নীচ থেকে আসা এই ভাষণ শুনে অবাক হয়ে গেল নোঈ। ছাদে পাশে বসা স্মরণের দিকে তাকিয়ে বলল, “এটা কে? কোথা থেকে পাড়ায় ধরে আনলি?”
স্মরণ হাসল, “আগে খেলনা বিক্রি করত। এখন চা ধরেছে। তাও পাড়ায়-পাড়ায় মাইক নিয়ে। নিশ্চয় কোনও মিউজ়িয়াম ভেঙে বেরিয়ে আসা পাবলিক!”
নোঈ হাসল সামান্য। তারপর দীর্ঘশ্বাস ফেলে কথা ঘুরিয়ে বলল, “পুশকিনদার প্লেন উড়ে গেছে, না রে?”
স্মরণ বলল, “কীভাবে যাবে? যা বেঁধে রেখেছিস!”
“দূর, বল না!”
“হ্যাঁ রে…” স্মরণ আকাশের দিকে হাত তুলল, “ওই দেখ!”
নোঈ দেখল সন্ধের গাঢ় নীল আকাশের অনেক ওপর দিয়ে উড়ে যাচ্ছে একটা প্লেন। ছোট-ছোট আলো জ্বলছে তার শরীরে! ও অস্ফুটে বলল, “জোনাকি!”
“সামনেও, ওই দেখ ওই দূরের বড়-বড় বাড়িগুলো দেখ!” স্মরণ হাত তুলল, “আমাদের চারিদিকেও দেখ কেমন জোনাকিদের বাড়ি! ছোট-ছোট আলো। তার তলায় ঢেকে থাকা কত গল্প! জীবন! আমার জেঠুও এমন জোনাকিদের বাড়িতে থাকত, জানিস। কিন্তু কেউ থাকতে দিল না!”
“তোর জেঠু? মানে?” নোঈ তাকাল অবাক হয়ে।
“হ্যাঁ, আমার জেঠু। বাবার চেয়ে বয়সে অনেক বড়। বাবার বড়দা। বেঞ্জামিন কূজন সরকার। যার গল্প শুনলি, সেই কাজুদা!”
নোঈ অবাক হয়ে তাকিয়ে রইল স্মরণের দিকে! বলল, “তোর নাম তো স্মরণ সরকার! তাই না?”
স্মরণ হাসল, “আমার পুরো নাম বেঞ্জামিন স্মরণ সরকার! জেঠুর নামে নাম রেখেছিল বাবা! আর দেখ জেঠুর মতো আমরাও জোনাক বাড়িতেই থাকি! তাই না?”
নোঈ হাসল। তারপর হাতের পাতায় ধরা পুশকিনের দেওয়া জোনাকিটা তুলে ধরল সামনে! করতল ভরিয়ে জোনাকি জ্বলছে। নোঈ মাথা তুলে আকাশের দিকে তাকাল। এমনই আকাশ দিয়ে ওর প্রিয় মানুষ কোনও এক আলোর যানে চেপে পাড়ি দিচ্ছে বহু দূরের দেশে। নোঈ দেখল, সন্ধে নেমে আসছে মাথার ওপর। জ্বলে উঠছে তারা। দেখল, দূরের বাড়িঘরের জানলায়-জানলায় জ্বলে উঠছে সার-সার টিপটিপে আলো। ওসব কাদের গল্পের আলো? কাদের জীবনের ফুলকি? কারা ভালবাসায়, বেদনায় সাজিয়েছে এই সব আলোর সংসার? সমস্ত ভালবাসা দিয়ে, বুকে করে, কারা ঝড়বাদলে আগলে রাখছে এই সব আলোর ফোঁটা? এই সব বাড়িঘর— এসব কাদের বাসস্থান! কারা থাকে এখানে? কারা ক্রমাগত মরে গিয়েও বেঁচে ওঠে আবার! ভালবাসে আবার! বিশ্বাস করে আবার! আবার ঝুলন সাজায়! এ কাদের ঝুলন-শহর? কাদের এই বাড়ি? এ কি সত্যি জোনাকিদের বাড়ি?