ওমা দুঃখ অভাব ঋণ যত মোর
(ওমা) দুঃখ অভাব ঋণ যত মোর
রাখলাম তোর পায়ে
(এবার) তুই দিবি মা, ভক্তের তোর
সকল ঋণ মিটায়ে॥
মাগো সমন-হাতে মোর মহাজন
ধরতে যদি আসে এখন,
তোরই পায়ে পড়বে বাঁধন
ছেলের ঋণের দায়ে॥
ওমা সুদ-আসলে এ সংসারের বেড়েই চলে দেনা,
এবার ঋণমুক্তির তুই নে মা ভার, রইব তোরই কেনা।
আমি আমার আর নহি তো,
(আমি) তোর পায়ে যে নিবেদিত,
এখন তুই হয়েছিস জামিন আমার –
দে ওদের বুঝায়ে॥
ওমা নির্গুণেরে প্রসাদ দিতে
ওমা নির্গুণেরে প্রসাদ দিতে
তোর মতো কেউ নাই।
তোর পায়ে মা তাই রক্তজবা
গায়ে মাখা ছাই।
দৈত্য-অসুর হনন-ছলে
ঠাঁই দিস তুই চরণতলে,
আমি তামসিকের দলে মা গো
তাই নিয়েছি ঠাঁই॥
কালো বলে গৌরী তোরে
কে দিয়েছে গালি,
(ওমা) ত্রিভুবনের পাপ নিয়ে তোর
অঙ্গ হল কালি।
অপরাধ না করলে শ্যামা
ক্ষমা যে তোর পেতাম না মা,
(আমি) পাপী বলে আশা রাখি
চরণ যদি পাই॥
ওমা বক্ষে ধরেন শিব যে চরণ
(ওমা) বক্ষে ধরেন শিব যে চরণ
শরণ নিলাম সেই চরণে।
জীবন আমার ধন্য হল,
ভয় নাই মা আর মরণে॥
যা ছিল মোর এই ত্রিলোকে
তোকে দিলাম, দিলাম তোকে,
আমার বলে রইল শুধু
তোর চরণের ধ্যান এ মনে॥
(তোর) কেশ নাকি মা মুক্ত হল
ছুঁয়ে তোরই রাঙা চরণ,
(ও মা) মুক্তকেশী, মুক্ত হব
সেই চরণে নিয়ে শরণ।
(তোর) চরণ-চিহ্ন বক্ষে এঁকে
বিশ্বজনে বলব ডেকে,
দেখে যা কোন রত্ন রাজে
আমার হৃদয়-সিংহাসনে॥
ওরে আলয়ে আজ মহালয়া, মা এসেছে ঘর
ওরে আলয়ে আজ মহালয়া, মা এসেছে ঘর।
তোরা উলু দে রে শঙ্খ বাজা, প্রদীপ তুলে ধর॥
(এল মা, আমার মা।)
মাকে ভুলে ছিলাম ওরে
কাজের মাঝে মায়ার ঘোরে,
আজ বরষ পরে মাকে ডাকার মিলল অবসর।
(এল মা, আমার মা।)
মা ছিল না বলে সবাই গেছে পায়ে দলে
মার খেয়েছি যত তত ডেকেছি মা বলে।
মা এসেছে ছুটে রে তাই,
ভয় নাই রে আর ভয় নাই,
মা অভয়া এসেছে রে দশ হাতে তাঁর বর।
(এল মা, আমার মা।)
করুণা তোর জানি মাগো আসবে শুভদিন
করুণা তোর জানি মাগো
আসবে শুভদিন
হোক না আমার চরম ক্ষতি
থাক না অভাব ঋণ॥
আমায় ব্যথা দেওয়ার ছলে
টানিস মা তোর অভয় কোলে,
সন্তানে মা দুঃখ দিয়ে
রয় কি উদাসীন॥
তোর কঠোরতার চেয়ে দয়া বেশি জানি বলে
ভয় যত মা দেখাস তত লুকাই তোরই কোলে।
সন্তানে ক্লেশ দিস যে এমন
হয়তো মা তার আছে কারণ,
তুই কাঁদাস বলে বলব কি মা
হলাম মাতৃহীন॥
কালী কালী মন্ত্র জপি বসে লোকের ঘোর শ্মশানে
কালী কালী মন্ত্র জপি
বসে লোকের ঘোর শ্মশানে।
মা অভয়ার নামের গুণে
শান্তি যদি পাই এ প্রাণে।
এই শ্মশানে ঘুমিয়ে আছে
যে ছিল মোর বুকের কাছে,
সে হয়তো আবার উঠবে জেগে
মা ভবানীর নামগানে॥
সকল সুখ শান্তি আমার
হরে নিল যে পাষাণী,
শূন্য বুকে বন্দি করে
রাখব আমি তারেই আনি।
মোর যাহা প্রিয় মাকে দিয়ে
জেগে আছি আশা-দীপ জ্বালিয়ে,
মা-র সেই চরণের নিলাম শরণ
যে চরণে আঘাত হানে॥
কে বলে মোর মাকে কালো
কে বলে মোর মাকে কালো
মা যে আমার জ্যোতির্মতী
কোটি চন্দ্র সূর্য তারা
নিত্য করে মা-র আরতি
কালো রূপের মায়া দিয়ে
মহামায়া রয় লুকিয়ে,
মাকে আমার খুঁজে খুঁজে
নিবল কোটি রবির জ্যোতি॥
যোগীন্দ্র যাঁর চরণতলে
ধ্যান করে রে যাঁর মহিমা
(মোরা) দুটি নয়ন-প্রদীপ জ্বেলে
খুঁজি সেই অসীমার সীমা॥
মোরা সাজিয়ে কালী গৌরী মাকে
পূজা করি তমসাকে
মায়ের শুভ্রা রূপ দেখে সে
শুভ্র-শুচি যার ভকতি॥
কে সাজাল মাকে আমার বিসর্জনের বিদায়-সাজে
কে সাজাল মাকে আমার
বিসর্জনের বিদায়-সাজে।
আজ সারাদিন কেন এমন
করুণ সুরে বাঁশি বাজে॥
আনন্দেরই প্রতিমাকে, হায়
বিদায় দিতে পরান নাহি চায়।
মাকে ভাসিয়ে জলে কেমন করে
রইব আঁধার ভবন মাঝে॥
মা-র আগমনে বেজেছিল
প্রাণে নতুন আশার বাঁশি।
দুখ-শোক-ভয় ভুলেছিলাম
(দেখে) মা অভয়ার মুখের হাসি।
মা দশ হাতে আনন্দ এনেছিল,
বিশ হাতে আজ দুঃখ ব্যথা দিল ;
মা মৃন্ময়ীকে ভাসিয়ে জলে পাব
চিন্ময়ীকে বুকের মাঝে॥
কেঁদো না কেঁদো না, মাকে কে বলেছে কালো
কেঁদো না কেঁদো না, মাকে কে বলেছে কালো।
(মা) ঈষৎ হাসিতে তোর ত্রিভুবন আলো॥
কে দিয়েছে গালি তোরে, মন্দ সে মন্দ
যে বলেছে কালী তোরে, অন্ধ সে অন্ধ।
(মোর তারায় সে দেখে নাই।
তার নয়নতারায় নাই আলো, তাই
তারায় সে দেখে নাই।)
(রাখে) লুকিয়ে মা তোর নয়ন-কমল
কোটি আলোয় সহস্রদল,
(তোর) রূপ দেখে মা লজ্জায় শিব-অঙ্গে ছাই মাখাল,
(তুষার-ধবল কান্তি যাঁহার চন্দ্রলেখা যাঁর চূড়ায়
চন্দ্রকান্তমণির জ্যোতি রূপ দেখে যা লজ্জা পায়)
সেই চন্দ্রচূড়ও রূপ দেখে তোর অঙ্গে ছাই মাখাল॥
তোর নীল কপোলে কোটি তারা
চন্দনেরই ফোঁটার পারা
ঝিকিমিকি করে গো,
(যেন আলোর অলকা-তিলক ঝলমল করে গো)
মা তোর দেহলতায় অতুল কোটি রবিশশী মুকুল
ফুটে আবার ঝরে গো।
তুমি হোমের শিখা বহ্নি-জ্যোতি
তুমিই স্বাহা দীপ্তিমতি,
আঁধার ভুবন-ভবনে মা কল্যাণদীপ জ্বালো
তুমিই কল্যাণদীপ জ্বালো॥
কেন আমায় আনলি মাগো মহাবাণীর সিন্ধুকূলে
কেন আমায় আনলি মাগো মহাবাণীর সিন্ধুকূলে
(মোর) ক্ষুদ্র ঘটে এ সিন্ধুজল কেমন করে নেব তুলে॥
চতুর্বেদে এ সিন্ধুর জল
ক্ষুদ্রবারিবিন্দু হয়ে করছে টলমল
এই বাণীরই বিন্দু যে মা গ্রহ তারা গগনমূলে।
ইহারই বেগ ধরতে গিয়ে শিবের জটা পড়ে খুলে॥
অনন্তকাল রবি শশী এই যে মহাসাগর হতে
সোনার ঘটে রসের ধারা নিয়ে ছড়ায় ত্রিজগতে॥
বাঁশিতে মোর, স্বল্প এ আঁধারে
অনন্ত সে বাণীর ধারা ধরতে কি মা পারে,
শুনেছি মা হয় সীমাহীন ক্ষুদ্রও তোর চরণ ছুঁলে॥