- বইয়ের নামঃ আমূল বদলে দাও আমার জীবন
- লেখকের নামঃ মহাদেব সাহা
- প্রকাশনাঃ অনন্যা
- বিভাগসমূহঃ কবিতা
আমার প্রেমিকা
আমার প্রেমিকা- নাম তার খুব ছোটো দুইটি অক্ষরে
নদী বা ফুলের নামে হতে পারে
এই দ্বিমাত্রিক নাম,
হতে পারে পাখি, বৃক্ষ, উদ্ভিদের নামে
কিন্তু তেমন কিছুই নয়, এই মৃদু সাধারণ নাম
সকলের খুবই জানা।
আমার প্রেমিকা প্রতম দেখেছি তাকে বহুদূরে
উজ্জয়িনীপুরে,
এখনো যেখানে থাকে সেখানে পৌঁছতে
এক হাজার একশো কোটি নৌমাইল পথ পাড়ি দিতে হয়;
তবু তার আসল ঠিকানা আমার বুকের ঠিক বাঁ পাশে
যেখানে হৃৎপিণ্ড ওঠানামা করে
পাঁজরের অস্থিতে লেখা তার টেলিফোন নম্বরের
সব সংখ্যাগুলি;
আমার চোখের ঠিক মাঝখানে তোলা আছে
তার একটি মাত্র পাসপোর্ট সাইজের শাদাকালো ছবি
আমার প্রেমিকা তার নাম সুদূর নীলিমা,
রক্তিম গোধূলি,
নক্ষত্রখচিত রাত্রি, উচ্ছল ঝর্ণার জলধারা
উদ্রানের সবচেয়ে নির্জন ফুল, মন হুহু করা বিষণ্নতা
সে আমার সীমাহীন স্বপ্নের জগৎ,
দুচোখে এখনো তার পৃথিবীর সর্বশেষ রহস্যের মেঘ,
আসন্ন সন্ধ্যার ছায়া-
আমার প্রেমিকা সে যে অন্তহীন একখানি বিশাল গ্রন্ত
আজো তার পড়িনি একটি পাতা, শিখি নাই
এই দুটি অক্ষরের মানে।
আমূল বদলে দাও আমার জীবন
পরিপূর্ণ পাল্টে দাও আমার জীবন, আমি ফের
বর্ণমালা থেকে শুরু করি-
আবার মুখস্ত করি ডাক-নামতা, আবার সাঁতার শিখি
একহাঁটু জলে;
তুমি এই অপগণ্ড বয়স্ক শিশুকে মেরেপিটে
কিছুটা মানুষ করো,
কেতে দাও আলুসিদ্ধ দুটি ফেনা ভাত।
আবার সবুজ মাঠে একা ছেড়ে দাও তাকে,
একটু করিয়ে দাও পরিচয় আকাশের সাথে
খুব যত্ন করে সব বৃক্ষ ও ফুলের নাম শিখি।
আমূল বদলে দাও পুরনো জীবন, ভালোবেসে
আবার নদীর তীরে নরম মাটিতে শুরু করি চলা
বানাই একটি ছোটো বাংলো খড়ের কুঁড়েঘর;
পুরোপুরি পাল্টে দাও আমার জীবন, আমি ফের
গোড়া থেকে শুরু করি-
একেবারে পরিশুদ্ধ মানুষের মতো করি
আরম্ভ জীবন;
এভাবে কখনো আর করবো না ভুলভ্রানি- কিছু
এবার নদীর জলে ধুয়ে নেই এই পরাজিত মুখ,
ধুয়ে নেই সকলের অপমান্তউপেক্ষার কালি।
একবার ভালোবেসে, মাতৃস্নেহে
আমূল বদলে দাও আমার জীবন
দেখো কীভাবে শুধরে নেই জীবনের ভুলচুকগুলি।
এক কোটি বছর তোমাকে দেখি না
এক কোটি বছর হয় তোকাকে দেখি না
একবার তোমাকে দেখতে পাবো
এই নিশ্চয়তাটুকু পেলে-
বিদ্যাসাগরের মতো আমিও সাঁতরে পার হবো ভরা দামোদর
কয়েক হাজার বার পাড়ি দেবো ইংলিশ চ্যানেল;
তোমাকে একটিবার দেখতে পাবো এটুকু ভরসা পেলে
অনায়াসে ডিঙাবো এই কারার প্রাচীর,
ছুটে যবো নাগরাজ্যে পাতালপুরীতে
কিংবা বোমারু বিমান ওড়া
শঙ্কিত শহরে।
যদি জানি একবার দেখা পাবো তাহলে উত্তপ্ত মরুভূমি
অনায়াসে হেঁটে পাড়ি দেবো,
কাঁটাতার ডিঙাবো সহজে, লোকলজ্জা ঝেড়ে মুছে
ফেলে যাবো যে কোনো সভায়
কিংবা পার্কে ও মেলায়;
একবার দেখা পাবো শুধু এই আশ্বাস পেলে
এক পৃথিবীর এটুকু দূরত্ব আমি অবলীলাক্রমে পাড়ি দেবো।
তোমাকে দেখেছি কবে, সেই কবে, কোন বৃহস্পতিবার
আর এক কোটি বছর হয় তোমাকে দেখি না।
একেবারে ডুবে যেতে চাই
কবিতার মদে ডুবে যেতে চাই, নিমজ্জিত
হয়ে যেতে চাই-
আপাদমস্তক ডুবে যেতে চাই এই ঘোরে,
টাইটানিকের চেয়েও বেশি অতল গভীরে
পুরেপুরি নিমজ্জিত হয়ে যেতে চাই-
গলূই-মাস্তুলসহ একেবারে ডুবে যেতে চাই এই জলে।
এই জলে সম্পূর্ণ হারতে চাই আমার ঠিকানা
সম্পূর্ণ ডোবাতে চাই আমার শরীর
একেবারে এই জলে, এই অতল গভীরে মিশে যেতে চাই।
একেবারে ডুবে যেতে চাই, ডুবে যেতে চাই
বুকের গভীরে, আটলান্টিকের চেয়েও
গভীর গভীর হলদেশে।
পুরোপুরি ডুবে যেতে চাই এই কবিতার মদে, এই ওষ্ঠে,
সমুদ্রের চেয়েও বড়ো একটি কাচের গ্লাসে-
আপাদমস্তক ডুবে যেতে চাই এই ঘোরে, এই আচ্ছন্নতায়
মেঘে গোধূলিতে।
কাফফার বিমর্ষ পৃথিবী
একদিন ভোরবেলা যদি সন্ধ্যা হয়
কিংবা মধ্যরাতে ওঠে হঠাৎ ভোরের সূর্য
এই পুরনো মলিন চাঁদ তরল সোনার মতো
গলে গলে পড়ে,
জলাশয়ে পাখিরা সাঁতার কাটে
জলের রুপালি মাছ সহসা হাঁটতে থাকে
এই ফুটপাতে,
তাহলে কি এই দৃশ্যগুলো খুবই উদ্ভট বেখাপ্পা
মনে হবে?
একেবারে অবিশ্বাস্য মনে হবে এই ভোর
হঠাৎ এমন সন্ধ্যা হয়ে গেলে-
মধ্যরাত হয়ে গেলে রৌদ্রতপ্ত দিন,
জলাশয়ে পাখিরা সাঁতার কেটে স্বচ্ছন্দে বেড়ালে
কিংবা মাছগুলি ফুটপাতে যদি হেঁটে যায়!
অথবা হঠাৎ কেউ ঘুম থেকে উঠে যদি দেখে
তার গায়ে পশুর মতন লোম, বাঘের মতন থাবা
মুখে সিংহের ধারালো দাঁত
কিংবা এই উচ্ছ্বসিত নৃত্যের আসর যদি হয়ে যায়
দুগৃম প্রাচীন দুর্গ,
পৌরাণিক অভিশাপ যদি হঠাৎ আবার
সত্য হতে থাকে।
কেউ হয় নিশ্চল পাষাণ,
কেউ দৈত্য, কেউ বা ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র কীট,
তাহলে কি খুবই বিস্ময় ঘনাবে দুই চোখে,
মনে পড়ে যাবে কাফফার বিমর্ষ পৃথিবীর কথা?
কিন্তু এই মনোরম পৃথিবীতে কোথাও কি ঘটছে না
এইসব কিছু, কারো হাত, কারো মুখ,
কারো কারো চোখ
সিংহ ও ব্যাঘ্রের নখদন্তের চেয়েও কি ভয়ঙ্কর নয়?
পৃথিবীতে কাফফার অনুরূপ এই পৃথিবী দেকেও তবু কেন
লাগে না মোটেও ধাঁধা আমাদের চোখে!
তুমি
আমার মাথায় জলভরা একটি আকাশ
তার নাম তুমি,
খর গ্রীষ্মে আমার উঠোনে অঝোর বর্ষণ
তুমি তার নাম;
ভীষণ তৃষ্ণার্ত এই পথিকের ক্লান্ত চোখে সুশীতল মেঘ
একমাত্র তুমি-
দুপুরের খরতাপ শেষে আমার জীবনে এই শান্ত সন্ধ্যা
তুমি, তুমি, তুমি;
মরুময় এই ভূপ্রকৃতি জুড়ে ঘন প্রেইরীর সবুজ উদ্যান
তুমি তার নাম,
আমার ধূসর দুই চোখে চিরসবুজের গাঢ় হাতছানি
তার নাম তুমি;
আমার স্মৃতির অববাহিকায় একটি স্বপ্নের প্রিয় নদী
তুমি নিরবধি।
তোমাকে দেখার পর থেকে
তোমাকে দেখার পর থেকে কীরকম গণ্ডগোল
হয়ে গেলো সমস্ত জীবন,
ওলটপালট হয়ে গেলো সবকিছু-
সম্পূর্ণ হারিয়ে ফেললাম বুঝ খেই, চিন্তাসূত্র হয়ে গেলো
বিশৃঙ্খল, এলোমেলো;
কেবল তোমারই মুখ দেখি বৃক্ষপত্রে, জ্যোতিস্কমণ্ডলে
উচ্ছল ঝর্নার জলে, বুকশেলফে, পড়ার টেবিলে,
টেলিভিশনের উজ্জ্বল পর্দায়-
এমনকি ডিশ অ্যান্টেনাও ঢেকে দিতে পারেনি তোমার মুখ
রেডিও বা ক্যাসেট খুলেই শুনি তোমার নিবিড় কণ্ঠস্বর।
তোমাকে দেখার পর থেকে কীরকম পাল্টে গেলো
আমার আকাশ
সেখানে এখন শুধু চাঁদের বদলে তুমি ওঠো,
আর একটাই ওঠে সন্ধ্যাতারা, সেও তুমি।
বইগুলো খুলে দেখি সব গ্রন’ জুড়ে শুধু
এই একটাই শব্দ তাতে লেখা-
তোমাকে দেখার পর থেকে অসম্ভব বদলে গেছে
আমার ভূবন
বদলে গেছে জলবায়ু, দিনরাত্রি, ঋতু
তোমার সলজ্জ টেলিফোন
সেদিন সন্ধ্যার কিছু আগে হঠাৎ উঠলো বেজে
আমার নিথর টেলিফোন
রিসিভার তুলে শুনলাম খুব মৃদু স্বরে যখন একটি ছোটো নাম…
মনে হলো এই সূর্যাস্ত উঠলো ভরে ফের ভোরের আলোয়
প্রায় অস্তমিত আমি পুনরায় হয়ে উঠলাম যেন উদিত সকাল;
কতোকাল নিথর নীরব পড়ে থাকা এই ব্যর্থ টেলিফোন
কানায় কানায় বরে গেলো, হয়ে উঠলো মুহূর্তে যেন চঞ্চল হরিণ;
মনে হলো এই টেলিফোনে একসঙ্গে বেজে ওঠে হাজার তারের বীণা
বিসমিল্লা খাঁর স্পন্দিত সানাই,
হেমন্তের সব অপূর্ব লাবণ্যময গান্ত
সহসা আমার মাথার ওপরে মনে হলো এক দিব্য চায়াময়
স্নিগ্ধ নীলাকাশ।
বুঝি আর কখনো আমার বুকে ওঠেনি এমন তোলপাড় করা ঝড়
চারদিক ঢেকে অঝোর ধারায় নামেনি বর্ষণ।
টেলিফোন তুলে শুনি এ যে স্বপ্নপুরীর রহস্যবার্তা একে একে
কবিতার অপরূপ শব্দরাজি সদ্যফোটা শিউলির মতো
টেলিফোন বেয়ে টুপটাপ শুধু ঝরে পড়ে-
কিংবা বর্ষার অজস্র কদমফুলের মতো মনে হয়
দূর থেকে ভেসে আসা সেই শব্দগুলি;
এইখানে টেলিফোনের সামনে বসে আমি তাই
কেবলই আড়ষ্ট হয়ে পড়ি
পাই না মোটেও খুঁজে একটিও যোগ্য শব্দ
বলি খুব সাধারণ দু’একটি কুশল সংবাদ-
অসহায় তোতলার মতো দুটি জড় ঠোঁটে কেবল আটকে যায় কথা
মনে হয় জীবনে কখনো আর ধরিনি কারুর টেলিফোন।
টেলিফোন হাতে নিয়ে হঠাৎ আমার মনে হলো বুষি
নিঃশ্বাস এক্ষুনি বন্ধ হয়ে যাবে
আর একটিও শব্দ বেরুবে না এই নির্বাক নিস্পন্দ কণ্ঠ দিয়ে
আমি বুঝি চিরতরে বোবা হয়ে যাবো;
আর কেবল আমার বুকের ভেতর বেজে যাবে
অন্তহীন এই গাঢ় টেলিফোন।
আমি তাই টেলিফোনে কী বলতে কী যে বলেছি
কিংবা যা বলা উচিত ছিলো তার কিছুই বলিনি
হায় বোকা, টেলিফোনে কেউ কি কখনো এমন সুখের কথা বলে,
এমন দুঃখের কথা বলে!
নীতিশিক্ষা
আমাকে এখন শিষ্টাচার শিক্ষা দেয়
শহরের বখাটে মাস্তান,
আধুনিকতার পাঠ নিতে হয় প্রস্তরযুগের
সব মানুষের কাছে;
মাতালের কাছে প্রত্যহ শুনতে হয় সংযমের কথা
বধ্যভূমির জল্লাদেরা মানবিক মূল্যবোধ সতত শেখায়,
জলদস্যুদের কাছে আমাকে শুনতে হয়
সৌন্দর্যের ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ-
মানবপ্রেমের শিক্ষা নিতে হয় শিশুহত্যাকারীদের কাছে।
কিন্তু আমার শেখার কথা নদী ও বৃক্ষের কাছে
ধৈর্য্য-সহিষ্ণুতা,
বিবেক, বিনয়, বিদ্যা আমাকে শেখাবে এই উদার আকাশ
জুঁই আর গোলাপের কাছ থেকে সৌহার্দের মানবিক রীতি,
অথচ এখন প্রতিদিন ঘাতকের কাছে
আমাকে শুনতে হয় মহত্ত্বের কথা;
মূর্খ ইতরের কাছে নিতে হয় বিনয়ের পাঠ
দেশপ্রেম শিক্ষা দেয় বিশ্বাসঘাতক বর্বরেরা,
ক্ষমা আর উদারতা শিক্ষা দেয় হিংস্র
নখদাঁতবিশিষ্ট প্রাণীরা
স্নেহ ও প্রীতির সুমধুর গান গায় সব ধূর্ত কাক।
ভুলে-ভরা আমার জীবন
ভুলে-ভরা আমার জীবন, প্রতিটি পৃষ্ঠায় তার
অসংখ্য বানান ভুল
এলোমেলো যতিচিহ্ন; কোথাও পড়েনি ঠিক
শুদ্ধ অনুচ্ছেদ
আমার জীবন সেই ভুলে-ভরা বই, প্রুফ দেখ
হয়নি কখনো।
প্রতিটি পাতায় তাই রাশি রাশি ভুল, ভুল
কাজ, ভুল পদক্ষেপ
আমার জীবন এ আগাগোড়া ভুলের গণিত,
এই ভুল অঙ্ক আমি সারাটি জীবন ধরে কষে কষে
মেলাতে পারিনি
ফল তার শুধু শূন্য, শুধু শূন্য, শুধু শূন্য।
আমি সব মানুষেল মতো মুখস্ত করিনি এই জীবনের
সংজ্ঞা, সূত্র আর ব্যাকরণ
রচনা বইয়ে পড়া মহৎ জীবনী দেখে আমি
কোনোদিন শুরু করিনি জীবন,
দেখেছি প্রত্যহ আমি সকালের কাজ বিকেলে
কীভাবে পুরোপুরি ভুল হয়ে যায়
বিকেলের কাজ রাতের আগেই মনে হয়
ভুলের ধুলোতে ছেয়ে গেছে।
আমার জীবন এই ভুলে-ভরা দিনরাত্রির কবিতা
অসংখ্যা ভুলের নুড়ি ও পাথর
হয়েছে থলিতে তার জমা
আমার জীবন একখানি স্বরচিত ভুলের আকাশ
আমি তার কাছ থেকে কুড়াই দুহাত ভরে
কেবল স্বপ্নের হাড়গোড়।
শুধু এই কবিতার খাতা
এই কবিতার খাতা ছাড়া আর কার কাছে এমন অঝোরে
অশ্রুপাত করা যায়
কার কাছে প্রাণখুলে লেখা যায় চিঠি,
বলা যায় সব দুঃখ, পাপ, অধঃপতনের কথা
আর কার বুকে আঁকা যায় রবীন্দ্রনাথের মতো
অসংলগ্ন, বিপর্যস্ত ছবি!
একমাত্র কবিতার খাতা ছাড়া কোথায় লুকানো যায় মুখ
আর কোন নীলিমায় এমন স্বচ্ছন্দ ওড়া যায়
কোন স্বচ্ছতোয়া নদীজলে ধোয়া যায় সমস্ত কালিমা
বুক ভরে আর কোন উদার প্রান্তরে নেয়া যায় বিশুদ্ধ বাতাস!
শুধু এই কবিতার কাতা বিরহী যক্ষের মতো সযত্নে
আগলে রাখে স্মৃতি
বহু নিদ্রাহীন রাত্রির দুঃস্বপ্ন, অনন্ত দুঃখের দাহ
আর কতো নীরব নিবিড় অশ্রু বর্ষার মেঘের মতো অবিরাম ঝরে
একমাত্র এই কবিতার খাতা আপাদমস্তক ব্যর্থ মানুষের
চাষযোগ্য একখণ্ড জমি।
এ তার সবচে’ বিশ্বস্ত গৃহ, অন্তরঙ্গ নারী
এই কবিতার খাতা তার একমাত্র নিজস্ব আকাশ,
কেবল নিজের নদী, কেবল নিজের নারী, নিজের সংসার
এই কবিতার খাতা রক্তমাংস স্বপ্নময় শুদ্ধ ভালোবাসা।
এখানেই শুধু অশ্রু সোনালি ডানার চিল হয়ে যায়
দুঃখ হয়ে যায় মেঘ, স্বপ্ন হয়ে যায় শেশবের ঘুড়ি,
নিঃসঙ্গতা হয়ে ওঠে মনোরম হার্দ্য বেলাভূমি
উপেক্ষার ধূলি হয়ে ওঠে মুহূর্তে রঙিন স্নিগ্ধ ফুল।
এই কবিতার খাতা শুধু সহ্য করে অবৈধ মৈথুন
সহ্য করে ব্রভিচার, পরকীয়া প্রেমের সান্নিধ্য,
এই কবিতার খাতা নিমজ্জমানের একমাত্র ভেলা
শুধু তার কাছে ফেলা যায় দুচোখের জল, বলা যায় হৃদয়ের কথা।