আফতাব বলল, আপনি কী বললেন বুঝলাম না। স্যার, কোথায় ঢুকে যাব?
হাজতে ঢুকে যাবে। আর কোথায়?
আফতাব ভীত গলায় বলল, আমার মেয়েরা কি আপনাকে উল্টাপাল্টা কিছু বলেছে? ওদের কথা বিশ্বাস করার কিছু নাই।
ওসি সাহেব বিকট গলায় চিৎকার দিলেন, ঘাউ!
আফতাব লাফ দিয়ে সরে গেল। বিকট ঘাউ সে আশা করে নি। ওসি সাহেব ছামাদের কাছে ঘাউ শুনেছিলেন। তার মস্তিষ্ক ঘাউ জমা করে রেখে দিয়েছিল, সময় বুঝে বের করেছে। আফতাব বিড়বিড় করে বলল, স্যার আমি নিরাপরাধ।
ঘাউ ঘাউ!
এবারের ঘাউ প্ৰচণ্ড নিনাদে। সেকেন্ড অফিসার এবং দুজন কনস্টেবল ছুটে এল। আফতাব বলল, জোবেদা নিজে ফাঁসিতে ঝুলেছে। আমি নামাতে গেছি। মেয়েরা এটা বুঝে নাই। তারা ভেবেছে আমি ফাঁসিতে ঝুলায়েছি।
কেয়া খেয়ার মা।
সে ফাঁসিতে ঝুলল কেন? তার সমস্যা কী?
জানি না স্যার কী সমস্যা।
তোর কী সমস্যা? আফতাব চুপ করে আছে। তার কলিজা শুকিয়ে আসছে। তিন বছর আগের ঘটনা সবাই ভুলে বসে আছে। আজ হঠাৎ কী হয়ে গেল।
ওসি সাহেব বললেন, পুলিশ ইনভেসটিগেশন হয় নাই?
হয়েছিল। পুলিশ রিপোর্ট দিয়েছে আত্মহত্যা।
পুলিশকে কত টাকা দিয়েছিলি?
তিন লাখ চব্বিশ হাজার। ভিটামটি সব গেছে।
ম্যাজিষ্ট্রেট খবর দিয়ে আনাচ্ছি। ম্যাজিস্ট্রিটের সামনে জবানবন্দি দিবি। যা ঘটেছে সব খুলে বলবি।
স্যার, আমার ফাঁসি হয়ে যাবে। বাচ্চাগুলিকে কে দেখবে?
আমি দেখব। সেকেন্ড অফিসার, হ্যান্ডকাফ পরায়ে চেয়ারের সাথে একে আটকে দাও। ম্যাজিস্টেটকে খবর দাও। বদমাইশটা জবানবন্দি দিবে। দিবি না?
জি স্যার দিব।
যে ওসিকে ঘুস দিয়েছিলি তার নাম কী?
স্যার উনার নাম গফুর। মুখে বসন্তের দাগ।
কংকনকে হাজত থেকে বের করা হচ্ছে। সে বলল, খবর তাহলে হয়েছে। ওসি সাহেব নিশ্চয়ই পাতলা পায়খানা শুরু করেছেন। কাপড়াচোপড় নষ্ট করে ফেলার কথা। হা হা হা।
সেকেন্ড অফিসার বললেন, হা হা বন্ধ। তোকে ডলা দিতে নিয়ে যাচ্ছি। ফিমেল হাজত খালি, ঐখানে তোকে ডলা দেওয়া হবে। ওসি সাহেবের হুকুম।
কংকন হতভম্ব গলায় বলল, ওসি সাহেবের না হয় মাথা খারাপ। ভাই, আপনার কি মাথা খারাপ? আমি ছাত্রলীগের বিশিষ্ট কর্মী। বঙ্গবন্ধু গবেষণা কেন্দ্রের পরিচালক।
সেকেন্ড অফিসার গলা নামিয়ে বললেন, আমি ছাত্রজীবনে ছাত্রদল করেছি। আপনাকে পাকিস্তানি ডলা আমি নিজে দিব। পনেরো মিনিট ডলার পর আপনি যদি স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন তাহলে ডলা বন্ধ হবে। তা না হলে ডলা চলতেই থাকবে। তুলতুলা শরীর বানায়েছেন, ডলা দিতেও আরাম হবে।
কংকনের মুখে স্কচটেপ লাগানো হলো। কোনোরকম শব্দ করার তার উপায় রইল না।
আফতাব ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে জবানবন্দি দিয়েছে। সে স্ত্রী হত্যার দায় স্বীকার করেছে। ওসি সাহেবের ঘাউ শব্দই তার জন্যে কাল হয়েছে।
কংকানও ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে জবানবন্দি দিয়েছে। তবে তার জন্যে পাকিস্তানি কৌশলের প্রয়োজন পড়েছে। কংকন বলেছে–
আমি ছিনতাইয়ের উদ্দেশ্যে বের হয়েছিলাম। পুলিশ কী করে যেন টের পায়। দৌড়ে আমাকে ধরে ফেলে। আমার পকেটে যে পিস্তল পাওয়া গেছে এটা আমার। বুকপকেটের ক্ষুরটা এক নাপিতের দোকান থেকে সংগ্রহ করেছি।
প্রয়োজনে ব্যবহারের জন্যে পিস্তল, ক্ষুরু, চাপাতি, রাম দা, পুলিশের সংগ্রহে পুলিশের সংগ্রহে সবসময় থাকে।
কংকনের সঙ্গে তার স্ত্রী সুমনার টেলিফোনের কথাবার্তা মূল কাহিনীর জন্যে জরুরি না। তারপরেও উদ্ধৃতির লোভ সামলাতে পারছি না। পুরো টেলিফোনের কথাবার্তা ওসি সাহেবের সামনে হয় এবং কথাবার্তা রেকর্ড করা হয়। বিচারপর্ব শুরু হওয়ার পর স্বামী-স্ত্রীর কথাবার্তা আলামত হিসাবে কোর্টে জমা দেওয়া হয়।
কংকন : হ্যালো সুমনা।
সুমন : সারা দিন কোনো খোঁজ নাই। মোবাইল হারায়ে ফেলেছি, তোমার তো উচিত ছিল আজ একটা মোবাইল কেনা। তুমি কোথায়?
কংকন : আমি ধানমণ্ডি থানায়।
সুমনা; থানায় কেন? কোনো সমস্যা? কথা বলছ না কেন? হ্যালো হ্যালো।
কংকন : আমি ধরা পড়েছি সুমনা।
সুমনা : কী করেছ যে ধরা পড়েছ। কথা বলো না কেন? হ্যালো হ্যালো।
কংকন : ছিনতাই।
সুমনা : ছিনতাই মানে? তুমি ছিনতাই করেছ?
কংকন : করার আগেই ধরা পড়েছি।।এই পর্যায়ে সেকেন্ড অফিসার চাপা গলায় বললেন, আপনার পকেটে কি পাওয়া গেছে ভাবিকে কাইণ্ডলি বলেন, না বললে আবার পাকিস্তান।
সুমনা : হ্যালো হ্যালো।
কংকন : পুলিশ আমার পকেটে পিস্তল আর ক্ষুর পেয়েছে।
সুমনা : পিস্তল, কার পিস্তল?
কংকন : আমার।
সুমনা : হায় খোদা, তুমি কী বলো!
[সেকেন্ড অফিসার বললেন, ভাবিকে বলুন, I love you, আজ ভ্যালেনটাইনস ডে।]
কংকন : সুমনা I love you.
আজ ভ্যালেনটাইনস ড়ে জানার পর ওসি সাহেব খানিকটা বিমর্ষ হয়ে পড়লেন। কাকতালীয়ভাবেই তখন তার কাছে একটা টেলিফোন এল।
নারীকণ্ঠ : হ্যালো!
ওসি : আপনি কে? কাকে চান?
নারীকণ্ঠ : ধমকাচ্ছেন কেন? পুলিশে চাকরি করেন বলে কেউ টেলিফোন করলেই ধমক দিয়ে শুরু করবেন? সরি বলুন।
ওসি : আপনি কে? কী চান?
নারীকণ্ঠ : আমি রিনকি। আমি কিছু চাই না।
ওসি : মিস রিনকি, ক্ষমা চাই, ক্ষমা চাই, ক্ষমা চাই, ক্ষমা চাই।
নারীকণ্ঠ : একবার ক্ষমা চেয়েছেন যথেষ্ট। একশবার ক্ষমা চাই বলতে হবে না।
ওসি : আপনি আমাকে টেলিফোন করবেন চিন্তাই করি নাই। ম্যাডাম, আপনাকে অভিনন্দন জানাতে ভুলে গেছি।