আয় অশুচি আয় রে পতিত, এবার মায়ের পূজা হবে
আয় অশুচি আয় রে পতিত,
এবার মায়ের পূজা হবে।
(যেথা) সকল জাতির সকল মানুষ
নির্ভয়ে মা-র চরণ ছোঁবে।
(সেথা) এবার মায়ের পূজা হবে॥
(সেথা) নাই মন্দির নাই পূজারি,
নাই শাস্ত্র নাই রে দ্বারী,
(যেথা) মা বলে যে ডাকবে এসে
মা তাহারেই কোলে লবে॥
(মা) সিংহ-আসন হতে নেমে বসেছে দেখ ধূলির তলে,
(মা-র) মঙ্গলঘট পূর্ণ হবে সবার ছোঁয়া তীর্থজলে।
জননীকে দেখেনি, তাই
ভাইকে আঘাত হেনেছে ভাই,(আজ)
মাকে দেখে বুঝবি মোরা
এক মা-র সন্তান সবে।(এবার)
ত্রিলোক জুড়ে পড়বে সাড়া
মাতৃমন্ত্রের মাভৈঃ-রবে॥
আয় নেচে আয় এ বুকে
আয় নেচে আয় এ বুকে
দুলালি মোর কালো মেয়ে।
দগ্ধ দিনের বুকে যেমন
আসে শীতল আঁধার ছেয়ে॥
আমার হৃদয়-আঙিনাতে
খেলবি মা তুই দিনে রাতে,
আমার সকল দেহ নয়ন হয়ে
দেখবে মা তাই চেয়ে চেয়ে॥
হাত ধরে মোর নিয়ে যাবি
তোর খেলাঘর দেখাবি মা,
এইটুকু তুই মেয়ে আমার
কেমন করে হস অসীমা।
নিবি লুটে চতুর্ভুজা
আমার স্নেহ প্রেম-পূজা,
নাম ধরে তোর ডাকব মা যেই
যেথায় থাকিস আসবি ধেয়ে॥
আয় বিজয়া আয় রে জয়া উমার লীলা যা রে দেখে
আয় বিজয়া আয় রে জয়া
উমার লীলা যা রে দেখে।
সেজেছে সে মহাকালী
চোখের কাজল মুখে মেখে॥
সে ঘুমিয়েছিল আমার কোলে
জেগে উঠে কেঁদে বলে :
আমায় কালী সাজিয়ে দে মা
ছেলেরা মোর কাঁদছে ডেকে॥
চেয়ে দেখি মোর উমা নাই নাচে কালী দিগম্বরী;
হুংকার দেয় কোটি গ্রহের মুণ্ডমালা গলায় পরি।
আমি শুধু উমায় চিনি,
এ কোন মহা মায়াবিনী
কালো রূপে বিশ্বভুবন
আকাশ পবন দিল ঢেকে।
আয় মা চঞ্চলা মুক্তকেশী শ্যামা কালী
আয় মা চঞ্চলা মুক্তকেশী শ্যামা কালী।
নেচে নেচে আয় বুকে দিয়ে তাথই তাথই করতালি॥
দশদিক আলো করে
ঝঞ্ঝার মঞ্জীর পরে
দুরন্ত রূপ ধরে
আয় মায়ার সংসারে আগুন জ্বালি॥
আমার স্নেহের রাঙা জবা পায়ে দলে
কালো রূপ তরঙ্গ তুলে গগনতলে
সিন্ধু জলে আমার কোলে
আয় মা আয়।
তোর চপলতায় মা কবে
শান্ত ভবন প্রাণ-চঞ্চল হবে,
এলোকেশে এনে ঝড়
মায়ার এ খেলাঘর
ভেঙে দে মা আনন্দদুলালি॥
আয় মা ডাকাত কালী আমার ঘরে কর ডাকাতি
আয় মা ডাকাত কালী আমার ঘরে কর ডাকাতি।
যা আছে সব কিছু মোর লুটে নে মা রাতারাতি॥
আয় মা মশাল জ্বেলে ডাকাত ছেলে ভৈরবদের করে সাথি;
জমেছে ভবের ঘরে অনেক টাকা যশঃ খ্যাতি।
কেড়ে মোর ঘরের চাবি নে মা সবই পুত্রকন্যা স্বজন জ্ঞাতি॥
মায়ার দুর্গে আমার দুর্গা নামও হার মেনেছে;
ভেঙে দে সেই দুর্গ, আয় কালিকা তাথই নেচে।
রবে না কিছুই যখন রইবে ভাঁড়ে মা ভবানী
পাব সেদিন টানব না আর মায়ার ঘানি।
খালি হাতে তালি দিয়ে কালী বলে উঠব মাতি,
কালী কালী বলে খালি হাতে তালি দিয়ে উঠব মাতি।
এসো আনন্দিতা ত্রিলোকবন্দিতা
এসো আনন্দিতা ত্রিলোকবন্দিতা
করো দীপান্বিতা আঁধার অবনী মা।
ব্যাপিয়া চরাচর শারদ অম্বর
ছড়াও অভয় হাসির লাবণি মা॥
সারাটি বরষ নিখিল ব্যথিত
চাহিয়া আছে না তব আসা-পথ,
ধরার সন্তানে ধরো তব কোলে
ভোলাও দুঃখ-শোক চির করুণাময়ী মা॥
অটুট স্বাস্থ্য দীর্ঘ পরমায়ু
দাও আরও নির্মল বায়ু,
দশ হাতে তব আনো মা কল্যাণ,
পীড়িত চিত্ত গাহে অকাল জাগরিণী মা॥
ও মা তুই আমারে ছেড়ে আছিস
ও মা তুই আমারে ছেড়ে আছিস
আমি তাই হয়েছি লক্ষ্মীছাড়া।
তোর কৃপা বিনা শক্তিময়ী শুকিয়ে গেল ভক্তিধারা॥
ও মা তুই আশ্রয় দিলি না তাই
আমি যা পাই তা পথে হারাই
তোর রসময় ভুবন আমার শ্মশান হল, ও মা তারা॥
আজ আনন্দ-যমুনা ফেলে এসেছি তাই যমের দ্বারে,
ও মা জীবনে যা পেলাম না তা মরণ যদি দিতে পারে।
ও মা তত বাড়ে বুকের জ্বালা
পাই যত যশ খ্যাতির মালা॥
রাজপ্রাসাদে শুয়ে, মাগো, শান্তি কি পায় মাতৃহারা॥
ও মা, তোর ভুবনে জ্বলে এত আলো
ও মা, তোর ভুবনে জ্বলে এত আলো
আমি কেন অন্ধ মা গো–
দেখি শুধু কালো॥
সর্বলোকে শক্তি ফিরিস নাচি,
ও মা,আমি কেন পঙ্গু হয়ে আছি?
ও মা ছেলে কেন মন্দ হল, জননী যার ভালো।
তুই নিত্য মহাপ্রসাদ বিলাস কৃপার দুয়ার খুলি
কেন, চির-শূন্য রইল মা গো আমার ভিক্ষার ঝুলি?
বিন্দু বারি পেলাম না মা সিন্ধুজলে রয়ে,
তোর চোখের কাছে পড়ে আছি চোখের বালি হয়ে।
মোর জীবন্মৃত এই দেহে মা চিতার আগুন জ্বালো॥
ওমা খড়্গ নিয়ে মাতিস রণে, নয়ন দিয়ে বহে ধারা
ওমা খড়্গ নিয়ে মাতিস রণে,
নয়ন দিয়ে বহে ধারা।
(এমন) একাধারে নিষ্ঠুরতা কৃপা তোরই সাজে তারা॥
করে অসুর মুণ্ডরাশি
অধরে না ধরে হাসি
(তুই) জানিস মরলে তোর আঘাতে তোরই কোলে যাবে তারা॥
(মা) দুই হাতে তোর বর ও অভয়
আর দু-হাতে মুণ্ড অসি,
ললাটে তোর পূর্ণিমা চাঁদ
কেশে কৃষ্ণা চতুর্দশী।
(তুই) জননী প্রায় আঘাত করে,
দিস মা দোলা বক্ষে ধরে,
(তুই) পাপমুক্ত করার ছলে অসুর বধিস ভব-দারা॥
ওমা ত্রিনয়নী! সেই চোখ দে যে চোখ তোরে দেখতে পায়
ওমা ত্রিনয়নী! সেই চোখ দে
যে চোখ তোরে দেখতে পায়।
সে নয়ন-তারায় কাজ কী তারাযে
তারা লুকায় মা তারায়॥
চাইনে সে চোখ যে চোখ দেখে মায়া,
অনিত্য এই সংসারেরই ছায়া,
যে দৃষ্টি দেখে নিত্য তোরে
সেই দৃষ্টি দে আমায়॥
ওমা নিভিয়ে দে এ নয়ন-প্রদীপ
দেখায় যাহা দুঃখ-শোক,
এই আলেয়া পথ ভুলিয়ে
যায় মা নিয়ে নরলোক।
তোর সৃষ্টি চির-আনন্দময় না কি!
দেখব সে লোক, দে মোরে সেই আঁখি;
দেখে মা রোগ-মৃত্যু-জরা যা
তোর সন্তান সেই দৃষ্টি চায়॥