হিমু ভাই, জটিল গল্প শুনলাম।
হিমু বলল, এই গল্প আমি আমার বাবার কাছ থেকে শুনেছি। বাবা প্রায়ই আমাকে শিক্ষামূলক জটিল জটিল গল্প বলতেন। ভালো কাজ বাঁ সৎকর্ম নিয়ে বাবার একটা থিওরি আছে। থিওরিটা সত্য। শুনবে?
কিসলু আগ্রহ নিয়ে বলল, শুনব।
বাবা বলতেন, যে-কোনো মানুষ যদি প্রতিদিন একটি করে ভালো কাজ সাত দিন করে সে মহাপুরুষের পর্যায়ে উঠে যাবে। এর পর সে যা-ই বলবে তা-ই সত্য হবে।
বলেন কী!
চেষ্টা করে দেখবে? প্রতিদিন একটা ভালো কাজ করাও কিন্তু বেশ কঠিন।
অবশ্যই চেষ্টা করে দেখব। এখনই একটা ভালো কাজ করব। ঐ দেখেন হিমু। ভাই, একটা বুড়া মানুষ রাস্তা পার হওয়ার চেষ্টা করছে, গাড়ির কারণে পার হতে পারছে না। তাকে যদি রাস্তা পার করায়ে দেই কাজটা কি ভালো কাজ হবে?
অবশ্যই হবে। কিসলু। লাফ দিয়ে উঠে দাড়াল। ছুটে গেল রাস্তায়। দুহাত তুলে গাড়ি থামাল। বৃদ্ধকে হাত ধরে রাস্তা পার করল। বৃদ্ধ বলল, আব্বাজি, আপনার নাম?
কিসলু বলল, আমার ডাকনাম কিসলু।
বৃদ্ধ বলল, আধাঘন্টার উপর চেষ্টা করতেছিলাম। রাস্তা পার হইতে পারি নাই। আপনে পার করেছেন। আজ মাগরেবের ওয়াক্তে আপনার জন্যে দোয়া করব বলে আপনার নাম জানতে চেয়েছি।
কিসলুর চোখে পানি এসে গেল। সে বের হলো দ্বিতীয় ভালো কাজের সন্ধানে। একটা ভালো কাজ করে সে তৃপ্তি পাচ্ছে না।
হিমুর বাবা ভালো কাজ বিষয়ে হিমুকে লিখিত উপদেশ দিয়ে গেছেন। তিনি লিখেছেন–
বাবা হিমালয়,
ভালো কর্ম বা সৎকর্ম করার তোমার প্রয়োজন নাই। সৎকর্ম নেশার মতো। একটি সৎকর্ম করলে আরেকটি করতে ইচ্ছা করবে। সৎকর্মের নেশা তৈরি হবে। যে-কোনো নেশাই মানুষের জন্যে ক্ষতিকর। নেশা হলো নেশা। ভালো নেশা মন্দ নেশা বলে কিছু নাই। তুমি সেই সৎকর্ম করবে। যা অন্যরা করতে পারছে না। অন্যদের করার ক্ষমতা নাই।
সৎকর্ম যেমন নেশা তৈরি করে অসৎকর্মও করে।
এখন কি বুঝতে পারছি সৎকর্ম অসৎকর্ম একই মুদ্রার দুই পিঠ?
কিসলু সন্ধ্যা মেলাবার আগেই চারটি সৎকর্ম করে ফেলল। সৎকর্ম এবং তার ফলাফল নিম্নরূপ–
১. বৃদ্ধকে রাস্ত পার করানো।
(বৃদ্ধ তার নাম জানতে চেয়েছে এবং বলেছে মাগরেবের নামাজে তার জন্যে দেয়া করবে।)
২. একজন টোকাইকে পাউরুটি এবং কলা কিনে দেওয়া।
(টোকাই পাউরুটি-কলা হাতে নিয়েই দৌড় দিয়েছে। তার আচরণ রহস্যময়।)
৩. এক মহিলা মালিবাগ যাবে, রিকশা পাচ্ছিল না। কোনো রিকশাই মালিবাগ যাবে না। তার জন্যে রিকশার ব্যবস্থা করে দেওয়া।
(এই মহিলার আচরণও টোকাইয়ের মতো। সে গম্ভীরমুখে রিকশায় উঠেছে। কিসলুর দিকে ফিরেও তাকায় নি। যেন রিকশা এনে দেওয়া কিসলুর দায়িত্ব।)
৪. একজন ট্রাফিক পুলিশকে এক বোতল পানি কিনে দেওয়া।
(পানির বোতল পেয়ে ট্রাফিক পুলিশ হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে ছিল। তার চোখে প্রায় পানি আসার উপক্রম। ট্রাফিক পুলিশ বলল, ভাই, আপনি আমাকে পানির বোতল দিলেন। কী জন্যে? কিসলু বলল, অনেকক্ষণ ধরে লক্ষ করেছি আপনি রোদে দৌড়াদৌড়ি করছেন। আপনাকে দেখে মনে হলো, আপনার পানির তৃষ্ণা পেয়েছে। ডিউটি ছেড়ে যেতে পারছেন না। ট্রাফিক পুলিশ বলল, ভাই আপনি হাতটা বাড়ান। আপনার হাতটা একটু ধরব।)
সন্ধ্যা পার হয়ে গেছে, এখন ভালো কাজ না করলেও চলে; ভালো কাজ সন্ধ্যা পর্যন্ত করার কথা। তারপরেও কিসলুর মাথায় ঘুরতে লাগল—আর কী করা যায়? সে রীতিমতো অস্থির।
ধানমণ্ডি থানা থেকে ক্লোজ করে খাগড়াছড়ি
অফিসার গফুরকে ধানমণ্ডি থানা থেকে ক্লোজ করে খাগড়াছড়ি থানায় ওপেন করা হয়েছে। তিনি সেখানে ভালো আছেন। থানা কম্পাউন্ডের পেছনে অনেকখানি জায়গা। তিনি সেখানে সবজি চাষ শুরু করেছেন। পাহাড়ি বেগুন লাগিয়েছেন। থানায় কাজকর্ম নাই। পাহাড়িয়া ঘুস দেওয়া শিখতে পারে নি বলে থানায় আসে না। মামলা-মোকদ্দমা নাই। ঝামেলা নিজেরা মিটিয়ে ফেলে; কাজেই অফিসার গফুর সবজি চাষে মন দিয়েছেন। রাতে জঙ্গল দেখেন। হাতির ভয়ে সারা রাত তাকে জেগে থাকতে হয়। প্রায়ই বন্য হাতির পাল বের হয়। এদের ঝোকাটা কোনো এক দুৰ্বোধ্য কারণে থানার দিকে। একটা পুরো রাত তাকে থানা কম্পাউন্ডের বিশাল শিরিষগাছে উঠে কাটাতে হয়েছে। সেই রাতে হাতির পাল আরেকটু হলে থানায় ঢুকে যেত। শিরিষগাছে দ্রুত ওঠার জন্যে তিনি অর্ডার দিয়ে একটা মই বানিয়েছেন। মই গাছের সঙ্গে সেট করা হয়েছে।
নাজমুল হুদকে পুরনো জায়গায় এনে ওপেন করা হয়েছে। রবীন্দ্ৰ-সমস্যার পূর্ণ সমাধানের জন্যে তাকে সাত দিন সময় বেঁধে দেওয়া হয়েছে। সাত দিনে সমাধান না হলে তাকেও খাগড়াছড়ি যেতে হবে। ১৩ তারিখ সাত দিন শেষ হবে। তবে খাগড়াছড়ি নিয়ে তিনি চিন্তিত না। তিনি সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, চাকরি ছেড়ে দেবেন। তার মধ্যে অভিনয়ের প্রবল আকাঙ্ক্ষা দেখা যাচ্ছে। তিনি আজিজ সুপার মার্কেট থেকে একটা বই কিনেছেন। বইয়ের নাম অভিনয় কলা। বইয়ে অভিনয়-বিষয়ে অনেক টিপস দেওয়া আছে। চোখের এবং মুখের এক্সারসাইজ দেওয়া আছে। আয়নার সামনে এইসব এক্সারসাইজ তিনি নিয়মিত করছেন। গলার স্বর উন্নত করার জন্যে হারমোনিয়াম কিনে সারেগামাপাধানিসা করছেন। আবৃত্তি ক্লাসে ভর্তি হয়ে বৃন্দ আবৃত্তি করছেন।
রাতে তার ভালো ঘুম হচ্ছে না। অদ্ভুত অদ্ভুত স্বপ্ন দেখছেন। সব স্বপ্নই অভিনয়বিষয়ক এবং প্রতিটি স্বপ্নে মিস রিনকি থাকছেন। শুধু থাকছেন তা-না, তার স্ত্রী হিসেবে অভিনয় করছেন। গত রাতের স্বপ্নে তিনি এবং মিস রিনকি একটা স্কুলের সামনে দাঁড়ানো। দুজনেই ভক্তদের অটোগ্রাফ দিচ্ছেন। স্কুলের সামনে দাঁড়িয়ে থাকার কারণ হচ্ছে তাদের শিশুকন্যা স্কুলে। তারা শিশুকন্যাকে নিতে এসেছেন। স্বপ্নে শিশুকন্যার নাম জানা যায় নি।