মাকে ভাসায়ে জলে কেমনে রহিবে ঘরে
মাকে ভাসায়ে জলে কেমনে রহিবে ঘরে,
শূন্য ভুবন শূন্য ভবন কাঁদে হাহাকার করে॥
মা যে নদীর ঢেউ-এর মতো,
পালিয়ে বেড়ায় অবিরত,
হৃদয়-ঘাটে একটু থেকে অমনি সে যায় সরে॥
বিসর্জনের প্রতিমা এ নয়
(এরে) নিত্য কাছে রাখতে সাধ হয়
পাষাণ দেউল ঘিরে রে ভাই বেঁধে ভক্তিডোরে॥
সেই মাকে মোর ভাসিয়ে নদীর জলে
মাতৃহারা শিশুর মতো কাঁদি ‘মা মা’ বলে।
তেমনি সুদিন আসবে কবে
(মোর) নিত্য আগমনি হবে
বিশ্ব-চরাচরে॥
মাতৃনামের হোমের শিখা আমার বুকে কে জ্বালাল
মাতৃনামের হোমের শিখা
আমার বুকে কে জ্বালাল।
সেই শিখা আজ হরবে যেন
ত্রিজগতের আঁধার কালো॥
আজ মনে হয় দিবস যামী
অমৃতেরই পুত্র আমি
আনন্দময় হল ত্রিলোক
যেদিকে চাই কেবল আলো॥
সূর্য যেমন জানে না, তার
আলোয় কত জগৎ জাগে,
বিকারবিহীন তেমনি আমি,
জ্বলি নামের অনুরাগে।
হয়তো আমার আলোক লেগে
নতুন সৃষ্টি উঠছে জেগে,
তাই কি বিপুল আকর্ষণে
সবারে চাই বাসতে ভালো॥
মায়ের অসীম রূপ-সিন্ধুতে রে
(মায়ের) অসীম রূপ-সিন্ধুতে রে
বিন্দুসম বেড়ায় ঘুরে,
কোটি চন্দ্র সূর্য তারা
অনন্ত এই বিশ্ব জুড়ে॥
যোগীন্দ্র শিব পায়ের তলায়
ধ্যান করে রে সেই অসীমায়,
কোটি ব্রহ্মা মহিমা গায়
প্রণব ওংকারের সুরে॥
কোটি গ্রহের নিবল জ্যোতি মহাকালীর সীমা খুঁজে,
সৃষ্টি-প্রলয় বলয় হয়ে ঘোরে শ্যামার চতুর্ভুজে।
মায়ের একটি আঁখির চাওয়ায়
যুগ-যুগান্ত হারিয়ে যায়,
মায়ের রূপের ঈষৎ আভাস পেয়ে
সাগর দুলে, তিমির ঝুরে॥
মায়ের চেয়েও শান্তিময়ী মিষ্টি বেশি মেয়ের চেয়ে
মায়ের চেয়েও শান্তিময়ী
মিষ্টি বেশি মেয়ের চেয়ে।
চঞ্চলা এই লীলাময়ী
মুক্তকেশী কালো মেয়ে॥
(সে মিষ্টি যত দুষ্টু তত এই কালো মেয়ে
গিরিঝরনা-সম এল ধেয়ে এই পার্বতী মেয়ে
করুণা-অমৃতধারায় ভুবন ছেয়ে রে
এল এই কালো মেয়ে॥)
মোর নন্দিনী এই আনন্দিনী
আমি সেই গরবে গরবিনি।
তার আর কী চাওয়ার আছে গো
যার অন্তরে মা আনন্দিনী
তার আর কী পাওয়ার আছে গো।
এই মা যে আমার হৃদয়-গগন
আলোর মতো আছে ছেয়ে॥
মাকে তবু চোখে চোখে রাখি
যদি কভু দেয় সে ফাঁকি
(আমি ভয়ে ভয়ে থাকি গো
এই মায়াময়ী মেয়ে নিয়ে ভয়ে ভয়ে থাকি গো
আমি বহু সাধ্য-সাধনাতে পেয়েছি এই মাকে রে
আমি কোটি জন্মের তপস্যাতে পেয়েছি এই মাকে রে।)
আমিকাঙালিনি, কোথায় রাখি
এই স্বর্গের রত্ন পেয়ে॥
মোর আঘাত যত হানবি শ্যামা
মোর আঘাত যত হানবি শ্যামা
ডাকব তত তোরে।
মায়ের ভয়ে শিশু যেমন
লুকায় মায়ের ক্রোড়ে॥
(ও মা) চারধারে মোর দুখের পাথার,
(তুই) পরখ কত করবি মা আর,
(আমি) জানি তবু হব মা পার
চরণ-তরি ধরে
(তোরই) চরণ-তরি ধরে॥
(আমি) ছাড়ব না তোর নামের ধেয়ান বিশ্বভুবন পেলে,
(আমার) দুঃখ দিয়ে নাম ভুলাবি, নই মা তেমন ছেলে।
আমায় দুঃখ দেওয়ার ছলে
(তুই) স্মরণ করিস পলেপলে,
আমি সেই আনন্দে দুঃখের অসীম
সাগর যাব তরে॥
যে কালীর চরণ পায় রে কালীর চরণ পায়
যে কালীর চরণ পায় রে কালীর চরণ পায়।
সে মোক্ষ মুক্তি কিছুই নাহি চায়॥
সে চায় না স্বর্গ চায় না ভগবান,
শ্রীকালীর চরণ আত্মা তাহার দেহ-মন ও প্রাণ;
সে কালীর চরণ ছেড়ে ব্রহ্মলোকেও নাহি যায়॥
শিবের জটা গঙ্গা নিত্য চরণ ধোয়ায় যাঁর
যোগ-সাধনা আরাধনা সে জানে না ভাই
ওই চরণ তাহার সার॥
ধর্মাধর্ম ভেদ জানে না সে বলে সবাই মায়ের ছেলে,
বন্ধু বলে জড়িয়ে ধরে চাঁড়াল কাছে এলে;
সে বেদ-বেদান্ত জানে না শ্রীকালীর নাম গায়॥
যে নামে মা ডেকেছিল সুরথ আর শ্রীমন্ত তোরে
যে নামে মা ডেকেছিল সুরথ আর শ্রীমন্ত তোরে
সেই নাম তুই শিখিয়ে দে মা, ডাকব আমি তেমন করে॥
বেদ-পুরাণে যে নাম শুনি,
যে নাম জপে ঋষি মুনি,
সেই নাম দে, যে নাম নিতে
বক্ষ ভাসে অশ্রুলোরে॥
ভয় যদি তোর ভক্তি দিতে, কর মা অসুর দানব মোরে,
(তুই) আসবি যখন শাস্তি দিতে, দেখব তোরে নয়ন ভরে।
তোর হাতে মা মরণ হলে
ঠাঁই পাব যে তোরই কোলে;
আঘাত করে ছেলেকে মা কাছে যেমন বক্ষ ধরে॥
রক্ষা-কালীর রক্ষা-কবচ আছে আমায় ঘিরে
রক্ষা-কালীর রক্ষা-কবচ আছে আমায় ঘিরে।
মায়ের পায়ের ফুল কুড়িয়ে বেঁধেছি মোর শিরে॥
মা-র চরণামৃত খেয়ে
অমৃতে প্রাণ আছে ছেয়ে,
দুঃখ-অভাব ভাবনার ভার
দিয়েছি মা ভবানীরে॥
তার নামের নামাবলি গড়িয়ে আমার বুকে
মায়ের কোলের শিশুর মতো ঘুমাই পরম সুখে।
মা-র ভক্তের চরণ-ধূলি
নিয়েছি মোর বক্ষে তুলি,
(মায়ের) পূজার প্রসাদ পেতে আমি
আসি ফিরে ফিরে॥
শক্তের তুই ভক্ত শ্যামা
শক্তের তুই ভক্ত শ্যামা
(তোরে) যায় না পাওয়া কেঁদে।
(তাই) শক্তিসাধক রাখে তোরে
ভক্তিডোরে বেঁধে॥
(মা) শক্ত বড়ো শক্ত ছেলে
(সে) জানে, দড়ি আলগা পেলে
যাবি পালিয়ে চোখে ধুলা দিয়ে
মায়াফাঁদ ফেঁদে।
(তাই) ভয় পেয়ে তুই মুক্তি দিতে চাস মা নিজে সেধে॥
(তুই) সুরাসুরে ভুলিয়ে রাখিস ইন্দ্রত্বের মোহে,
(ওমা) গুণের কিছু ঘাট নাই তোর নির্গুণ তাই কহে
(তোরে) নির্গুণ তাই কহে॥
তোর মায়াতে ভুলে গিয়ে
বিষ্ণু ঘুমান লক্ষ্মী নিয়ে,
চতুর্মুখে ব্রহ্মা ভাবেন
দেবী আছেন চতুর্বেদে।
(তোর)অন্ত খুঁজে শিব হয়েছেন ভবঘুরে বেদে॥