‘হুম! তার মানে কাল মহীতোষবাবু একাই ছিলেন?’
‘জাস্ট রাতটুকু। আমি সাতটা নাগাদ জ্যাঠাবাবুকে বলে বেরিয়েছি। সন্ধ্যা বলল, ও গেছে আটটা নাগাদ।’
‘আপনার বাবা কোথায় থাকেন?’
‘বাবা!…আমার বাবা—মা কেউ নেই মিস্টার কুমার। বাবা দশ বছর হল গত হয়েছেন। মা গেছেন আমায় জন্ম দিতে গিয়ে।’
‘সো স্যাড। কী হয়েছিল বাবার?’
‘কিছু হয়নি। হি কমিটেড সুইসাইড। তখন আমি জাস্ট এম.এ. পাশ করেছি।’
টুং—টুং। কলিংবেল বাজল।
‘আসুন ডাক্তারকাকু।’
‘হঠাৎ কী হল প্রিয়তোষ? আমি তো স্তম্ভিত! লাস্ট উইকেও মহীতোষদার সব চেক আপ হল। হি ওয়াজ অ্যাবসলিউটলি পারফেক্ট! ইনি?’
‘লালবাজার থেকে।’
‘নমস্কার ডক্টর। আমায় তদন্ত করতে জয়েন্ট কমিশনার সায়েব পাঠিয়েছেন। মহীতোষবাবুর সব ঠিক ছিল, বলছেন?’
‘হ্যাঁ অফিসার। জাস্ট হার্টটা একটু—’
‘কী?’
‘একটু উইক। অবশ্য সে বরাবরই। বাইরের থেকে মানুষটা খুব কড়া, রাশভারী। কিন্তু ভেতরে—ভেতরে একটু ভিতু।’
‘ভিতু!’
‘ওই আর কী! ভূতের ভয় ছিল। আমার সঙ্গে অনেকদিনের সম্পর্ক, তাই নানারকম কথা হত। আবার পরলোকতত্ত্ব, আত্মা—টাত্মা, ভৌতিক—থ্রিলার এসব বই খুব পড়তেনও।’
‘পিকিউলিয়র।’
‘হ্যাঁ অফিসার।…চলো প্রিয়তোষ, একবার দেখে আসি ওনাকে। আপনিও চলুন। ভেরি স্যাড।…ভালো কথা, মহিমাকে খবর দিয়েছ?’
‘দিয়েছি। ও আসছে বলল। না আসা পর্যন্ত বডি পিস হেভেনে রাখতে হবে।’
‘সে তো নিশ্চয়ই।…হুঁ! বডিতে রাইগর মর্টিস সেট ইন করেছে। মানে মৃত্যুটা হয়েছে কাল বারোটা—সাড়ে বারোটা নাগাদ।’
‘আর?’
‘ম্যাসিভ কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট হয়েছে অফিসার। সাডেনলি!’
‘সাডেনলি কেন?’
‘কারণ আমার ডাক্তারি চোখ বলছে, মৃত্যুর আগে কোনও কারণে খুব ভয় পেয়েছেন। চোখদুটো খোলা। ডানহাত বুকের বাঁ দিকে।’
‘বিছানাটা দেখুন ডক্টর! এলোমেলো। জায়গায়—জায়গায় ভিজে গেছে।’
‘আতঙ্কে নিশ্চয়ই ঘাম বেরিয়েছিল।’
‘ডক্টর, নিচের দিকটা দেখেছেন? পাজামাটা ভিজে।’
‘দেখেছি অফিসার। সাডেন অ্যাটাকে অনেকসময় ইউরিন বা স্টুল বেরিয়ে আসে।…আচ্ছা, আমি কি ডেথ সার্টিফিকেট লিখতে পারি?’
‘হ্যাঁ ডক্টর। আপনার ফাইন্ডিংস লিখে দিয়ে যান। বাই এনি চান্স, এখন তো ক্রিমেশন হচ্ছে না। ন্যাচারালি কোনও তাড়া নেই। ম্যাডাম আসুন, তারপর ডিসিশন নেওয়া যাবে। প্রিয়তোষবাবু! একটু কাছে আসুন তো।’
‘মানে! কেন?’
‘গন্ধ! কাম! কাম! কাল রাতে কী করছিলেন?’
‘ওই মানে…শালাদের সঙ্গে একটু আড্ডা, তার সঙ্গে…ইয়ে…’
‘কখন?’
‘রাত দশটা নাগাদ।’
‘তারপরে আর বেরোননি?’
‘না—না। ডিনার সেরে ওখানেই শুয়ে পড়ি।’
‘গুড। বাথরুমটা কোথায়?’
‘এই তো। পাশেই।’
‘খুলুন। লাইটটা জ্বালুন।…হুঁ…উঁ…ওকে, ওকে।’
‘অফিসার, আমি কি এবার যেতে পারি?’
‘জাস্ট একমিনিট। আপনার নাম্বারটা নেব। আচ্ছা, ডক্টর এটা খেয়াল করেছেন? বেডসাইড ফোনের রিসিভার নিচে ঝুলছে।’
‘হ্যাঁ, তাই তো!’
‘এর মানে কী বলুন তো? মৃত্যুর ঠিক আগে মহীতোষবাবু কারও সঙ্গে ফোনে কথা বলেছেন।…যাই হোক, যা দেখার আপাতত কমপ্লিট। ওসি এলেই আমরা বেরিয়ে যাব। বাড়ি সিল করে পুলিশ ওয়াচিং থাকবে মহিমা ম্যাডাম না আসা পর্যন্ত। প্রিয়তোষবাবু, আপনার আর ডাক্তারসায়েবের নাম্বারটা নেব।’
‘কিন্তু জ্যাঠাবাবুর বডি…?’
‘ওটা আর আপনার হেডেক নয়। বডি আমাদের কাস্টডিতে থাকবে।…আপনাদের সন্ধ্যা কোথায়?’
‘এখানেই আছে। ও খুব ভেঙে পড়েছে। সারাদিন ও—ই তো মানুষটার সেবা করত।…সন্ধ্যা! এদিকে এসো।’
‘ওকে আমি সঙ্গে নিয়ে যাব। না—না—না, নিশ্চিন্ত থাকুন প্রিয়তোষবাবু। ওর ওপর কোনও টর্চার করা হবে না।’
.
‘এসো কিরণ। উই আর ওয়েটিং ফর য়ু। উইদিন আ ডে, য়ু হ্যাভ ব্রেক থ্রু দ্য ক্রাইম, ডান আ গ্রেট জব।’
‘থ্যাঙ্ক য়ু স্যার। অল ক্রেডিট গোস টু য়ু স্যার। আপনিই আমায় ওখানে পাঠিয়েছিলেন।’
‘না কিরণ। বরঞ্চ মহিমাকে কিছুটা ক্রেডিট দেওয়া যায়। বিকস ও আমাকে অত ভোরে ফোন করে বারবার রিকোয়েস্ট করেছিল। আই ডিডন্ট বিলিভ। কিন্তু আফটার অল ও আমার বেস্ট ফ্রেন্ডের বেটার হাফ। আমি ওর রিকোয়েস্ট রাখতে বাধ্য হই।’
‘রাইট স্যর। ম্যাডামের কাছে আমরা গ্রেটফুল। নইলে সত্যিটা কোনওদিন প্রকাশ পেত না।’
‘ইয়েস কিরণ।…স্টার্ট করো।’
‘ডক্টর মিত্র, সবচেয়ে আগে আপনাকে কৃতজ্ঞতা জানাই। আপনার কথা থেকে আমি প্রথম ক্লু পেয়েছি।’
‘তাই?’
‘ইয়েস। মনে করে দেখুন ডক্টর, কাল আপনি বলে ছিলেন, মহীতোষবাবু বাইরে কড়া। আসলে ভিতু মানুষ। পার্টিকুলারলি ওনার ভূতে খুব ভয়। ভূত বিশ্বাস করেন, তাই ভয় পান, আবার ভূতপ্রেত নিয়ে চর্চা করেন। এরপর মহীতোষবাবুর চোখ—খোলা ডেডবডি দেখে আপনার ফার্স্ট রিঅ্যাকশন ছিল, মৃত্যুর আগে উনি ব্যাপক ভয় পেয়েছেন।’
‘হুঁ।’
‘তখনই আমার মনে হল, মহীতোষবাবু ভয় পাবেন কেন? কেউ কি ভূত সেজে এসেছিল? মেন গেট বন্ধ। পসিবল নয়। হঠাৎ আমার চোখে পড়ল, ল্যান্ডফোনের রিসিভারটা ঝুলে আছে। অর্থাৎ একটা ফোন এসেছিল…এবং কথা বলার পরে মহীতোষবাবুর ফোন ধরে রাখার কন্ডিশন ছিল না। সে ফোন কার বলুন তো?’
‘কার?’
‘মহীতোষবাবুর ছোটভাই মনোতোষের। যিনি দশ বছর আগে ইহলোক ত্যাগ করেন।’
‘ওয়াট! আমার ছোটকাকা! কী বলছেন?’
‘ঠিকই বলছি ম্যাডাম। আপনার মৃত ছোটকাকা তো ফোনটা করেননি। করেছিলেন প্রিয়তোষ। বাবার গলা নকল করে, ডিসটর্টেড ভয়েস—এ। জ্যাঠাকে ভয় দেখাতে। ঠিক তার আগেই উনি বাড়ির মেন সুইচ অফ করে দেন। পুরো বাড়ি অন্ধকার হয়ে যায়।…কাল সকালে আমি যখন আচমকা পৌঁছ যাই, তখনও বাড়িটায় ইলেকট্রিসিটি ছিল না। সকালবেলা, শীতকাল। ফ্যান বা এসির দরকার নেই। পুরো বাড়ি থেকে সকলকে বের করে যখন আমরা দখল নিই, তখন ব্যাপারটা পরিষ্কার হয়।’