মানালি বলল, “সৌরভের কোনও খবর পেলে?”
বিশ্বরূপদা কথা ঘোরাতে চাইল, “থাক জেনে কাজ নেই।”
মানালি অবাক হয়ে বলল, “মানে? মেয়েটা ওই অবস্থায় আছে, জানাতে হবে তো!”
বিশ্বরূপদা একটু থেমে বলল, “মন শক্ত কর।”
মানালি বলল, “আমার মন শক্তই আছে। তুমি যা বলতে চাও বলো তাড়াতাড়ি।”
বিশ্বরূপদা বলল, “একটা ছেলে কাল রাতেই স্পট হয়েছে। একটা গাড়ি মেরেছিল। বুঝতেও পারেনি। যা ডেস্ক্রিপশন পাঠালি, মনে হচ্ছে এ-ই সম্ভবত সৌরভ।”
মানালির হঠাৎ করে বিতস্তার মুখটা মনে পড়ে গেল। সে বলল, “এখনও কেউ জানেনি তো! এটা কী করে হল?”
বিশ্বরূপদা বলল, “হসপিটালে নিয়ে যেতে পারেনি। তার আগেই যা হবার হয়েছে। পকেটে মানিব্যাগ ইত্যাদি কিছুই ছিল না তো। সব চুরি হয়ে গেছে। পথের এক কোণে পড়ে ছিল। কেউ দেখেওনি। শেষমেশ এক সার্জেন্ট দেখতে পেয়ে সব ব্যবস্থা করে। চোরটা এমন চোর, চুরি করবি কর, বাড়ির লোককে খবরটা তো দিবি রে বাবা! তা না সরাসরি মানিব্যাগটাই নিয়ে হাওয়া। পুলিশ আমি বলার পরেই জানতে পারল ছেলেটা সম্পর্কে। যাক গে, বডি ডিটেক্ট করতে হবে, বিতস্তাকে জানা। এ ছাড়া এখন আর উপায় নেই।”
মানালি মাথায় হাত দিল। বলল, “দেখছি বলে।”
৩৫
গাড়িতে উঠেই মা জিজ্ঞেস করল “কি রে, কেমন দেখলি?”
দীপ বলল, “বাড়ি গিয়ে বলছি। গাড়ি চালাবার সময় বেশি কথা বোলো না। সেফ ড্রাইভ সেভ লাইফের অ্যাড দেখছ না?”
বাবা বলল, “ঠিক ঠিক। তুমি বরং সিটবেল্ট বেঁধে বসো।”
মা গজগজ করতে লাগল, “কলকাতার বুকে বড়ো বাড়ি, মেয়ে উচ্চশিক্ষিত, সুন্দরী, পড়াশুনা করছে। তোদের জীবনে আর কী চাহিদা আছে কে জানে।”
দীপ চোয়াল শক্ত করে গাড়ি চালাচ্ছিল। রাস্তায় যথেষ্ট জ্যাম আছে। গাড়ি দেখে চালাতে হচ্ছিল। বাবা বলল, “ইস, একটা ভুল হয়ে গেল। মিষ্টিগুলো কোন দোকান থেকে কিনেছিল জিজ্ঞেস করতে ভুলে গেলাম।”
মা বলল, “তুমি থামো। ওভাবে গেলে কেউ? লজ্জা লাগে তো সাধারণ মানুষের। তোমার তো দেখলাম সেসব বুদ্ধিশুদ্ধিও নেই।”
বাবা গম্ভীর মুখে বলল, “কী করব, খেতে ভালো দেখে একটা খেলাম। তারপর দেখলাম আর-একটা খেলেও তুমি কিছু বলছ না। একটু সিগন্যাল দিলে তো খেতাম না।”
মা রেগে গেল, “এখানেও আমার দোষ? নিজের তো কিছু বিবেচনা থাকবে না কি?”
দীপের বিরক্ত লাগছিল। এমনিতেই চিত্রলেখার ঘরে আধঘণ্টা চুপ করে বসে থাকতে হয়েছে। তার ওপর গাড়িতে এত কথা ভালো লাগছিল না তার।
সে বলবে না বলবে না করেও বলে ফেলল, “অন্য কাউকে দ্যাখো মা। এখানে বিয়ে হওয়া সম্ভব না।”
বাবা কিছু একটা বলতে যাচ্ছিল। চুপ করে গেল।
মা বলল, “কী? আর-একবার বল?”
দীপ বলল, “বললাম তো। অন্য কোথাও দ্যাখো। না হলে ছাড়ো, আর দেখতে হবে না।”
মা বলল, “সমস্যা কোথায় সেটা তো বল! আমি তো কিছুই বুঝতে পারছি না। এই মেয়েকে পছন্দ না হলে তোর কেমন মেয়ে পছন্দ? কুমারটুলিতে অর্ডার দেব নাকি?”
দীপ কিছুটা গিয়ে গাড়িটা রাস্তার বাঁদিকে দাঁড় করাল। বলল, “সমস্যা আছে মা। অত বলা যাবে না।”
মা বলল, “মেয়ে বেশি সুন্দর? তোর কি কম সুন্দর পছন্দ? নাকি কম শিক্ষিত? নাকি আরও শিক্ষিত? চোখ ঠিক নেই, না নাক? নাকি হাইটে সমস্যা?”
দীপ বলল, “মা, পৃথিবীতে মেয়ে দেখা ছাড়াও অনেক সমস্যা আছে। আমরা বরং সেগুলোতে কনসেনট্রেট করি। বাদ দাও এসব।”
মা বলল, “বাদ দেব? মেয়ে কি এবার আমার ইচ্ছায় দেখতে গেছিলাম? তুই প্রথমে বললি যেতে, মেয়ে দেখার পর বলছিস দেখো না। তোর সমস্যাটা কোথায়? মানছি আমি একটা সময় তোকে খুব বলেছি, কিন্তু আমিও তো শেষমেশ হাল ছেড়ে দিয়েছিলাম। এই কিছুদিন আগে বললি তুই নিজে থেকেই মেয়ে দেখেছিস, এখন বললি মেয়ে দ্যাখো, আবার বলছিস দেখো না, তোর হঠাৎ করে হলটা কী?”
দীপ একটু চুপ করে থেকে বলল, “এই সেই মেয়ে মা, যাকে বিয়েবাড়িতে পছন্দ হয়েছিল। কথাও হয়েছিল।”
মা অবাক হয়ে বাবার দিকে তাকাল। বাবা বলল, “ওহ, তার মানে হিস্ট্রিতে গলদ রয়েছে?”
দীপ বলল, “হ্যাঁ, হিস্ট্রি জিওগ্রাফি সবেতে গলদ রয়েছে। এ বিয়ে হলে মহা বিপদ। এই মেয়েকে কিছুতেই বিয়ে করা সম্ভব না।”
মা মাথায় হাত দিল, “ভগবান! কী সমস্যা সেটা তো বল?”
দীপ গাড়ি স্টার্ট করল, “অত শুনে লাভ নেই। অন্য কাউকে দ্যাখো।”
মা বলল, “আমি আর দেখব না। যেটাই দেখব কিছু না কিছু সমস্যা বের করবি। আমারও তো একটা মান সম্মান আছে।”
বাবা বলল, “এক কাজ করলেই হয়। পেপারে বিজ্ঞাপন দিয়ে দি। আজকাল তো ছবিও দেয়। দীপের একটা ভালো ছবি দিয়ে বিজ্ঞাপন দি। অনেক সম্বন্ধ আসবে। সেখান থেকে বেছেবুছে নেবে নাহয়।”
দীপ বলল, “না না, ছবি-টবি একদম না। ওসব হাস্যকর। থাক তোমাদের আর মেয়ে দেখতে হবে না।”
মা বলল, “সে তুই যা বল, আমি আর দেখছি না। এসব ভীষণ অসম্মানজনক।”
দীপ চুপ করে গেল। সারা রাস্তা বাবা মা বকবক করে গেল। বাড়ি ফিরে দীপ নিজের ঘরে গিয়ে দরজা দিল।
হোয়াটসঅ্যাপ চেক করল। চিত্রলেখা লিখেছে, “বাড়ি পৌঁছেছ?”
দীপের বিরক্তি আসছিল। সে ফোনটা ছুড়তে যাবে, এমন সময় দেখল একটা আননোন নাম্বার থেকে ফোন আসছে। ধরল সে, “হ্যালো। কে বলছেন?”
“কি রে ভাই, তোকে তো সব ডিটেলসে বললাম। তা সত্ত্বেও তুই মেয়েটাকে দেখতে চলে গেলি?”