ওসি সাহেব তার খাসকামরায়। আজ তার মেজাজ ভয়ঙ্কর খারাপ। মেজাজ খারাপের প্রধান এবং একমাত্র কারণও মিস রিনকি! পত্রিকায় তাকে নিয়ে একটা খবর বের হয়েছে। তিনি নাকি চিত্ৰজগতের সুপার হিরো গালিব খানের সঙ্গে পরিণয়সূত্রে আবদ্ধ হয়েছেন। প্রতিবেদক দাবি করছেন, তার কাছে কাবিননামার ফটোকপি আছে। প্রয়োজনে তিনি তা প্ৰকাশ করবেন। মিস রিনকি এবং গালিব খানের ছবিও ছাপা হয়েছে। ছবিতে দুজন দুজনের দিকে প্ৰেমপূৰ্ণ নয়নে তাকিয়ে আছেন।
ওসি সাহেবের ইচ্ছা করছে ভয়ঙ্কর কিছু করতে, যাতে এক কথায় তার নিজের চাকরি চলে যায়। খাকি পোশাক পরে বসে থাকতে আর ভালো লাগছে না। ভয়ঙ্কর কী করবেন তাও মাথায় আসছে না। আপাতত বলপয়েন্টের খোঁচায় গালিব খানের দুটা চোখ ফুটা করে দিয়েছেন। অন্ধ গালিব খানকে ভয়ঙ্কর দেখাচ্ছে।
নাজমুল হুদের এমন মানসিক অবস্থায় থানায় ঢুকাল কংকন ভাই। সে এসেছে সচেতন নাগরিক হিসাবে ছামাদ মিয়া বিষয়ে তথ্য দিতে এবং হিমুকে নিয়ে একটা ডায়েরি করিয়ে রাখতে। ডায়েরিতে লেখা হবে হিমু তাকে জীবননাশের হুমকি দিয়েছে।
ওসি সাহেব, আমার নাম কংকন। আমি বঙ্গবন্ধু গবেষণা কেন্দ্রের প্রধান পরিচালক। ভালো আছেন?
এই বলে কংকন হ্যান্ডশেক করার জন্যে হাত বাড়াল। ওসি সাহেব ও বলে ঝিম মেরে রইলেন। হ্যান্ডশোকের জন্যে হাত বাড়ালেন না। কংকনের মাথা ঝিমঝিম করছে। সে হাত বাড়িয়ে আছে, ওসি সাহেব হাত বাড়াচ্ছেন না। এ-কী ভয়ঙ্কর অপমান! এত বড় অপমানের ভেতর দিয়ে তাকে একবার শুধু যেতে হয়েছিল। সে গিয়েছিল ধর্মমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতে। তাকে এক ঘণ্টা বসিয়ে রাখার পর মন্ত্রীর পিএস বলল, দেখা হবে না। কংকন বলল, আপনি কি উনাকে আমার কার্ড দিয়েছেন? পিএস বলল, দিয়েছিলাম। মন্ত্রী মহোদয় বলেছেন, দেখা হবে না। কংকন সেই অপমানের শোধ ভালোভাবে নিয়েছিল। এক পয়সা দামের ওসির অপমানের শোধ সে কীভাবে নিবে তা-ই এখন ভাবছে। কংকন, হাসিমুখে বলল, আপনি বোধহয় লক্ষ করেন নি। আমি হ্যান্ডশেক করার জন্যে হাত বাড়িয়েছি।
ওসি সাহেব। আবারও বললেন, ও। এবারও তাকে হাত বাড়াতে দেখা গেল না। তিনি রিভলভিং চেয়ারে একটা চক্কর দিলেন। হাতের বলপয়েন্ট দিয়ে গালিব খানের নাম কেটে লিখলেন গাধা খান।
কংকন গম্ভীর মুখে বসল। হাত গুটিয়ে নেওয়া ছাড়া তার আর কিছু করার নেই। ঘরে ওসি ছাড়া আর কেউ নেই বলে তার অপমান কারও চোখে পড়ল না। মানী ব্যক্তির মান আল্লা রক্ষা করেন-কথাটা ভুল না।
আপনাকে আগে একবার বলেছি, মনে হয় মিস করেছেন, আমি বঙ্গবন্ধু গবেষণা কেন্দ্রের প্রধান পরিচালক।
ওসি সাহেব খবরের কাগজ থেকে মুখ তুলে বললেন, তাহলে বলেন দেখি বঙ্গবন্ধু পাঞ্জাবির নিচে গেঞ্জি পরতেন নাকি পরতেন না? ঝটপট জবাব চাই।
হতভম্ব কংকন বলল, এটা আমাদের গবেষণার বিষয় না। ওসি সাহেব, আমার নাম কংকন। নামটা আপনার পরিচিত থাকার কথা। আমি ছাত্রলীগের…
কংকন কথা শেষ করার আগেই নাজমুল হুদ আনন্দিত গলায় চেঁচিয়ে উঠলেন, পাইছি তোরে।
কী বললেন? বললাম, পাইছি তোরে। তুই ছামাদের বাড়ি দখল করে গবেষণা কেন্দ্ৰ খুলেছিস। ঠিক ধরেছি না? আজ তোকে পাকিস্তানি ডলা দেওয়া হবে। পাকিস্তানি ডলা কী জানস? উপরের চামড়া থাকবে টাইট, ভিতরে হাডিড গুড়া। এক্কেবারে ট্যালকম পাউডার।
কংকন বলল, আপনি বোধহয় জানেন না। আমি পাঁচ মিনিটের মধ্যে আপনাকে খাগড়াছড়িতে ট্রান্সফার করতে পারি।
ট্রান্সফার কর। তারচেয়ে ভালো হয়। চাকরি খেয়ে ফেল। বান্দরের বাচ্চা খান্দর। তুই একটা খান্দর। খান্দর কী জানস? বান্দরের থাকে একটা লেজ আর খান্দরের থাকে দুইটা লেজ। তোর প্যান্টের ভিতর আছে দুইটা লেজ। পাছায় হাত দিয়ে দেখ।
কংকন শান্ত গলায় বলল, আপনার টেলিফোনটা কি ব্যবহার করতে পারি? স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে একটা কল করব।
কোনো সমস্যা নাই, কল কর। আইজি স্যারকে করা। প্রধানমন্ত্রীর পিএসকে কর। যত ইচ্ছা টেলিফোন করতে থাক। টেলিফোন করার আগে মাথাটা একটু সামনে এগিয়ে আন। তোর কান মিলে দিব।
কী বললেন?
বললাম মাথাটা একটু সামনে আন, তোর কান মলে দিব। বান্দরের বাচ্চা খান্দর।
ইউ আর এ ম্যাড পারসন।
নাজমুল হুদ আনন্দিত ভঙ্গিতে মাথা নাড়লেন। বেল টিপে কনস্টেবলকে ডেকে বললেন, এই খান্দরটাকে কানে ধরে হাজতে নিয়ে ঢুকাও।
কংকন কল্পনাও করে নি। সত্যি সত্যি এই কাজ করা হবে। এক পয়সা দামের কনস্টেবল তাকে কানে ধরে হাজতে ঢোকাবে। হাজতের দেয়ালে হেলান দিয়ে সে দাঁড়িয়ে আছে। তার সঙ্গে মোবাইল ফোন নেই যে সে কারও সঙ্গে যোগাযোগ করবে। তার গা বিমঝিম করছে। বারবার মনে হচ্ছে এইসব কিছুই ঘটে নাই। সে দুঃস্বপ্ন দেখছে। ঘুম ভাঙলেই দেখবে সে সুমনার পাশে শুয়ে আছে। তার পায়ের উপর সুমনার গাবদা পা।
ওসি সাহেব মিস রিনকির খবর আরেকবার পড়লেন। তার মেজাজ আরও খানিকটা খারাপ হলো। তিনি গাধা খান নাম কেটে লিখলেন খান্দর খান। এতে তার মন খানিকটা শান্ত হলো। খ এর অনুপ্রাসটা ভালো লাগছে। এইসময় থানায় ঢুকাল কেয়া-খেয়ার বাবা, আফতাব। সে ভয়ে ভয়ে বলল, স্যার আমার মেয়ে দুটার সংবাদ নিতে এসেছি। ওদের নাম…
ওসি সাহেব কথা শেষ করতে দিলেন না। হুঙ্কার দিয়ে বললেন, হাজতে ঢুকে যাও। দেরি করবা না। এক থেকে তিন পর্যন্ত গুনক, এর মধ্যে হাজতে ঢুকবে।