ম্যানেজার বললেন, “আমার চেম্বারে চলুন তাহলে।”
মানালি দীপের দিকে তাকাল, “আপনি কি বসবেন?”
দীপ বলল, “হ্যাঁ আমি বসছি। আপনি কাজ সেরে আসুন। আমরা বরং একসঙ্গে বেরোই।”
মানালি বলল, “ঠিক আছে।”
ম্যানেজারের চেম্বারে গেল সে। ম্যানেজার সবটা শুনে বললেন, “ব্যাপারটা যদিও একটু কমপ্লিকেটেড হয়ে আছে তবু আশা করা যাচ্ছে পুলিশও খুব একটা সমস্যা করবে না। তবু এটা আমাদের ডিউটি ওঁদের জানানো। আশা করছি আপনাকে বোঝাতে পারছি।”
মানালির মাথা কাজ করছিল না। সে বলল, “আই কার্ডটা যদি আমি নিয়ে যাই?”
ম্যানেজার মাথা নাড়লেন, “না ম্যাম, ওটা থানাতেই জমা দিতে হবে আমাদের।”
মানালি ফোনটা বের করে বিশ্বরূপদাকে ফোন করল। সবটা শুনে বিশ্বরূপদা বলল, “ম্যানেজারকে দে।”
মানালি বলল, “আমাদের এডিটর স্যার একটু আপনার সঙ্গে কথা বলবেন।”
ম্যানেজার হাত বাড়িয়ে ফোনটা নিলেন।
মিনিট তিনেক কথা বলার পর ফোনটা রেখে বললেন, “ওকে। আপনি আই কার্ডটা আপাতত নিয়ে যান। তবে হোটেলের রেজিস্টারে আপনাকে সই করে নিয়ে যেতে হবে।”
মানালি বলল, “তাই হোক।”
মিনিট পনেরো লাগল সব মিটতে। সৌরভের আই কার্ড নিয়ে মানালি যখন লবিতে ফিরল, দেখল দীপ তখনও ওখানেই বসে আছে।
৩৭
“আপনার অফিসটা কোন এরিয়ায় বলুন, আমি ড্রপ করে দিচ্ছি।”
গাড়ি স্টার্ট করে বলল দীপ। মানালি অন্যমনস্ক ছিল খানিকটা। বারবার বিতস্তার মুখটা মনে পড়ছিল। এতক্ষণে বোধহয় বিতস্তা অফিসে এসেও গেছে। মানালি গুটিয়ে গেল খানিকটা। বলল, “অফিস যেতে ইচ্ছা করছে না ঠিক। আপনি কোথাও একটা নামিয়ে দিন আমায়।”
দীপ বলল, “সে তো আমারও ইচ্ছা করছে না। আচ্ছা, এজেন্টটা আবার আমায় ফলো করবে না তো?”
মানালি ভুলে গেছিল দীপের কথা। সে বলল, “কোন এজেন্ট?”
দীপ বলল, “আপনাকে বললাম না, এসকর্ট সার্ভিসের এজেন্ট!”
মানালির মনে পড়ল, “ওহ। হ্যাঁ। ঠিক। কেন, আপনাকে ফলো করবে কেন?”
দীপ বলল, “লোকটা আমাকে অপেক্ষা করতে বলেছিল।”
মানালি বলল, “আপনি কোনও রকম টাকা দিয়েছেন কি?”
দীপ বলল, “না, এখনও অবধি দিইনি।”
মানালি বলল, “তাহলে ফোন করতে পারে। আপনি অ্যাভয়েড করুন।”
দীপ বলল, “আচ্ছা কোথাও একটা বসে কফি খেলে আপনার সমস্যা আছে? আমার মনে হয় আপনি খুব নিরপেক্ষ একটা জায়গায় আছেন। আমার এমন কাউকে দরকার যার সঙ্গে আমি আমার এই বিতিকিচ্ছিরি অবস্থাটা আলোচনা করতে পারি। যাকে আমাকে একগাদা এক্সপ্ল্যানেশন দিতে হবে না।”
মানালি একটু ভেবে বলল, “ওকে। আমারও তাই মনে হয়। মাথাটা পুরো ব্ল্যাঙ্ক হয়ে আছে। আপনি বলতে পারেন। আমি জাজমেন্টাল হব না। যদিও আগে একবার আপনি অনেক কিছুই বলেছিলেন, কিন্তু আমার সব ঘেঁটে গেছে। একেবারে শুরু থেকে বললেই ভালো হয়।”
দীপ বেশ খানিকক্ষণ গাড়ি চালিয়ে একটা কফিশপের সামনে গাড়ি পার্ক করল।
মানালি গাড়ি থেকে নামতে নামতে বলল, “আপনি কি আজকাল রেগুলার অফিস বাঙ্ক করেন?”
দীপ অসহায় ভঙ্গিতে হাসল, “তাই হয়ে যাচ্ছে। একদিন যাচ্ছি, পরের দিন যাচ্ছি না। চাকরিটা থাকবে না সম্ভবত।”
মানালি অবাক হল, “এরকম হল কেন হঠাৎ করে?”
দীপ শপের দরজা খুলতে খুলতে বলল, “আমি তো সেই ব্যাপারটা নিয়েই ভেবে যাচ্ছি। বসুন আপনি, আমি একটু চোখে মুখে জল দিয়ে আসি।”
মানালি বসল একটা টেবিলে। কফিশপটা ছোটো হলেও বেশ সুন্দর। মানালির মনে পড়ল তার একসময় ইচ্ছা ছিল একটা কফিশপ খুলবে। অবশ্য এরকম অনেক ছোটো ছোটো ইচ্ছেই তার হত এককালে। একবার ঠিক করেছিল বইয়ের দোকান দেবে। মানালির মনে হল যত দিন যাচ্ছে, এইসব ইচ্ছাগুলো কেমন কমে যাচ্ছে। অলস লাগে বেশিরভাগ সময়েই। কাজের ভয়, কাজে ছোটোখাটো ভুল ভ্রান্তি হলে কাজ চলে যাবার ভয়, কাজ করতে গিয়ে বারবার বাড়ি থেকে জোর করে বিয়ে করার চাপ, সব মিলিয়ে পৃথিবীটা আজকাল কেমন দুঃস্বপ্নের মতো হয়ে উঠছে যত দিন যাচ্ছে।
ফোনটা বাজছিল। মানালি দেখল বিশ্বরূপদা ফোন করছে। সে ধরল, “বলো।”
“কি রে হোটেল প্রবলেম মিটে গেছে?”
মানালি বলল, “হ্যাঁ। মিটেছে।”
“তো চলে আয়। দেরি করছিস কেন?”
মানালি কাতর কণ্ঠে বলল, “বিতস্তার সামনে আমি যেতে পারব না বিশ্বরূপদা। প্লিজ ওকে সামলাও।”
বিশ্বরূপদা খুব রেগে কিছু একটা বলতে যাচ্ছিল। বলল না। একটু থেমে বলল, “ওকে। টেক কেয়ার।”
ফোনটা কেটে গেল।
দীপ চলে এসেছিল। কফির অর্ডার দেওয়া হল।
মানালি ফোনটা ব্যাগের ভেতর রেখে দীপের দিকে তাকাল, “বলুন।”
দীপ খানিকটা বিহ্বলভাবে মানালির দিকে তাকিয়ে বলল, “আপনি তো জার্নালিস্ট?”
মানালি অবাক হয়ে বলল, “হ্যাঁ। কেন বলুন তো?”
দীপ বলল, “আপনার কাছে একটা কাগজ আর একটা পেন হবে? আমার একটা ডায়াগ্রাম এঁকে বোঝালে সুবিধা হত।”
মানালি ব্যাগ থেকে তার নোটবুক আর পেনটা বের করে দীপকে দিল।
দীপ টেবিলের ওপর নোটবুকটা রেখে বেশ খানিকক্ষণ পেন নিয়ে বসে থাকল। তারপর কাগজের ওপর বড়ো বড়ো করে লিখল, “চিত্রলেখা, ঋতি।”
মানালি বলল, “বাহ। দুটো নামই সুন্দর।”
দীপ মানালির দিকে তাকিয়ে বলল, “নামের সঙ্গে মানুষের কোনও মিল থাকে না বিশ্বাস করুন, নাম দেখে যারা মানুষ সম্পর্কে সিদ্ধান্ত নেয় তাদের মাথায় তিন চার কিলো গোবর আছে।”