লালু বলল, কিছু মাল ছাড়তে হয় যে।
স্বপন বিরক্ত হল। কেন?
শোন কথা! কাজ করতে মাল লাগবে না!
কিন্তু কাজের কাজ তো কিছুই হচ্ছে না। প্রায়ই এসে টাকা নিয়ে যাচ্ছ। এই পর্যন্ত কত টাকা নিয়েছ, হিসেব আছে?
অকারণে গলা মোটা করে লালু বলল, হিসাব কিতাব করে টাকা পয়সা আমি নেই না। দরকার হলেই আসব। লেকচার ছাড়া, যাকে বলে নিঃশব্দে, নিঃশব্দে টাকাটা দিয়ে দেবেন। আর যদি ইচ্ছা না হয় দেবেন না। কিন্তু লেকচার মারবেন না। লালু কারও লেকচারের ধার ধারে না।
লালুর কথা বলার ভঙ্গিতে স্বপন একেবারে চুপসে গেল। কোনও রকমে বলল, কিন্তু কাজটা করছ না কেন?
ঘাড় বাঁকা করে স্বপনের দিকে তাকাল লালু। মার্ডার করাটা আপনার কাছে কী মনে হয়? খুব সোজা?
তোমার জন্য তো সোজাই।
হলেও তার জন্য একটা চান্স দরকার। চান্সটাই পাচ্ছি না।
আঙুল নাচিয়ে টাকার ভঙ্গি করল লালু। ছাড়েন, তাড়াতাড়ি ছাড়েন।
এসময় দুগ্লাস ঠাণ্ডা কোক আর দুপ্যাকেট বেনসন সিগ্রেট ট্রেতে নিয়ে স্বপনের রুমে ঢুকল আলী। দেখে অবাক হল স্বপন। এসব আনলি কেন? আমি তোকে এসব আনতে বলিনি।
লালু বলল, আমি বলেছি।
কোকের গ্লাস হাতে নিয়ে ফুরুক করে চুমুক দিল লালু। এটা আমার নিয়ম। যখন যার কাজ করি তখন আমি তার বস। আমি যা বলব তাই করতে হবে।
আলীর সামনে লালুর এসব কথা, স্বপন কী রকম অপমান বোধ করল। আলীর দিকে না তাকিয়ে বলল, এই, তুই যা।
আলীও যেন একথা শোনার জন্যই অপেক্ষা করছিল। প্রায় সঙ্গে সঙ্গে বেরিয়ে গেল সে।
এবার লালুর দিকে তাকাল স্বপন। পিয়ন টিয়নদের সামনে এভাবে কথাগুলো না বললেও পারতে।
লালু নির্বিকার গলায় বলল, আপনার জন্যই বলেছি। আপনেরে একটু সাইজ করলাম। আজকের মালটা ছাড়েন। কাজ হয়ে যাবে।
পকেট থেকে বেশ কিছু পাঁচশো টাকার নোট বের করে লালুকে দিল স্বপন। দশ হাজার আছে।
টাকাটা নিয়ে পকেটে রাখল লালু।
স্বপন বলল, কাজটা তাড়াতাড়ি কর লালু।
করব।
তবে সাবধানে। আমি যে জড়িত কেউ যেন টের না পায়।
কাউয়ায়ও টের পাইব না।
তারপর আচমকা বলল, কিন্তু মার্ডারটা আপনি কেন করাচ্ছেন? পোলাটা কি আপনের বইনরে ভাগাইয়া নিয়া বিয়া করছে?
স্বপন একেবারে আকাশ থেকে পড়ল। কে বলল তোমাকে?
লালু সিগ্রেট ধরাল। কেউ বলে নাই। অনুমান করলাম। পোলাটার ব্যাপারে খোঁজ খবর নিয়া মার্ডারের কোনও কারণ পাই নাই। এইজন্যই জিজ্ঞাসা করলাম। অসুবিধা নাই। যে কারণে ইচ্ছা মার্ডার করেন, সেইটা আপনের ব্যাপার। আমার সঙ্গে মালের কনটাক্ট, আমার কাজ আমি করে দেব।
টেবিলের ওপর রাখা দুপ্যাকেট সিগ্রেট পকেটে নিয়ে উঠল লালু। নিঃশব্দে তার সঙ্গে উঠল দিলু।
তারপর মোটর সাইকেল চালিয়ে লালু এল শুভদের বাড়ির সামনে। পেছন থেকে নেমে দিলু বলল, এখানে আসলা কেন?
লালু নির্বিকার গলায় বলল, তোকে কোরবানি দিতে।
কী?
তোর মাথায় মগজ বলে তো কিছু নাই। কুকুর বিড়ালের ইয়ে দিয়ে, মানে বাহ্যি দিয়ে তোর মাথা ভর্তি। এজন্য আমার কোনও কাজেরই অর্থ তুই বুঝতে পারিস না।
এবার হে হে করে হাসল দিলু। বুঝছি।
কী, বল তো?
কেসটা রেকি করতে আসছ। রেগুলার মাল খাইতাছ। কিছুটা কাম না করলে কেমতে হয়।
দিলুর কথা শুনে খুশি হল লালু। কারেক্ট।
তখুনি বাড়ি থেকে বেরিয়ে এল মালা। সুন্দর টাঙ্গাইল শাড়ি পরেছে। মুখে সামান্য প্রসাধন। দেখতে ভাল লাগছে তাকে।
বাড়ি থেকে বেরিয়ে চারদিক তাকিয়ে রিকশা খুঁজতে লাগল মালা। রাস্তার ওপাশে মোটর সাইকেল দাঁড় করিয়ে তার সামনে এসে দাঁড়াল লালু দিলু। মালা বেশ হকচকিয়ে গেল। আপনারা? কী, কী চান?
লালু নিঃশব্দে হাসল। কিছু না, কিছু চাই না। আমরা কোনও ছ্যাচড়া মাস্তান না। রাস্তায় একা একটা সুন্দরী মেয়ে দেখলেই তাকে একটু ইয়ে করা কিংবা ছিনতাই ফিনতাই আমরা করি না। আমরা খুবই প্রেস্টিজিয়াস জিনিস।
আরেকদিন আপনাদেরকে আমি দেখেছি। মোটর সাইকেল নিয়ে আমাদের বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে ছিলেন।
এরপর গাড়ি নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকব।
কেন?
কথা শুনে মনে হল মোটর সাইকেল জিনিসটা আপনার পছন্দ হয়নি।
আমার পছন্দ অপছন্দে আপনাদের কী যায় আসে?
কিছুই যায় আসে না।
তাহলে?
আপনার সঙ্গে একটু খাজুইরা আলাপ করলাম।
তারপরই গলার স্বর নৃশংস করল লালু। শুভ আপনার কী হয়?
লালুর এ রকম গলা শুনে ভয় পেয়ে গেল মালা। কোনও রকমে বলল, আমার ভাই।
কোথায় সে?
মালা একটা ঢোক গিলল। তা আপনাকে বলব কেন?
বলার দরকার নাই। খুঁজে বের করে নেব।
লালু দিলু আর দাঁড়াল না। আয়েশি ভঙ্গিতে হেঁটে মোটর সাইকেলটার সামনে গেল। মুহূর্তে মোটর সাইকেল নিয়ে উধাও হয়ে গেল।
.
মা আতঙ্কিত গলায় বললেন, কী বলছিস?
মালা হাঁপাতে হাঁপাতে বলল, হ্যাঁ মা, শুভকে খুঁজছিল, আমি ওদেরকে চিনেছি। আগেও একদিন আমাদের বাড়ির সামনে এসে দাঁড়িয়েছিল।
সর্বনাশ!
লালু দিলু চলে যাওয়ার পর যেখানে যাওয়ার কথা সেখানে আর যায়নি মালা। ছুটতে ছুটতে বাড়ি ঢুকেছে। ঢুকে সোজা মায়ের রুমে। এখনও হাঁপাচ্ছে সে। হাঁপাতে হাঁপাতে বলল, ভাগ্যিস নাহিদদের গ্রামে চলে গেছে শুভ, নয়তো বিপদ হয়ে যেত।
মা উতলা গলায় বললেন, এসব নিয়ে আর বসে থাকা যায় না।
বসে থাকা ঠিকও হবে না মা। ওরা নিশ্চয় শুভকে খুঁজে বের করে ফেলবে। পরিষ্কার বলে গেছে।