—আমার তো দুটোই ফোন, জানোই তো। ওটা পুরোনোটা। বাজুক। আমি এখন ধরছি না।
—কেন, ওটা কি হ্যালাফেলার ফোন?
—ফোনটা না, ফোনের কনট্যাক্টগুলো। কলেজের সব বন্ধুরা ওই নাম্বারটা জানে। ভীষণ বোর।
—হুম। বুঝেছি। এখন তোমার নতুন চাকরি, নতুন অফিসের নতুন বন্ধুরা সব। তাদের চিনে নিতে যত মজা, পুরোনো বন্ধুদের সঙ্গে কি আর তত মজা পাবে?
উফ, ছাড়ো না। ফরগেট ইট ইয়ার। তোমার যত্তসব পুরোনো পুরোনো কথা…
ওরে, কথায় বলে পুরোনো চাল ভাতে বাড়ে।
এবার পুরোটা ঘরের মধ্যে ঢুকে আসে সঞ্চিতা। হেলায় একবার খাটের উপর থেকে তুলে দেখে পুরনো মডেলের, পুরনো সিম ভরা সেই ফোনটা। যেটায় আটটা মিসড কল রেখেছে ঋদ্ধিমান। ওর পুরোনো বয়ফ্রেন্ড। শিট। কী ভীষণ টায়ারসাম। হতাশ লাগে সঞ্চিতার। কেন যে লোকজন বোঝে না!
.
নিলুপিসিটাও তেমনি। এসব কথা খুঁচিয়ে ওর পেট থেকে বার করবেই। অর্চির ব্যাপারেও খুব কৌতূহল। অর্চিই যেন সবটা জুড়ে আছে সঞ্চিতার। এমন একটা ভাব। না হয় কয়েকদিন ডেট করেইছে। তাই বলে…অর্চি কী খায়, অর্চি কী পরে, অর্চির ফ্যাভ মিউজিক কী। অত জানার কী দরকার?
নিলুপিসি, ইউ জাস্ট গিভ মি এ ব্রেক, ওকে? আমার সব ব্যাপারে মাথা গলাতে হবে না তোমাকে। মা কি গলায়? বাবা? তাহলে তুমি কেন?
নীলুপিসি নিজে তো বেশ ডিভোর্স টিভোর্স করে ছাড়া গরু। এটা মা বলে, ফিসফিসিয়ে। নিজের কোনও ইস্যু নেই বলে আমার মেয়েটাকে নিয়ে পড়েছে। যেন একদম অ্যাডপ্টই করে ফেলেছে সঞ্চিতাকে, নিলুটা।
.
আজকাল এই নিলুপিসির জন্যেই বাবা—মার সঙ্গে আগের মতো ভুলভাল, অ্যাজিটো কেওটিক বিহেভ করতে পারে না সঞ্চিতা। আগে তো হুটহাট করে হোম ডেলিভারিতে বিরিয়ানি আনিয়ে খেত, পিৎজা আনিয়ে নিত নিজের জন্য। ডালভাত হরিবোল, পটলের ডালনাকে রিজেক্ট করতে ইউজ করত নিজের খ্যাপামি, জোর ফলাত মাথা গরম করে। রাগ করে দুম করে দরজা বন্ধ করা, সারা রাত না ঘুমিয়ে চ্যাটিং, তারপর সকাল দুপুর গড়িয়ে বেলা বারোটা অবধি ভোঁসভোঁস ঘুমোনো…সবটাই চলত। এখন আর মা—বাবা ওকে ভয়ই পায় না। এসব দেখাতে গেলেই সবাই হাসতে শুরু করে।
পিসি এসে কী যেন উল্টো ফ্যাচাং করেছে। সঞ্চিতার আর আগের সম্মান নেই। লোকে আর ওকে ভয় পায় না। হিটলারি যে ব্যাপারগুলো করে দিব্যি চালাচ্ছিল নিজে, মাকে ভয় খাইয়ে, বাবাকে চুপ করিয়ে রেখেছিল নানা কলকাঠি নেড়ে। ইমোশনাল ব্ল্যাকমেলিং করলেই বাবা সুড়সুড় করে টাকা বের করে দিত আগে…স্টুডেন্ট লাইফে, এখন নিজের টাকা নিজের সব…তাহলেও যেন সেরকম মজা নেই বাবা—মায়ের উপর কর্তৃত্ব ফলিয়ে…
সব ভেস্তে দিয়েছে পিসিই।
যাও না বাবা তুমি তোমার দামড়া কাকুবন্ধুগুলোর সঙ্গে কফি হাউজে আঁতলামো করতে, তা না, সঞ্চিতার সঙ্গেই যত কথা!
২
অর্চি এখনও মেয়ে দেখলে ঘাবড়ে যায়। কিন্তু সেদিন সঞ্চিতাকে দেখে কী যেন হয়ে গেল। ফানি আছে একটু, কিন্তু ভীষণ কিউট। রোগা, মিষ্টি, ছোট্টখাট্টো একদম, টাইটস কুর্তিতে কেমন যেন পাখি পাখি। খুব উজ্জ্বল দুটো চোখ। দেখলেই মনে হয় মিচমিচে শয়তান। কিন্তু কেন যেন অর্চির ওকে দেখে একটুও ভয় করল না। বেশ পাশে বসে ভাটাল অনেকক্ষণ। তারপর উঠে যাওয়ার সময় ক্যাজুয়ালি বলল, সি ইউ। আর অমনি মেয়েটাও সি ইউ বলে মোবাইল নাম্বার নিয়ে নিল। সেই থেকে টুকটাক ফোন হচ্ছে। দু’দিন বসল কাফে কফি ডে—তে। অর্চির পয়সা খসল কিছু, একদিন সঞ্চিতাও খাওয়াল। ওদের দুজনের অফিস একটাই বিল্ডিং—এ, সেক্টর ফাইভ—এ। দুটো আলাদা ব্লক অবশ্য। কিন্তু বাসস্টপে, নিচের লবির কফি শপে, এখানে—ওখানে দেখা হয়ে যাওয়ার স্কোপ প্রচুর।
অর্চি একদিন জিজ্ঞেস করেছিল, অবশ্যই ক্লিয়ারলি না, সঞ্চিতার কোনও স্টেডি বয়ফ্রেন্ড আছে কিনা। সঞ্চিতাও ওকে তো সরাসরি কিছু বলেনি, তবে একটা মেসেজ দিয়েছে। না, ফোনের টেক্সট মেসেজ না। বডি ল্যাঙ্গুয়েজ বলে দিয়েছে, এখন কেউ নেই। আগে হয়তো ছিল। সেটা আপাতত ম্যাটার করে না।
সেই থেকে মোটামুটি লটকে আছে সম্পর্কটা একই জায়গায়। এগোচ্ছে বলা যায় না। কারণ ফিজিকাল হওয়া হয়নি এখনও। হয়তো নেক্সট টাইম আর একটু প্রাইভেসি আছে এমন জায়গায় দেখা হয়ে যাবে।
তবে একটাই আশার কথা, সেদিন ইমেল করেছে অর্চি ওকে, একটা পাতলা পর্দার আড়ালে একটা সেক্সি টপ পরা দীপিকা পাডুকোনের ছবি, পর্দাটায় ক্লিক করলেই ছবিটা একটা মোটকা মহিলায় কনভার্টেড হয়ে যায়। আর একটা গলা বলে ওঠে, দ্যাটস মাই মাম্মি!
সেটা দেখে হি হি হাসির চারটে ইমোটিকন পাঠিয়েছে ওকে সঞ্চিতা।
তার মানে কেস টা এগোচ্ছে। আপাতত অর্চি বসে আছে ওর কিউবিকলে, পাশের কিউবিকল থেকে চুমকি ঘোষটা গলাটা জিরাফের মতো বাগিয়ে বলে উঠল, অর্চি, আমাকে লবিতে বেরোলে একটা কফি এনে দেবে, প্লিইইজ?
কেন কেন, তোমার কফি বওয়া আমার কাজ নাকি? মনে মনে ঝাঁজালেও, অর্চি মেয়েটাকে পুরো কাটাল না। মেয়েটার চোখে একটা থ্রেট দেখতে পেল যেন। আসলে চুমকি ঘোষ দেখেছে, কাজের ফাঁকে চ্যাট করতে অর্চিকে। ওকে ঘাঁটালে ম্যানেজমেন্টকে যদি আবার লাগায়? তার উপর ও শুনেছে, মেয়েটার বাবা দীপেন ঘোষ পুলিশে কাজ করে। কে ঘাঁটাবে ওকে, বাবা!