বৃহস্পতিবার, মে 15, 2025
  • Login
BnBoi.Com
No Result
View All Result
No Result
View All Result
BnBoi.Com
No Result
View All Result

জোনাকিদের বাড়ি – স্মরণজিৎ চক্রবর্তী

Jonakider Bari by Smaranjit Chakraborty

মাহির দেখে, সবাই যেন দিলীপ কুমার! ট্র্যাজিক হিরো! সবারই এত্ত বড়-বড় কষ্ট। আর সেই সব সহ্য করে বেঁচে থেকে যেন গোটা পৃথিবীকে উদ্ধার করে দিচ্ছে। মরে যেতে পারলে যেন সবাই বেঁচে যেত। এদিকে পেছনে লঙ্কাপটকা ফাটলে খাটের তলায় গিয়ে লুকোবে সব।

হুঃ! হতে পারে ছাব্বিশ বছর বয়স, কিন্তু জীবন কম দেখল না মাহির। যার বাপ নিজের মাসির সঙ্গে পালায় ছোটবেলায়! যাকে আধখ্যাপা, অসুস্থ একটা ভাই আর ক্লান্ত বিষণ্ণ মাকে টেনে বেড়াতে হয়, সে জানে জীবনের কোন ধানে কী ধরনের চাল হয়।

সুমিত ওকে ভালবাসে। বন্ধু হিসেবেই দেখে। কিন্তু ওর এই টাকা ধার দেওয়ার ভঙ্গিটা ভাল লাগল না মাহিরের। তবে কিছু বলল না ও। আসলে ও কিছুই বলে না। বোঝে, এই পৃথিবীতে কাউকে কিছু বলে কিছু হয় না। যে যা করার সেটাই করে।

সুমিত বাইকে উঠে বলল, “তুই এমন মুখ করে থাকিস না। চিয়ারফুল থাক। পরশু কিন্তু ভাইটাল ম্যাচ। জিততে হবে। জিতলে…”

“জিতলে?” মাহির তাকাল সুমিতের দিকে।

সুমিত বলল, “সুপার ডিভিশনের টিম থেকে স্পটাররা আসবে। অল্প টাকায় ভাল ছেলে খুঁজছে ওরা।”

মাহিরের হাসি পেল। এ আর-এক মিথ্যে কথা। ম্যাচের আগে পতাদা এমন একটা কথা ছড়ায়। আগেও হয়েছে। আসলে কেউই আসে না। কারও খেয়েদেয়ে কাজ নেই ওদের স্পট করতে আসবে। যেন ফুটবলারের অভাব পড়েছে!

ও বলল, “স্পনসরের কথাটা ধরতে পারলি আর এটা পারলি না?”

সুমিত বাইকে বসে স্টার্ট দিয়ে বলল, “এবার আর বুলু দিচ্ছে না। আজ বিকেলে শুনেছি ফোনে কথা বলতে। ওরা আসবে। তুই দেখিস।”

মাহির আর কিছু বলল না। এটাও পতাদার চাল। একে ওকে শুনিয়ে কথা বলার ভান করে। জানে, তা হলে খবর ছড়াবেই। ওসবে আর ভুলছে না মাহির।

সুমিত বেরিয়ে যাওয়ার আগে বলল, “শোন, যদি কাল বুটের ব্যবস্থা না হয় আমি করে দেব। তুই ভাবিস না। শুধু পরশু ইউনিয়নের লেফট আউটটাকে দেখে নিস। মালটার ব্যাপক স্পিড! আর আউট স্টেপে একটা অদ্ভুত ফল্‌স আছে। কেটে যাস না ভাই।”

সুমিতের বাইক গাড়ির তোড়ে নিমেষের মধ্যে মিলিয়ে গেল। মাহির দীর্ঘশ্বাস ফেলল। দূরে ওদের ক্লাবঘরের আলো জলছে। মাহির জানে পতাদার সঙ্গে আরও কয়েকজন আছে ভিতরে। ওরা অনেক রাত অবধি থাকে।

আশপাশে কেউ নেই। এবার ব্যাগের ভিতর থেকে ওর রাবার-ব্যান্ড লাগানো মোবাইলটা বের করল মাহির। বোতাম টিপল। আর সঙ্গে-সঙ্গে জোনাকি রঙের আলো জ্বলে উঠল স্ক্রিনে। প্রায় ছ’টা বাজে। চারদিক অন্ধকার হয়ে গিয়েছে। টিটিও বোধহয় এসে পড়েছে জাহাজবাড়ির সামনে। তবে বাড়িটা এখান থেকে কাছেই। পা চালিয়ে হাঁটলে বড়জোর মিনিটচারেক লাগবে।

মোবাইলটাকে এবার পকেটে ঢোকাল মাহির। তারপর ব্যাগটা কাঁধে ফেলে হাঁটতে লাগল।

এদিকটায় আলো থাকলেও সামান্য আবছায়াও আছে। আসলে চারিদিকে অনেক গাছ। মা বলে এই রাস্তাটায় আগে নাকি আরও অনেক গাছ ছিল। কিন্তু এখন কিছুটা কমেছে। কে জানে! এসব নিয়ে মাথা ঘামায় না মাহির। এতে তো আর ভাত জুটবে না! শহরটা সুন্দর থাকুক বা কুৎসিত তাতে ওর কী? মানুষরাই যদি ভাল না থাকে তা হলে এসব ওপরের চটকবাজি দিয়ে কী হবে?

পাশ দিয়ে হুসহাস করে গাড়ি চলে যাচ্ছে। আলতো হাওয়া দিচ্ছে গোলপার্কের দিক থেকে। আচমকা আকাশে বিদ্যুৎ ঝিলিক দিয়ে উঠল। এই রে, বৃষ্টি হবে নাকি?

আকাশের দিকে তাকাল মাহির। বিকেলে তো মেঘ ছিল না! তবে? এবার পা চালাল ও। ভিজলে চলবে না।

সিগনাল টপকে ওই দিকে ফুটপাথে উঠে বাঁ দিকে কিছুটা হাঁটলেই জাহাজবাড়ি। সামনেই টিটি দাঁড়িয়ে ছিল। ওকে দেখে ‘গুরু’ বলে এগিয়ে এল।

টিটির চেহারাটা স্কেল দিয়ে টানা লাইনের মতো। রোগা। বেঁটে। কালো। শুধু মাথায় ঝাঁকড়া চুল। কেমন যেন ছোট ঝুলঝাড়ুর মতো দেখতে! আর সব সময় মাথায় একটা হেয়ার ব্যান্ড পরে থাকে। আজও পরে আছে।

টিটি নেশা করে খুব। মানে গাঁজা, চরস, হেরোইন থেকে আঠা, সব ধরনের নেশায় টিটি ক্যাপ্টেন!

মাহির সামান্য হাসল। ভোল্টেজ কমে যাওয়া বাল্‌বের মতো হাসি। মাথার ভিতরটা কেমন যেন গুমোট হয়ে আছে। মনখারাপের ছোট্ট ধূপ কে যেন জ্বালিয়ে দিয়ে গিয়েছে মনের কোণে!

“কী কাকা, এমন ড্যামেজ চোপা নিয়ে ঘুরছ কেন?” টিটি খ্যালখ্যাল করে হাসল।

মাহির দেখল লিলিপুটের মতো টিটিকে। অনেকটা যেমন মানুষ দোতলার বারান্দা থেকে একতলায় দাঁড়িয়ে থাকা মানুষকে দেখে, সেভাবে।

টিটি থমকে গেল। বুঝল হাওয়া খারাপ। মাথার ব্যান্ডটাকে ঠিক করে নিয়ে টিটি এবার সংযত গলায় বলল, “কী রে, এমন ডাউন মেরে আছিস কেন?”

মাহির সময় নিল একটু। একটা দীর্ঘশ্বাস আসছিল, সেটাকে মাঝপথে আটকে দিয়ে বলল, “না রে, কিছু না। বল, কী জন্য এখানে ডেকেছিস?”

টিটি ছাড়ল না। কাছে ঘেঁষে এসে বলল, “কী হয়েছে তোর? শালা আজও কি রেশমি এসে ঘাড়ে চেপেছে! শালা, এই জন্য প্রেম মারাতে নেই! আমার কাকা সোজা হিসেব। লাগাও আর ছাড়ো! তলপেটই ঠিক আছে। কেস বুক অবধি গড়িয়েছে কী তোমার মারা গেল।”

মাহির অন্যদিন হলে হাসত। কিন্তু আজ হাসল না। আসলে কোথায় যেন টিটি ঠিক। সব কষ্ট-দুঃখগুলোই যেন একটাই নদীর সঙ্গে বাঁধা। সব জল শেষমেশ সেই নদীতে গিয়েই যেন পড়ে! নিজেকে মনে মনে একটা তাগড়া গালি দিল মাহির। এসব বিলাসিতা ওকে মানায় না। কোথাকার কে একটা মেয়ে, ওকে কাঁচকলা দেখিয়ে আধবুড়োর সঙ্গে পালাল, সেটা নিয়ে ছিরকুটে মেরে পড়ে থাকবে কেন ও? জীবনে কাজ নেই? ওর পাড়ার প্রায় সবাই কিছু না-কিছু করে এখন। কেউ ওর মতো এমন মায়ের ঘাড়ে বসে খায় না! এখন জীবনে সেই দিকেই লক্ষ দিতে হবে ওকে। এই ফুটবল-টল খেলে কিছু যে হবে না সেটা বুঝতে পারছে। বড় চেহারাটাই আছে ওর, স্কিল তেমন নেই। নিজেই বোঝে। কিন্তু কীভাবে যে রোজগার করা যায়! ওই যে বিলবোর্ডের বিজ্ঞাপন থেকে ঝাঁপিয়ে পড়ছে জীবন, তেমন জীবন কিন্তু ও কল্পনা করে না। ওর একটা সাধারণ জীবন হলেই হয়। প্রতি মাসের শেষের ওই অন্ধকার সপ্তাহটা আর নিতে পারে না ও। খুব কষ্ট হয় ওরকম আধপেটা খেয়ে থাকতে। মায়ের গালাগাল খেতে।

Page 9 of 213
Prev1...8910...213Next
Previous Post

প্রাচীন বাংলার গৌরব – হরপ্রসাদ শাস্ত্রী

Next Post

স্বপন বন্দ্যোপাধ্যায়ের গল্প

Next Post

স্বপন বন্দ্যোপাধ্যায়ের গল্প

শিবতোষ ঘোষের গল্প

মন্তব্য করুন জবাব বাতিল

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

সাম্প্রতিক প্রকাশনাসমূহ

  • তিন গোয়েন্দা ভলিউম ১১৫: ভূমিকম্প – শামসুদ্দীন নওয়াব
  • তিন গোয়েন্দা ভলিউম ১১৮: বিভীষিকার প্রহর – রকিব হাসান
  • তিন গোয়েন্দা ভলিউম ১১৭: বড়দিনের ছুটি – রকিব হাসান
  • তিন গোয়েন্দা ভলিউম ১১৭: আলাস্কা অভিযান – রকিব হাসান
  • তিন গোয়েন্দা ভলিউম ১১৭: আমিই কিশোর – রকিব হাসান

বিভাগসমূহ

  • আত্মজীবনী
  • ইতিহাস
  • উপন্যাস
  • কবিতা
  • কাব্যগ্রন্থ
  • গল্পের বই
  • গোয়েন্দা কাহিনী
  • ছোট গল্প
  • জীবনী
  • দর্শন
  • ধর্মীয় বই
  • নাটকের বই
  • প্রবন্ধ
  • বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী
  • বৈজ্ঞানিক বই
  • ভূতের গল্প
  • রহস্যময় গল্পের বই
  • রোমাঞ্চকর গল্প
  • রোম্যান্টিক গল্পের বই
  • শিক্ষামূলক বই

© 2023 BnBoi - All Right Reserved

No Result
View All Result

© 2023 BnBoi - All Right Reserved

Welcome Back!

Login to your account below

Forgotten Password?

Retrieve your password

Please enter your username or email address to reset your password.

Log In