নারীকণ্ঠ : অভিনন্দন কেন? আমি কী করেছি?
ওসি : আপনার বিয়ের খবরটা কাগজে পড়লাম। হাওয়া থেকে পাওয়া। ছবিসহ নিউজ। আপনাকে সুন্দর দেখাচ্ছে।
নারীকণ্ঠ : আপনি মনে হয় নিয়মিত কাগজ পড়েন না। নিয়মিত কাগজ পড়লে জানতেন যে মাসে একবার আমার বিয়ে হয়।
ওসি : Oh my God! বিয়ে করেন নি? আমার বুক থেকে মনে হচ্ছে দুই মণ ওজনের গ্রানাইট পাথর নেমে গেছে।
নারীকণ্ঠ : আমার বিয়ে হয় নি। তাতে আপনার বুক থেকে পাথর নামল কেন?
ওসি : না মানে ইয়ে, আমি আপনার ভক্ত তো। ভক্তদের কাছে নায়িকার বিয়ে হওয়া দুঃসংবাদ। আমি কি বোঝাতে পেরেছি?
নারীকণ্ঠ : জি পেরেছেন। আচ্ছা শুনুন আমি খুবই অসুস্থ। জ্বর। একটু আগে থার্মোমিটার দিয়ে মেপেছি—একশ দুই। আপনি কি আমাকে দেখতে আসবেন?
ওসি : এক্ষুনি আসছি। ঠিকানা বলুন।
নারীকণ্ঠ : খালি হাতে আসবেন না। ফুল আনবেন। আজ ভ্যালেনটাইনস ডে।
ওসি : অবশ্যই ফুল আনব। অবশ্যই। অবশ্যই, অবশ্যই।
নারীকণ্ঠ : আপনি আবার ভেবে বসবেন না যে আমি আপনার প্রেমে পড়েছি।
ওসি : আমি ভাবছি না। নায়িকারা নায়কদের প্রেমে পড়ে। খাকি পোশাক পরা পুলিশের প্রেমে পড়ে না। নিয়ম নাই।
ওসি সাহেবের সঙ্গে দুই হাজার টাকা ছিল। তিনি সেকেন্ড অফিসারের কাছ থেকে তিন হাজার টাকা ধার করে পাঁচ হাজার টাকার গোলাপ কিনলেন। পাঁচ টাকা করে গোলাপের পিস। এক হাজার গোলাপ পাওয়া গেল।
যেদিন তার স্ত্রী রেহনুমা মারা যায় সেদিন ভোরবেলায় তিনি তার স্ত্রীকে এক হাজার গোলাপ উপহার দিয়েছিলেন।
জনৈক মন্ত্রী টেলিফোন করেছেন। ওসি সাহেব থানায় নেই। টেলিফোন ধরলেন সেকেন্ড অফিসার। মন্ত্রী মহোদয় বললেন, আপনি কি অফিসার ইনচার্জ?
জি স্যার, ওসি সাহেব অপারেশনে গেছেন। আমি সেকেন্ড অফিসার। আমার নাম আখলাখ।
কংকন নামে কেউ কি আপনাদের কাস্টডিতে আছে?
জি স্যার।
তিনি আমাদের একজন বিশিষ্ট কর্মী। তাকে ছেড়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হয়।
অবশ্যই স্যার। আমি নিজে গাড়ি করে বাসায় পৌঁছে দিব।
ধন্যবাদ। আপনার নামটা যেন কী?
আখলাখ।
আপনি ভালো অফিসার। আমি আপনার জন্যে হাই লেভেলে সুপারিশ করব।
স্যার। থ্যাংক য়্যু।
কংকনকে কতক্ষণের মধ্যে রিলিজ করছেন?
আপনার কাছ থেকে লিখিত অর্ডার পাওয়া মাত্র রিলিজ করে দিব। কংকন ভাইজানের নিউজ পত্রিকায় চলে গিয়েছে তো, এখন রিলিজ করলে পত্রিকাওয়ালারা আমাকে ধরবে। আপনার লিখিত অর্ডার পেলে বলতে পারব মন্ত্রীর লিখিত নির্দেশে সন্ত্রাসী ছেড়ে দিয়েছি।
মন্ত্রী মহোদয় বললেন, হুঁ।
আখলাখ বললেন, স্যার আমার সামনে একজন সাংবাদিক বসে আছেন। কংকন ভাইকে রিলিজ করতে বলছেন তো, উনি আপনার সঙ্গে একটু কথা বলতে চান। উনাকে টেলিফোনটা দেই?
মন্ত্রী মহোদয় সঙ্গে সঙ্গে লাইন কেটে দিলেন।
আখলাখের সামনে কেউ নেই। মন্ত্রীদের সঙ্গে কথা বলার কৌশল সে শিখেছে ওসি নাজমুল হুদের কাছে। আখলাখ হাজতের দিকে গেলেন। কংকনকে বের করলেন। কংকন বলল, মন্ত্রীর টেলিফোন এসেছে?
অখিলাম বললেন, হুঁ। এখন বুঝবি কত ধানে কত চাল। আখলাখ বললেন, আমার আগে তুই বুঝবি। তোকে নিয়ে যাচ্ছি ডলা দিতে। যতবার মন্ত্রীর টেলিফোন আসবে ততবার ডলা খাবি।
ভাই, আমি তো জবানবন্দি দিয়েছি। আপনি বলেছিলেন জবানবন্দি দিলে ডলা দিবেন না। ভাই, আপনার পায়ে ধরি, আমার স্ত্রীর সঙ্গে একটু যোগাযোগ করায়ে দেন। আমি তাকে বলব যেন আর কোনো মন্ত্রীর সঙ্গে যোগাযোগ না করে। আপনাকে আমি ভাই ডাকলাম। ধর্মের ভাই।
আখলাখ কংকনকে তার স্ত্রীর সঙ্গে যোগাযোগ করিয়ে দিল। সুমনা বলল, তুমি ভয় পেয়ো না। আমি হাই লেভেলে যোগাযোগ করেছি। এখন যাচ্ছি প্রধানমন্ত্রীর অফিসে।
কংকন বলল, সব যোগাযোগ বন্ধ করো। তুমি কিসলুকে খুঁজে বের করো। যদি কেউ কিছু করতে পারে কিসলু পারবে। আর কেউ কিছু পারবে না।
কিসলু সৎকাজের সন্ধানে বের হয়েছে। চুনোপুটি সৎকাজের বদলে রুই, কাতলা টাইপ সৎকাজ তার ভাগ্যে জুটেছে। ঝিনাইদহ থেকে এক ফ্যামিলি এসেছে ঢাকায়। বাস থেকে নামতে গিয়ে পরিবারের প্রধান ট্রাকের ধাক্কায় ছিটকে পড়েছে। এখন মারা যায়, তখন মারা যায় অবস্থা। কিসলু তাকে নিয়েই ছোটাছুটি
তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। ডাক্তার বলেছেন। ছয় ঘণ্টা পার না হলে কিছু বলা যাবে না। কিসলু ঠিক করেছে ছয় ঘণ্টা সে হাসপাতালেই থাকবে। কখন কী দরকার হয়। আহত মানুষটির স্ত্রী কিসলুকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে কাঁদতে বলল, বাবা, আপনি আমার ছেলে। কিসলু বলল, মা, অস্থির হবেন না। এক মনে আল্লাকে ডাকেন। আমার মন বলছে সব ঠিক হয়ে যাবে। আল্লা মেহেরবান।
ছয় ঘণ্টা পার হওয়ার আগেই ডাক্তার বললেন, পেশেন্টর অবস্থা অনেক ইমপ্রুভ করেছে। আশঙ্কামুক্ত।
কিসলুর এখানকার দায়িত্ব শেষ। সে পরের সৎকাজের সন্ধানে পথে নেমেছে।
আজি রজনীতে হয়েছে সময়, এসেছি বাসবদত্তা
মেসের ঘরে হিমু শুয়ে আছে। শহর জুড়ে লোডশেডিং। আকাশে থালার মতো চাদ ওঠায় শহর অন্ধকারে ড়ুবে যায় নি। জানোলা দিয়ে হিমুর ঘরে জোছনা ঢুকেছে। জোছনার কোনো রঙ থাকে না; শুধু সিনেমার জোছনা হয় নীল। হিমুর কাছে আজ রাতের জোছনা সিনেমায় জোছনার মতো নীল লাগছে। জোছনারাতে বনে যাওয়ার নিয়ম। হিমু চোখ বন্ধ করে বলল, শহরটা অরণ্য হয়ে যাক। হিমু। চোখ মেলল, হ্যাঁ শহরটা অরণ্য হয়ে গেছে। এখন শহরের অলিতে গলিতে হাঁটা মানে গহীন বনের ভেতরের পায়ে চলা পথে হাঁটা।