জাহাজের মতো
জাহাজ যেমন ডাকে সেইভাবে ডাক দিও তুমি
তোমার ছাড়ার আগে একবার হর্নখানি দিও
সকল বন্ধন ছিঁড়ে তোমার বন্ধন তুলে নেবো,
একটি সামান্য ব্যাগ কিংবা তাও ফেলে দিতে পারি।
তুমি তো জাহাজ নও জলের টিকিট কেন নেবে
অধিক ইলিশপ্রিয় ছিলে যদি জলে বাসই ভালো
তবুও পারো না তুমি, দূরের জাহাজখঅনি পারে।
আমার জন্মের আগে জল ছিলো জাহাজও কি ছিলো?
হয়তো এমনি ছিলো সমুদ্রের স্বাভাবিক সাঁকো
হয়তো এমনি ছিলো সমুদ্রের স্বাভাবিক সাঁকো
মানুষের কিছু নেই ঘরবাড়ি জলেরই তো পাড়ে,
তুমি যদি ডাক দাও জাহাজের ডেক খুব প্রিয়।
ডেকে তো উদ্ভিদ নেই জলের উদ্বেগ কিছু আছে
তবু তো উদ্বেগ আছে দূরের জাহাজখানি জানে
তুমি তো ডাকোনি কাছে, ভালোবেসে জাহাজই ডেকেছে!
তোমার ব্যাকুলতাগুলি নিয়ে
কখন যে এভাবে তোমার ব্যাকুলতাগুলি ভরে দিয়োছো
আমার বাক্সে
হয়তো মনের ভুলে শীতবস্ত্রের সাথে এ-কনকচাঁপার ঝাড়
আর সঙ্গোপনে চোখের জলের এই উদাত্ত ফোয়ারা!
বার্লিনে তোমার এই ব্যাকুলতাগুলি দিয়ে আমি কী করবো!
এতো মনোযোগ দিয়ে তুমি কিনা শেষে সব ভুল দ্রব্যে
ভরে দিলে এই বাক্স
কোথায় শীতের জামা দেবে কিচু এতো দেখি কেবল আমার
বাক্সভর্তি দাউদাউ করছেসবুজ,
ডালা খুলে তাকাতেই একঝাঁক রাঙা মেঘ আর শাদা জুঁই
আমাকে বিহ্বল করে তোলে।
কোথায় তোমার টুথব্রাশ আরে শেভিং ক্রীম কোথায় সেন্টের শিশি
সোপকেস জুড়ে কী শাদা গোলাপ ফুটে আছে,
কোথাও তোমার আশঙ্কায় আঙুল কেঁপেছে কোথাও উলের
গেঞ্জিটির পাশে পড়ে আছে একগুচ্ছ ভীরু চুল
কতোবার যে লুকাতে চেয়েছো তোমার কান্না
আর তুমি তো জানো না তখনই যে কীভাবে শিশিরসিক্ত হয়ে
উঠেছে রুমাল!
বার্লিনে তোমার এই ব্যাকুলতাগুলি নিয়ে আমি কী করি!
আমার এ-উদাসীন বাক্সের ভিতর কখন যে তুমি
এই প্রজাপতিটিকে বসিয়ে রেখেছো
জামার ভাঁজের নিচে দেখি গুনগুন করছে মৌমাছি,
বাক্সে হাত দিতে সাহস করিনে আর
পাছে বিজন ঘুঘুর কণ্ঠে কোনো উদাস দুপুর বেজে ওঠে
তুমি আর কিছুই পেলে না
খুঁটে খুঁটে এইসব বেদনায় ভরে দিয়েছো আমার বাক্স!
আর একি বিদেশী মুদ্রাই বা কই
তোমার ভালোবাসার ব্ল্যাঙ্ক চেকখানি বাক্সের তলায়
এককোণে কেমন অযত্নে পড়ে আছে!
অবশেষে তুমি কখন যে একখানি বাংলাদেশের আকাশ
এমন নিখুঁত ভাঁজ করে ভরে দিয়েছো আমার বাক্সে
আর তোমার এ-ব্যাকুলতাগুলি, বলো তো বার্লিনে এই নিয়ে
আমি কী করবো!
দেশপ্রেম
তাহলে কি গোলাপেরও দেশপ্রেম নেই
যদি সে সবারে দেয় ঘ্রাণ,
কারো কথামতো যদি সে কেবল আর নাই ফোটে রাজকীয় ভাসে
বরং মাটির কাছে ফোটে এই অভিমানী ফুল
তাহলে কি তারও দেশপ্রেম নিয়ে সন্দেহ উঠবে
চারদিকে!
গাছগুলি আদেশ অমান্য করে মাঝে মাঝে
যদি তোলে ঝড়
অতঃপর তাকেও কি দেশদ্রোহী আখ্যায়িত
করে ফেলা হবে!
যদি তারা বাধ্যানুগতের মতো ক্ষমতাকে
না করে কুর্নিশ
তাদের সবুজ শোভা বরঞ্চ বিস্তৃত থাকে
নিষেধের বেড়া ভেদ করে
তাহলে কি গাছগুলি দেশপ্রেম বর্জিত বড়োই!
পাখিরা কি পুনরায় দেশপ্রেম শিখবে সবাই
আর তাই তাদের নিজস্ব গান ছেড়ে তাদেরও শিখতে হবে
দেশাত্মবোধক গানগুলি
যদি তারা অসীম আকাশে উড়ে মাঝে মাঝে ভুলে যায়
আকাশের ভৌগলিক সীমা
তবে কি নীলিমা তারও দেশপ্রেম নিয়ে প্রশ্ন
তুলবে এমন?
কিংবা এ-আবহমান নদী কতোটা দেশকে ভালোবাসে
কোনো ভাবোচ্ছ্বাসে তাও কি জানাতে হবে তাকে?
যদিও সে কখনো কখনো ভাঙে কুল, ভাসায় বসতি
তা বলে কি এই নদী দেশপ্রেমহীন একেবারে?
কোকিলও কি দেশদ্রোহী যদি সে আপন মনে কারো
নাম ধরে ডাকে
কুলও দন্ডিত হবে যদি কেনা সেও কোনো নিষিদ্ধ কবরে
একা নিরিবিলি ঝরে
আর এই আকাশও যদি বা তাকে অকাতরে দেয় স্নিগ্ধ ছায়া,
তাহলে কি আকাশেরও দেশপ্রেম নিয়ে কেউ
কটাক্ষ করবে অবশেষে!
দৈন্য
কিনেছি অনেক দামী উপহার
বহু মনোহর কাগজের ফুল;
ভালোবাসা দিয়ে হয় নাই কেনা
একখানি মেঘ একটি বকুল!
জমাজমি আর গৃহ আসবাব
অধিক মূল্যে করে রাখি ক্রয়,
শুধু কিনি নাই কানা কড়ি দিয়ে
একজোড়া চোখ একটি হৃদয়!
পাখির শয়ন
কতোটা সতর্ক হয়ে জল হয় মেঘের শরীর, ক নিয়মে
মুয়ে থাকে পাখি
ঘাসে, পুরু বাতাসের ভাঁজে, খোলা পুষ্প পল্লবের ছাদে
এই তো পাখিরা বেশ, হিংসা দ্বেষ কিছু নেই তার।
পাখি বড়ো স্বভাব সজ্জন মেলে আছে শরীরের সীমা
কেমন উদাস নগ্ন ওরা পাখি, তাই মানে অরণ্য-আবাস
এমনটি শব্দ আছে পাখির শয়ন বলো
ভেঙে যাবে ভয়ে!
পাখি তো শয়ন করে যেভাবে জলের বেগ কোনোখানে
হয়ে যায় নম্র নতজানু
যে নিয়মে বৃক্ষের শরীর ফেটে জন্ম নেয় ফুল
দেহের সমস্ত লজ্জা খুলে দিয়ে সেভাবে শয়ন করে পাখি।
ওরা তো শয়ন জানে, শয়নের লজ্জা তাই নেই!
কীভাবে চোখের নিচে অনায়াসে ধরে রাখে ঘুমের কম্পন
ওরা পাখি, সুখূ ওরা
সবুজ শব্দের চিহ্ন পান করে চলে যায় কুয়াশার
গাঢ় কোলাহলে
এই তো শয়ন এই পাকিরই শয়ন
আমার চেয়েও ভালো শুয়ে থাকে পাখি!
এই তো শয়ন শিল্পরীতি, পাখিরাই জানে!
মলয়ের মৃত্যুতে কয়েক পঙ্ক্তি
বলেছিলে চিঠি দিও, চিঠি দিই নাই
তোমাকে না-লেখা চিঠি প্রত্যহ পাঠাই!
তুমি কি পাও না তবে, বোঝো না কি ভাষা,
লেখা কি অস্পষ্ট খুবই! কিন্তু ভালোবাসা
তাও কি যায় না পড়া? বানান কি ভুল?
নদী বয় পাখি গায় তবু ফোটে ফুল!
তুমি কি এতোই দূরে এইসব স্মৃতি
তোমাকে দেয় না কভু অনন্ত উদ্ধৃতি?
লোকে বলে মৃত তুমি আমি দেখি নাই
আমার না-দেখা দিয়ে তোমাকে সাজাই
বন্ধু প্রিয়, জীবনের সঙ্গী প্রতিদিন,
আমাদের কোনো স্মৃতি হয়নি মলিন।
তোমার রুপালি মুদ্রর রেখে গেছো জমা
তাতে যতো জল ঢালি জন্ম নেয় ক্ষমা
প্রেম সুরভিত হয়; উদ্যানে উদ্ভিদ
মেঘ নাম, বষ্যা হয়, ফিরে আসে শীত!
তোমাকে যে চিঠি লিখি রাত্রি তার খাম
আকাশ রঙিন প্যাড তাতে লিখি নাম!