আমার মানস-বনে ফুটেছে রে শ্যামা-লতার মঞ্জরী
আমার মানস-বনে ফুটেছে রে
শ্যামা-লতার মঞ্জরী।
সেই মঞ্জুবনে ফিরছে রে তাই
ভক্তি-ভ্রমর গুঞ্জরি॥
সেথা আনন্দে দেয় করতালি
প্রেমের কিশোর বনমালী
সেই লতামূলে শিবের জটায়
গঙ্গা ঝরে ঝরঝরি॥
কোটি তরু শাখা মেলি
এই সে লতার পরশ চায়,
শিরে ধরে ধন্য হতে
এই শ্যামারই শ্যাম শোভায়।
এই লতারই ফুল সুবাসে
কোটি চন্দ্র সূর্য আসে নীল আকাশে
এই লতার ছায়ায় প্রাণ জুড়াতে
ত্রিলোক আছে প্রাণ ধরি॥
আমার মুক্তি নিয়ে কী হবে মা
আমার) মুক্তি নিয়ে কী হবে মা,
আমি তোরে চাই।
স্বর্গ আমি চাই না মা গো
কোল যদি তোর পাই।
মা কী হবে সে মুক্তি নিয়ে
কী হবে সে স্বর্গে গিয়ে,
যেথায় গিয়ে তোকে ডাকার
কোল যদি তোর পাই
আর প্রয়োজন নাই॥
যুগে যুগে যে লোকে মা প্রকাশ হবে তোর,
পুত্র হয়ে দেখব লীলা, এই কামনা মোর।
তুই মাখাস যদি মাখব ধূলি,
শুধু তোকে যেন নাহি ভুলি,
তুই মুছিয়ে ধূলি নিবি তুলি,
বক্ষে দিবি ঠাঁই॥
আমার শ্যামা বড়ো লাজুক মেয়ে
আমার শ্যামা বড়ো লাজুক মেয়ে
কেবলই সে লুকাতে চায়।
আলো-আঁধার পর্দা টেনে
(ভীরু) বালিকা সে পালিয়ে বেড়ায়॥
নিখিল ভুবন আছে তারে ঘিরে,
(আমার) মেয়ে তবু বসন খুঁজে ফিরে;
তারেযে দেখে সে এক নিমেষে
তারই মাঝে লয় হয়ে যায়॥
কোটি শিব ব্রহ্মা হরি অনন্তকাল গভীর ধ্যানে
তার সে লুকোচুরি খেলায় পায় না দিশা, পায় না মানে।
রবি-শশি গ্রহ-তারার ফাঁকে
যে দেখেছে পালিয়ে যেতে মাকে;
সে আপনাকে আর পায় না খুঁজে
মায়াবিনীর মহামায়ায়॥
আমার হৃদয় হবে রাঙাজবা, দেহ বিল্বদল
আমার হৃদয় হবে রাঙাজবা, দেহ বিল্বদল।
মুক্তি পাব ছুঁয়ে মুক্তকেশীর চরণতল॥
মোর বলির পশু হবে সর্বকাম,
মোর পূজার মন্ত্র হবে মায়ের নাম,
মোর অশ্রু দেব মা-র চরণে, সেই তো গঙ্গাজল॥
মোর আনন্দ মাকে দেব তাই হবে চন্দন,
মোর পুষ্পাঞ্জলি হবে আমার প্রাণ মন।
মোর জীবন হবে আরতি-দীপ,
মোর গুরু হবেন শংকর শিব,
মোর কাঁটার জ্বালা পদ্ম হবে শুভ্র সুনির্মল॥
আমায় আর কতদিন মহামায়া
(আমায়) আর কতদিন মহামায়া
রাখবি মায়ার ঘোরে।
মোরে কেন মায়ার ঘুর্ণিপাকে
ফেললি এমন করে॥
ও মা কত জনম করেছি পাপ
কত লোকের কুড়িয়েছি শাপ,
তবু মা তোর নাই কি গো মাফ
ভুগব চিরতরে॥
এমনি করে সন্তানে তোর
ফেললি মা অকূলে,
তোর নাম যে জপমালা
তাও যাই হায় ভুলে।
পাছে মা তোর কাছে আসি
তাই বাঁধন দিলি রাশি রাশি
কবে মুক্ত হব মুক্তকেশী
(তোর) অভয় চরণ ধরে॥
আমায় যারা দেয় মা ব্যথা, আমায় যারা আঘাত করে
আমায় যারা দেয় মা ব্যথা, আমায় যারা আঘাত করে,
তোরই ইচ্ছায় ইচ্ছাময়ী।
আমায় যারা ভালোবাসে বন্ধু বলে বক্ষে ধরে,
তোরই ইচ্ছায় ইচ্ছাময়ী॥
আমায় অপমান করে যে
মা গো তোরই ইচ্ছা সে যে,
আমায় যারা যায় মা ত্যেজে,
যারা আমার আসে ঘরে
তোরই ইচ্ছায় ইচ্ছাময়ী॥
আমার ক্ষতি করতে পারে অন্য লোকের সাধ্য কী মা,
দুঃখ যা পাই তোরই সে দান, মা গো সবই তোর মহিমা।
তাই পায়ে কেহ দলে যবে
হেসে সয়ে যাই নীরবে,
কে কারে দুখ দেয় মা কবে
তোর আদেশ না পেলে পরে
তোরই ইচ্ছায় ইচ্ছাময়ী॥
আমি নামের নেশায় শিশুর মতো ডাকি গো মা বলে
আমি নামের নেশায় শিশুর মতো
ডাকি গো মা বলে।
নাই দিলি তুই সাড়া মা গো
নাই নিলি তুই কোলে॥
শুনলে ‘মা’ নাম জেগে উঠি,
ব্যাকুল হয়ে বাইরে ছুটি,
ওই নামে মোর নয়ন দুটি
ভরে উঠে জলে॥
ও নাম আমার মুখের বুলি, ও নাম খেলার সাথি,
ও নাম বুকে জড়িয়ে ধরে পোহায় দুখের রাতি।
মা-হারানো শিশুর মতো
জানি ও-নাম অবিরত,
ওই নামের মন্ত্র আমার বুকে
কবচ হয়ে দোলে॥
আমি মুক্তা নিতে আসিনি মা ওমা, তোর মুক্তি-সাগর কূলে
আমি মুক্তা নিতে আসিনি মা
ওমা, তোর মুক্তি-সাগর কূলে।
মোর, ভিক্ষা ঝুলি হতে মায়ার
মুক্তামানিক নে মা তুলে॥
মা তুই, সবই জানিস অন্তর্যামী,
সেই চরণ-প্রসাদ ভিক্ষু আমি,
শবেরও হয় শিবত্ব লাভ, মা, তোর যে চরণ ছুঁলে॥
তুই, অর্থ দিয়ে কেন ভুলাস
এই পরমার্থ-ভিখারিরে,
তোর, প্রসাদিফুল পাই যদি মা
গঙ্গাধারাও চাই না শিরে॥
তোর, শক্তিমন্ত্রে শক্তিময়ী
আমি, হতে পারি ব্রহ্মজয়ী,
সেই, মাতৃনামের মহাভিক্ষু তোর মায়াতে নাহি ভুলে॥
আমি সাধ করে মোর গৌরী মেয়ের নাম রেখেছি কালী
আমি সাধ করে মোর গৌরী মেয়ের
নাম রেখেছি কালী।
পাছে লোকের দৃষ্টি লাগে
মাখিয়ে দিলাম কালি
তার, সোনার আঙ্গে মাখিয়ে দিলাম কালি॥
হাড়ের মালা গলায় দিয়ে
দিয়েছি তার কেশ এলিয়ে,
তবু, আনন্দিনী নন্দিনী মোর দেয় রে করতালি।
নেচে নেচে দেয় রে করতালি॥
চোখে চোখে রাখি তারে, পাছে সে হারায়;
তাই, কালো মেয়ের রূপ লেগেছে মোর আঁখিতারায়।
সে শ্মশান পথে বেড়ায় একা,
সহজে সে দেয় না দেখা (রে),
শুধু, বনের জবা জানে আমার মেয়ে রূপের ডালি॥
আমি সুন্দর নহি জানি হে বন্ধু জানি
বেহাগ দাদরা
আমি সুন্দর নহি জানি হে বন্ধু জানি।
তুমি সুন্দর, তব গান গেয়ে
নিজেরে ধন্য মানি॥
আসিয়াছি সুন্দর ধরণিতে
সুন্দর যারা তাদেরে দেখিতে
রূপ-সুন্দর দেবতার পায়ে
অঞ্জলি দিই বাণী॥
রূপের তীর্থে তীর্থ-পথিক
যুগে যুগে আমি আসি
ওগো সুন্দর, বাজাইয়া যাই
তোমার নামের বাঁশি।
পরিয়া তোমার রূপ-অঞ্জন
ভুলেছে নয়ন, রাঙিয়াছে মন,
উছলি উঠুক মোর সংগীতে
সেই আনন্দখানি॥