খুঁজে পায় না। খুব কষ্ট হয়। অনেকদিন আগে মাহবুবকে বিছানা থেকে ফেলে দিয়েছিল আবু। পড়ে গিয়ে মাথা ফেটে দরদর করে রক্ত পড়ছিল তার। তারপর রাতে ভীষণ জ্বর এসেছিল। সেই কবে, সেদিন যেন ঠিক এমনি কষ্ট হচ্ছিল আবুর। বাবা তো তাকে কিছু বলেননি।
তবু রাতে ঘুমোতে গিয়ে, তার ভেতর থেকে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল বাবার বুকে। বলেছিল, ও মরবে জানলে আমি কক্ষনো ধাক্কা দিতাম না। সত্যি বলছি, সত্যি বলছি। সেদিন বাবা তার পিঠে হাত বুলিয়ে অভয় দিয়ে বলেছিলেন, মরবে না রে। তুই দৌড়ে গিয়ে ওকে চুমো দিয়ে আয়। ভালো হয়ে যাবে।
আবু পাগলের মতো আবার হাত বাড়ায়। উন্মত্তের মতো সারাটা বাগানে খুঁজে ফেরে। নদীটা কুয়াশা। সেই কুয়াশার অন্তঃস্থলে অভিমানী দীপ্তির মতো কার অনুভব যেন লুকিয়ে থাকে। সহস্র অশ্রুতে বিকৃত কণ্ঠে হাহাকার করা ডাক দিয়ে উঠে আবু, বীথি, বীথি–ই, বীথিরে। নামহীন কবেকার দেখা সেই নদীটার তীর থেকে তীরে ভোরের আলো কুয়াশার ভেতরে নৌকো থেকে নৌকোর দিকে ডাকের মতো ধ্বনিটা আছড়ে পড়ে আবুর চারদিকে। কুয়াশা যেন থরথর করে ফেটে ফেটে পড়তে চায়।
লক্ষ্মীবাজার, ঢাকা
১৯৬০