শেষ হবার নয়
বুঝেছ বাছাধন আছে সবই আমাদের আছ ঠগ
চোর ছ্যাঁচোড় পেটমোটা বাটপাড়
ঘোল খাওয়ানো ঠিকাদার দুঁদে
বদমাশ খুদে শয়তান বড় মাপের ইবলিস জাঁহাবাজ
মাস্তান ধান্দাবাজ বিপ্লবী আলখাল্লার
আড়ালে কাঠামোল্লা তল্লিবাহক কবি
কী নেই আমাদের আছে রঙ বেরঙের
লোভনীয় মন্ড ভন্ড পীর
আছে গলা-ফোলা ব্যাঙের মতো
ভাড়াটে স্তাবক তুখোড় নিন্দুক ঘুষখোর
আমলা মহাজনের সিন্দুক
সামনে মুখ করে প্রবল পিছনে হাঁটার নসিহৎ খয়রাতের
বাতাসা প্রাগৈতিহাসিক গুহা
অন্ধকারসদৃশ হতাশা আছে আরো আছে
আছে ঘূর্ণিঝড় জলোচ্ছ্বাস
দেশ ডোবানো বন্যা প্রাণ-কাঁদানো হাহাকার
আর উড়ে-আসা ত্রাণ সামগ্রী
মহামারীবৎ দুর্নীতি নকল দ্রোহ
মুমূর্ষ অর্থনীতি দারুণ ব্যবসায়ী লম্পট নিগ্রহপরায়ণ
ঠান্ডা মাথার খুনী শূন্য-কলস বিগ্রহ ঘূণে ধরা
গুণী নিশ্চরিত্র বুদ্ধিজীবী রাস্তার মোড়ে
মোড়ে উই ঢিবি
বলতে ভারি আহ্লাদ হচ্ছে এই সবকিছুই
অতিশয় উদ্বৃত্ত রপ্তানীযোগ্য ছোটখাটো
হত্যাযজ্ঞ আছে তাছাড়া আছে
বাছা-বাছা ব্যক্তিদের বেশুমার টাকা
ধার দেওয়ার ব্যাঙ্ক স্বদেশেরই মানুষ মারার এল-এম-জি
এস-এল-আর বোমারু বিমান ঝকঝকে ট্যাংক আছে
ইয়া শানদার সব পদক আরো
আছে ফর্দ শেষ হবার নয়
২৪।৬।৯০
সংখ্যালঘু
নড়বড়ে ঘরে ওরা ক’জন জিরোয়া। কারো কারো
নিশ্বাসের শব্দ শোনা যায়,
কেউ হাই তোলে, কেউ বাঁশিটিকে পাশে রেখে রুখু
চুল টানে অভ্যসবশত; কারো হাতে
দোতারা নিদ্রিত, কেউ তার বীণা বুকে
চেপে চোখ রাখে দরজার দিকে, তার
ঠোঁট ছুঁয়ে যায় প্রজাপতি, মনে পড়ে,
ক্ষণিকের চুমো খাওয়া। কেমন শূন্যতা-ছাওয়া হৃদয় এখন।
দত্যি-দানো রাজ্য ছেড়ে পালিয়েছে ভেবে তারা
স্বস্তিতে জিরিয়ে নিচ্ছে, অথচ এখনও
রুক্ষ পথে স্লান মুখে হেঁটে যায় বিপন্ন সুন্দর।
যে ব্যাপক অমাবস্যা নেমেছিলো, তার
বুকে জাগেনিতো মুকুটের মতো পূর্ণিমার চাঁদ;
ছন্নছাড়া পথে ছোটে প্রেতায়িত ঘোড়ার কংকাল।
ঢুলুনির আঠা চোখে, মাঝে-মাঝে এ ওর গায়ের
ওপর গড়িয়ে পড়ে, মালগাড়ির সামগ্রী যেন।
হঠাৎ বাতিটা উস্কে দিয়ে একজন
বলে বিচলিত কণ্ঠস্বরে,
‘জাগো, জেগে থাকো;
ভাল করে পরস্পর মুখ দেখে নিই।
অনন্তর এ ওকে ঝাঁকুনি দিয়ে বলে,
‘আমাদের সহযাত্রী বেশি বাকি নেই। স্নায়ু রোগে
কাতর হলে কি চলে? অসমাপ্ত পর্যটন; কায়ক্লেশে
হেঁটে চলা, বেঁচে থাকবার সাধ আছে, আছে আরও কত কিছু,
জাগো, জেগে থাকো, বিশেষত কৃষ্ণপক্ষে
লাল কমলের সঙ্গে জেগে থাকা চাই।
কে লাল কমল? সকলের চোখে মুখে আকুলতা;
এ ওর মুখের দিকে তাকায়, প্রত্যেকে জিজ্ঞাসার
প্রতিকৃতি; মীমাংসায় পৌঁছার আগেই আসমান
পিচকারি মেরে পথে ছড়ায় আবীর।
৪।৪।৯১
সতীদাহ
আমাকে বিশ্বাস করতেই হচ্ছে কোম্পানির আমলের
দু’জন গতায়ূ বর্ষীয়ান জ্যান্ত এক
যুবতীকে ধরে বেঁধে নিয়ে চলেছেন
ডিঙি নৌকায়। নদীতীরে
উন্মাদের দলের
আকাশ ফাটানো চিৎকার, বদরাগী
ঢেউয়ের চড়চাপড়ে
নৌকা টলমাটাল।
যুবতী হঠাৎ এক লাফে নদীর অগাধ পানিতে,
খড়ি-ওঠা কটমটে চারটি হাত
অবয়বহীন ওর দিকে ধাবিত; পার্থিবতা
গোধূলিবেলায় তাকে টেনে তুলে
পুনরায় ঢেউয়ের আছড়ায়। সে এখন
জলজ ফ্লেমে খুব আলু থালু,
দূরের বাঁশি তার উদ্ধার হয়েও
বিলীন অসারতায়।
জলন্ত চিতা থেকে পালিয়ে আখেরে টলটলে
শীতল চিতায়; কয়েকটি পাখি, মাছের ঝাঁক,
নৌকার গলুই, সন্ধ্যারাগ অবাক হয়ে দ্যাখে
চিরন্তন সতীদাহ।
২১।১১।৯০
আমাকে বিশ্বাস করতেই হচ্ছে কোম্পানির আমলের
দু’জন গতায়ূ বর্ষীয়ান জ্যান্ত এক
যুবতীকে ধরে বেঁধে নিয়ে চলেছেন
ডিঙি নৌকায়। নদীতীরে
উন্মাদের দলের
আকাশ ফাটানো চিৎকার, বদরাগী
ঢেউয়ের চড়চাপড়ে
নৌকা টলমাটাল।
যুবতী হঠাৎ এক লাফে নদীর অগাধ পানিতে,
খড়ি-ওঠা কটমটে চারটি হাত
অবয়বহীন ওর দিকে ধাবিত; পার্থিবতা
গোধূলিবেলায় তাকে টেনে তুলে
পুনরায় ঢেউয়ের আছড়ায়। সে এখন
জলজ ফ্লেমে খুব আলু থালু,
দূরের বাঁশি তার উদ্ধার হয়েও
বিলীন অসারতায়।
জলন্ত চিতা থেকে পালিয়ে আখেরে টলটলে
শীতল চিতায়; কয়েকটি পাখি, মাছের ঝাঁক,
নৌকার গলুই, সন্ধ্যারাগ অবাক হয়ে দ্যাখে
চিরন্তন সতীদাহ।
২১।১১।৯০
সর্বত্র কাঁটার ক্রোধ
একা আছি বহুক্ষণ খন্ড খন্ড বৈভবরহিত
চিহ্ন নিয়ে প্রয়াসের, যেমন বালক অসহায়
ব’সে থাকে নৌকা বানাবার অভিলাষে দোমড়ানো
মোচড়ানো কাগজের স্তুপে। আমি কি ভুলেছি মন্ত্র?
একা আছি নিদ্রাহীন খরার উত্তাপে, বর্ষণের
প্রতীক্ষায়; পুড়ে যায় মুখ, গাছের সবুজ আর
দগ্ধ পক্ষী কণ্ঠ, স্বেদ জমে পাথরের বুকে, হাওয়া
হঙ্কা, ধোঁয়া ওঠে কর্দমাক্ত জলাশয়ে অবিরত।
আমি শূন্য এতকাল পর প্রৌঢ়তার প্রান্তসীমা
ছুঁয়ে, কোন্ শাপে লুপ্ত মনোমুগ্ধকর রঙধনু
কণ্ঠের ভেতর? না কি নই আর ক্ষিপ্র চেষ্টাশীল?
ফুলের সংসর্গে কেটে যাবে বেলা, এ বিশ্বাস ছিল
প্রষ্ফুটিত, অথচ কাঁটার ক্রোধ সর্বত্র, শব্দেরা
উচ্চারণযোগ্য নয়, স্তব্ধতাই আরাধ্য এখন।
১৮।৬।৯১
সারমেয় সমাচার
ইদানিং কুকুর এবং মানুষের মধ্যে জোর
প্রতিযোগিতার স্পৃহা বেড়ে গ্যাছে অতিশয়, কেউ
কেউ নেড়ী কুকুরের চেয়েও অনেক বেশি ঘেউ
ঘেউ করে, কামড়াতে আসে, নোংরা করে ঘরদোর।
লেজ নাড়া আর পা চাটার কাজে এখন কুকুর
মানুষ অপেক্ষা ঢের পেছনে রয়েছে, লজ্জা পেয়ে
কুকুরেরা মধ্যপথে থেমে গিয়ে ‘মনুষ্য হুজুর
অনেক কামেল আপনারা’, ব’লে ঠুংরি ওঠে গেয়ে।
জগতে প্রসিদ্ধ বটে কুকুরকুলের প্রভুভক্তি;
প্রভুর জীবন রক্ষা করার তাগিদে অকাতরে
প্রাণ দ্যায় ওরা, কিন্তু মানুষেরা হুজুরের শক্তি
থাকে যতদিন ততদিন তাঁবেদার, তোলে ঘরে
সোনা দানা, আরো কত কিছু; প্রভুর গর্দান গেলে,
পেছন দরজা দিয়ে পালায় কৌশলে লাশ ফেলে।
১।৫।৯০