দুর্গতিনাশিনী আমার শ্যামা মায়ের চরণ ধর
দুর্গতিনাশিনী আমার
শ্যামা মায়ের চরণ ধর।
যত বিপদ তরে যাবি
মাকে বারেক স্মরণ কর॥
তোর সংসার-ভাবনার ভার
সঁপে দে রে চরণে মা-র
যে চরণে বক্ষ পেতে
আছেন ভূমানন্দে মেতে
দেবাদিদেব দিগম্বর॥
যে দিয়েছে এ সংসারের শিকল পায়ে বেঁধে,
সেই মহামায়ার শ্রীচরণে শরণ নে তুই কেঁদে।
কেটে যাবে সকল মায়া,
পাবি মায়ের চরণ-ছায়া,
শান্তি পাবি রোগে শোকে,
অন্তে যাবি মোক্ষলোকে
শিবানীরে বরণ কর॥
নন্দলোক হতে আমি এনেছি রে মহামায়ায়
নন্দলোক হতে আমি এনেছি রে মহামায়ায়।
বন্ধ যথায় বন্দি যত কংস রাজার অন্ধ কারায়॥
বন্দি জাগো! ভাঙো আগল
ফেল রে ছিঁড়ে পায়ের শিকল
বুকের পাষাণ ছুঁড়ে ফেলে
মুক্তলোকে বেরিয়ে আয়॥
আমার বুকের গোপালকে রে
রেখে এলাম নন্দালয়ে,
সেইখানে সে বংশী বাজায়
আনন্দে গোপ-দুলাল হয়ে।
মা-র আদেশে বাজাবে সে
অভয় শঙ্খ দেশে দেশে
তোরা, নারায়ণী-সেনা হবি
এবার নারায়ণীর কৃপায়॥
পরমপুরুষ সিদ্ধযোগী মাতৃভক্ত যুগাবতার
পরমপুরুষ সিদ্ধযোগী মাতৃভক্ত যুগাবতার
পরমহংস স্রীরামকৃষ্ণ লহো প্রণাম নমস্কার॥
জাগালে ভারত-শ্মশানতীরে
অশিবনাশিনী মহাকালীরে,
মাতৃনামের অমৃত নীরে
বাঁচালে মৃত ভারত আবার॥
সত্যযুগের পুণ্য স্মৃতি আনিলে কলিতে তুমি তাপস,
পাঠালে ধরার দেশে দেশে ঋষি পূর্ণতীর্থ বারি-কলস॥
মন্দিরে মসজিদে গির্জায়
পূজিলে ব্রহ্মে সমশ্রদ্ধায়,
তব নামমাখা প্রেমনিকেতনে
ভরিয়াছে তাই ত্রিসংসার॥
ফিরিয়ে দে মা ফিরিয়ে দে গো
ফিরিয়ে দে মা ফিরিয়ে দে গো
ওমা দে ফিরিয়ে মোর হারানিধি!
তুই দিয়ে নিধি নিলি কেড়ে
মা তোর এ কোন নিঠুর বিধি॥
বল মা তারা কেমন করে
নয়নতারা নিলি হরে,
দিলি মা হয়ে তুই শিশু বুকে
নিঠুর মরণ-সায়ক বিঁধি॥
তরু যেমন শিকড় দিয়ে তাহার মাটির মাকে
জড়িয়ে ধরে থাকে স্নেহের সহস্র সে পাকে;
মা গো তেমনি করে তাহার মায়া
আঁকড়ে ছিল আমার কায়া,
তারে নিলি কেন মহামায়া
শূন্য করে আমার হৃদি॥
বল মা শ্যামা বল, তোর বিগ্রহ কী মায়া জানে
বল মা শ্যামা বল, তোর বিগ্রহ কী মায়া জানে,
(আমি) যত দেখি তত কাঁদি ওই রূপ দেখি মা সকলখানে॥
মাতৃহারা শিশু যেমন মায়ের ছবি দেখে
চোখ ফিরাতে নারে-মা গো, কাঁদে বুকে রেখে।
তোর মূর্তি মোরে তেমনি করে টানে মা গো মরণটানে॥
ওমা,রাত্রে নিতুই ঘুমের ঘোরে দেখি বুকের কাছে
যেন, বিগ্রহ তোর মায়ের মতো জড়িয়ে মোর আছে।
জেগে উঠে আঁধার ঘরে
কাঁদি যবে মা তোর তরে,
দেখি বিগ্রহ তোর কাঁদছে যেন চেয়ে চেয়ে আমার পানে॥
(দেখি) আরসিতে মুখ দেখতে গিয়ে মূর্তি তোরই রাজে,
মুদলে আঁখি বিগ্রহ তোর দেখি বুকের মাঝে,
আর কতকাল ছবি দিয়ে
রাখবি মোরে মা ভুলিয়ে,
তোর কোলে মা যাব কবে, শান্তি কবে পাব প্রাণে॥
বল রে জবা বল কোন সাধনায় পেলি শ্যামা মায়ের চরণতল
বল রে জবা বল।
কোন সাধনায় পেলি শ্যামা মায়ের চরণতল।।
মায়া–তরুর বাঁধন টুটে
মায়ের পায়ে পড়লি লটে
মুক্তি পেলি, উঠলি ফুটে আনন্দ–বিহ্বল!
তোর সাধনা আমায় শেখা, জবা, জীবন হোক সফল।।
কোটি গন্ধ –কুসুম ফোটে, বনে মনোলোভা –
কেমনে মা’র চরণ পেলি, তুই তামসী জবা!
তোর মত মা’র পায়ে রাতুল
হব কবে প্রসাদী-ফুল,
কবে উঠবে রেঙে
ওরে মায়ের পায়ের ছোঁয়া লেগে উঠবে রেঙে,
কবে তোরই মতো রাঙবে রে মোর মলিন চিত্ত-দল।।
ভাগীরথীর ধারার মতো সুধার সাগর পড়ুক ঝরে
ভাগীরথীর ধারার মতো সুধার সাগর পড়ুক ঝরে
মা গো এবার ত্রিভুবনের সকল জড় জীবের পরে॥
যত মলিন আঁধার কালো
হোক সুধাময়, পড়ুক আলো,
সকল জীব শিব হোক মা, সেই সুধাতে সিনান করে॥
তোর শক্তি-প্রসাদ পেয়ে মানুষ হবে অমর সেনা,
দিব্য জ্যোতির্দেহ পাবে, দানব-অসুর ভয় রবে না।
এই পৃথিবী ব্যথাহত
শ্বেত শতদলের মতো
মা তোর পূজাঞ্জলি হয়ে উঠবে ফুটে সেই সাগরে॥
ভুল করেছি ওমা শ্যামা বনের পশু বলি দিয়ে
ভুল করেছি ওমা শ্যামা বনের পশু বলি দিয়ে।
(তাই) পুজিতে তোর রাঙা চরণ এলাম মনের পশু নিয়ে॥
তুই যে বলিদান চেয়েছি
কাম-ছাগ ক্রোধরূপী মহিষ ;
তোর পায়ে দিলাম লোভের জবা মোহ-রিপুর ধূম জ্বালিয়ে॥
দিলাম হৃদয়-কমন্ডলুর মদ-সলিল তোর চরণে,
মাৎসর্যের পূর্ণাহুতি দিলাম পায়ে পূর্ণ মনে।
ষড়্রিপুর উপচারে
যে পূজা চাস বারে বারে
সেই পূজারই মন্ত্র মা গো ভক্তরে দে শিখিয়ে॥
মহাকালের কোলে এসে গৌরী হল মহাকালী
মহাকালের কোলে এসে
গৌরী হল মহাকালী।
শ্মশান-চিতার ভস্ম মেখে
ম্লান হল মা-র রূপের ডালি॥
তবু মায়ের রূপ কি হারায়
(সে যে) ছড়িয়ে আছে চন্দ্র-তারায়
মায়ের রূপের আরতি হয়
নিত্য সূর্য-প্রদীপ জ্বালি॥
উমা হল ভৈরবী হায়
বরণ করে ভৈরবেরে,
হেরি শিবের শিরে জাহ্নবীরে
শ্মশানে মশানে ফেরে।
অন্ন দিয়ে ত্রিজগতে
অন্নদা মোর বেড়ায় পথে,
ভিক্ষু শিবের অনুরাগে
ভিক্ষা মাগে রাজদুলালি॥
মা আমি তোর অন্ধ ছেলে হাত ধরে মোর নিয়ে যা মা
মা! আমি তোর অন্ধ ছেলে
হাত ধরে মোর নিয়ে যা মা!
পথ নাহি পাই, যে দিকে চাই
দেখি আঁধার ঘোর ত্রিযামা॥
আমি নিজে পথ চলিতে চাই
বারে বারে পথ ভুলি মা তাই
মায়া রূপে পড়ে কাঁদি
কোথায় দয়াময়ী শ্যামা॥
মা তুই যবে হাত ধরে চলিস,
রয় না পতন-ভয়
তুই যবে পথ দেখাস মা গো,
সে পথ জ্যোতির্ময়।
কী হবে জ্ঞান-প্রদীপ নিয়ে সাথে,
বৃথা এ দীপ জন্মান্ধের হাতে
মা তুই যদি হস নির্ভর মোর
পথের ভয় আর রবে না মা॥