মা একলা ঘরে ডাকব না আর
(মা) একলা ঘরে ডাকব না আর
দুয়ার বন্ধ করে।
(তুই) সকল ছেলের মা যেখানে
ডাকব মা সেই ঘরে॥
রুদ্ধ আমার একলা এ মন্দিরে
পথ না পেয়ে যাস বুঝি মা ফিরে
(ঘুরে) জ্যোতির্লোকে ঘুম পাড়িয়ে
তাপিত সন্তান নিয়ে
কাঁদিস মা তুই বুকে ধরে॥
(তুই) সকল ছেলের মা যেখানে
ডাকব মা সেই ঘরে॥
(আমি) একলা মানুষ হতে গিয়ে হারাই মা তোর স্নেহ,
(আমি) যে ঘর যেতে ঘৃণা করি, মা! সেই তোর গেহ।
দুর্বল মোর ভাই বোনদের তুলে
দাঁড়াব মা সেদিন চরণমূলে,
কোলে তুলে নিবি হেসে
(আর) হারাব না তোরে॥
মা কবে তোরে পারব দিতে
মা কবে তোরে পারব দিতে
আমার সকল ভার।
ভাবতে কখন পারব মা গো।
নাই কিছু আমার॥
(কারেও) আনিনি মা সঙ্গে করে,
রাখতে নারি কারেও ধরে
তুই দিস তুই নিস মা হরে–
আমার কোথায় আধিকার॥
হাসি খেলি চলে ফিরি ইঙ্গিতে মা তোরই,
তোর মাঝে মা জনম লভি, তোরই মাঝে মরি
পুত্র মিত্র কন্যা জায়া
মহামায়া তোর এ মায়া,
মা তোর লীলার পুতুল আমি
ভাবতে দে এবার॥
মা গো আমি আর কি ভুলি
মা গো, আমি আর কি ভুলি।
চরণ যখন ধরেছি তোর মা গো,
আমি আর কি ভুলি।
(তুই) বহু জনম ঘুরিয়েছিস মা
পরিয়ে চোখে মায়ার ঠুলি॥
(তোর) পা ছেড়ে যে মোক্ষ যাচে
(তুই) বর নিয়ে যাস তাহার কাছে;
আমি যেন যুগে যুগে পাই মা প্রসাদ চরণধূলি॥
(মোরে) শিশু পেয়ে খেলনা দিয়ে রেখেছিলি মা ভুলিয়ে,
(এখন) খেলনা ফেলে কোলে নিতে
মাকে ডাকি দু-হাত তুলি॥
তোর ঐশ্বর্য যা কিছু মা
সে ভক্তগণে বিলিয়ে উমা,
ভিখারি এই সন্তানে দিস
মাতৃনামের ভিক্ষা-ঝুলি॥
মা গো আমি তান্ত্রিক নই
মা গো আমি তান্ত্রিক নই,
তন্ত্র মন্ত্র জানি না মা।
আমার মন্ত্র যোগ-সাধনা
ডাকি শুধু শ্যামা শ্যামা॥
যাই না আমি শ্মশান মশান
দিই না পায়ে জীব বলিদান,
খুঁজতে তোকে খুঁজি না মা
অমাবস্যা ঘোর ত্রিযামা॥
ঝিল্লি যেমন নিশীথ রাতে
একটানা সুর গায় অবিরাম,
তেমনি করে নিত্য আমি
জপি শ্যামা তোমারই নাম।
শিশু যেমন অনায়াসে
জননীকে ভালোবাসে,
তেমনি সহজ সাধনা মোর
তাতেই পাব তোর দেখা মা॥
মা গো তোমার অসীম মাধুরী
মা গো তোমার অসীম মাধুরী
বিশ্বে পড়িছে ছড়ায়ে।
তোমার আঁখির স্নিগ্ধ লাবণি
ঝরিছে গগন গড়ায়ে॥
কুমুদে কমলে দিঘি সরোবরে
তোমার পূজাঞ্জলি থরে থরে
তব অপরূপ রূপ বিহরে
নিখিল প্রকৃতি জড়ায়ে॥
অরুণ-কিরণে হেরি মা তোমারই
মুখের অভয় হাসি,
নাচে আনন্দে নদীতরঙ্গ
প্রাণে প্রাণে বাজে বাঁশি।
আগমনি গায় সৃষ্টি অশেষ
ধ্যান ভেঙে চায় হাসিয়া মহেশ,
তোমারে পূজিতে পূজারিনি বেশ
ধরণিরে দিল পরায়ে॥
মা গো তোরই পায়ের নূপুর বাজে
মা গো তোরই পায়ের নূপুর বাজে
এই বিশ্বের সকল ধ্বনির মাঝে॥
জীবের ভাষায় পাখির মধুর গানে
সাগর-রোলে নদীর কলতানে
সমীরণের মরমরে শুনি সকল সাঁঝে।
মা গো তোরই পায়ের নূপুর বাজে॥
আমার প্রতি নিশ্বাসে মা রক্তধারার মাঝে
প্রাণের অনুরণনে তোর চরণধ্বনি বাজে।
গভীর প্রণব ওংকারে তোর কালী
(মা গো মহাকালী)
তাথই নাচের শুনি করতালি
সেই নৃত্যলীলার স্তবগাথা গান
চরণতলে নটরাজে॥
মা গো, আজও বেঁচে আছি তোরই প্রসাদ পেয়ে
মা গো, আজও বেঁচে আছি তোরই প্রসাদ পেয়ে।
তোর দয়ায় মা অন্নপূর্ণা তোরই অন্ন খেয়ে॥
কবে কখন খেলার ছলে
ডেকেছিলাম শ্যামা বলে,
সেই পুণ্যে ধন্য আমি
আজ তোর নাম গেয়ে॥
তোর নাম-গান বিনা আমার পুণ্য কিছু নাই,
পাপী হয়েও পাই আমি তাই যখন যাহা চাই॥
দুঃখ শোকে বিপদ-ঝড়ে
বাঁচাস মা তুই বক্ষে ধরে,
দয়াময়ী নাই কেহ মা
ভবানী তোর চেয়ে॥
মা গো, আমি মন্দমতি তবু যে সন্তান তোরই
মা গো, আমি মন্দমতি
তবু যে সন্তান তোরই।
(হায়) পুত্র বেড়ায় কাঙালবেশে
মা যার ভুবনেশ্বরী॥
তুই যে এত বাসিস হেলা
(তবু) তোরেই ডাকি সারাবেলা;
মার খেয়ে তোর শিশুর মতোমাগো
তোকেই জড়িয়ে ধরি॥
মা হয়ে তুই কেমন করে
কোল থেকে তোর দিলি ফেলে,
(মাগো) কেন দিলি ধুলায় ফেলে?
(আমি) মন্দ এত হতাম না মা
মায়ের স্নেহ-সুধা পেলে।
(মা) তোর উপরে অভিমানে
দু-চোখ যায় যেদিক পানে
সেই দিকে তাই ধাই মা এখন
মরণ-বাঁচন ভয় না করি॥
মা তোর চরণ-কমল ঘিরে
মা তোর চরণ-কমল ঘিরে
চিত্ত-ভ্রমর বেড়ায় ঘুরে।
(ও মা) সাধ মেটে না দেখে দেখে(যত)
দেখি, তত নয়ন ঝুরে॥
(ওই) চরণচিহ্ন বক্ষে এঁকে
চরণ-পরাগ-ধূলি মেখে
গ্রহ-তারায় লোকে লোকে
(তোর) নাম গেয়ে যাই সুরে সুরে॥
তোর চরণের ধূলি নিয়ে ললাটে মোর তিলক আঁকি
ওই চরণের পানে চেয়ে ধ্রুবতারা হল আঁখি।
তোর চরণের মধু যদি
(মা)পাই এমনই নিরবধি,
লক্ষ কোটি জনম নিয়ে
বেড়াব ত্রিভুবন জুড়ে॥
মা হবি না মেয়ে হবি
মা হবি না মেয়ে হবি
দে মা উমা বলে।
তুই আমারে কোল দিবি না
আমিই নেব কোলে॥
মা হয়ে তুই মাগো আমার
নিবি কি মোর সংসার-ভার,
দিন ফুরালে আসব ছুটে
মা তোর চরণতলে।
(তুই) মুছিয়ে দিবি দুঃখ-জ্বালা তোর স্নেহ-অঞ্চলে॥
এক হাতে মোর পূজার থালা ভক্তি-শতদল,
আর এক হাতে ক্ষীর নবনী, কী নিবি তুই বল।
মেয়ে হয়ে মুক্তকেশে
খেলবি ঘরে হেসে হেসে,
ডাকলে মা তুই ছুটে এসে
জড়াবি মোর গলে।
(তোরে) বক্ষে ধরে শিবলোকে যাব আমি চলে।