মানুষই মহৎ শিল্প
এতো ধ্বনিময় কণ্ঠ আমি কখনো শুনিনি কোনো
পাখিদের কাছে
কোনো নদী এমন মধুর কলগীতি
শোনায়নি আর কোনোদিন
যা এই শুনেছি আমি চিরদিন মানুষের মুখে
এতো প্রিয় সম্বোধন, এমন হৃদয়বোধ্য ভাষা
কেবল মানুষ ছাড়া কারো কাছে পাইনি কখনো!
এই যে নীলিমা সেও মানুষের মতো এতো স্নেহ
কভু ঝরাবে না
এই যে প্রকৃতি সেও কারো দুঃখে হবে না তো এমন কাতর,
বুক পেতে এমন আঘাত নেবে, হাত পেতে বিষ
কেবল মানুষ ছাড়া আর কোনো
প্রাণী কি উদ্ভিদ কেউ নেই!
কোনো গোলাপের বুকে এতো কোমলতা আমি
কখনো দেখিনি
যা এই দেখেছি আমি চিরদিন মানুষের বুকে!
মানুষের হৃদয়ের মতো এমন সবুজ তৃন
তৃণক্ষেত্র ফোটেনি কখনো
চোখের জে
লর মতো এতো আর্দ্র
কোনো শিশির দেখিনি ঝরে রাতে,
এতো হৃদয়সম্পন্ন কোনো নিবিড় বকুল
আমি পাইনি কোথাও
এমন বেদনা শুধু দেখেছি তো মানুষেরই বুকে
দুঃখে সুখে তাই বারবার ফিরে যাই মানুষের কাছে!
এতো অনুভূতিময় চোখকোনো ভাস্কর্যেরও চোখে আমি
ককনো দেখিনি
কোনো কুসুমের দিকে চেয়ে দেখিনি তো এমন বিষাদ
যা এই দেখেছি আমি চিরদিন মানুষের চোখে
শিল্পের অধিক কিচু দুঃখের অনল!
মৃত্যুর প্রাচীন ভাষ্য
কোনো কোনো মুহূর্তে এই মৃত্যুও হয়ে ওঠে জীবনের গূঢ় অভিষেক
আরো গভীর বাঙ্ময়। সে-মৃত্যু প্রার্থনা করি, সে-মৃত্যু প্রণাম করে যায়
একদিকে তুমি, একদিকে মৃত্যুর মৌনতা যেন বৃক্ষের ছায়ায় আরো
শুদ্ধ পুণ্যশীল
আলোর উপরে আরো কোনো অপার্থিব রোদ এসে
করে যায় সবুজ মার্জনা;
দুধারে পথের পাশে নাম লিখে যাওয়া তো মূর্খতা
মানুষে পথিকে তবু জেনেশুনে রেখে যায় নিজস্ব নিশানা! তারা
নিলামে ওঠেনি!
মৃত্যুর পরেও কিছু সুখ, কিছু প্রাপ্য, কিচু নিশ্চিত ভোগের
আমি হাসিমুখে রেখে যেতে পারি
তাহলে কি নিয়ে যাবো মৃত্যুই মৃত্যুতে? আমি মূর্খদৃঢ় শারীরিক
যদি মরি পৃথিবীরই সুখে মরে যাবো।
একদল কেশরফোলানো সিংহ, মহিষের ক্রূর কালো খাঁক
কিংবা কোনো তারও চেয়ে অজ্ঞাত অনাম্নী অতিশয়
সূর্যের ভিতরে আরো এক লক্ষ বাদামী অশ্বের ছুটোছুটি, ধুলো
অন্ধকার
এভাবে মৃত্যু কি যেতে হবে কতো দূরে, কতো কাছে, কতোটা সংজ্ঞায়!
আমি জানি সে-দূরত্ব শুধু এ স্িমৃতির অতীত আরো অশেষ অগাধ,
কখনো কখনো তাই বাস্তবিক ভয় পাই ঘর ছেড়ে তাঁবুতে লুকাই
বলি মৃত্যুতে যাবো না তার চেয়ে এসো খেলা করি
এসো মধ্যরাতে অজ্ঞাত রাস্তায়
নেমে কোলাকুলি করি, সে-সময় মাথার উপরে আরো বৃষ্টি হবে
গাঢ় মমতায়
এইভাবে স্নান করে এইভাবে ঋণী হয়ে জন্মের দূলত্বে চলো যাবো।
এইখানে ধুলোস্পর্শী পৃথিবীর মায়অ এসে পড়ে
অনন্ত সূর্যাস্ত দেখি কী প্রাচীন কী গভীর কমলালেবুর
মতো মধুর মায়াবী
এভাবে মৃত্যুকে দেখি তার সঙ্গে এভাবেই জানা এভাবেই মৃত্যু
আত্মীয়
আমাদের জানালার ধারে এসে কথা বলে যায়,
করে পরম আদর, অন্য কেউ ভাবে নিতান্ত অস্পৃশ্য
তাকে মৃত্যু শিশুর মতোই গালে-মুখে চুমু খায়, ডাকে।
সে-এক মুহূর্ত আসে সে-এক তন্ময়
মধ্যরাতে ফুটপাতের অজ্ঞাত কংক্রিট তারও চোখে ঝরে জল
ধীরে ধীরে কাছে আসে মৃত্যু কোনো প্রিয় কি পথিক!
যদি কবিতা না লিখি
যদি এক পঙ্ক্তি কবিতা না লিখি আমি আজ
তাহলে হযতো কাল অমন সুন্দর রাঙা ভোর এসে
দাঁড়াবে না তোমাদের ঘরে
ফুটবে না অভিমানে কোনো জুঁই, শিউলি, বকুল!
হয়তো আকাশ কালো কুয়াশায় রাখবে নিজের মুখ ঢেকে
দেখা যাবে হাঁটুর ভিতরে তারা মাথা গুঁজে মনঃক্ষুন্ন বসে
আছে গাছ,
সারারাত একফোঁটা ঝরেনি শিশির
ভীষণ তৃষিত তৃণ, লতাগুল্ম বিষণ্ন সবাই
কারো মুখে কথা নাই, মেঘেদেগর রঙ বড়ো ফিকে!
পাখিরা ভুলেছে তার গান, নদী কলতানহীন
এমনিক শিশুরা তাদের সব মনোরম প্রাতঃরাশ পরিহার করে
আর মর্নিং ইস্কুল রম্য খেলাধুলা ছেড়ে চলে যায়,
কবিতা না লিখি যদি আজ তবে
হয়তোবা বিজ্ঞানসম্মত এই বিমানও উড়বে না কাল ভোরে,
ওষুধ হারাবে তার ক্রিয়া, গোলাপও গোলাপ
থাকবে না!
এই যে পরস্ত্রী এতো প্রিয় সেও আকর্ষণ হয়তো হারাবে
চাঁদ হবে রুগ্ন ও পীড়িত
ফুল রুক্ষ টিলা!
আমার কবিতা ছাড়া একটি শ্রমিকও তার কাজে যাবে না যে!
কবিতা না লিখি যদি তবে
সংসারের স্বাভাবিক গতি রুদ্ধ হবে!
শীতের সেবায় তবে সেরে উঠি
আমার অসুখ নেই আর ; কাল সারারাত
থোকা থোকা মৃত্যু পান করে আমি সুস্থ হয়ে গেছি
আর কোনো অসুস্থতা নেই আজ,
আজ ভালো আছি!
এই হাসপাতালও ভালো আছে বেশ
দিব্যি সেজেগুজে পরেছে গাউন, আর গুনগুন সারাক্ষণ লেগে
আছে ঠোঁটে
আভা আলমের সব গান কেউ কি ক্যাসেট ভরে
রেখেছে এখানে
মৃত্যুর মৃন্ময় মুক থেকে ঝরে সেই ব্যথিত বিহ্বল
প্রিয়হীন কান্না শুনে মনে হয় গান বাজে, পরিচিত গান
আত্মা সে অসুখ থেকে উঠে এসে অনন্তের পাত্র ভরে
মৃত্যু করে পান।
এতো অসুস্থতা এইখানে ভালোবেসে বাসা বেঁধে আছে,
এই আরোগ্যআবাসে
কতোবার মৃত্যুর মর্মর ধ্বনি শুনি
দেখি পায়ে তার পরেছে নূপুর, করিডোরে
ব্যালে কি মাথুর
আর তারই ফাঁকে কখন যে কার ঘরে
লাস্যময়ী মৃদু নক করে!
এই হাসপাতালবাড়ির অলিন্দে উঠোনে টবে
এতো ফুলের স্বাসে’্যর শোভা
এতো স্বাস্ত্যকর ফল, এতো ডেটলের বিশুদ্ধ সৌরভ, এতো
সঞ্জীবনী ওষুধের ঋতু
আর আমি অসুস্থ থাকবো না। আমি সেরে উঠি
আমি অসুস্থ থাকবো না।
অসুস্থতা সেরে ওঠো। শীতের শুশ্রুষা পেয়ে
ভালো হয়ে ওঠো
হাসপাতলনিবাস হলো বেশ দীর্ঘ মনোরম, চলো যাই,
চলো ফিরে যাই
কাষ্ঠ আহরণে সেই এসেছি কখন,
কতো বেলা হলো
অবসাদবোধ আর মোহমূর্ছা ছিলো কিচু আগে
এখন শরীরে আর ব্যাধির স্পর্শ নাই, ভালো হয়ে গেছি।
শীতের সেবায় তবে সেরে উঠি, ভালো হই,
সুস্থ, প্রবাহিত হই!