‘ওয়ান মিনিট কিরণ। হাও ইস ইট পসিবল? সাপ্লাই লাইনের মেইন সুইচ, মিটার সব তো বাড়ির মধ্যেই থাকে!’
‘না চম্পকদা। মিস্টার কুমারের ইনফর্মেশন কারেক্ট। নর্থ ক্যালকাটার পুরনো বাড়িগুলো সব গায়ে—গায়ে জোড়া। অন্ধকার সরু কমন প্যাসেজে মিটার—বক্স, মেন—সুইচ সেই মান্ধাতার আমল থেকে আছে। পরে সিইএসসিকে চিঠি দিয়ে অনেকে মিটারের প্লেসমেন্ট চেঞ্জ করে নিয়েছে। বাবা করেননি। একটু গেঁতো ছিলেন।…কিন্তু মিস্টার কুমার, আমার দুটো প্রশ্ন আছে।’
‘বলুন ম্যাডাম।’
‘প্রথমত, প্রিয়দাই যে ফোনে ছোটকাকা হয়ে ভয় দেখিয়েছে, এভিডেন্স কী? সেকেন্ডলি, সে—ই যে মেন সুইচ অফ করেছে, তার প্রুফ?’
‘ফোনের প্রুফ কালকেই বি.এস.এন.এল. থেকে কালেক্ট করেছি। ওটাই ছিল লাস্ট কল। নেক্সট কল না আসা পর্যন্ত কথাগুলো রেকর্ডেড থাকে। ফোনটা এসেছিল কোনও মোবাইল থেকে। ব্যাঙ্গালোরের সিম। অরিজিন্যাল মালিককে পাওয়া যায়নি।’
‘দ্বিতীয়টা?’
‘দ্বিতীয়টা সিসি টিভির ফুটেজ দেখে। তাছাড়া মেন সুইচে প্রিয়তোষবাবুর ফিঙ্গারপ্রিন্টও পাওয়া গেছে।’
‘সিসি টিভির ফুটেজ বলতে?’
‘রিসেন্টলি কলকাতা পুলিশ প্রায় সব মাঝারি স্ট্রিট আর বড় রাস্তায় সিসি টিভি বসিয়েছে। হেরম্ব দাস লেন গলির মুখের ক্যামেরায় ধরা পড়েছে, প্রিয়তোষবাবু রাত ১১—৫৫ পর্যন্ত আমহার্স্ট স্ট্রিট থানা থেকে বেচু চ্যাটার্জি স্ট্রিট ধরে বেশ কয়েকবার হাঁটাহাঁটি করেছেন। অথচ আমায় বলেছিলেন, উনি নাকি সাড়ে দশটায় শুয়ে পড়েছিলেন। অথচ শ্বশুরবাড়ির লোকজন বলল, পরশু রাতে উনি সেখানে আদৌ যাননি।’
‘আনবিলিভেবল! প্রিয়তোষ যেভাবে জ্যাঠার দেখভাল করত, নাহ! মেলাতে পারছি না।’
‘আমিও প্রথমে পারিনি। কাল দুপুরে আপনার কাছ থেকে ওদের ফ্যামিলি হিস্ট্রি জানার পরে ক্রিমিনোলজি বইগুলো ঘেঁটেছি। এরকম ইনসট্যান্স আছে ডক্টর। এনি ওয়ে ওনার মোটিভ প্রসঙ্গে সব শেষে আসছি ডক্টর। তার আগে প্রিয়তোষের টোটাল প্ল্যানটা বলে নিই।’
‘ওকে কিরণ।’
‘থ্যাঙ্কয়ু স্যার। প্রিয়তোষবাবু ফোন, আলো নেভানো ছাড়াও আরেকটা ইনোভেটিভ প্ল্যান সাজিয়েছিলেন। ভেরি ইন্টারেস্টিং। সেটা কাজের মেয়ে সন্ধ্যাকে একতাড়া নোট ঘুষ দিয়ে। সন্ধ্যা কিন্তু বোঝেনি। মহীতোষবাবুর বেডরুমের ঠিক বাইরে বেশ বড় বাথরুম। তার এককোণে ওয়াশিং মেশিন। লেটেস্ট মডেল, পুরোটাই কম্প্যুটারাইজড। ঠিকঠাক টাইমার সেট করে, কাপড়জামা ঢুকিয়ে দিলে মেশিন নিজে—নিজেই জল নেয়, কাচাকুচি করে, জল বের করে দেয়, আবার জল নেয়, ধোয়, জল বের করে। টাইম ফুরনো না পর্যন্ত এই প্রসেস চলতেই থাকে।’
‘হ্যাঁ, হ্যাঁ। আমার বাড়িতেও স্ত্রী কিনেছে। দারুণ ব্যাপার!’
‘রাইট ডক্টর। কিন্তু আপনি মিসেসের কাচাকুচির সময় কখনও থেকেছেন কি?’
‘কী করে থাকব! আমি তো সকালেই বেরিয়ে যাই।’
‘মহীতোষবাবুও কখনও থাকেননি। উনিও সকালে অফিস বেরিয়ে যেতেন। দুপুরে সন্ধ্যা কাচাকুচি করে। তাই জানতেন না, কাচার সময় রেগুলার ইন্টারভ্যালে মেশিনের ভিতর থেকে ‘খটাখট’ শব্দ হয়! তারপর জল বেরোনোর কলকল…তারপর শিস—এর শব্দ…কিছু বুঝলেন?’
‘নাহ!’
‘ইমাজিন করুন। আলো নিভল, ভৌতিক ফোন করল মৃত ভাই, তারপর নিঝঝুম বাড়িতে ওইরকম বিকট শব্দ…জল পড়ছে…! কী ঘটবে মহীতোষবাবুর?’
‘মাই গড! কী বলছ কিরণ! ওয়াশিং মেশিনে টাইমার সেট করে কাপড়জামা ঢুকিয়ে দেওয়া ছিল?’
‘ইয়েস স্যার। সন্ধ্যাকে দিয়ে প্রিয়তোষ এই কাজটা করিয়েছেন। টাইম সেট করা ছিল রাত বারোটা!’
‘তুমি বুঝলে কী করে?’
‘স্যর, মেশিনের মোটা পাইপ দিয়ে ওই সকালেও জল সিপ করছিল। নর্দমার মুখটা ভিজে। সেকেন্ড টাইম চেক করতে গিয়ে সব ক্লিয়ার হয়ে গেল স্যার।’
‘গ্রেট! গ্রেট কিরণ! উই আর রিয়্যালি প্রাউড অব য়ু।’
‘আই’ম অলওয়েস অ্যাট ইওর সার্ভিস স্যার।’
‘এবার ইন ব্রিফ বলো তো, প্রিয়তোষের মোটিভ কী ছিল? যাকে এতদিন এত যত্ন করে দেখাশোনা করল, তার বিজনেস সুপারভাইস করল, তাকেই এভাবে সরিয়ে দিতে গেল কেন?’
‘স্যর, একটা কথা বলব?’
‘বলো।’
‘প্রিয়তোষবাবুর মোটিভ ম্যাডাম সব জানেন স্যর। নইলে খুড়তুতো দাদার কাছে বাবার মৃত্যুর খবর পেয়েই আপনাকে ফোন করতেন না। আমি স্যার, ওনাদের ফ্যামিলি হিস্ট্রি জেনেছি ডক্টর মিত্রর কাছ থেকে।’
‘মহিমা! বলবে?’
‘আমি?…আ—চ্ছা। ইটস আ স্যাড স্টোরি। চম্পকদা, আমার বাবা মানুষটা কিন্তু খারাপ ছিলেন না।’
‘না—না। তা কেন হবে? বলো, বলো। আমরা বিশ্বাস করব।’
‘চম্পকদা, বাবা ছিলেন একটু অদ্ভুত স্বভাবের। একদিকে স্নেহপ্রবণ, অন্যদিকে প্রচণ্ড রাশভারী। তেমনি ভয়ানক রগচটা। রেগে গেলে কোনও জ্ঞান থাকত না। যে—ই হোক, যা মুখে আসত, বলে দিতেন! একটা টাকাও বাজে খরচ করতেন না, অন্য কেউ করলে তার আর রক্ষে নেই। বাবা তাকে ধুয়ে দিতেন।’
‘আ—চ্ছা।’
‘কাকিমাকে আমি দেখিনি। তারপর মা—ও হঠাৎ চলে গেলেন। বাবা লাগামছাড়া বদরাগী হয়ে উঠলেন। একেবারে হিটলার হয়ে গেলেন। তখন বাবা—কাকা আর আমরা দুজন। আমাদের ব্যবসায় বাবা সোল প্রোপ্রাইটার। কিন্তু কাকা অংশীদার না হলেও ছিলেন মালিকের মতো। কারণ ভাইকে অসম্ভব ভালোবাসতেন বাবা। এরকম একটা সময়ে, বোধহয় বছর আট—নয় আগে, বাবার সঙ্গে কাকার একদিন মতান্তর হল। ব্যবসায় কোনও একটা লোকসান নিয়ে বাবা সকলের সামনে কাকাকে অকথ্য গালাগালি করলেন। কাকা নিতে পারেননি। সেই রাতে কাকা অপমানে সুইসাইড করলেন।’