সেয়ানা হলে ছেলে ঘুষ খেয়ে মানুষের কাছ থেকে ফাঁকি দিয়ে মিথ্যা করে টাকা আনবে, এই ইচ্ছা নিয়ে তাকে লেখাপড়া শিখিও না। অনেক মা ছেলে যাতে অত্যাচার ও মিথ্যে করে পয়সা উপায় করতে সক্ষম হয় এ জন্যে রোজা রাখেন নামাজ পড়েন। এ সমস্ত মা বড় নীচ ও মূর্খ। মা হয়ে ছেলেকে অন্যের মায়ের বুকে ছুরি চালাতে বলা কি ভালো?
খেয়ে থাক, তবু ছেলেকে অন্যায় করে পয়সা উপায় করতে বলো না। হারাম রুজি খাওয়া সুদ গ্রহণের চেয়ে খারাপ কাজ। দেশের মৌলবীরা কেবল কোরানের অক্ষর নিয়ে টানাটানি করছেন, ভাবের ধার ধারেন না। তারা সুদখোরকে ঘৃণা করেন, কিন্তু অত্যাচারী ঘুষখোরের বাড়ি খেতে লজ্জা বোধ করে না। ঘুষখোর শুধু নিজের পেট ভরে তোলে; সে নীচ হৃদয়, অসরল ও অত্যাচারী, সে চোর ও মানুষের অবমাননাকারী, সুদখোর অপেক্ষা সে ছোট লোক।
ছেলেমেয়ে বড় হয়ে মানুষের মঙ্গল করবে, সে জ্ঞানী ও চরিত্রবান হবে এই শুভ ইচ্ছা নিয়ে ছেলেমেয়েকে লেখাপড়া শিখাবে। কোনো নীচ কল্পনা নিয়ে লেখাপড়া শিখাতে ইচ্ছা করলে খোদা তাকে বড় করবেন না। লেখাপড়া শিখে ছেলে একজন নীতি-জ্ঞানহীন মানুষ হয়ে উঠুক এরূপ ইচ্ছা করা ভালো মায়ের কাজ নয়। বড় কল্পনা অনেক মা-ই পোষণ করেন না, ছেলে শয়তান ও ঘুষখোর হলে বহু মা নিজের সুবিধায় অসন্তুষ্ট হন না বরং সন্তুষ্ট হন। আশ্চর্যের বিষয় এই সব মা নামাজ-রোজা করেন, তৃপ্তির সঙ্গে তসবিহ গনেন।
পরকালে মুক্তি পাবো, বেহেশতে যাবো, এ আশাও রাখেন!
মনে বড় কল্পনা নিয়ে ছেলেমেয়েকে জ্ঞানের পথে তুলে দাও, ছেলেমেয়েরা নিশ্চয়ই বড় হবে, সঙ্গে সঙ্গে বহু অর্থ ও সম্মান লাভ হবে। অর্থ ও সম্মানের কথা ভাবাও বিশেষ ভালো নয়–সেটা আপনা আপনি হবে। কর্তব্যের খাতিরে ছেলেমেয়েকে লেখাপড়া শেখাবে।
সেয়ানা পুত্রের সঙ্গে ভালো ব্যবহার করা উচিত। কর্কশ কথায় মহাজনদের মতো ছেলের কাছ থেকে টাকা চেয়ো না। নাতি-নাতনী ও পুত্রবধূকে ঘৃণা করলে ছেলের মন হাত ছাড়া হয়ে যায়। মানুষের মায়ের প্রতি যেমন কর্তব্য আছে স্ত্রীর প্রতিও তেমনি একটা কর্তব্য আছে। ছেলে বাপ-মাকে মনে মনে অত্যন্ত ভালবাসে, দুর্ব্যবহারের দ্বারা তাকে পর করে দিও না।
ছেলের বউকে কষ্ট জ্বালা দেওয়া মহাপাপ, কারণ সে এক দুর্বলা নারী, তার উপর আশ্রিতা। আশ্রিত শত্রুকেও সম্মান করা নিয়ম, অত্যাচারে খোদা নারাজ হয়।
বাপ-মা যদি দুর্ব্যবহার করেন, তবে সন্তানের উচিত তা সহ্য করা। স্বামী ও ছেলেপেলে কর্তব্য কথা বলার অবসর আমার এখানে নেই।
ছেলে যদি বাপ-মাকে না-বলে বিয়ে করে তাহলে কিছুমাত্র ক্রোধ প্রকাশ করো না। ক্রোধ প্রকাশ করলে বিপরীত ফল ফলবে। ছেলের বিবাহিত পত্নীকে তখন তখন নিয়ে আসবে। বয়স্ক ছেলেমেয়ের বিয়ে করবার অধিকার আছে। খোদার দেওয়া বিধানে বিরক্তি প্রকাশ করে লাভ নাই।
পুত্রবধূর সঙ্গে ভালো ব্যবহার করবে। তাকে উপহাস করো না, বধূর বাপ কি দিয়েছে, দিয়েছে সে কথা তুলো না। মিষ্টি কথায়, মধুর ভাষায় বধূকে আদব-কায়দা শেখাবে। সদ্ব্যবহার, মিষ্টি কথা এবং ধৈর্যের ফল, মনে হয় একটু দেরিতে ফলছে, কিন্তু এই ভাবেই ভালো ফল ফলে থাকে।
ছেলেকে মনের শান্তি হারিয়ে পরের চাকরি করতে উৎসাহ দিও না। যারা চাকরি করে না, সেই সব দেশের সাধারণ মানুষের মর্যাদা কম নয়-একথা কঠিন ভাষায় ছেলেকে বলে দিতে হবে। কৃষি এবং ব্যবসা অসম্মানের জিনিস নয়, একথাও তাকে জানাতে হবে। মুষ্টিমেয় সাহেবী পোশাকপরা রাজকর্মচারীরাই আদর্শ মহাপুরুষ, একথা ছেলে যেন না ভাবে। ছেলেকে আরও বলবে, মানুষ নিজে সম্মানের পিতা। নিজের সম্মান নিজেকে রচনা করতে হবে; পরের কাছে সম্মান নেই। শিক্ষিত নৈতিকশক্তিসম্পন্ন মানুষ যে কাজই করুক, যেখানেই দাঁড়াক, সেইখানেই তার সম্মান।
অনেক অপদার্থ লোক অন্যায় ক্ষমতার মালিক হয়ে নিজেকে কতগুলি লোকের কাছে সম্মানী করে তোলে সত্য, সেই সব যথেচ্ছারী, দাসচরিত্র অত্যাচারী সম্মানের জন্য ছেলের লালায়িত হওয়া ঘৃণার বিষয়। অসন্তুষ্ট পীড়িত-প্রাণ মানুষের উপর কর্তৃত্ব করতে ঘৃণা বোধ কর উচিত।
এক ভাই পড়ে গেলে বা আঘাত পেলে অন্য ভাই যেন তাকে সহানুভূতি দেখায়। ভালবেসে সহানুভূতি দেখাতে শিক্ষা দেবে।
ছেলেপেলে যদি পড়ে যায় বা হাত কেটে ফেলে, তাহলে ওমা কি হল বলে কেঁদে উঠ। কী হয়েছে, কিছু হয় নি, তুমি তো বীর-এইরূপ ধরনের কথা বলা ভালো। ছেলেপেলেকে মোটা কাপড় তৈরি করে দেবে। মোটা তহবন বা পাজামা ভালো, তারা যদি ময়লা কাপড়ে বেড়ায় তাহলে লজ্জাবোধ করা উচিত নয়। শিশুদের ময়লা কাপড়ে থাকার দোষ নেই। ১৪/১৫ বৎসর পর্যন্ত ছেলেমেয়েকে মোটে বাবু হতে না দেওয়া উচিত। সঙ্গীদের চটক দেখে অনেক সময় আবদার করবে, কিন্তু সে আবদার সহ্য করতে হবে।
বছর বছর ঈদের সময় কিছু কিছু ভালো জিনিস কিনে দিও। বিলাসদ্রব্য মোটেই ব্যবহার না শিখান ভালো। ছেলেমেয়েকে ভালো খেতে দিও-বাবু হবার পথ পরিষ্কার করে দিও না। কাপড়-চোপড় পরেই মানুষ শ্ৰেষ্ঠ হয় না–একথা তাকে মাঝে মাঝে বুঝিয়ে দেওয়া উচিত। কোনো ভালো কাপড়-চোপড়পরা লোকের সামনে ছেলেমেয়েরা অনেক সময় নিজেদের দীন মনে করে–এটা খারাপ। ছেলের মনের শান্তি যাতে অক্ষুণ্ণ থাকে সেদিকে লক্ষ থাকা আবশ্যক।