ছামাদ মিয়া
ছামাদ মিয়া রবীন্দ্রনাথ সেজে হিমুর মেসের ঘরে বসে আছে। হিমু মেসে নেই তাতে কোনো সমস্য হয় নি। হিমুর ঘরের দরজা সবসময় খেলাই থাকে। তাকে নিয়ে যে খবরের কাগজে বিরাট হৈচৈ হচ্ছে এটা সে জানে বলেই আবারও রবীন্দ্ৰনাথ সাজা। এবারের সাজ আগেরবারের চেয়েও ভালো হয়েছে। মেসের অনেকেই উঁকি মেরে তাকে দেখে যাচ্ছে। একজন এসে তার মেয়ের জন্যে অটোগ্রাফ নিয়েছে। ছামাদ ইংরেজিতে অটোগ্রাফ দিয়েছে। সেখানে লেখা—Be Hapy, দুটা P র জায়গায় একটি P, ইংরেজি বানানে ছামাদ সামান্য দুর্বল।
মেসের ম্যানেজার ভোর বাংলা নামের পত্রিকার সম্পাদককে জানিয়েছে— যে রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে এত হৈচৈ তাদের কাগজে হয়েছে তিনি বাংলা মেসে উপস্থিত আছেন। ভোর বাংলার সিনিয়র সাংবাদিক ফজলু মোটরসাইকেল নিয়ে রওনা হয়েছেন। তার সঙ্গে সিনিয়ার ফটো সাংবাদিক ময়না ভাই আছেন। তারা মালিবাগের কাছে জামে আটকা পড়েছেন। ভয়ঙ্কর জাম। আজ সারা দিনে ছুটবে এরকম মনে হয় না।
জনাব গফু
ইনি এখন ধানমণ্ডি থানার ভারপ্রাপ্ত ওসি। তিনি যে কাজেকর্মে আগের ওসির চেয়েও দক্ষ তা প্রমাণ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। হিমুর মেসের ঠিকানায় অভিযান চালাবার জন্যে ফোর্স নিয়ে জিপে উঠে বসে আছেন। জিপ ছাড়ছে না, কারণ জনাব গফু র্যাবকেও খবর দিয়েছেন। তিনি চোখের সামনে পরিষ্কার দেখতে পাচ্ছেন পত্রিকার হেডলাইন–
কথিত রবীন্দ্ৰনাথের ডানহাত হিমু গ্রেফতার
(স্টাফ রিপোর্টার)
পুলিশ-র্যাবের যৌথ অভিযানে অবশেষে কথিত রবীন্দ্রনাথ নাটকের হোতা হিমু গ্রেফতার। অভিযানের নেতৃত্ব দিয়েছেন চৌকশ পুলিশ অফিসার জনাব গফুর। হিমু মুখ খুলতে শুরু করেছে। সে ইতোমধ্যেই অনেক রাঘববোয়ালের নাম বলেছে।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, তারা হিমুকে চার দিনের রিমান্ডে নিতে চায়। রিমান্ডে না নেওয়া হলে অনেক অজানা তথ্য অজানাই থেকে যাবে। চৌকশ অফিসার হিমুকে গ্রেফতারের নাটকের যে রোমহর্ষক বৰ্ণনা দেন তা উনার জবানিতেই পত্ৰস্থ করা হলো। ইত্যাদি…
হিমু
হিমু নিখোঁজ। সে কোথায় আছে, কী করছে জানা যাচ্ছে না। মাঝে মাঝেই হিমু। ড়ুব দেয়, মনে হয় এবারও ড়ুব দিয়েছে। আমরা হিমুর ভেসে ওঠার প্রতীক্ষায় আছি।
ভোর বাংলার সিনিয়ার সাংবাদিক জনাব ফজলু কিছুক্ষণ হলো ছামাদের সঙ্গে কথাবার্তা শেষ করেছেন। এখন তিনি পুরোপুরি হতাশ। ছামাদ মিয়া শখের বশে রবীন্দ্রনাথ সাজে। এই নিউজের কোনো ভেল্যু আছে? পাবলিক চায় একসাইটমেন্ট। একজন শখে রবীন্দ্ৰনাথ সাজে, এর মধ্যে একসাইটমেন্ট কোথায়?
ফজলু বিরসমুখে বললেন, আপনি মন্ত্রী মহোদয়ের সঙ্গে টকশো করলেন কেন?
ছামাদ বলল, আমি কিছু জানি না স্যার। ভুলে ঢুকেছি। আর যাব না। যদি যাই মাটি খাই। ঘাউ।
ঘাউ বললেন কেন?
মাঝে মধ্যে নিজের অজান্তেই বলি। আর বলক না।
আপনার চুল-দাড়ি সবই নকল?
জি। তবে টাইট ফিটিং। টান দিয়া দেখেন।
ফজলু দাড়ি টানাটানির কোনো আগ্রহ বোধ করলেন না। সংবাদের হেডলাইন কী দেবেন। এই নিয়েই তার চিন্তা। পৰ্বতের মুষিক প্রসব এই হেডলাইন হতে পারে। তাতে এক সংখ্যাতেই শেষ। দুই-তিন সংখ্যা চালানোর মতো কিছু থাকবে না। প্রথম দিন একটু আভাস দিয়ে পরের দুই দিনে যবনিকা অপসারণ করা দরকার। পাবলিক একটু একটু করে জানবে, পুরোটা জানবে না।
রবীন্দ্রনাথের লাইন দিয়ে নিউজ হতে পারে–শিরোনাম হবে আজি হতে শতবর্ষ পরে। শতবর্ষ পরে ছামাদ মিয়া নামের একজনের ইচ্ছা হলো রবীন্দ্ৰনাথ সাজবে। এই নিয়ে গল্প। প্রথম দিন রবীন্দ্ৰনাথ হিসেবে তার ছবি। দ্বিতীয় দিনে আসল ছামাদের ছবি। শিরোনাম-কে এই ছামাদ?
ফারুক বললেন, দাড়ি গোঁফ খোলেন; আলখাল্লা খোলেন। নরমাল ছবি তোলা হবে। লুঙ্গি গেঞ্জি।
ছামাদ দ্রুত আদেশ পালন করল। ময়না ভাই ছবি তুলতে তুলতে বললেন, স্যার আপনি পোশাকটা পরেন। আপনার একটা ছবি তুলে দেই। রবীন্দ্রনাথ সাজলে আপনাকে কেমন লাগে দেখি।
ফারুক বললেন, এইসব ফাজলামির কি আর বয়স আছে?
ছামাদ বিনীত গলায় বলল, পরেন না। স্যার। গরিবের একটা রিকোয়েস্ট।
ময়না ভাই বললেন, সুন্দর করে তুলে দেই, বাঁধিয়ে বাড়িতে রাখবেন। ভাবি মজা পাবেন।
ফারুক বললেন, তোমার ভাবি মজা পাবে কথাটা ঠিক বলেছ। যে-কোনো ফালতু জিনিসেই সে মজা পায়। দেখি দাঁড়িগোঁফ পরাও! কুটকুট করবে না তো?
ফারুক রবীন্দ্রনাথ সেজে তিনটা ছবি তুললেন। ঘরের ভেতরে আলো কম থাকায় বারান্দায় এলেন ছবি তুলতে। থিমেটেক ছবি। বারান্দার রেলিং-এ ঝুঁকে উদাস চোখে আকাশের মেঘমালা দেখতে দেখতে ছবি! ময়না ভাই একইসঙ্গে রবীন্দ্রনাথ এবং আকাশ ধরার চেষ্টা করছেন। এইসময় অফিসার গফুর র্যাব নিয়ে বারান্দায় ঢুকলেন। অত্যন্ত ক্ষিপ্ৰতায় কবিগুরুর হাতে হ্যান্ডকাফ পরিয়ে দেওয়া হলো। তিনি ওয়াকিটকিতে তৎক্ষনাৎ ডিআইজি সাহেবকে জানালেন, কবিগুরু আন্ডার অ্যারেস্ট স্যার। ওভার।
সিনিয়র স্টাফ রিপোর্টার এবং সিনিয়র ফটোগ্রাফার দু’জনই থানা হাজতে। ভয়ঙ্কর অপরাধী ছাড়া কাউকে থাকা হাজতে হ্যান্ডকাফ পরিয়ে রাখার নিয়ম নেই। কিন্তু সিনিয়র কিন্তু সিনিয়র স্টাফ রিপোর্টার জনাব ফারুককে অতিরিক্ত নিরাপত্তার কারণে হ্যান্ডকাফ পরিয়ে রাখা হয়েছে। হাত বন্ধ থাকায় তিনি মুখ থেকে নকল চুল দাড়ি খুলতে পারেন নি। আলখাল্লাও খুলতে পারেন নি। তাঁকে ভয়ঙ্কর চিন্তিত এবং বিমর্ষ দেখা যাচ্ছে। সেই তুলনায় সিনিয়র ফটোগ্রাফার ময়না ভাইকে বেশ স্বাভাবিক মনে হচ্ছে। তিনি বেশ আয়েশ করেই সিগারেট টানছেন।