ফারুক বললেন, হ্যান্ডকাফ খোলার ব্যবস্থা করুন। গলা চুলকাচ্ছে, চুলকাতে পারছি না।
ময়না ভাই বললেন, আমি কীভাবে হ্যান্ডকাফ খুলব? চাবি তো আমার কাছে না।
কোথায় চুলকাতে হবে ঠিকমতো বলুন আমি চুলকিয়ে দিচ্ছি। গলা? সামনের দিকে না পেছনের দিকে? আরেকটা কথা স্যার বিপদে অস্থির হতে নাই। আপনি বেশি অস্থির।
থানার সামনে ক্যামেরা হাতে বিভিন্ন চ্যানেলের লোকজন। এদের মধ্যে দু’জন সাহেবও আছেন। তারা CNN থেকে কাভার করতে এসেছেন। তাদের কাউকেই হাজতিদের সঙ্গে দেখা করতে হচ্ছে না। তবে শোনা যাচ্ছে পুরো ঘটনা জানিয়ে একটা প্রেস বিফ্রিং করা হবে। ব্রিফিং করবেন। ভারপ্রাপ্ত ওসি জনাব গফু। তিনি এখন বাথরুমে বসে আছেন। বাথরুমে নাপিত এসেছে, সে তাকে শেভ করে দিচ্ছে। সকালে তাড়াহুড়োর কারণে শেভ করা হয় নি। এতগুলো ক্যামেরার সামনে মুখভর্তি খোঁচা খোঁচা দাড়ি নিয়ে যাওয়া যায় না। দ্রুত শেভ করতে গিয়ে ঝামেলা হয়েছে। নাপিতের ক্ষুরের টানে গালের কোনো ভেইন কেটেছে। রক্ত পড়ছে, তুলা চেপেও রক্ত বন্ধ হচ্ছে না। নাপিত একটা পাকিস্তানি থাপ্পড় খেয়ে তবদা মেরে গেছে।
প্রেস ব্রিফিং শুরু হয়েছে। গফু গালে তুলা চেপে ধরেই সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলছেন।
দেশি-বিদেশি সাংবাদিক ভাই ও বোনেরা আমার। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে আমরা জানতে পারি। কথিত রবীন্দ্রনাথ একটা মেসবাড়ির কক্ষে মিটিং করছে তার পরবতী কার্যক্রম ঠিক করার জন্যে।
কালবিলম্ব না করে আমি থানার ফোর্স, চারজন র্যাব ভাই এৰং বিশেষ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত দুটি কুকুর নিয়ে অকুস্থলে হানা দেই। গোপন সূত্রের খবর বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ভুল প্রমাণিত হয়। আল্লাপাক রাব্ববুল আলামিনের অনুগ্রহে এইবার ভুল প্রমাণিত হয় নাই। আমি সশব্দে বুটের এক ধাক্কায় দরজা ভেঙে ঘরে ঢুকে শিকারি হায়েনার মতো লাফ দিয়ে আসামির উপর পড়েই তাকে ঝাপটে ধরি। ধস্তাধস্তিতে আমার যে গাল কেটে গেছে তা বুঝতেও পারি নাই।
ভারপ্রাপ্ত ওসি সাহেব গাল থেকে তুলা সরালেন। দর্শকসারি থেকে উফ্ শব্দ উঠল। দর্শকদের মধ্যে নাপিতও ছিল। সে পুরোপুরি বিভ্রান্ত হয়ে গেল।
এখন আপনাদের যদি কোনো প্রশ্ন থাকে করতে পারেন। একজন একটির বেশি প্রশ্ন করতে পারবেন না। বলুন আপনার কী প্রশ্ন?
গ্রেফতারের পর কথিত রবীন্দ্ৰনাথ কী বলছেন?
দুঃখের বিষয় তিনি কিছুই বলছেন না। কিছু জিজ্ঞেস করলে বিড়বিড় করছেন।
তিনি কি একই ধরা পড়েছেন, না সদলবলে ধরা পড়েছেন?
আমরা তার একজন সহযোগীকে ধরতে সমর্থ হয়েছি। তার অন্য সহযোগী একফাঁকে জানালা দিয়ে লাফ দিয়ে পালিয়ে যায়।
এরা কি কোনো জঙ্গী সংগঠনের সঙ্গে সম্পর্কিত?
আসামির লম্বা দাড়ি দেখে সে রকমই মনে হচ্ছে। দেশজুড়ে ব্যাপক অনুসন্ধান শুরু হয়েছে। আমরা শিঘ্রই এই বিষয়ে আরও গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিতে পারব। তবে আপনাদের অবগতির জন্যে জানাচ্ছি–আরো তিনজন কথিত রবীন্দ্রনাথকে গ্রেফতার করা হয়েছে। একজন শান্তাহার রেলস্টেশনের চাবিক্ৰেতা। সে নিজেকে নির্দোষ দাবি করছে। তার চেহারাই এরকম। অন্যজনকে সীমান্ত অতিক্রমের সময় ধরা হয়। সে চাদরের নিচে লুকিয়ে ভারত থেকে ফেনসিডিল আনে। লম্বা চুল-দাড়ির কারণে তাকে সুফি মানুষের মতো লাগে বলে বিডিআর ধরে না। তৃতীয়জন বলছেন তিনি কাহালুর ছাত্রলীগের সংস্কৃতি সম্পাদক। তাঁর বয়স একষট্টি তবে তিনি তাঁর ছাত্ৰত্ব সম্পর্কে গ্যারান্টি দিচ্ছেন। তিনি তার দীর্ঘ জীবনে সবসময় কোনো না কোন বিষয়ে অধ্যয়ন করেছেন। বর্তমানে তিনি ন্যাশনাল হোমিওপ্যাথি কলেজের প্রথম বর্ষের ছাত্র। এখন আমি আর একটি প্রশ্ন নেব। হ্যাঁ আপনি প্রশ্ন করুন। এখন আপনার টার্ন।
এমন কি হতে পারে যে ছাত্রলীগকে জনগণের সামনে ছোট করার জন্যে কেউ রবীন্দ্ৰনাথ সেজে ছাত্রলীগে ঢুকে পড়েছে?
অবান্তর প্রশ্ন! জবাব দিব না।
অবাস্তর হবে কী জন্যে? পত্রপত্রিকায় দেখেছি অনেক শিবিরের ক্যাডার দাড়ি কামিয়ে ছাত্রলীগে ঢুকেছে। নিয়মিত শোভ করছে।
পলিটিক্যাল প্রশ্নের জবাব দিব না। আমরা সরকারি কর্মচারী। আমাদের কিছু বাধ্যবাধকতা আছে। তবে ঘটনা সত্য হতে পারে।
ভোর বাংলার সম্পাদক থানায় এসেছেন। তিনি দুটি বৈঠক করেছেন। প্রথম বৈঠক সিনিয়র স্টাফ রিপোর্টার ফারুক খানের সঙ্গে। তাদের মধ্যে নিম্নলিখিত কৰ্থাবার্তা হয়।
সম্পাদক : (হতভম্ব। বিস্মিত। রাগান্বিত এবং হতাশাগ্ৰস্ত। সবই একই সঙ্গে) আপনি সাংবাদিকতার নামে এই কাজ করছেন? নিজেই রবীন্দ্ৰনাথ সেজে টক শোতে অংশ নিচ্ছেন। আবার নিজেই এই বিষয়ে রিপোর্ট করছেন। সাপ হয়ে দংশন করছেন। ওঝা হয়ে ঝাড়ছেন। ছিঃ ছিঃ ছিঃ!
ফারুক : ঘটনা এরকম না।
সম্পাদক : ঘটনা। কী রকম? আপনি কি অস্বীকার করবেন যে, আপনি রবীন্দ্রনাথ সাজেন নি? এখনো তো দাড়ি গোঁফ লাগিয়ে বসে আছেন।
ফারুক : আমি গুছিয়ে কথা বলতে পারছি না। সব আউলা লেগে যাচ্ছে। ময়না ভাই প্লিজ। ঘটনা। কী হয়েছে বলুন।
ময়না : স্যার উনার কোনো দোষ নাই। আমি ক্যামেরা হাতে বলছি। মাতাল যেমন মদের বোতলে হাত দিয়ে মিথ্যা বলতে পারে না, ক্যামেরাম্যানও ক্যামেরায় হাত দিয়ে মিথ্যা বলতে পারে না।
সম্পাদক : কথা পেঁচাবেন না, টু দ্য পয়েন্ট কথা বলুন।