স্বামীর ভাত খেতে বিলম্ব হলে, নিজেরও স্বামীর জন্য অপেক্ষা করা ভালো। মুখে যাই বলুন মনে মনে স্ত্রীর এই অপেক্ষায় স্বামী সন্তুষ্ট হন।
হালিমা : খুব যদি ক্ষুধা লাগে তা হলেও কি স্বামীর জন্য বসে থাকতে হবে?
কুলসুম : স্বামীর প্রতি সাধারণত স্ত্রীরা খুব ভালবাসা পোষণ করেন। স্বামীর জন্য অপেক্ষা করলে তাদের কোনো কষ্ট হয় না। বিশেষ কষ্ট হলে বা স্বামীর কোনো জায়গা হতে ফিরে আসবার কোনো কথা আগে না হয়ে থাকলে, স্বামীর আগে খাওয়া যেতে পারে।
স্বামী কোনো জায়গা হতে বাড়িতে এলে স্ত্রীর কর্তব্য উঠে দাঁড়ান, দাসীর মতো সম্ভ্রম দেখাবার জন্য নয়, বন্ধুর ন্যায় প্রীতি-ভালবাসার চিহ্ন দেখাবার জন্যে স্বামীর হাতে কোনো জিনিস থাকলে নিজের হাতে নেবে। হাসিমুখে তার কুশল জিজ্ঞাসা করবে। কথা না বলে আপন মনে দূরে, মাথা গুঁজে থাকা অন্যায়। সাদর সম্ভাষণ ও প্রীতির আহ্বান জানান ভালো। স্ত্রীর মনে করা উচিত নয়–এসব করলে তার সম্মান নষ্ট হবে শরীরের রূপ অপেক্ষা কথা ও আলাপ ব্যবহারের রূপ বেশি।
কুলসুম আবার বলিলেন–স্বামীর গায়ের বা পরনের কাপড় যদি ময়লা হয় তা হলে তার কোনো কথা বরবার আগে সেগুলি নিজ হাতে পরিষ্কার করে দেবে। পরিষ্কার করবো কি না, এ কথা স্বামীকে জিজ্ঞাসা করবে না। এসব ব্যবহারে স্বামী সন্তুষ্ট হন।
হালিমা : দরিদ্র পরিবার হলে এত সাবান কোথা হতে পাওয়া যাবে?
কুলসুম : কাপড়, শরীর ও ঘর-দুয়ার পরিষ্কৃত রাখতেই হবে। যেমন করে হোক পরিষ্কার ও পরিচ্ছন্ন থাকা চাই।
কুলসুম পুনরায় কহিলেন–স্বামী কোনো কথা জিজ্ঞাসা করলে তৎক্ষণাৎ উত্তর দিতে হয়। অনেক বধূর অভ্যাস আছে তারা কথার উত্তর দিতে দেরি করেন, নিজের গৌরব প্রচার করবেন-বস্তুত এইভাবে গৌরব বা মান বাড়ে না।
স্বামী যদি কোনো রকমে বেদনা পান, তা হলে তার প্রতি সহানুভূতি প্রকাশ করবে। স্বামীর হাত কাটলে বা কোনো আঘাত পেলে তাকে কিছু সমবেদনার কথা জানান ভালো। স্বামী যদি স্ত্রীর কোনো ব্যবহারে অসন্তুষ্ট হন, কিংবা কোনো কাজের জন্য স্ত্রীকে দোষারোপ করেন, তা হলে স্ত্রীর মুখ বুজে বসে থাকা উচিত। নিজের ভুল নিজে স্বীকার করা ভালো। স্বামীর দোষারোপ অন্যায় হলে তাকে বুঝিয়ে নিজের নির্দোষিতা প্রমাণ করা চাই। চুপ করে বসে থাকা–যারপরনাই বোকামি। জ্ঞানী ও বুদ্ধিমতীর মতো যদি স্বামীর দোষ ধরে দেওয়া। যায় তা হলে স্বামীর অসন্তুষ্ট হবার কারণ নেই। কথায় কোনো ক্রোধ বা দুঃখের আবেগ যেন ফুটে বের না হয়। ধীর প্রশান্ত কণ্ঠে যুক্তির সঙ্গে কথা বললে মানুষ তাকে শ্রদ্ধা করে চুপ করে বসে থাকা ভাগ্যহীনার লক্ষণ।
স্বামী যদি কোনো কারণে ক্রুদ্ধ হয়ে বসে থাকেন তা হলে তাকে দেখে দূরে থাকতে নেই। তাঁর কাছে যেয়ে কথা বলবে ও আলাপ করবে। যে অতি বড় লম্পট, সেও স্ত্রীর সদ্ব্যবহার ও মধুর আলাপে মনে মনে সন্তুষ্ট হয়। সাত্ত্বিক জিনিসের জন্য মানুষের আত্মার একটা স্বভাবজাত ক্ষুধা আছে। প্রবৃত্তির মুখে আনন্দ যোগাবার জন্যে যে পতিতার পা চাটতে পারে, কিন্তু হৃদয়ের পুণ্য ক্ষুধা ও আনন্দের জন্য সে স্ত্রীর কাছে আসা! অতি হীন ব্যক্তির ভিতরের একটি সাত্ত্বিক ক্ষুধা থাকে, সেই ক্ষুধার নিবৃত্তি হয় সদ্ব্যবহারে, করুণা ও মায়ায়-যা জননী ও স্বাৰ্ব্ব স্ত্রীর অঞ্চলে জড়ানো থাকে। যা সকল স্থানে পাওয়া যায় না।
স্বামী যদি বাজার বা হাট হতে কোনো জিনিস ক্রয় করে আনেন তা দেখে কখনও ঘৃণা বা অবজ্ঞা প্রকাশ করবে না, প্রশংসা করবে। অগ্রসর হয়ে তার হাত হতে জিনিসপত্র নামিয়ে নেবে।
স্বামী যদি নিকটে আসেন তা হলে মাথা তুলে কিছু কথা আছে কি না জিজ্ঞাসা করবে।
স্বামী যদি কোনো দুঃখ কষ্টের কথা বলতে থাকেন, তা হলে আপন মনে নিজের কাজে ব্যস্ত থাকবে না। স্বামীর কথা শুনতে ও বুঝতে চেষ্টা করবে। তার কথার উত্তর দেবে।
স্বামী যদি কোনো অন্যায় বা পাপ কাজে রত হতে যান, যদি তিনি নীচ ও হীন প্রকৃতির লোক হন তা হলে, স্ত্রীর কীভাবে তাঁর সঙ্গে চলতে হবে তা বলা বড়ই শক্ত। সর্বদা মিষ্ট কথায়, স্নেহ মায়ায় স্বামীকে উন্নত করতে চেষ্টা করবে। তাকে সাধু পবিত্র ও পর দুঃখকাতর হতে উদ্বুদ্ধ করবে। দরিদ্র হওয়া ভালো, তবু পাপের পথে, অন্যায়ের পথে হাঁটা কর্তব্য নয়, এই কথা স্বামীকে বারবার শুনাবে। স্ত্রীর মঙ্গল শক্তিতে স্বামীর চিত্ত মহত্ত্বে ভরে উঠতে পারে। বহু স্বামী ঘুষ খেয়ে, অন্যায় করে সাংসারিক অবস্থাকে উন্নত করতে চেষ্টা করে। স্বামীর এই প্রকার উন্নতিতে স্ত্রীর সহানুভূতি না থাকা নিতান্ত দরকার। দালান দিয়া কাজ নেই। গয়না ও শাড়ী দিয়ে কি লাভ? যদি তাতে স্বামীর আত্মা কলঙ্কিত হয়। স্বামী যাতে অন্যায় না করে, হারামি পয়সা উপায় না করেন, সেদিকে স্ত্রীর লক্ষ্য থাকা আবশ্যক। মানুষের আশীর্বাদ পবিত্রতার মঙ্গল শক্তিতে পরিবার যাতে শান্তিপূর্ণ হয়ে ওঠে স্ত্রীর সেই চেষ্টা করা কর্তব্য। স্বামীকে পাপ পথে টেনে নেবার জন্যে স্ত্রী যেন সহায়ক না হয়ে দাঁড়ান।
হালিমা : স্ত্রীর অনুরোধ ও অশ্রুজলে স্বামী যদি অন্যায়ের পথ পরিত্যাগ না করেন?
কুলসুম : তা হলে স্ত্রীর মনে অসীম দুঃখ এসে উপস্থিত হবে। সেরূপ স্বামীকে কিরূপ ভাবে গ্রহণ করতে হবে, তা চিন্তার কথা। স্ত্রীলোকের জীবনে এর মতো দুঃখ আর নেই। পাপীও অপদার্থ স্বামীর সঙ্গে বাস করে বহু পবিত্র হৃদয় নারীর আত্মার পতন হয়। স্বামীর আত্মার পতন হলেও স্ত্রীর নিজের আত্মার যেন পতন হয়। স্বামীর নীচতার প্রতি ভিতরে ভিতরে সহানুভূতি পোষণ করবে না। স্বামীকে ভালো ও উন্নত করতে চেষ্টা করবে, না পারলে কি করা যায়? নিজের দুঃখ বেদনা নিজের ভিতরে গোপন করে রাখাই ঠিক।