শ্মশানে জাগিছে শ্যামা অন্তিমে সন্তানে নিতে কোলে
কৌশী তেতালা
শ্মশানে জাগিছে শ্যামা
অন্তিমে সন্তানে নিতে কোলে।
জননী শান্তিময়ী বসিয়া আছে ওই
চিতার আগুন ঢেকে স্নেহ-আঁচলে॥
সন্তানে দিতে কোল ছাড়ি সুখ-কৈলাস
বরাভয়া-রূপে মা শ্মশানে করেন বাস;
কী ভয় শ্মশানে শান্তিতে যেখানে
ঘুমাবি জননীর চরণতলে॥
জ্বলিয়া মরিলি কে সংসার-জ্বালায়–
তাহারে ডাকিছে মা, কোলে আয় কোলে আয়!
জীবনে শান্ত ওরে
ঘুম পাড়াইতে তোরে
কোলে তুলে নেয় মা মরণের ছলে॥
শ্যামা তোর নাম যার জপমালা
শ্যামা তোর নাম যার জপমালা
তার কি মা ভয় ভাবনা আছে।
দুঃখ অভাব রোগ শোক জরা
লুটায় তাহার পায়ের কাছে॥
যার চিত্ত নিবেদিত তোর চরণে
ওমা কী ভয় তাহার জীবনে মরণে,
মায়ের কোলে সে যে শিশুর সম
নির্ভয় চিতে সদা খেলে নাচে॥
রক্ষামন্ত্র যার শ্যামা তোর নাম
সকল বিপদ তারে করে প্রণাম।
সদা প্রসন্ন মন তার ধ্যানে মা তোর,
ভূমানন্দে মা গো রহে সে বিভোর;
(তার) নিকটে আসিতে নারে কাল কঠোর
তব নাম প্রসাদ যে লভিয়াছে॥
শ্যামা নামের লাগল আগুন আমার দেহ-ধূপকাঠিতে
শ্যামা নামের লাগল আগুন
আমার দেহ-ধূপকাঠিতে।
যত জ্বালি সুবাস তত
ছড়িয়ে পড়ে চারিভিতে॥
ভক্তি আমার ধূপের মতো
ঊর্ধ্বে ওঠে অবিরত,
শিবলোকের দেব-দেউলে মা-র শ্রীচরণ পরশিতে॥
অন্তরলোক শুদ্ধ হল পবিত্র সেই ধূপ-সুবাসে,
(ওরে) মা-র হাসি মুখ চিত্তে ভাসে চন্দ্রসম নীল আকাশে।
সব কিছু মোর পুড়ে কবে
চিরতরে ভস্ম হবে,
মা-র ললাটে আঁকব তিলক সেই ভস্ম-বিভূতিতে॥
শ্যামা মায়ের কোলে চড়ে জপি আমি শ্যামের নাম
শ্যামা মায়ের কোলে চড়ে
জপি আমি শ্যামের নাম।
মা হলেন মোর মন্ত্রগুরু
ঠাকুর হলেন রাধাশ্যাম॥
ডুবে শ্যামা-যমুনাতে
খেলব খেলা শ্যামের সাথে
শ্যামা যবে মোর হানবে হেলা
মা পুরাবেন মনস্কাম॥
আমার মনের দো-তারাতে
শ্যামা ও শ্যামা দুটি তার,
সেই দো-তারায় ঝংকার দেয়
ওংকার রব অনিবার॥
মহামায়ার মায়ার ডোরে
আনবে বেঁধে শ্যাম কিশোরে,
কৈলাসে তাই মাকে ডাকি
দেখব সেথায় ব্রজধাম॥
সংসারেরই দোলনাতে মা ঘুম পাড়িয়ে কোথায় গেলি
সংসারেরই দোলনাতে মা
ঘুম পাড়িয়ে কোথায় গেলি?
আমি অসহায় শিশুর মতো
ডাকি মা দুই বাহু মেলি॥
মোর অন্য শক্তি নাই মা তারা
‘মা’ বুলি আর কান্না ছাড়া,
তোরে না দেখলে কেঁদে উঠি
(তোর) কোল পেলে মা হাসি খেলি॥
(ওমা) ছেলেরে তোর তাড়ন করে
মায়ারূপী সৎমা এসে
ছয় রিপুতে দেখায় মা ভয়
পাপ এল পুতনির বেশে।
মরি ক্ষুধা তৃষ্ণাতে মা,
শ্যামা আমায় কোলে নে মা,
আমি ক্ষণে ক্ষণে চমকে উঠি
দয়াময়ী মা কি এলি॥
সর্বনাশী! মেখে এলি এ কোন চুলোর ছাই
সর্বনাশী! মেখে এলি এ কোন চুলোর ছাই?
শ্মশান ছাড়া খেলবার তোর জায়গা কি আর নাই॥
মুক্তকেশী, কেশ এলিয়ে
বেড়াস কখন কোথায় গিয়ে,
এক নিমেষও তোকে নিয়ে শান্তি নাহি পাই॥
হাড়-জ্বালানি মেয়ে! হাড়ের মালা কোথায় পেলি?
ভুবনমোহন গোরী-রূপে কালি মেখে এলি!
তোর গায়ের কালি চোখের জলে
ধুইয়ে দেব, আয় মা কোলে।
তোরে বুকে ধরেও মরি জ্বলে, দিই মা গালি তাই॥