.
বিকেলবেলা নিজের রুমে বসে টিভি দেখছে শিলা, দুহাতে দুকাপ চা নিয়ে রেখা এসে দরজার সামনে দাঁড়াল। আসব ভাবী?
টিভিস্ক্রিন থেকে চোখ ফিরিয়ে রেখার দিকে তাকাল শিলা। এসো।
তারপর রিমোট টিপে টিভি অফ করল।
রুমে ঢুকে একটা কাপ শিলার দিকে এগিয়ে দিল রেখা। চা খাও।
কাপটা নিল শিলা। হঠাৎ চা নিয়ে এলে?
চা খেতে খুব ইচ্ছে করছিল।
বিকেলের চা খাওনি?
খেয়েছি। কিন্তু চাটা তেমন ভাল ছিল না। রানি এত অখাদ্য চা করে, মুখে দেয়া যায় না। এজন্য নিজেই চা করলাম। চা করার সময় মনে হল তোমার জন্যও করি।
শিলা চায়ে চুমুক দিল।
রেখা বলল, ঘরে ভালও লাগছিল না। ভাবলাম চা খেতে খেতে তোমার সঙ্গে গল্প করি।
রেখা তার চায়ের কাপে চুমুক দিল।
শিলা বলল, বাচ্চারা কোথায়?
কম্পিউটার গেম খেলছে।
তিনজনেই?
না। মেয়ে দুটো। বাবলুকে দেখলাম না।
বোধহয় বাইরে গেছে।
কথাটা যেন শুনতে পেল না রেখা। কী রকম আনমনা হয়ে গেল।
ব্যাপারটা খেয়াল করল শিলা। কী হয়েছে তোমার?
রেখা চমকাল। কই, কিছু হয়নি তো।
আনমনা হয়ে আছ কেন?
কদিন ধরে সবকিছু খুব একঘেয়ে লাগছে। বাচ্চাদের হাফইয়ার্লি শেষ হল, বেশ কয়েকদিন ছুটি। তার আগে গেল সামার ভেকেশান, কিন্তু এবার কোথাও যাওয়া হল না।
হ্যাঁ। সবাই মিলে কোথাও গিয়ে কয়েকদিন কাটিয়ে এলে হতো। বাচ্চাগুলো এনজয় করত, আমাদেরও ভাল লাগত।
বাড়িতে একটা উৎসব আনন্দ হলেও ভাল হতো। একঘেয়েমিটা কাটত।
সেতুর বিয়ে ছাড়া সেই সম্ভাবনা নেই।
কথাটা শুনে রেখা যেন একটু উৎসাহিত হল। পর পর দুটো চুমুক দিল চায়ের কাপে। ভাইয়াকে বল সেতুর বিয়ে দিয়ে দিক। আমরা কয়েকদিন মজা করি।
চায়ে শেষ চুমুক দিয়ে কাপটা নামিয়ে রাখল শিলা। এত আদরের বোনকে এত তাড়াতাড়ি বিয়ে দিতে সে বোধহয় রাজি হবে না। তবে আমি মনে করি ভালপাত্র পেলে উপযুক্ত মেয়েদের বিয়ে দিয়ে দেয়াই ভাল।
রেখাও তার কাপে শেষ চুমুক দিল। ঠিক তখুনি রিনরিন শব্দে বেজে উঠল টেলিফোন। উঠে গিয়ে ফোন ধরল শিলা। হ্যালো।
ওপাশ থেকে বেশ ভরাট, পুরুষালি গলায় ভেসে এল, আমি আপনার একজন ভক্ত। আপনি এত সুন্দর, এত ভাল, আমার ভাষাজ্ঞান কম বলে আপনাকে আমি ঠিক বুঝিয়ে বলতে পারব না যে আপনার জন্য দিনরাত চব্বিশ ঘন্টা আমি কী রকম, কী বলব, বেচায়েন, মানে বেচায়েন হয়ে থাকি। আমার খবু ইচ্ছে করে আপনাকে নিয়ে কোথাও পালিয়ে যাই। কিন্তু আপনার স্বামীর ভয়ে এটেম্পটা নিতে পারছি না। লোকটা এমন করে পাহারা দিয়ে রাখছে আপনাকে। এত বড় বড় ছেলেমেয়ে থাকার পরও স্ত্রীকে এভাবে পাহারা দিয়ে রাখার কী দরকার বলুন তো। যদিও আপনাকে দেখে বোঝা যায় না যে আপনার ছেলেমেয়ে হয়েছে। মানে বিয়ে যে হয়েছে এটাই বোঝা যায় না।
এসব কথা শুনতে শুনতে ঠোঁটে মৃদু একটা হাসি ফুটে উঠল শিলার। গলাটা সে প্রথমেই চিনে ফেলেছিল কিন্তু কিছু বলেনি। এখন আড়চোখে একবার রেখার দিকে তাকাল। রেখা আনমনা হয়ে আছে। শিলা যে টেলিফোন ধরে আছে রেখা যেন তা দেখতেই পাচ্ছে না।
চাপা গলায় শিলা বলল, ফাজলামো করো না। রেখা আমার রুমে। আমরা দুজনে মিলে এইমাত্র চা খেলাম। কখন আসবে?
ওপাশে থতমত খেল মামুন। যাহ বাবা, ধরা খেয়ে গেলাম! আসতে একটু দেরি হবে বলেই ভাবলাম তোমাকে একটু পটাই যাতে বাড়ি গিয়ে কোনও কৈফিয়ত না দিতে হয়। রেখাই সব মাটি করে দিল।
বুঝলাম।
কী বল, একটু দেরি করে এলে কোনও অসুবিধা আছে?
ছে। কী কারণে দেরি করবে?
কারণ আবার কী, বিজনেস।
এত বিজনেস করার দরকার নেই। চলে এস।
ঠিক আছে আসছি। এক্ষুনি আসছি, যে কাজে দেরি হওয়ার কথা সেটা না হয় আজ করব না। শোন।
বল।
একটা জলচৌকির অর্ডার দিয়েছি। সঙ্গে নিয়ে আসব?
কথা না বলে হেসে টেলিফোন নামিয়ে রাখল শিলা।
.
এসবের কয়েকদিন পর সেতুর বিয়ের একটা প্রস্তাব এল।
স্বপন সেদিন বাড়ি ফিরল একটু রাত করে। ফিরে জামাকাপড় না ছেড়েই রুমের একপাশে রাখা দুটো চেয়ারের একটায় গা এলিয়ে বসল। রেখা টিভি দেখছিল। বলল, টিভিটা অফ কর।
মুখ ঘুরিয়ে স্বামীর দিকে তাকাল রেখা। কেন?
কথা আছে।
খুব জরুরি?
মোটামোটি।
কিন্তু আমি খুব ভাল একটা প্রোগ্রাম দেখছি।
আচ্ছা দেখ।
উঠে ড্রেসিংরুমের দিকে যাবে স্বপন, রেখা বলল, ঠিক আছে বল।
তারপর টিভি অফ করল।
স্বপন আবার আগের জায়গায় বসল। তোমার মেয়ে ঘুমিয়েছে?
রেখা গ্রীবা বাঁকাল। স্বাভাবিক গলাই রুক্ষ্ম হয়ে গেল তার। আমার মেয়ে মানে?
স্বপন হাসল। তোমার গর্ভজাত।
গর্ভটা কি আমি অন্য কারও কাছে গিয়ে তৈরি করে এনেছিলাম! নাকি মেয়েটা অন্য কোথাও থেকে নিয়ে এসেছি?
অন্য সময় হলে এই নিয়ে কিছু মজা করত স্বপন। এখন করল না। মুহূর্তে সারেন্ডার করল স্ত্রীর কাছে। সরি। ভুল হয়ে গেছে।
বল আমাদের মেয়ে।
বলছি। কোথায় সে? ঘুমিয়েছে?
হ্যাঁ।
তাহলে কথাটা বলা যায়। কারণ টুপলু শুনলে মুহূর্তে রাষ্ট্র হয়ে যাবে। ছুটে গিয়ে প্রথমেই বলবে মুন্নিকে। মুন্নি এবং সে দুজনে মিলে বলবে বাবলুকে। এক ফাঁকে হয়তো রানিকেও বলবে। অর্থাৎ মিনিট চার পাঁচেকের মধ্যে সারাবাড়ি জেনে যাবে।
রেখা আবার গ্রীবা বাঁকাল। কী এমন কথা?
সেতুর বিয়ে।
কথাটা যেন বুঝতে পারল না রেখা। গলা আরেকটু তীক্ষ্ণ হল তার। কী?