কোথায় গেলি মা গো আমার
কোথায় গেলি মা গো আমার
খেলনা দিয়ে ভুলিয়ে রেখে।
ক্লান্ত আমি খেলে খেলে
এ সংসারের ধূলি মেখে॥
বলেছিলি সন্ধ্যা হলে
ধূলি মুছে নিবি কোলে,
ছেলেরে তুই গেলি ছলে–
(এখন) পাই না সাড়া মাকে ডেকে॥
একি খেলার পুতুল মাগো
দিয়েছিলি মন ভুলাতে,
আধেক তাহার হারিয়ে গেছে
আধেক ভেঙে আছে হাতে।
এ পুতুলও লাগছে মা ভার,
তোর পুতুল তুই নে মা এবার
(এখন) দিন ফুরাল, নামল আঁধার,
ঘুম পাড়া তুই আঁচল ঢেকে॥
জগৎ জুড়ে জাল ফেলেছিস শ্যামা কি তুই জেলের মেয়ে
জগৎ জুড়ে জাল ফেলেছিস
শ্যামা কি তুই জেলের মেয়ে।
(তোর) মায়ার জালে মহামায়া
বিশ্বভুবন আছে ছেয়ে॥
পড়ে মা তোর মায়ার ফাঁদে
কোটি নরনারী কাঁদে,
তোর মায়াজাল তত বাঁধে
পালাতে চায় যত ধেয়ে॥
চতুর যে মীন সে জানে মা,
জাল থেকে কি মুক্তি আছে?
(তাই) জেলে যখন জাল ফেলে,
সে লুকায় জেলের পায়ের কাছে।
ওমা জাল এড়িয়ে তাই সে বাঁচে।
তাই মা আমি নিলাম শরণ
তোর ও দুটি রাঙা চরণ
(আমি) এড়িয়ে গেলাম মায়ার বাঁধন
মা তোমার অভয় চরণ পেয়ে॥
জ্যোতির্ময়ী মা এসেছে আঁধার আঙিনায়
জ্যোতির্ময়ী মা এসেছে আঁধার আঙিনায়।
ত্রিভুবনবাসী ছেলেমেয়ে আয় রে ছুটে আয়।
আনন্দ আজ লুট হতেছে কে কুড়াবি আয়।
আনন্দিনী দশভুজা দশ হাতে ছড়ায়॥
মা অভয় দিতে এল ভয়ের অসুর দলে পায়।
আজ জিনব জগৎ মাভৈঃ বাণীর বিপুল ভরসায়॥
বুকের মাঝে টইটুম্বুর ভরা নদীর জল
ওরে দুলছে টলমল।
ঝিলের জলে ফুটল কত রঙের শতদল
ছুঁতে মায়ের পদতল॥
দেব-সেনারা বাচ খেলে রে আকাশ-গাঙের স্রোতে,
সেই আনন্দে যোগ দিবে কে, আয় রে বাহির-পথে।
আর যেতে দেব না মাকে রাখব ধরে পায়–
মাতৃহারা মা পেলে কি ছাড়তে কভু চায়॥
তুই পাষাণগিরির মেয়ে হলি পাষাণ ভালো বাসিস বলে
তুই পাষাণগিরির মেয়ে হলি
পাষাণ ভালো বাসিস বলে।
মা গলবে কি তোর পাষাণ-হৃদয়
তপ্ত আমার নয়নজলে॥
তুই বইয়ে নদী পিতার চোখে
লুকিয়ে বেড়াস লোকে লোকে;
মহেশ্বরও পায় না তোকে
পড়ে মা তোর চরণতলে॥
কোটি ভক্ত যোগী ঋষি
ঠাঁই পেল না তোর চরণে।
তাই ব্যথায় রাঙা তাদের হৃদয়,
জবা হয়ে ফোটে বনে।
আমি শুনেছি মা ভক্তিভরে
মা বলে যে ডাকে তোরে,
(তুই) অমনি গলে অশ্রুলোরে
ঠাঁই দিস তোর অভয় কোলে॥
তুই বলহীনের বোঝা বহিস যেথায় ভৃত্য হয়ে
(তুই) বলহীনের বোঝা বহিস যেথায় ভৃত্য হয়ে
(যথা) দাসী হয়ে করিস সেবা, যা মা সেথায় লয়ে
(মোরে) যা মা সেথায় লয়ে॥
(যথা) রুগ্ণ ছেলে বক্ষে ধরে
নিশীথ জাগিস একলা ঘরে
(যথা) দুঃখী পিতার সাথে কাঁদিস উপবাসী রয়ে।
(মোরে) যা মা সেথায় লয়ে॥
শ্রমিক চাষার তরে যথা আঁধার খাদে মাঠে
ক্ষুধার অন্ন নিস মা বয়ে, নে মা তাদের হাটে
(মোরে) নে মা তাদের হাটে॥
(তুই) ত্রিজগতের পাপ কুড়ালি
(তাই) সোনার অঙ্গ হল কালি
(তোরে) সেই কোলেতে পাব মহাকালীর পরিচয়ে॥
তোর কালো রূপ দেখতে মা গো
তোর কালো রূপ দেখতে মা গো
কালো হল মোর আঁখি।
চোখের ফাঁকে যাস পালিয়ে
মা তুই কালো পাখি॥
আমার নয়ন-দুয়ার বন্ধ করে এই দেহ-পিঞ্জরে
চঞ্চলা-গো বুকের মাঝে রাখি তোরে ধরে,
চোখ চেয়ে তাই খুঁজি তোরে পাইনে ভুবন ভরে
সাধ যায় মা জন্ম জন্ম অন্ধ হয়ে থাকি॥
তোর কালো রূপের বিজলি-চমক কোটি লোকের জ্যোতি,
অনন্ত তোর কালোতে মা, সকল আলোর গতি!
তোর কালো রূপকে বলে মা ‘তমঃ’,
ওই রূপে তুই মহাকালী মা গো নমো নমঃ
তুই আলোর আড়ালে টেনে মা গো
দিসনে মোরে ফাঁকি॥
তোর কালো রূপ লুকাতে মা বৃথাই আয়োজন
তোর কালো রূপ লুকাতে মা বৃথাই আয়োজন।
ঢাকতে নারে ও রূপ কোটি চন্দ্র ও তপন॥
মাখিয়ে কালো আমার চোখে
লুকিয়ে রাখিস তোর কালোকে
(তোর)কালো রূপে মা গো অখিল বিশ্ব নিমগন॥
আঁধার নিশীথ সে যেন তোর কালো রূপের ধ্যান
(তোর)গহন কালোয় গাহন করে পুড়ায় ধরার প্রাণ॥
হেরি তোর কালোরূপ স্নিগ্ধ করা
শ্যামা হল বসুন্ধরা,
নিবল কোটি সূর্য তোরে খুঁজে অনুক্ষণ॥
তোরই নামের কবচ দোলে আমার বুকে, হে শংকরী
তোরই নামের কবচ দোলে
আমার বুকে, হে শংকরী!
কী ভয় দেখাস? আমি তোকেও
ভয় করি না ভয়ংকরী॥
মৃত্যু-প্রলয় তাদের লাগি
নয় যারা তোর অনুরাগী
(ও মা) তোর শ্রীচরণ আশ্রয় মোর
(দেখে) মরণ আছে ভয়ে মরি॥
আমি তোরই মাঝে ঘুমাই জাগি,
তোরই কোলে কাঁদি হাসি!
তোর যদি না হয় মা বিনাশ
মা আমিও অবিনাশী॥
(তোর) চরণ ছেড়ে পালায় যারা
মায়ার জালে মরে তারা
তোর মায়াজাল এড়িয়ে গেলাম
মা তোর অভয়-চরণ ধরি॥
থির হয়ে তুই বোস দেখি মা
থির হয়ে তুই বোস দেখি মা
খানিক আমার আঁখির আগে।
দেখব নিত্য-লীলাময়ী,
থির হলে তুই কেমন লাগে॥
শান্ত হলে ডাকাত মেয়ে
কেমন দেখায় দেখব চেয়ে,
চিন্ময় শিবশম্ভু কেন চরণতলে শরণ মাগে॥
দেখব চেয়ে জননী তুই সাকারা না নিরাকারা ,
কেমন করে কালী হয়ে নামে ব্রহ্ম জ্যোতির্ধারা।
কোলে নিতে কোলের ছেলে
শ্মশান জাগিস বাহু মেলে,
কেমন করে মহামায়ার বুকে মায়ের মায়া জাগে।
দীনের হতে দীন দুঃখী অধম যথা থাকে
দীনের হতে দীন দুঃখী অধম যথা থাকে
ভিখারিনি বেশে সেথা দেখেছি মোর মাকে
(মোর) অন্নপূর্ণা মাকে॥
অহংকারের প্রদীপ নিয়ে স্বর্গে মাকে খুঁজি,
মা ফেরেন ধূলির পথে যখন ঘটা করে পূজি,
ঘুরে ঘুরে দূর আকাশে
প্রণাম আমার ফিরে আসে
যথায় আতুর সন্তানে মা কোলে বাড়ায়ে ডাকে॥
নামতে নারি তাদের কাছে সবার নীচে যারা
যাদের তরে আমার জগন্মাতা সর্বহারা।
অপমানের পাতালতলে লুকিয়ে যারা আছে
তোর শ্রীচরণ রাজে সেথায়, নে মা তাদের কাছে
আমায় নে মা তাদের কাছে।
আনন্দময় তোর ভবনে
আনব কবে বিশ্বজনে
দেখব জ্যোতির্ময়ী রূপে সেদিন তমসাকে॥