ময়না : সব দোষ আসলে ভাবির।
সম্পাদক : এখানে ভাবি এল কোত্থেকে? ভাবি কে?
ময়না : ফারুক স্যারের স্ত্রী। উনার অদ্ভুত স্বভাব। সব ফালতু জিনিসে উনার আনন্দ। মেয়েছেলে এ রকমই। কবি বলেছেন, স্ত্রী চরিত্রম দেবী না জানন্তি, কুত্ৰাপি মনুষ্যা। এর অর্থ…
সম্পাদক : ভ্যারভ্যার করছেন কেন?
ময়না; ভ্যারভ্যার কখন করলাম?
সম্পাদক : এই তো এখন করছেন। ইন্ডিয়টের মতো ননষ্টপ যা ইচ্ছে বলে যাচ্ছেন।
ময়না : আমাকে ইডিয়ট বলেছেন?
সম্পাদক : হ্যাঁ বলেছি। রাগ সামলাতে না পেরে বলেছি। সরি ফর দ্যাট।
ময়না : তোর চাকরি আর করব না। আমি ট্যাকনিকাল পারসন। আমার চাকরির অভাব? তোর পত্রিকায় চাকরি না করলে কী হয়? আমার …ল হয়?
সম্পাদক : তুই তুই করছেন কেন এবং অশালীন কথা বলছেন কেন?
ময়না ভাই : রাগ সামলাতে না পেরে তুই তুই করছি। সরি ফর দ্যাট। এই নে তোর পত্রিকার ক্যামেরা।
সম্পাদক : ক্যামেরা তো ভাঙা।
ময়না : ক্যামেরা পুলিশ আছাড় দিয়ে ভেঙেছে। আমি ভাঙি নাই। সাহস থাকলে পুলিশের সাথে গিয়া দরবার কর।
সম্পাদক : লেন্স ভাঙা ক্যামেরা হতে উঠে দাঁড়ালেন।
দ্বিতীয় বৈঠক
স্থান : ওসি সাহেবের কক্ষ।
সম্পাদক : আপনার সম্পর্কে আমাদের কাছে কিছু তথ্য আছে। সেনসেটিভ কিছু তথ্য।
গফুর : (হাসিমুখে) আপনি সাংবাদিক, আপনার কাছে তো তথ্য থাকবেই। আপনি রোগী হলে আপনার কাছে থাকত পথ্য।
সম্পাদক : রসিকতা করার চেষ্টা করবেন না। আমি উন্মাদ পত্রিকার সম্পাদক না। আমার পত্রিকার নাম ভোর বাংলা। যা বলছি মন দিয়ে শুনুন। একটা পত্রিকার অনেক ক্ষমতা। পত্রিকা এমন এক রিপোর্ট করতে পারে যে এক রিপোটে আপনার চাকরি শেষ। রিপোর্টের কারণে আপনাকে জেলের ভাত খেতে হচ্ছে।
গফুর : কী রিপোর্ট?
সম্পাদক : যেমন ধরুন ভাসমান পতিতাদের কাছ থেকে আপনি নিয়মিত তাদের আয়ের একটা অংশ নিয়ে থাকেন। তাদের একজনের নাম শমিতা। তাকে প্রায়ই আপনার বিশেষ শারীরিক প্রয়োজনে সাড়া দিতে হয়।
গফুর : (অবাক) শামিতা কে?
সম্পাদক : বললাম না, ভাসমান পতিতা। শমিতা পত্রিকায় বিশাল ইন্টারভ্যু দিবে। সেই ইন্টারভ্যু ছবিসহ ছাপা হবে। আপনারা পুলিশেরা যেমন ইচ্ছেমতো সাক্ষী হাজির করতে পারেন। আমরাও পারি ইচ্ছেমতো ইন্টারভ্যুর ব্যবস্থা করতে। নেপোলিয়ানের মতো জেনারেল পত্রিকার ভয়ে অস্থির থাকতেন। আপনি কেউ না, ডোবার পুঁটিমাছ। পুঁটিমাছ আমি ধরব না। ডোবা সেঁচে ফেলব! আপনি শুকনা ডোবায় খাবি খাবেন।
গফুর : আমাকে কী করতে হবে?
সম্পাদক : রবীন্দ্রনাথ হিসেবে যাকে ধরেছেন, তাকে ছেড়ে দিতে হবে। সে আমার পত্রিকার সিনিয়র স্টাফ রিপোর্টার। অত্যন্ত ভালো মানুষ! পাকে চক্ৰে রবীন্দ্ৰনাথ সেজেছে।
গফুর : এখন তাকে ছাড়া কীভাবে সম্ভব? আমি কনফারেন্স করে বলেছি যে কথিত রবীন্দ্রনাথ ধরা পড়েছে। সাংবাদিকরা ছবি তুলেছে।
সম্পাদক : দাড়ি গোঁফ আলখাল্লাসহ ছবি উঠেছে। চেহারা কিছুই বোঝা যাবে না। ফারুকের সঙ্গে ময়না বলে যে বদটাকে ধরেছেন ওকে দাড়ি গোঁফ পরিয়ে দিলেই হবে। বুঝতে পারছেন কী বলছি?
গফুর : (একই সঙ্গে হতাশ, চিন্তিত, বিক্ষিত এবং রাগত)
সম্পাদক : কথা বলছেন না কেন? আপনি কি চান। একজন রিপোর্টার আপনার পেছনে লাগিয়ে দেই যাতে সে আপনার নাড়িনক্ষত্র বের করে নিয়ে আসতে পারে। আপনি নিশ্চয়ই কাউকে না কাউকে হাজতে পিটিয়ে মেরে ফেলে বলেছেন, হার্ট অ্যাটাকে মারা গেছে। এখন বলুন, ফারুক কি ছাড়া পাচ্ছে?র
ওসি : অবশ্যই পাচ্ছে। আপনার মতো একটা মানুষের অনুরোধ আমি রাখব না তা কি হয়?
সম্পাদক : ময়না বলে যেটা আছে। ঐটাকে একটু সাইজ করে দিবেন। এটা আমার ব্যক্তিগত অনুরোধ। আগের অনুরোধ ছিল পত্রিকার পক্ষ থেকে। আপনার কি গল্প-কবিতা লেখার বদঅভ্যাস আছে?
জি-না।
গল্প-কবিতা কিছু লেখা থাকলে পাঠিয়ে দিবেন। সাহিত্য পাতায় ছাপিয়ে দিব।
ধানমণ্ডি থানার ক্লোজ হওয়া ওসি নাজমুল হুদ অনেক দিন পর বিমলানন্দ উপভোগ করছেন। চোর-ডাকাতের পেছনে দৌড়াতে হচ্ছে না। গুরুত্বপূর্ণ মানুষজন টেলিফোনে গুরুত্বহীন বিষয়ে কথা বলছেন না। মন্ত্রী মহোদয়দের পলিটিক্যাল এপিএসরা হুমকিধামকি করছে না। তিনি তার শ্যালক হিরন্ময় কারিগরের কাজ দেখছেন। তার বসার জায়গা হয়েছে সুপারহিট নায়িকা মিস রিনকির কাছাকাছি। মাঝখানে দুটা ফাঁকা চেয়ার আছে। তিনি ইচ্ছা করলে একটা চেয়ার ডিঙিয়ে নায়িকার পাশে বসতে পারেন। যে-কোনো কারণেই হোক তার সাহস হচ্ছে না। শোনা গেছে এই নায়িকা নানান নখড়া করে, তাকে তেমন কোনো নখড়া করতে দেখা যাচ্ছে না। নায়িকা একটু পরপর হ্যান্ডব্যাগ থেকে আয়না বের করে একদৃষ্টিতে আয়নার দিকে তাকিয়ে থাকছে। এটা নিশ্চয়ই নখড়ার মধ্যে পড়ে না।
নাজমুল হুদকে নাশতা দেওয়া হয়েছে। ট্যাবলেট সাইজের সিঙ্গাড়া। নাজমুল হুদা অতি সুস্বাদু ছয়টা সিঙ্গাড়া খেয়ে ফেলেছেন। আরও খেতেন, চক্ষুলজ্জায় খেতে পারছেন না। নায়িকা মিস রিানকির সামনেও কাচামরিচ, পেয়াজসহ একগাদা সিঙ্গাড়া দেওয়া হয়েছে। নায়িকা একটা সিঙ্গাড়া ভেঙে খানিকটা মুখে দিয়ে মুখ বিকৃত করেছেন। এরপর ওসি সাহেবের পক্ষে দুই হালি সিঙ্গাড়া খেয়ে ফেলা যায় না।
কিছুক্ষণ আগে মিস রিনকির একটা শট হয়েছে। গামেন্টস ফ্যাক্টরি থেকে বের হয়ে সে চুড়িওয়ালির কাছ থেকে কী সুন্দর করেই না চুড়ি কেনার অভিনয় করল, অসাধারণ।