রাম বলল, “ঠিক হয়ে যাবি? ওকে! এক্সপ্লেইন।”
দীপ বলল, “আমি যেটা বুঝতে পারছি, সেটা হল আমার একটা ক্রাইসিস পিরিয়ড চলছে। সব কিছু নিয়ে বিচ্ছিরিভাবে ছড়িয়ে গেছি। এমন কোনও পার্টনার চাই, যার সঙ্গে সব কিছু শেয়ার করা যাবে। আমাকে বুঝবে। মানে…”
রাম বাধা দিয়ে বলল, “মেয়েরা ছেলেদের বুঝবে। এই আশাতেই কত কবি কেঁদে দিল। উনি এলেন বুঝবে। আসল কথাটা বলো না মামা, তুমি এখন কামের ফাঁদে পড়েছ!”
দীপ চুপচাপ খেয়ে গেল। বলল, “তুই যদি উইকেন্ডে কোথাও যাবি তো বল। আমি তোর এই ভ্যাক ভ্যাক আর শুনতে পারছি না।”
রাম বলল, “চল। আমার তো কোনও কাজ নেই। ভুবনেশ্বর কবে যাবি?”
দীপ বলল, “পরের সোমবার। তার আগে শান্তিতে কোথাও বসে মদ খেয়ে আসি।”
রাম ফিসফিস করে বলল, “কাল কী করলি?”
দীপ বলল, “ছিঁড়লাম। ঝাঁট জ্বালাস না।”
রাম ব্যাজার মুখে বলল, “আমার কী! তোর এস টি ডি না হলেই হল। আমার এক বন্ধু তো সেই এসবের পাল্লায় পড়েছিল, শেষে দ্যাখে যন্ত্রটা ফুলে তাকিয়া হয়ে গেল। ডেঞ্জার চিজ ভাই ওই ব্ল্যাকহোল। প্রোটেকশন ইউজ না করে কত লোক কেস খেয়ে গেল।”
দীপ বিরক্ত হল, “ফোট তো! যত ভুলভাল কথা বলে যাচ্ছিস!”
দীপের ফোন বাজছিল। দীপ দেখল মা ফোন করছে, ধরল, “হ্যাঁ বলো।”
“শোন না, অফিস থেকে বেরোবি কখন আজ?”
দীপ বলল, “ছটা সাড়ে ছটা হবে। কেন?”
মা বলল, “বেরিয়ে আমাকে ফোন করিস। আমি আর তোর বাবা তখন বাড়ি থেকে বেরোব।”
দীপ অবাক হল, “কোথায় যাবে?”
মা বলল, “আহ। তুই-ই তো সকালে বললি আমরা যেখানে দেখব সেখানে যাবি। এত কথা কীসের?”
দীপ বলল, “তা বলে আজই?”
মা বলল, “হ্যাঁ। আজই। এর পরে কিন্তু তুই না এলে আমি আর কাউকে দেখতে পারব না আগে থেকে বলে দিলাম।”
দীপ বলল, “আচ্ছা। যাব। রাখো এখন।”
ফোনটা কাটল সে। রাম বলল, “কী বে, কী হল আবার?”
দীপ কথা ঘোরাল, “কিছু না। এমনি মা ফোন করে খেলাম-টেলাম নাকি জিজ্ঞেস করল।”
***
কাছের বাসস্ট্যান্ডে দাঁড়াবে বলে জানিয়েছিল বাবা মা। দীপ যখন পৌঁছোল দেখল দুজনেই পৌঁছে গেছে। মা গাড়িতে উঠে বলল, “তাও দেরি করে দিলি।”
দীপ বলল, “বাড়ি চেনো তো?”
মা বলল, “ডান দিক নে।”
দীপ বলল, “মেয়ে কী করে?”
মা বলল, “গিয়ে দেখবি। এখন কিছু বলব না।”
বাবা পিছনে বসেছিল, বলল, “তোর মা যে এতটা করিতকর্মা আগে বুঝিনি রে। আমার মনে হয় তোর মা প্রধানমন্ত্রী হবার ক্ষমতা রাখে। কত তাড়াতাড়ি নেটওয়ার্ক খাটিয়ে ফেলল ভাবছি শুধু।”
মা রেগে গিয়ে বাবাকে ধমক দিল, “তুমি থামো তো, শুধু বাজে কথা। দেখছ একটা শুভ কাজে যাচ্ছি। ছেলের এত দিনে একটু মতি ফিরল আর তুমি বাজে বকে যাচ্ছ।”
বাবা চুপ করে গেল। কয়েক মিনিট পরেই তারা বাড়িটার সামনে চলে এল। গাড়ি পার্ক করে তারা ভেতরে ঢুকল।
দীপের চেনা চেনা লাগছিল বাড়ির সবাইকে। বসার ঘরে বাড়ির গ্রুপ ফটো দেখেই বুঝতে পারল তারা চিত্রলেখার বাড়িতে এসেছে। তার মাথার চুল ছিঁড়তে ইচ্ছা করছিল।
এক বয়স্ক মতো ভদ্রলোক বললেন, “আপনারা দুপুরে যখন ফোন করলেন, তখন তো ভাবতেই পারিনি এত তাড়াতাড়ি মেয়ে দেখতে চাইবেন।”
মা বলল, “সে কী কথা, মেয়ে তো এই কয়েকদিন আগেই বিয়েবাড়িতে দেখলাম। পছন্দ তো তখনই হয়েছিল। আমার মাথার মধ্যে ছিল ব্যাপারটা, কিন্তু আমার ছেলের ভয়ে কিছুই বলতে পারছিলাম না। তাড়াতাড়ি করলাম কারণ আমার ছেলে আবার অফিস ট্যুরে যখন তখন বেরিয়ে যেতে পারে…” মা যে শেষটা বানিয়ে বলল, সেটা বুঝল দীপ। কোন মা আর বলবে আমার ছেলে বিয়েপাগলা হয়ে গেছে, মেয়ে দেখতে বলল বলে আমি আজকেই দেখতে চেয়েছি!
বাবা বলল, “মেয়েকে দেখান। সামাজিকতা পরে হবে নাহয়।”
সবাই ব্যস্ত হয়ে পড়ল। কিছুক্ষণের মধ্যেই চিত্রলেখাকে নিয়ে এল সবাই। দীপ চিত্রলেখার দিকে তাকাল না। গম্ভীর হয়ে রইল। মা মুগ্ধ গলায় বলল, “বাহ, আপনাদের মেয়ে এক্কেবারে যথার্থ সুন্দরী। কি রে দীপ, কিছু বল।”
দীপ দেখল চিত্রলেখা হাসি হাসি মুখে তার দিকে তাকিয়ে আছে। সে হাসার চেষ্টা করল।
বেশ কয়েক মিনিট চিত্রলেখার সঙ্গে মা-বাবার প্রশ্নোত্তর পর্ব চলল। খানিকক্ষণ পরে মা বলল, “যা বাবা, ওর ঘরটা দেখে আয়। আমরা একটু গল্প করি।”
দীপ উঠল। তার বিরক্ত লাগছিল। চিত্রলেখার ঘরে পৌঁছে সে বলল, “শোনো, প্রথমেই ক্লিয়ার করে নি। আমি কিছুই জানতাম না। এখানে আসবে জানলে আমি কখনোই আসতাম না।”
চিত্রলেখা একটা চেয়ার দেখিয়ে বলল, “জানি। তুমি বসো।”
দীপ বসল। তার মাথা কাজ করছিল না।
চিত্রলেখা বলল, “তুমি এখানে কিছুক্ষণ বসো। তারপর চলে যাও।”
দীপ শুকনো গলায় বলল, “থ্যাংকস।”
দীপ মোবাইল বের করল। চিত্রলেখা বলল, “কালকের হোটেল কেমন গেল?”
দীপ উত্তর দিল না।
সে বুঝতে পারছিল চিত্রলেখার সঙ্গে ঋতির সব কথাই হয়েছে।
চিত্রলেখা বলল, “আমার সমস্যা হল আমার রাগ হয় না।”
দীপ বলল, “আমার সমস্যা হল আমার সহ্য করার ক্ষমতা বেশ ভালো।”
চিত্রলেখা বলল, “আমাকে তোমার সহ্য হয় না, তাই না?”
দীপ উত্তর দিল না।
চিত্রলেখা বলল, “আমার সবথেকে খারাপ লাগল কী জানো তো? আমার ইনসিকিউরিটিটাকে তুমি আমার ন্যাগিং নেচার ভেবে নিলে।”
দীপ বলল, “তুমিই তো বললে বসতে পারি। তুমি যদি এখন এত কথা বলো তাহলে আমি বরং চলে যাই। এত কৈফিয়ত দিতে পারব না।”