আনন্দ ফিনকি
নায়িকা রিনকি।
এই তো হয়েছে। রিনকি নাম তিনি আর ভুলবেন না। তিনি বিড়বিড় করে কয়েকবার ছড়াটা বললেন, যাতে কখনো ভুলে না যান।
রিনকি বলল, বিড়বিড় করে কী বলছেন?
নাজমুল হুদ বললেন, কিছু না কিছু না। তাকে অত্যন্ত লজ্জিত মনে হলো। আরেকটা ছড়া তার মাথায় এসেছে।
রিনকির চোখ কালো
এই মেয়েটা ভালো।
বঙ্গবন্ধু গবেষণা কেন্দ্র
সকাল দশটা পাঁচ।
বঙ্গবন্ধু গবেষণা কেন্দ্রের প্রধান কংকন ভাই তালা খুলে গবেষণা কেন্দ্ৰে ঢুকলেন। মেঝেতে অনেকগুলি পত্রিকা পড়ে আছে। তিনি পত্রিকার সংখ্যা গুনলেন। তার ভুরু খানিকটা কুঁচকাল। মাত্র চারটা পত্রিকা। গবেষণা কেন্দ্র থেকে সব পত্রিকা অফিসে চিঠি গেছে। নিয়মিত সৌজন্যসংখ্যা পাঠানোর জন্যে। গবেষণার জন্যে পত্রিকা প্রয়োজন। সবাই পাঠাচ্ছে না। চিঠিতে কাজ হবে না। কিসলুকে পাঠাতে হবে। সোজা আঙুলে ঘি না। উঠলে কিসলুর আঙুলে যি আনতে হবে।
কংকন ভাইয়ের পত্রিকা পড়ার অভ্যাস নেই (তার কোনোকিছু পড়ারই অভ্যাস নেই) তারপরেও একটা পত্রিকা হাতে নিলেন। নাম ভোর বাংলা। পত্রিকার প্রধান খবর–
রবীন্দ্ররহস্য ঘনীভূত
কংকন ভাই আগের কোনো খবর পড়েন নি, কাজেই রবীন্দ্ররহস্য বিষয়ে কিছুই জানেন না। রবীন্দ্ৰনাথ ঠাকুর ধরা পড়েছেন শুনে তিনি বিস্মিত হলেন। বঙ্গবন্ধু গবেষণা পরিষদ থেকে গত মাসেই কবিগুরুর মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে কাঙালিভোজ হয়েছে। ওয়ান আইটেম। গরুর মাংসের তেহারি। এখন দেখা যাচ্ছে, তিনি বেঁচে আছেন এবং পুলিশের হাতে গ্রেফতার হয়েছেন। এমন একজন সম্মানিত মানুষকে পুলিশ উধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশ ছাড়া গ্রেফতার করবে না। তাহলে কি বর্তমান সরকার রবীন্দ্ৰনাথবিরোধী অবস্থান নিয়েছে? যদি নিয়ে থাকে তাহলে বঙ্গবন্ধু গবেষণা কেন্দ্ৰকেও একশনে যেতে হবে। কবিগুরুর কুশপুত্তলিকা দাহের ব্যবস্থা করতে হবে। কুশপুত্তলিকার অভাব নেই। তিনটা বানানোই আছে। কংকন ভাই মনোযোগ দিয়ে দ্বিতীয়বার খবরটা পড়ে মোটামুটি বিভ্রান্ত হয়ে গেলেন।
একটা মেস থেকে রবীন্দ্রনাথকে গ্রেফতার করেছেন থানার ভারপ্রাপ্ত ওসি জনাব গফুর। যাকে গ্রেফতার করা হয়েছে তার উচ্চতা প্রায় ছয় ফুট, গাত্রবর্ণ গৌর। সাংবাদিকরা তার ছবি তুলেছেন।
কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে রবীন্দ্ৰনাথ বদল হয়েছেন। দেখা গেছে হাজাতের রবীন্দ্রনাথের উচ্চতা তিন ফুট। গাত্ৰবৰ্ণ ঘন কৃষ্ণ! ভারপ্রাপ্ত ওসিকে স্ট্যান্ড রিলিজ করা হয়েছে।
রহস্য সমাধানের জন্যে ব্যাপক তদন্ত শুরু হয়েছে। দেশপ্রেমিক নাগরিকদের কাছে আবেদন করা হচ্ছে, রবীন্দ্ৰনাটকের মূল নায়ককে পুলিশে ধরিয়ে দিতে। মূল নায়কের নাম ছামাদ মিয়া। ছামাদ মিয়া সম্পর্কে যে-কোনো তথ্য র্যাব বা থানাকে জানাতে অনুরোধ করা হচ্ছে।
কংকন ভাই খবর পড়ে কিছুক্ষণের জন্যে তব্দা মেরে রইলেন। দেশে এত কিছু ঘটে গেছে তিনি জানতেন না। ছামাদ মিয়া সম্পর্কে তথ্য তার কাছে আছে! এই বদমাইশ কাজী নজরুল ইসলাম সেজে বঙ্গবন্ধু গবেষণা কেন্দ্রে এসেছিল। থাপ্পড় খেয়ে বিদায় হয়েছে।
কংকন ভাই সিগারেট ধরালেন। চা ছাড়া সিগারেট টেনে সুখ পাওয়া যায় না। হাশেম এখনো আসে নি বলে চা খাওয়া যাচ্ছে না। গবেষণা কেন্দ্ৰে চা-কফির ব্যবস্থা আছে। সিগারেট টানতে টানতে কংকন ভাইয়ের মাথায় নতুন আইডিয়া চলে এল। তিনি খানিকটা উত্তেজিত বোধ করলেন। রবীন্দ্ৰ-ঝামেলা মিটে গেলেই এই আইডিয়া নিয়ে এগুতে হবে। দেরি করা যাবে না।
কংকন ভাই সিগারেট ধরালেন। চা ছাড়া সিগারেট টেনে সুখ পাওয়া যায় না। তার মোবাইল ফোন গত রাতে চুরি গেছে। মানুষ মোবাইল ফোন সেট পকেটে রাখে। কংকানও রাখত, আই ফোন কেনার পর পকেটে রাখা বন্ধ করেছে। আই ফোন হাতের মুঠোয় নিয়ে ঘোরার আনন্দই আলাদা। সবাই সারাক্ষণ দেখছে হাতের মুঠোয় কী জিনিস। মানুষকে দেখাতে গিয়েই দুর্ঘটনা। হাতের মুঠোর জিনিস ফসকে গেছে। এখন কংকন ভাই খানিকটা স্বস্তি বোধ করছেন। মাথায় যে আইডিয়া এসেছে তার সফল বাস্তবায়ন হলে একটা নতুন আই ফোন কেনার পরেও হাতে কিছু ক্যাশ টাকা থাকবে।
বঙ্গবন্ধু গবেষণা কেন্দ্রের নাম পাল্টে নজরুল পাঠচক্ৰ দেওয়া। এখানে লোকজন আসবে, জাতীয় কবির রচনা পাঠ করবে। তার সম্পর্কে জানবে।
বঙ্গবন্ধু গবেষণা কেন্দ্ৰ নাম রাখার কিছু বিপদ আছে। সরকার বদল হলেই নাম বদল হবে। নতুন নাম জিয়া গবেষণা কেন্দ্র। বাড়ি ছাত্রদলের দখলে চলে যাবে। নজরুল পাঠচক্র-এ এই চক্কর থাকবে না। নতুন নামকরণ উপলক্ষে কাঙালিভোজের আয়োজন করা হবে। আলোচনা সভা এবং সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। পত্রপত্রিকা এবং টিভি চ্যানেলগুলোকে দাওয়াত দেওয়া হবে।
এটা কংকন ভাইয়ের অপ্রধান আইডিয়া। প্রধান আইডিয়া হচ্ছে, যখন রান্নাবান্না শুরু হবে তখন একদল উছুঙ্খল মানুষ হামলা করবে। অনুষ্ঠান পণ্ড হয়ে যাবে। কয়েকজন গুরুতর আহত হবে।
এতে লাভ দুটা। খাওয়াদাওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে না। ডেকোরেটরের কাছ থেকে রান্না করার হাঁড়িপাতিল ভাড়া করলেই হবে। জখমও হবে ডেকোরেটরের লোকজন। এদের জখম হওয়ার সময়ও হয়ে গেছে। ফ্রি সার্ভিস দিতে চায় না। ঘাড়ে ধরে আদায় করতে হয়। দেশের প্রতি মায়া নাই। আছে। টাকার ধান্দায়। বদমাইশের দল।
দ্বিতীয় লাভ হলো প্রচার।
কংকন ভাই কাঙালিভোজ উপলক্ষে চাঁদা সংগ্ৰহ কীভাবে করা যায় তা ভাবতে লাগলেন। আশেপাশের বাড়িতে যেতে হবে। সঙ্গে থাকবে কিসলু। কিসলুর চেহারা দেখলেই বাড়িওয়ালার কলিজা পানি হয়ে যাবে। মুখ ফুটে চাঁদা চাওয়ার আগেই চাঁদা চলে আসবে। চা-নাশতা চলে আসবে। অনেকের সঙ্গে টেলিফোনে কথা হবে। অতি ভদ্র অতি বিনয়ী নারীকণ্ঠে টেলিফোন যাবে।