছ থেকে সব বিজ্ঞান সরিয়ে নেব আমি। আজ থেকে তুমি আর বিজ্ঞানের একটি কথাও জানবে না—একটি কথাও না তুমি হবে সাধারণ এক জন মানুষ।
বব কার্লোস ফ্যাকাসে মুখে হাতজোড় করে বলল, নো-না-না—
আমি ফিসফিস করে বললাম, টুকুনজিল—
কল।
ব্যাটাকে ঝুলিয়ে রাখতে কোনো কষ্ট হচ্ছে তোমার?
না। কোনো কষ্ট না।
বব কার্লোসের মাথাটা খালি করে দিতে পারবে? না পারলে থাক।
আগে কখনো করি নি। কপাল দিয়ে ঢুকে যাব, মস্তিষ্কের যে নিউরোনগুলোতে তথ্য আছে, সেগুলো খালি করে দিতে হবে। মনে হয় পারব।
দেখ চেষ্টা করে। আর যেন ব্যাটা পৃথিবীর কোনো ক্ষতি করতে না পারে।
পারবে না।
অনেক মানুষের হৈচৈ শোনা গেল। আমি বললাম, ব্ল্যাক মার্ডার, পালা এখন।
পালাব কেন? নান্টু গরম হয়ে বলল, পুলিশের কাছে ধরিয়ে দেব না?
ধরাতে পারবি না। পুলিশের বাবা ওরা কিনে রেখেছে। সময় থাকতে পালা। না হলে উল্টো ঝামেলায় পড়ে যাবি। আমার কথা শোন।
তাই বলে এত বড় বদমাইশ—
আর বদমাইশি করতে পারবে না। জীবনেও করতে পারবে না।
আমি তারিককে তুলে বললাম, টতে পারবি, তারিক?
পারব যত ব্যথা পেয়েছিলাম এখন আর সেরকম ব্যথা লাগছে না।
অনেক লোকজন দরজা খুলে ভেতরে ঢুকে গেল, অনেকে লাঠি হাতে এসেছে, কাকে ধরে দু’এক ঘা লাগাবে বুঝতে পারছে না। অনেক ভিড় হৈচৈ, তার মাঝে আমরা বের হয়ে গেলাম, কেউ লক্ষ করল না! কেমন করে লক্ষ করবে? ঘরের মাঝখানে একটা মানুষ শূন্যে ঝুলে আছে, তখন কেউ কি আর অন্যকিছু লক্ষ করতে পারে?
আমরা রাস্তা দিয়ে ছুটে যাচ্ছিলাম, পন্টু বলল, বিলু, তুই কেমন করে এতসব করলি? একেবারে যেন ম্যাজিক–
বলব, সব বলব। আগে তারিককে বাসায় পৌঁছে দে কেউ-এক জন। আর শোন্, আজ স্কুলে যা দেখেছিস ভুলেও কাউকে বলিস না। একেবারে সর্বনাশ হয়ে যাবে কিন্তু। বব কার্লোসের দলবল ভীষণ ভয়ঙ্কর, আমাদের সবাইকে কেটে নদীতে ভাসিয়ে দেবে, তবু কেউ কিছু করতে পারবে না।
সত্যি?
হ্যাঁ, সত্যি। আজ সবাই বাসায় যা। আমি বলব।
আমি বাসায় ফিরে যেতে যেতে ডাকলাম, টুকুনজিল।
বল।
বব কার্লোসের কী অবস্থা হল?
এখনো ঝুলিয়ে রেখেছি।
সে কী? কেমন করে? তুমি তো আমার সাথে কথা বলছ!
হ্যাঁ, তোমার সাথে একটু কথা বলি আবার ওখানে যাই—খুব তাড়াতাড়ি করতে পারি আমি। মাইক্রোসেকেন্ডে দু’বার ঘুরে আসি।
তাই তো, আমি ভুলেই গিয়েছিলাম। কী হচ্ছে এখন?
অনেক মজা হচ্ছে এখন। হা হা হা।
কি মজা হচ্ছে?
পুলিশ এসেছে। সবাই মিলে পা ধরে টানছে নামানোর জন্য।
নামাতে পারছে না?
না। কেমন করে পারবে? একটু তোমার সাথে কথা বলি, আবার ওখানে গিয়ে ধরে রাখি।
কতক্ষণ ধরে রাখবে।
বেশিক্ষণ না। খবরের কাগজ থেকে লোক আসছে। তারা আসার আগেই ছেড়ে দেব-বেশি জানাজানি না হওয়াই ভালো, কি বল?
হ্যাঁ।
খানিকক্ষণ পর টুকুনজিল বলল, ভারি মজা হচ্ছে এখন।
কি মজা?
প্যান্ট ধরে টানতেই প্যান্টটা খুলে এসেছে। লাল রঙের একটা আন্ডারঅয়ার পরে ঝুলে আছে এখন। ভারি মজা হচ্ছে। হা হা হা।
লোকজন কি অবাক হচ্ছে?
ভারি অবাক হচ্ছে। ছেড়ে দেব এখন?
দাও।
বিদেশিগুলো এখন টানছে। ছেড়ে দিচ্ছি।
দাও।
হা হা হা।
কি হল?
সবাই মিলে হুঁড়মুড় করে পড়েছে নিচে। ভারি মজা হল আজকে।
এখন কী হচ্ছে?
বব কর্লোস এদিক-সেদিক তাকাচ্ছে। তাকে এক জন জিজ্ঞেস করছে দুই-এর সাথে দুই যোগ করলে কত হয়, ভেবে বের করতে পারছে না। আবার তাকে সব শিখতে হবে। একেবারে গোড়া থেকে।
উচিত শিক্ষা হল। কি বল?
১৫. ফেরা
ছোট খালা আমাকে দেখে সরু চোখে তাকিয়ে বললেন, কোথা থেকে আসা হয়েছে লাটসাহেবের?
আমি কিছু বললাম না। ছোট খালা চিৎকার করে উঠলেন এবারে, কাল সারা রাত কোথায় ছিলি?
আমি এবারেও কিছু বললাম না। কী বলব ছোট খালাকে? বব কার্লোসের দল ধরে নিয়ে গিয়েছিল? টুকুনজিল আমাকে বাঁচিয়ে এনেছে? ছোট খালাকে এটা বিশ্বাস করানো থেকে মনে হয় মাথাটা কেটে হাতে নিয়ে নেয়া সোজা। আমি তাই সে চেষ্টা করলাম না, চুপচাপ দাঁড়িয়ে রইলাম।
কি হল, কথা বলছিস না কেন?
আমি মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে রইলাম।
অনেক শিক্ষা হয়েছে আমার। ভেবেছিলাম বুকুর জন্যে একটা কাজ করব, তোকে মানুষ করে দেব। লাভের মাঝে লাত হল কি? গ্রামের ছেলে শহরে এসে গুণ্ডা হয়ে গেলি। গুণ্ডা। একেবারে পরিষ্কার গুণ্ডা। সুযোগ পেলেই রাস্তায় গিয়ে মারপিট করে আসিস।
ছোট খালা একটু দম নিয়ে আবার শুরু করলেন, কাল সারা রাত কোথায় ছিলি? কোথায়? মদ-গাঞ্জাও কি খাওয়া শুরু করেছিস এই বয়সে? সারা রাত যে তোর ছোট খালু হাসপাতাল আর থানায় দৌড়াদৌড়ি করেছে, সেই খবর কি আছে? এখন ড্যাংভ্যাং করে লাটসাহেব বাড়ি ফিরে এলেন। বাপের বাড়ির বান্দী পেয়েছিস আমাকে যে তোর জন্যে রান্না করে বসে থাকব সারা রাত।
হঠাৎ টুকুনজিলের কথা শুনতে পেলাম, দেব থামিয়ে?
কেমন করে?
মস্তিষ্কের যে অংশে কথা বলার কন্ট্রোল, সেটা একটু পাল্টে দিলেই হবে। দেব?