সাক্ষাৎকার, মধ্যরাতে
উনিশশো ছিয়াশির মার্চ মাসে রাত বারোটায় কী উদ্বেল
কে যে কড়া নেড়ে
ভাঙাল আমার ঘুম, যদিও সুইচ টিপে বেল
বাজালেই হতো; প্রায় তেড়ে
এসে দেখি সুপ্রাচীন ধরাচূড়া নিয়ে একজন
আছেন দাঁড়িয়ে একা, আমার ফ্ল্যাটের দরজায়। আমি তাঁকে
‘ভেতর আসুন’ বলে সোফায় আসন
গ্রহণ করার আমন্ত্রণ জানালাম। পথের কুকুর ডাকে
নির্জন রাস্তাকে চমকিয়ে। ‘ঘোর কলি মহাশয়,
ছিনতাই হয়ে গেছে সর্বস্ব আমার’ বলে রাতের অতিথি
আড়চোখে আমার দৃশ্যমান যা বিষয়-আশয়
নিলেন নিপুণ দেখে। ভীতি
জাগে মনে, তিনি কি আমাকে শেষে তুখোড় তস্কর
ঠাউরে এলেন ফ্ল্যাটে? রত্নহার নাকি গজমোতি
হারালেন, অনুগ্রহ করে বলুন তো মান্যবর?
‘ওসব কিছুই নয়, সম্ভ্রমের সবুজিমা’, বলেন বিমূঢ় বিদ্যাপতি।
হৃদয় তোমার অপরাধ
হৃদয় তোমার অপরাধ নিয়ে কানাঘুষো চলে
নানান পাড়ায়, কলোনির ফ্ল্যাটে ফ্ল্যাটে, অপবাদ
দেয় অনেকেই, কারো কারো মনের জ্বলুনি বেড়ে
যায়, তেড়ে আসে মাস্তানেরা আর প্রকাশ্যে শাসায়
কেউ কেউ। কিছু তোমার বোধগম্য নয়, যদি
বলো, কারো হবে না বিশ্বাস, কেউ ছাড়বে না পিছু,
উপরন্তু চাঁই যারা, তারা তোমাকে সর্বদা মাথা
নিচু করে থাকবার দেবেন নির্দেশ। শেষমেশ
জলচল বন্ধ হবে; ক্রমে ‘ওর নির্বাসন চাই’
বলে স্লোগানের ধুম পড়বে রাস্তায় পুরো দমে।
আকাশে ফুটলে তারা বাগানে রক্তজবা,
হে হৃদয়, তোমার দু’চোখ জ্বলে ওঠে; অকস্মাৎ
কোনো তরুণীর মুখ দেখে শিরায় শিরায় জাগে
ঢেউ, তীব্র অনুরাগে তুমি পুড়ে যেতে যেত গান
গাও দীপকের সুরে-এটাই তো কসুর তোমার,
যতদূর জানি; নাকি খুব একা-একা থাকে, তাই
বরাদ্দ তোমার জন্যে কাঠগড়া! যেন সমাজের
ভরাডুবি তোমার সকল কাজে ভর করে আছে!
নিজের ভেতর থেকে কস্মিনকালেও মুছে যেতে
পারো না বলেই ক্রুদ্ধ তর্জনীর হয়েছ শিকার।