কাছে আসো, সম্মুখে দাঁড়াও
কাছে আসো, সম্মুখে দাঁড়াও
খুব কাছে, যতোখানি কাছে আসা যায়,
আমি আপাদমস্তক দেখি তোমার শরীর
যেখাবে মানুষ দেখে, প্রথম মানুষ।
দেখি এই কাণ্ড আর ডালপালাখানি, ভিতর-বাহির
কতোটা পেয়েছে মাটি, কতোটা বা এই জলবায়ু
পায়নি শিকড়খানি, পেয়েছে কি তোমার প্রকৃতি?
কাছে আসো আরো কাছে, সহজেই যেন চোখে পড়ে
তোমার সূক্ষ্ম তিল, আঙুলের সামান্য শিশির
যেন দেখি তোমার সজল চোখ, তোমার মদির সলজ্জতা
দূরদৃষ্টি নেই মোটে, কেবল কেবল সন্নিকটে।
তুমি খুব কাছে আসো, খুব কাছে, ঠিকই খুব কাছে
যতোখানি কাছে এলে আর কোনো আড়াল থাকে না;
সকলেই দূরে আজ, তুমি খুব কাছে চলে আসো
দূর থেকে দেখে আমি কিছুই বুঝি না, বুঝি না।
এবার দেখতে চাই কাছে থেকে খুব কাছে থেকে
যেন ডালপালা, কাণ্ড, ফুল কিচুই না ফেলি,
দেখি সব আলো, সব অন্ধকার, সব,
কিন্তু যতোই নিকটে আসো অন্ধের কী আসে যায়।
কে চায় তোমাকে পেলে
বলো না তোমাকে পেলে কোন মূর্খ অর্থ-পদ চায়
বলো কে চায় তোমাকে ফেলে স্বর্ণসিংহাসন
জয়ের শিরোপা আর খ্যাতির সম্মান,
কে চায় সোনার খনি তোমার বুকের এই স্বর্ণচাঁপা পেলে?
তোমার স্বীকৃতি পেলে কে চায় মঞ্চের মালা
কে চায় তাহলে আর মানপত্র তোমার হাতের চিঠি পেলে,
তোমার স্নেহের ছায়া পেলে বলো কে চায় বৃক্ষের ছায়া
তোমার শুশ্রূষা পেলে কে চায় সুস্থতার ছাড়পত্র বলো,
বলো না তোমাকে পেলে কোন মূর্খ চায় শ্রেষ্ঠ পদ
কে চায় তাহলে বলো স্বীকৃতি বা মিথ্যা সমর্থন,
তোমার প্রশ্রয় পেলে কে চায় লোকের করুণা
বলো কে চায় তোমাকে ফেলে স্বর্ণমুদ্রা কিংবা রাজ্যপাট?
বলো না তোমাকে পেলে কোন মূর্খ অন্য কিছু চায়,
কে আর তোমার বুকে স্থান পেলে অন্যখানে যায়!
ছন্দরীতি
তোমাদের কথায় কথঅয় এতো ব্যকরণ
তোমাদের উঠতে বসতে এতো অভিধান,
কিন্তু চঞ্চল ঝর্ণার কোনো ব্যাকরণ নেই
আকাশের কোনো অভিধান নেই, সমুদ্রের নেই।
ভালোবাসা ব্যাকরণ মানে না কখনো
হৃদয়ের চেয়ে বড়ো কোনো সংবিধান নেই
হৃদয় যা পারে তা জাতিসঙ্ঘ পারে না
গোলাপ ফোটে না কোনো ব্যাকরণ বুঝে।
প্রেমিক কি ছন্দ পড়ে সম্বোধন করে?
নদী চিরছন্দময়, কিন্তু সে কি ছন্দ কিছু জানে,
পাখি গান করে কোন ব্যাকরণ মেনে?
তোমারাই বলো শুধু ব্যাকরণ, শুধু অভিধান!
বলো প্রেমের কি শুদ্ধ বই, শুদ্ধ ব্যাকরণ
কেউ কি কখনো সঠিক বানান খোঁজে প্রেমের চিঠিতে
কেউ কি জানতে চায় প্রেমালাপ স্বরে না মাত্রায়?
নীরব চুম্বনই জানি পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ ছন্দরীতি।
পটভূমি পাল্টে যায়
পাল্টে যায় পটভূমি, কবিতার থীম,
মর্মতল কেঁপে ওঠে, নামে বর্ষা, হিম।
রৌদ্র-আলো নিভে যায় নেমে আসে মেঘ
হঠাৎ আগুন জ্বলে, ফুরায় আবেগ,
ফুলদানি ভেঙে যায় নামে অন্ধকার
অনন্ত শূন্যতা ছাড়া কিছু নাই আর।
সামান্য আগেও ছিলো এইখানে ফুল
মুহূর্তে বর্ষণ-মেঘে ভাসলো দুকূল,
আবার কখন দেখি জেগে ওঠে চর
ভালোবেসে মানুষেরা বাঁধে এসে ঘর।
কিন্তু ফের ঘর ভাঙে, ঘনায় বিচ্ছেদ
গোলাপের বনে দেখি জমে ওঠে ক্লেদ,
বুকভরা ভালোবাসা হয়ে যায় হিম
কেঁদে ওঠে মর্মতল, পাল্টে যায় থীম।
বর্ষার কবিতা, প্রেমের কবিতা
বৃষ্টির কথা থাক, বিরহের কথা বলি
শুনাই দুজনে বিদ্রাপতির বিষণ্ন পদাবলী,
বর্ষার কথা থাক, বকুলের কথা বলি
ঝরা বকুলেই ভরে রাখি এই প্রশস্ত অঞ্জলি।
আকাশের কথঅ থাক, হৃদয়ের কথা শুনি
যদিও বিরহ তবু মিলনের স্বপ্নজালই বুনি,
অশ্রুর কথা থাক, আবেগের কথা শুনি
সহস্র রাত কেটে যাক দূর আকাশের তারা গুনিব।
গরিমার কথা থাক, বিনয়ের পাঠ ধরি
কলহের কোনো কাজ নেই, কিছু করুণার গান করি।
বিদ্যার কথা থাক, প্রেমের কবিতা পড়ি
চারদিকে এই জলধারা তবু সৃষ্টির দ্বীপ গড়ি।
বাঁচবে না কবির হৃদয়
তোমার দেখা না পেলে একটিও কবিতা হবে না
দুই চোখ কোথাও পাবে না খুঁজে একটি উপমা,
কবিতার পান্ডুলিপি হবে দগ্ধ রুক্ষ মরুময়
তোমার দেখা না পেলে কাটবে না এই দুঃসময়।
তোমার দেকা না পেরে সবখানে গোলযোগ হবে
দুর্ঘটনা, যানজট, বিশৃঙ্খলা বাড়বে কেবল,
সর্বত্র বাড়বে রোগ, অনাবৃষ্টি আর দীর্ঘ খরা
প্রত্য বাধবে শুধু কলহ-কোন্দল আর যুদ্ধ-হানাহানি
তোমার দেখা না পেলে হবে শুষ্ক এই জলাশয়,
তোমার দেখা না পেলে বাঁচবে না কবির হৃদয়।
মর্মমূল ছুঁয়ে যায়
মর্মমূল ছুঁয়ে যায় পুরনো সেই গান,
হঠাৎ যেন ঝলসে ওঠে গোপন অভিমান;
পথের ধারে কখন ফোটে অচেনা সেই ফুল
হয়তো তাকে চিনতে আজো তেমনি করি ভুল;
মর্মমূল ছুঁয়ে যায় হারানো সেই মুখ,
স্মৃতি আর স্বপ্নে তাই কাঁপছে আমার বুক।
যতো দুঃখ দেবে
তোমরা আঘাত দেবে আমি গোলাপ ফোটাবো
তোমরা দুঃখ দেবে আমি কেন দুঃখে গানও গাইবো না?
যতোই আগাত দেবে ততোই ফোটাবো আমি ফুল
ততোই দুহাতে আমি মাখবো এই আকাশের আলো।
আমাকে দুঃখ দেবে আমি আরো লিখবো কবিতা
আমাকে আঘাত দেবে আমি আরো যোগ্য হবো তাই,
আমাকে জ্বালাবে যতো আমিততো পুড়ে হবো খাঁটি
দুঃখের দীর্ঘ পথ আমি ঠিকই পাড়ি দেবো।
ভেবো না দুঃখ দিলে আমি কোনো ফুল ফোটাবো না
বেবো না আগাত দিলে আমি কোনো কবিতা লিখবো না,
আমাকে দুঃখ দেবে আমি তাতে পরাস্ত হবো না
যতো দুঃখ দেবে আমি ততো লিখবো কবিতা।