সন্তানকে বাল্যকাল হতে বীরত্ব শেখাতে হবে। কুকুর, বিড়াল ও শেয়ালের ভয় দেখাবে। বাঘকে মেরে এস, বন্দুক তলোয়ার নিয়ে লড়াই করতে যাও প্রভৃতি কথা বললে ছেলের মনের সাহস হয়, পরন্তু আত্মমর্যাদাজ্ঞান বাড়ে–সে কাপুরুষ ও দুর্বল হয় না।
শিক্ষক ছেলেমেয়েকে মারলে, অনেক অশিক্ষিত মা বাপ বিরক্ত হন। শিক্ষক বা কোনো মঙ্গলাকা ব্যক্তি যদি ছেলেমেয়েকে মারেন, বিরক্তি প্রকাশ করবে না।
শিক্ষক ছেলেমেয়েকে বিশেষ কোনো অপরাধে খুব প্রহার করলেও কিছু মনে করবে না। ছেলেমেয়ের কোনো কোনো ভুলকে ক্ষমা করতে হবে, কখন তাকে ভালবাসতে হবে, সে চিন্তাশীল শিক্ষক জানেন। ছেলেমেয়েকে মেরে ফেলা তার উদ্দেশ্যে নয়। না মেরে কাজ চললে তিনি কোনো ছেলেমেয়েকে মারেন না। প্রহার করে তার আনন্দ হয় না কিংবা ঐভাবে তিনি বীরত্বের পরিচয় দেন না।
সন্তানরা যে বই পড়ার উপযুক্ত তাই তাকে পড়তে দিও, লোভ করে ধৈর্য হারিয়ে বেশি পড়তে দিও না। তাতে তার জীবন মাটি হোক। গৃহে অবিবাহিতা শিক্ষক রাখবে না। বিচক্ষণ শিক্ষকই সন্তানের চরিত্র গঠনে সাহায্য করতে পারেন। রাত-দিন পড়বার জন্য শিক্ষক দরকার নেই। শিশুকে অনবরত পড়তে বাধ্য করবে না। তাতে তারা ভিতরে ভিতরে বিদ্রোহী হয় এবং প্রতারণা করবার স্বভাব তৈরি হয়। প্রবীণ শিক্ষকের সংস্পর্শে থাকলে ছেলের মন উন্নত হয়; তার ধারণাশক্তি ও দৃষ্ট প্রসার লাভ করতে থাকে।
কোনো প্রবীণ শিক্ষকের বাড়িতে যদি ছেলেকে .খা যায়, তাহলে বড় ভালো হয়। রাত-দিন পড়বার জন্যে ছেলে সেখানে থাকবে না। হাসি, খেলা, নৃত্য, চীৎকার যদি ছেলে করে, তা যেন ছেলে শিক্ষকের সামনেই করে।
শিশুর শয়তানী ও উল্লাস চীৎকার দেখে বিরক্ত হবে না; তাই বলে ঘরের মধ্যে বিছানার উপর মারামারি-শয়তানী ও ভালো নয়।
ছেলে যেন বাবু না হয়ে ওঠে। তাকে দিয়ে অনবরত কাজ করানো ভালো। তার দ্বারা হীন ও ছোট কাজ করাতে লজ্জা বোধ করবে না।
ছেলেদের গায়ে কখনও সাহেবি পোশাক দেবে না। সাহেবি পোশাক দিতে ঘৃণাবোধ করবে। এতে ছেলে নিজেকে ও নিজের জাতিকে ছোট ভাবতে শেখে।
ছেলেমেয়েরা অনেক সময় অন্ধকারে হাঁটে; কুকুর-বিড়াল দেখে ভয়ে চীকার করে ওঠে; ফলে নানা ব্যাধি হবার সম্ভাবনা।
অত্যধিক মুরুব্বী ভক্তি, কথায় কথায় পায়েল ধুলা মাথায় নেওয়ায় ছেলে-মেয়েদের, মন দুর্বল হয়ে ওঠে। সে মনে করে তার নিজের কোনো মূল্য নেই।
অনুন্নত সমাজ মানুষকে অত্যধিক বিনয়ী ও ভদ্র করে রাখতে চায়। বাড়িতে যদি কোনো প্রতিবেশীর ছেলেমেয়ে আসে, ছেলেমেয়েকে তার হাত ধরে সমাদর করে বসাতে শিক্ষা দেবে।
বাপকে ছেলেমেয়ে যেন ভয় করে, সে দিকে মায়ের দৃষ্টি থাকা চাই। বাপের চরিত্রবল থাকলে সন্তান তাকে ভয় করবেই। যে মায়ের চরিত্রবল নাই সে মাকে ছেলেমেয়ে ভালো করে না।
নিম্নলিখিত কারণে ছেলেমেয়ে মাকে ভয় করে না, এমনকি বার্ধক্যে মায়ের অযত্ন করে।
১. মায়ের চরিত্রবলের অভাব।
২. মা যদি কথায় কথায় সামান্য কাজে বা তুচ্ছ কারণে ছেলেমেয়ের উপর লাঠি নিয়ে ওঠেন।
৩. মা যদি বাচালতার পরিচয় দেন।
৪. একই সময় কোনো হুকুম দেওয়া এবং তৎক্ষণাৎ দ্বিতীয় হুকুম দেওয়া।
৫. ছেলেমানুষের মতো ছেলেমেয়ের সঙ্গে অনবরত রাগারাগি করা।
৬. সর্বদা নিজে না খেয়ে সন্তানকে খাওয়ান; এর ফলে ছেলেমেয়ে মনে করে–মা মোটেই খায় না বা তার খাবার কোনো প্রবৃত্তি নেই। মা অপরাধিনী, সে শুধু খাওয়াতে পরাতে এবং ভালবাসতে এসেছে, ভালবাসা পেতে বা খেতে তিনি জানেন না।
৭. সন্তানের সামনে স্বামীর সঙ্গে ঝগড়া করা; স্বামীর কর্তব্য নয় ছেলেমেয়ের সামনে স্ত্রীর সঙ্গে কখনও কোনো বচসা করেন।
৮. প্রথমেই রেগে কোনো হুকুম দেওয়া। আগে কোনো কথা না বলেই হঠাৎ ছেলেমেয়ের উপর রেগে ওঠা। এতে মায়ের ভয়ঙ্কর অসম্মান হয়। সন্তানের সঙ্গে হামেসা রাগারাগি করা বড়ই ভুল। তার বহু দুর্বলতাকে ক্ষমা করতে হবে। ছেলেমেয়েকে হামেসা কথায় প্রহার করলে, সে অমানুষ ও পিশাচ হয়ে ওঠে। তার অনেক অন্যায় মেনে নিতে হবে।
৯. বুদ্ধিমান ও সেয়ানা হবার আগে অর্থাৎ ৫/৬ বৎসর বয়স পর্যন্ত শিশুর কাছে কোনো বক্তৃতা দেবে না। বক্তৃতা ও জ্ঞানের কথাকে শিশুরা প্রলাপ মনে করে। কারণ দেখিয়ে ছেলেমেয়েকে কোনো কাজ করতে বলবে না, কারণ দেখালে সেও কারণ দেখাতে চেষ্টা করে, অবাধ্য হবার পথ খোঁজে। সোজা হুকুম দেবে। তাহলে কাজ হবে।
১০. অনবরত ছেলেমেয়েকে ঠোনা দিতে নেই।
১১. মারবার সময় কোনো কথা বলবে না। শুধু একটি কথায় তার অপরাধটা কী জানিয়ে দেবে। যখন তখন মারবে না, মারলে বেশি করে মারবে। চিক্কণ কঞ্চি ছাড়া কিল ঘুষি দেবে না। অসতর্ক আঘাতে শিশু হঠাৎ মরে যেতে পারে। একই বিষয় নিয়ে কখনও বারে বারে গালি দিও না। মারবার সময় কথা বললে মারার মূল্য নষ্ট হয়। শাসন বা প্রহার থেমে থেমে হওয়া বড় দোষের। ছেলেমেয়েকে সোজা কথায়, বাজে কথা না। বলে হুকুম দেবে, বাজে কথা বলা দোষ। ছেলেমেয়েকে আদর করা, সোহাগ করা, এতে ছেলেমেয়ের ভিতর মনুষ্যত্বের বীজ অঙ্কুরিত হতে থাকে। ছেলেমেয়ে যদি রাগ করে, তবে মারবার এক ঘণ্টা পরে তাকে ডেকে খাওয়াবে।