আমি চিন্তাই করতে পারছি না। কার মাথায় এরকম একটা ডিরেকটিভ দেওয়ার চিন্তা এসেছে। যান যান। আপনি ভাগেন। আরো কী আশ্চৰ্য, বাচ্চা দুটা আবার জিভ বের করে ফেলেছে। ভেরি ইন্টারেস্টিং ভেরি ইন্টারেস্টিং। এই তোমরা দুটা মিনিট বসো! কেক খেয়ে যাও।
ওসি সাহেবের ওয়াকিটকি বেজে উঠেছে। তিনি রিভলভিং চেয়ারে ঘুরতে ঘুরতে কথা বলছেন।
না না। স্যাক্স। কোনো সাংবাদিকের সঙ্গে আমি কথা বলব না। আপনি যদি প্রয়োজন মনে করেন, আমাকে ক্লোজ করে অন্য কোনো থানায় ওপেন করে দেন। তবে স্যার আমার ধারণা রবীন্দ্ৰ হাঙ্গামা থেমে যাবে। সাংবাদিকরা নতুন একটা নিউজ আইটেম পেয়েছে। এটা নিয়েই এখন তাদের মাতামাতি করার কথা। পড়েন নাই? এক পরিবারের সাতজনের অগ্নিকাণ্ডে মৃত্যু। আমরা সেফ সাইডে আছি। কয়েকদিন এইটা নিয়েই চলবে ইনশাল্লাহ। কীভাবে আগুন ধরল, মৃত্যুর আগে কে কী বলল, এইসব ছাপা হতে থাকবে। খবরের কাগজের দোষ দিয়েও তো লাভ নাই স্যার। পাবলিক খবর চায়। এত খবর সাপ্লাই দিবে কীভাবে? ডিমান্ড বেশি সাপ্লাই কম। আমি স্যার সাবসিডিয়ারিতে ইকনমিক্স নিয়েছিলাম, সেখানে পড়েছিল অব ডিমিনিশিং রিটার্ন। আমি বেশি কথা বলছি? সরি স্যার। আর কথা বলব না। মুখ বন্ধ।
কেয়া-খেয়ার জন্যে পেস্ট্রি এসেছে। খেয়া চামচ দিয়ে ঠিকমতো খেতে পারছে না। ওসি সাহেব বললেন, চামচ, আমার কাছে দাও আমি খাইয়ে দিচ্ছি।
কেয়া বলল, পুলিশ মামা! আমাকেও খাইয়ে দিতে হবে।
ওসি সাহেব বললেন, নো প্রবলেম।
দুজনেই হা করে আছে। ওসি সাহেব পালা করে ওদের মুখে পেন্ত্রি দিচ্ছেন।
বসন্ত দাগওয়ালা এক ফাঁকে ঘরে ঢুকলেন, বিরক্তমুখে বললেন, কী হচ্ছে?
ওসি সাহেব বললেন, পেষ্ট্রি খাওয়া হচ্ছে।
ধামড়ি দুই মেয়ে। এদের মুখে তুলে খাওয়াতে হবে কেন? স্যার আপনি মাঝে মাঝে বাড়াবাড়ি করেন।
ওসি সাহেব যথেষ্ট বাড়াবাড়ি করলেন। পেস্ট্রি পৰ্ব্ব শেষ হওয়ার পর কোক আনালেন। সেটাও গ্লাসে করে মুখে তুলে খাওয়ানো হলো।
খেয়া বলল, পুলিশ মামা গল্প বলো।
ওসি সাহেব গল্প শুরু করলেন। ঠাকুরমার ঝুলির ডালিম কুমারের গল্প। কনস্টেবলরা উঁকিঝুঁকি দিচ্ছে। একজন দুজন করে ঘরে ঢুকছে। বাংলাদেশের থানাগুলিতে অনেক কিছুই হয়, রূপকথার আসর কখনো বসে না।
ওসি সাহেব হাত-পা নেড়ে গল্প বলছেন। শ্রোতার সংখ্যা বাড়ছে।
ডালিম কুমার যাচ্ছে, যাচ্ছে, যাচ্ছে। তার হাতে তলোয়ার। সে চেপেছে ঘোড়ার পিঠে। ঘোড়ার ক্ষুরে টগবগ শব্দ হচ্ছে…
চতুর্থ অধ্যায়ের শুরু
হিমুর গল্প সবসময় উত্তমপুরুষে লেখা হয়। এই চ্যাপ্টার থেকে হিমু উত্তমপুরুষে লেখা হচ্ছে না। হিমু-পাঠে অভ্যস্ত পাঠকদের সাময়িক সমস্যা হতে পারে। আমি দুঃখিত, কিছু করার নেই। চতুর্থ অধ্যায়ের শুরুতেই পাত্র-পাত্রী কে কোথায় কী করছে জানিয়ে দেই।
কেয়া-খেয়া
এরা দুজন কমলকুটিরে মহাসুখে আছে। বৃদ্ধ ধমকা-ধমকি করেও কিছু করতে পারছেন না। তাদের জন্যে জামা, জুতা কেনা হয়েছে। দুজনই বার্বিডল উপহার পেয়েছে। কেয়া তার বার্বিডলের নাম দিয়েছে ফুরফুন, খেয়া তারটার নাম দিয়েছে কুনকুন। তাদের আলাদা রুম দেওয়া হয়েছে। এই রুমে তারা থাকছে না। বৃদ্ধবৃদ্ধার শোবার ঘরে থাকছে। রাতে শোওয়ার সময় একপাশে বৃদ্ধি, অন্যপাশে বৃদ্ধা, মাঝখানে দুই কন্যা। বৃদ্ধ ঘনঘন বলছেন, একী বিপদে পড়লাম! কিন্তু তিনি যে অত্যন্ত আনন্দ আছেন তা বোঝা যাচ্ছে। বার্বিডল তিনিই কিনে এনেছেন। মাঝে মাঝে এই দুবোন জিভ বের করে কেন বসে থাকে এটা নিয়ে বৃদ্ধ-বৃদ্ধা চিন্তিত। এদেরকে সাইকিয়াট্রিক্ট দেখানোর পরিকল্পনা তাদের আছে।
বাচ্চা দুটি বৃদ্ধ-বৃদ্ধার স্থবির জগতে কী আলোড়ন এনেছে তা বোঝানোর জন্যে টেলিফোন কথাবার্তার কিছু অংশ দেওয়া হলো। বৃদ্ধা তার মেয়ের সঙ্গে কথা বলছেন। এই মেয়ে অষ্ট্রেলিয়া-প্রবাসী।
বৃদ্ধা : বেশিক্ষণ কথা বলতে পারব না রে মা। কেয়ার স্যান্ডেলের ফিতা ছিঁড়ে গেছে। স্যান্ডেল। কিনতে যেতে হবে।
মেয়ে : কেয়া কে?
বৃদ্ধা : আমাদের সঙ্গে থাকে। দুই বোন কেয়া-খেয়া। কী যে দুষ্ট!
মেয়ে : আমি তো কিছুই বুঝতে পারছি না। এরা কারা?
বৃদ্ধ : ওদের যন্ত্রণায় অস্থির হয়ে কাল বলেছি—আমি তোদের সঙ্গে থাকব না। জঙ্গলে চলে যাব। তারপর দুই বোন শুরু করুল কান্না।
মেয়ে : মা, তুমি বাবাকে দাও তো। বাবার সঙ্গে কথা বলি।
বৃদ্ধা : তোর বাবা খেয়াকে নিয়ে গেছে আইসক্রিম কিনতে। তোর বাবা আদর দিয়ে দুই বিচ্ছুকে মাথায় তুলেছে। কাল কী দেখলাম শোন। তোর বাবা ঘোড়া সেজেছে। দুই বোন ঘোড়ার পিঠে উঠে বসে আছে। আমাকে দেখে কেয়া বলল, নানু, তুমি আসো। ঘোড়ায় ওঠে। তিনজনের জায়গা হবে। কী যে যন্ত্রণায় আছি।
ওসি, ধানমণ্ডি
নাজমুল হুদ
তাকে ধানমণ্ডি থানা থেকে ক্লোজ করে তেজগন্ন থানায় ওপেন করা হয়েছে! আবার তাকে ধানমণ্ডি থানায় ফিরিয়ে নেওয়া হবে বলে আপাতত কোনো ডিউটি দেওয়া হয় নি। তিনি থানায় হাজিরা দিয়ে তার শালা হিরন্ময় কারিগরের কাছে গেছেন। হিরন্ময় কারিগর একটা ডকুমেন্টারি বানাচ্ছেন। ডকুমেন্টারির নাম একজন গার্মেন্টকর্মীর একদিন। গামেন্টকর্মীর ভূমিকায় অভিনয় করছেন চিত্রনায়িকা মিস রিনকি। যার সাম্প্রতিক ছবি প্রেম দে, না দিলে থাপ্পড় খাবি সুপারহিট হয়েছে। মিস রিনকি নানান নখড়া করছেন। হিরন্ময় কারিগর নখড়া সামলাতে পারছে না।