মানব তোমার কাছে যেতে চাই
মানব তোমার কাছে গড় হয়ে করেছি প্রণাম
ওই ধুলোঘ্রাণ নিয়ে, ওই ধুলোভারসুদ্ধ বুকে নিয়ে
আমি একবার তোমাদের আরো কাছে যেতে চাই
একবার ছুঁতে চাই সর্বমধ্যসীমা।
এ বুকে জমেছে বহু গ্রীষ্ম, বহু শ্যন্য গোলাকার একাকীত্ব
এতো একা ভালো নয়, এমন একাকী ভালো নয়
জনশ্যন্য ভ্রমণের নেশা ছেড়ে
আমি তাই মানবী সংসার তোকে করেছি প্রণাম
ওই সবুজ আহ্বান,নীল আমন্ত্রন,
টুলে বসে কোল জুড়ে উদোম শিশুর হিসি করা
বাদামের খোসা খুলে খুনসুটি, চেলেখেলা
কাঁটায় পশমবোনা, এইগুলি,
তোমাদের মানবী স্বভাব
পাহাড়ে টিলায় একা নির্জন ভ্রমণ ভুলে
এইবার তার কাছে আত্মসমর্পণ
এই ধুলোঘ্রাণ নিয়ে ধুলোভারসুদ্ধ বুকে নিয়ে
আমি একবার তোমাদের কাছে যেতে চাই
মানব তোমার অতি কাছে যেতে চাই।
মানুষ
মানুষ মানে জন্মতারিখ, কোষ্ঠীখাতা
বাসস্থান ও বধ্যভূমি
কাগজপত্র, ঘরগেরস্ত, পিতামাতা, নামঠিকানা
অন্যবিধ জাতিগোষ্ঠী আত্মীয়তা
স্ত্রী-পরিবার, নুনমরিচ ও খাদ্যদ্রব্য
মানুষ মানেই জীবনযাপন
এই একাকী বন্দীদশা!
মানুষ মানে হাতের পিঠে ওলটপালট
হিজিবিজি, লিখন
এসব ভাগ্যলেখা,
নদীর জোয়ার, চাঁদের ভাঙন,
চিরকালীন এ সমস্ত শীতসন্ত
ভুলভ্রান্তি
কান্নাকাটি, দুঃখসুখের দালানকোঠা
কৃষিকার্য, জমিজমা, শীতলশাদা বৃষ্টিধারা
হলুদ মাটি, সবুজ তৃণ,
এই বাড়িঘর, এই মনিষ্যি
বিদ্রোহ কি রণসজ্জা
মানুষ মানুষ ভুলভ্রান্তি!
মানুষ মানে আমরা তোমরা
মাথার চুল কি হাতের এ নখ
এই সর্বাঙ্গ চোখকান না জন্মকালীন
নগ্ন শরীর
মানুষ মানে মুখের আদল, এই
আমাকে দেখতে যেমন
আহার-নিদ্রা ঘোরাফেরা রাত্রিকালে
নীরব মৃত্যু!
মানুষ মানে আর কিছু নয়
হস্তাক্ষর ও নীল ফটোগ্রাফ!
মানুষের মধ্যে কিছু অভিমান থাকে
সব মানুষেরই মধ্যে কিছু অভিমান থাকে,
এইটুকু থাক, এইটুকু থাকা ভালো
এই অভিমান জমে জমে মানুষের বুকে হবে নক্ষত্রের জল।
মমতা মমতা বলো অভিমান তারই তো আকার
তারই সে চোখের আঠালো টিপ, জড়োয়া কাতান,
মমতা মমতা বলো অভিমান তারই একনাম
একদিন অভিমান জমে জমে
সব বুকে স্বর্ণখনি হবে ;
মানুষের মধ্যে কিছু অভিমান থাকে, চোখের
ভিতরে থাকে, হৃৎপিণ্ডে থাকে
তাহাকেই গোপনতা বলে, মানুষের মধ্যে
আরো মানুষের অবস্থান বলে,
কেউ কেউ ইহাকেই মানুষের বিচ্ছিন্নতা বলে
আমি তা বলি না
আমি বলি অভিমান, মানুষের প্রতি মানুষের শুধু অভিমান,
আর কিছু নয়,
এই অভিমানই একদিন মানুষকে পরস্পর কাছে এনে দেবে।
সব মানুষেরই মধ্যে কিছু অভিমান থাকে
অভিমান থাকা ভলো, এইটুকু থাক,
একটি নারীর প্রতি পুরুষের স্বাভাবিক অভিমান থাক,
শিশুদের প্রতি থাক, গোলাপের প্রতি
এই অভিমান থাক
নারী ও গোলাপ এই একটি শব্দের প্রতি
মানুষের সনাতন অভিমান থাক,
সব মানুষের মধ্যে কিছু অভিমান থাকে, সেইটুকু থাক।
স্পর্শ
তোমার শরীরে হাত আকাশ নীলিমা স্পর্শ করে
ভূমণ্ডল ছেয়ে যায় মধ্যরাতে বৃষ্টির মতন
মুহূর্তে মিলায় দুঃখ, দুঃখ আমাকে মিলায়
জলের অতল থেকে জেগে ওঠে মগ্ন চরাচর
দেশ হয় দেশ, নদী হয় পূনর্বার নদী
নৈঃশব্দ্য নিরুণ হাতে করতালি দেয়
নিসর্গ উন্মুক্ত করে সারাদেহে নগ্ন শরীর
কোন খানে রাখি তুলে দেহের বিস্তার
তোমার শরীরে হাত দীর্ঘতর আমার শরীর;
তোমার শরীরে হাত সূর্যোদয়, মেঘে রৌদ্র
জন্মান্তর আমার আবার;
তোমার শরীরে হাত একদিন, এই জন্মে শুধু একবার!
স্বভাব
আমি কি কিছুর মতো? কারো মতো? কোনো
সদৃশ বস্তুর মতো? যে
আমাকে মেলাবে,
সোনালি ঝর্নার সাথে, সবুজ বৃক্ষের সাতে,
নদী বা তারার সাথে?
আমি কি কিছুর মতো? শিশু ও শিল্পির মতো?
রদাঁর মূর্তির মতো?
হয়তোবা পাখি, হয়তোবা ফুল, হয়তো সে দরবেশ
আমি এ কিসের মতো?- যে
আমাকে মেলাবে;
চাঁদের বর্ণের মতো? টিয়ার চোখের মতো?
অরণ্যে শিলার মতো?
আমি ঠিক কিসের মতন
না ঝর্ণার সদৃশ, পাখির সমান, না বৃক্ষের তুলনা
আমি কি নদীর শব্দ, পাতার শিশির
নাকি কোনো যুবতীর রাঙা অভিমান!
আমাকে যা ভাবো, ধরো হাতের অঙ্গুরি
মেঘ, ভাঁটফুল, সিংহের আকৃতি,
আমি ঠিক কিসের মতন, কার মতো? কোনো
সদৃশ বস্তুর মতো?
আমাকে যা ভাবো, ধরো নদী, ধরো স্তল, ধরো অগ্নি,
আমি বস্তুত স্বভাব।