তখন সুবর্ণ হবে ঘাস
যাই হোক, কুসুম ঝরিয়া যাক, খুলে যাক শিশুর পালক
উজ্জ্বলতা তাহাও নিভিয়া যাক, জলরাশি হয়ে যাক খাঁখাঁ বালিযাড়ি
যাই হোক তাহার বিশ্বাস রাখো, একদিন পরিত্রাণ হবে
পরিশুদ্ধ হবে মাটি, জল, জলের
কুচ্ছিত মুখচ্ছবি, ছায়া,
সেই পীত নষ্ট জরে ফিরে পাবে বণৃহীন ঘ্রাণ
তাহার বিশ্বাস রাখো
চক্ষুষ্মান হবে সভ্যতার এই অন্ধ রাজা
বিবর্ণ গোলাপ পুনরায় আয়ুষ্মতী হবে
তখন সুবর্ণ হবে ঘাস, ঘাসের মহল।
যাই হোক চারদিক ছেয়ে যাক ক্রূর অভিশাপে
পাহাড় টলিয়া যাক, যাই হোক, রাখো, শুদ্ধ বিশ্বাস রাখো
একদিন অন্ধকার ভেদ করে আশাতীত সূর্যোদয় হবে
পরিশুদ্ধ হবে জল, মাটি, তারও মধ্যকার মজা প্রাণ
তাহার বিশ্বাস রাখো,
অভিভূত আদিম মানব হয়ে দেখো,
দেখো তিনি তো আগুন, তাহাকে বিশ্বাস করো, অগ্নিকে বিশ্বাস
করো, নতজানু হও
তাহাকে বিশ্বাস করো তিনি জল, বৃক্ষকে বিশ্বাস করো,
আগুনে বিশ্বাস রাখো, জলে রাখো,
জলের অতীত আরো সুদর্শন তাহাকে বিশ্বাস রাখো
শুদ্ধ বিশ্বাস রাখো একদিন শাপমুক্ত হবে।
তাই মিথ্যা বলা
তুমি ভয় পাবে, ভয়ে ভীত হবে বলে কোনোদিন
মৃত্যুর বর্ণনা করি নাই,
কোনো দুঃখের প্রসঙ্গ উত্থাপন
করি নাই, মুতি ম্লান হবে, তুমি অশ্রুসিক্ত হবে
তাই কোন রাজার দুলাল গেলো বনে, কোন
বৃক্ষের মাথায় হলো বজ্রপাত, কোনখানে ভূমিকম্পে
কতো মানুষের প্রাণহানি হলো
এসব কিছুই ব্যক্ত করি নাই, ব্যাখ্যা করি নাই।
তুমি লজ্জায় হেঁট হবে তাই বলি নাই কুৎসিত কাহাকে বলে,
পথের ভিক্ষুক, অন্ধ, অশ্লীল মাতাল
এসবের নামোল্লেখ করি নাই-
বলি নাই পৃথিবীর তিনভাগ জল মাত্র এক ভঅগ স্থল।
তুমি ভীত হবে, আতঙ্কিত হবে বলে বলি নাই দোজখ কেমন
সংসারের নিষ্ঠুরতা, নৃশংসতা কি কি
তুমি দুঃখ পাবে, মর্মাহত হবে বলে বলি নাই
পৃথিবীর তিন ভাগ জল মাত্র এক ভাগ স্থল।
সর্বদাই গোলাপের প্রতি চেয়ে তোমাকে বলেছি এই
পৃথিবী এমন
নির্দোষ পূর্নিমার প্রতি অঙ্গুলি নিদেৃশ করে
বলেছি এই পৃথিবী
এমনি শিশুর দিকে চেয়ে, সুন্দরের দিকে চেয়ে
বলেছি পৃথিবী এই এমন এমন;
তুমি ভয় পাবে, ভীত হবে বেল কোনো মৃত্যু, শোক
ও দুঃখের উচ্চারণ করি নাই,
এই সত্য কোনোদিন বলি নাই
পৃথিবীর তিনভাগ জল মাত্র একভাগ স্থল।
দক্ষিণ সমুদ্রে যাবো
দক্ষিন সমুদ্রে যাবো
একা যাবো, সমুদ্র সান্নিধ্যে যাবো
একা যাবো, একাকীই যাবো
সেখানে সমুদ্র গড়ে মাটির ত্রিপল খুলে
ছাউনি বিছাবো
জলেরই বিছানা হবে, কাঁথা হবে, পাড়সুদ্ধ হবে
হাতের মুদ্রায় ওই সবুজ বর্ষাতি
তাও হবে
আঙুলেই বাড়ির নকশা হবে,
চৌচাল মেলানো ওই দেয়াল কার্ণিশ হবে
সমুদ্র্লানের আগে
হাতের মুষ্টি খুলে ঝরোকা বানাবো।
দক্ষিণ সমুদ্রে যাবো কি কি আমি জাদু জানি
সমস্ত দেখাবো
সাগরবালিকা আসবে, উড়ন্ত মাছেরা আসবে
জলের মূর্তিও আসবে, ওরা আসবে,
সেখানে রঙিন জলে সকলের শরীর ধোয়াবো
ওই জলে গা ধুয়ে রমণী পুরুষ হবে, পুরুষ রমণী
আহা সে কেমন হবে? বেশ
হবে! ভালোই তো হবে।
আমি কি কি জাদু জানি
ওসব দেখাবো,
আঙুলে আরশি করে চাঁদের চেয়েও ভালো চন্দ্রিমা দেখাবো
নারীর চেয়েও নারী প্রতিমা দেখাবো
দক্ষিণ সমুদ্রে যাবো, সমুদ্রেই যাবো।
বদলবাড়ি চেনা যায় না
তোমার কালো চোখের মতো
পাল্টে গেছে বসতবাড়ি
উদোম চড়া, গাছগাছালি বট-বিরিক্ষ
ওলটপালট সারা বাড়ি একলা এখন,
বাড়ির মধ্যে কালো গাড়ি, এলোমেলো
ভাঙা চাঁদ ও শূলন্য তাঁবু,
শূনো বাড়ির চিহ্ন, চিহ্ন।
তোমার কালো চোখের মতো পাল্টে গেছে শহরতলী
শহরবাড়ি চেনা যায় না, চেনা যায় না
দেয়ালগুলি বদলে গেছে মাটির নিচে
লাল কবরে
শহরতলীর মধ্যে মিশাল এবড়োখেবড়ো
কালো গাড়ি, লাশভরা ট্রাক,
চেনা যায় না বসতবাড়ি, শহরতলী
চেনা যায় না।
তোমার কালো চোখের মতোই
চেনা যায় না, চেনা যায় না।
সারা বাড়ি, সারা শহর
মধ্যে মিশাল এবড়োখেবড়ো
বসতবাড়ি, সারা শহর
নাকাল বাতাস একা একা কেমন ভারী
চেনা যায় না বদলবাড়ি
ভরদুপুরে কোন উড়ো কাক।
ভালোবাসা মরে গেছে গত গ্রীষ্মকালে
ভালোবাসা মরে গেছে গত গ্রষ্মকালে
উদ্যত বাহুর চাপে, ধুলোমাটি কাদা লেগে গায়ে
শীতেতাপে ঝরে গেছে তার বর্ণ, মেধা
স্পর্শ করে আশি এই প্রেমহীন নারীর শরীর
মৃত চুল, উত্তাপবিহীন কিছু বয়সের ধুলো,
নীলাঞ্জনশোভিত নারীর মুখ
ফিকে থির পলকবিহীন
দুই চোখ খেয়ে গেছে পৌষের দুই বুড়ো কাক
তাহাকেই ধরে আছি, বেঁধে আছি
অসহায় স্তব্ধ আলিঙ্গনে ;
সহু বছরের এই রোদবৃষ্টিজলে, ঝড়ে, কুয়াশায়
নষ্ট হয়ে গেছে প্রেম, মুখের গড়ন তার, দেহের বাঁধন
অজন্তা মূর্তি লাস্য, শিল্পের মতন
সেই গূঢ় সম্ভষণ
তার কতোখানি বাকি আছে?অবশিষ্ট আছে?
তাহারা কি থাকে কেউ অনাদরে উপেক্ষায়
সারাদিনে একবেলা জলঢালা মৌন কেয়ারিতে
অজ্ঞাত নফর, তাহারা কি থাকে?
স্পর্শহীন, পরিচর্যহীন একাকী নিঃসঙ্গ আর কতোকাল
দগ্ধ হবে প্রেম।
মাটি দে, মমতা দে
তুলে যে এখান থেকে তরতাজা এই কালো ঘ্রান
আমি নিয়ে যাবো
উঠোনে রোপণ করা পুঁইশাক, সবজির গাঢ় সজীবতা
তুলে দে একটু মাটি, একটু মমতা দে, মমতা তুলে দে
আমি নিয়ে যাবো
আমি অভিমান ভুলে এসেছি মানুষ তোর কাছে
আমাকে তুই তুলে দে একটু মাটি, মাটি দে মাটি দে
আমাকে মন্ত্র দে, ধুলোয় ছড়ানো বীজ তুলে দে তুলে দে
আমি নিয়ে যাবো
করাঞ্জলি পেতে আছি বুক ভরে তুলে দে তৃষ্ণার জল
জলবন্দী অজ্ঞাত বর্ণের মাছ আমি নিয়ে যাই
আমাকে তুই তুলে দে তুলে দে
তুলে দে একটু মাটি,
মাটিতে ছড়ানো বীজ, কালো ঘাম,
কালো কৃষকের শ্রম,
আবার এসেছি ফিরে তোর কাছে মধুর মানব
আমাকে তুই মাটি দে মাটি দে
মাটির মমতা দে, মন্ত্র দে
তুলে দে তুলে দে!