”বাজে কথা রাখ বুড়ি। আমার টাকা চাই। পুরোটাই। —অ্যান্ড অ্যাট দিজ ভেরি মোমেন্ট।” স্টিলের আলমারিটার দিকে তাকাচ্ছে। চেস্টের ড্রয়ারগুলো খুলে ফেলল ফটফট করে।
একটু চিন্তা করলেন স্টেফানিয়া। এই বাড়িটা তাঁর সবসময়ের থাকার জন্যে নয়। মনখারাপের সময় চলে আসেন। লোকালয় থেকে একটু দূরে বাড়িটা সেই জন্যেই তৈরি। একলা থাকবেন বলে আজকে চাকরবাকরদেরও সব ছুটি দিয়ে দিয়েছেন। বব নিজের লোক বলে বিষয়টা জানে। সুযোগটা কাজে লাগাতে এসেছে। কিন্তু মুশকিল হল, এই মুহূর্তে সত্যিই তেমন টাকাপয়সা নেই। তাছাড়া আলমারির চাবিটাও সঙ্গে আনতে ভুলে গিয়েছেন। কিন্তু ববের যা মূর্তি, বিশ্বাস করবে কি?
”কী হল বুড়ি…?” মুখ খারাপ করছে বব। স্টেফানিয়া দেখলেন হাতে কখন একটা চকচকে চাকু উঠে এসেছে তার। ঘরময় ঘুরছে সে। লাথি মারল আলমারিতে। মাঝে মাঝেই দৃশ্যপট থেকে সরে যাচ্ছে সে। ফিরে আসা মাত্রই স্টেফানিয়া ভাবছেন সোজা শু্যট করে দেয় ফ্রাস্কেনস্টাইনটিকে। কিন্তু নিজের ঘরে রক্তপাত চান না। মাথা ঠান্ডা রাখতে হবে।
”বব বিশ্বাস করো, এই মুহূর্তে আমার কাছে তোমাকে দেওয়ার মতো টাকা নেই। ঠিক আছে। কাল অফিসে এসে পুরোটাই নিয়ে যেও।” বললেন স্টেফানিয়া।
”বব ডায়াজ অত বুদ্ধু না। ফিরে গেলেই তো পুলিশকে ফোন করবি, তাই না?” দাঁত চেপে বলল বব। রাগে কাঁপছে সে। রিডিংটেবিলে রাখা ফুলদানিটা ছুড়ে মারল আলমারিতে। পোর্সেলিনের দামি ফুলদানি ভাঙল ভীষণ শব্দ করে। ফুলদানির নীলফুলগুলো বব—ই এনেছিল পরশু। ভালো লেগে যাওয়াতে রেখে দিয়েছিলেন স্টেফানিয়া। জুতোর মসমস শুনে মনে হচ্ছে সেগুলোকে পিষছে পা দিয়ে। পরক্ষণেই আবার তেড়ে এল তার দিকে। একদম সোজাসুজি দাঁড়িয়েছে। কী ভয়ঙ্কর লাগছে চব্বিশ বছরের ছেলেটাকে। ঠোঁটের কষ বেয়ে লালা গড়াচ্ছে। চোখ দুটো যেন রক্তপিপাসু ভ্যাম্পায়ারের মতো জ্বলছে। ঝট করে হাত বাড়িয়ে লাইটটা নিবিয়ে দিলেন স্টেফানিয়া। দ্রুত ঠিক করেছেন কী করবেন। অন্ধকার ঘরে হায়েনার মতো হুঙ্কার করে উঠল ছেলেটা। সেকেন্ডের মধ্যে পাঁচ—ব্যাটারির টর্চের তীব্র আলো ফেলেছেন ওর চোখে। ক্ষণিকের জন্যে ঘাবড়ে গিয়েছে ছোঁড়া। সেই সুযোগে বাঁ—হাতে ধরা পিস্তলের ট্রিগারে চাপ দিলেন। ভীষণ শব্দে গুলি ছুটল। প্রতিক্রিয়ায় পিছনে বালিশের উপরে ছিটকে পড়লেন তিনি।
৩
ঠিক একঘণ্টার মধ্যে চলে এল পুলিশ। এত রাতেই। এদেশে কিছু উন্নতি হয়েছে তাহলে। সিনেমাহলের শো ছাড়া পাংচুয়ালিটির আর কোনও নিদর্শন এ দেশে এখনও দেখেননি স্টেফানিয়া। আশ্চর্য হওয়ারই কথা। ফোনে ‘কামিং উইদিন অ্যান আওয়ার’ শুনে হাসি—ই পেয়েছিল। ভারতীয়দের জানা আছে তাঁর। কিন্তু অবাক কাণ্ড। ঠিক তাই এসেছে। এবং তিনজন সঙ্গী নিয়ে স্বয়ং রুদ্রাণী চক্রবর্তী। ছিপছিপে শ্যামলা—শ্যামলা এই মেয়েটিকেই টিভিতে দেখেছিলেন স্টেফানিয়া। নিচের ঘরে বসে অপেক্ষা করছিলেন তিনি। দরজা খুলে দিতে সরাসরি প্রশ্ন করল মেয়েটি, ”ম্যাম, আপনিই ফোন করেছিলেন?”
”ইয়েজ। একটা স্কাউন্ড্রেল আমার ঘরে ড্যাগার নিয়ে ঢুকে পড়েছিল। টাকা ডিম্যান্ড করছিল। আই হ্যাড নো অপশন বাট টু শু্যট হিম। আই থিংক হি ইজ…” চুপ করে গেলেন স্টেফানিয়া।
”এ তো সিরিয়াল কিলিং শুরু হয়ে গেল দেখছি।” ভুঁড়িওলা বয়স্ক কনস্টেবলটি উঠেছে।
”বডি কোথায়?” নিজের পরিচয় দিয়ে বলল রুদ্রাণী চক্রবর্তী।
”আপস্টেয়ার্স। ইন মাই বেডরুম।” স্থির গলায় বললনে স্টেফানিয়া। ”ব্যালকনির দরজা ঠিকমতো লক ছিল না। লোকটা ধাক্কা মেরে ঢোকে। আওয়াজেই ঘুম ভেঙে যায় আমার। তাও চুপ করে থাকি। বোঝার চেষ্টা করি, উদ্দেশ্যটা কী। লাইট পর্যন্ত জ্বালাইনি। প্রথমে সে আমার চেস্টের ড্রয়ারগুলো খোলে। খুব কশাসলি। কিছু না পেয়ে আমাকে জাগায়। আলমারির চাবি চায়। যেটা আমার কাছে সত্যিই ছিল না। বাট হি ডিডন’ট বিলিভ। ড্যাগার নিয়ে তেড়ে আসে। ভয় পেয়ে শু্যট করে দিই আমি। ভাগ্যিস আর্মসটা সঙ্গে ছিল। আসলে টিভিতে মিস্টার উন্নিকৃষ্ণনের কটেজে মার্ডারটা দেখার পর থেকে কেমন একটা ভয় করছিল। নিজের রিভলভারটা সঙ্গে রেখেছিলাম তাই।”
থামলেন স্টেফানিয়া। যা বলেছেন যথেষ্ট। পুওর বব। মোটেই ঠকাতেন না ওকে। হতভাগাটা বুঝল না। মাথা নিরেট হলে যা হয়। রুদ্রাণী মেয়েটি কী বুঝেছে সে—ই জানে। একটা নোটবুক বের করে স্টেটমেন্টটা লিখে ফেলল খসখস করে। তারপর দলবল নিয়ে উঠে গেল উপরে।
স্টেফানিয়া বুঝতে পারছিলেন না কী করবেন। বুকের ভিতরে অস্বস্তি হচ্ছে কেমন। ধীরে ধীরে উপরেই উঠে এলেন। —সেই ভয়ানক দৃশ্য! খাটের ঠিক পাশটিতে চিত হয়ে পড়ে আছে বব। বিস্ফারিত নিথর চোখের মণিদুটি সোজা সিলিংয়ের দিকে চেয়ে আছে। চাকুটা পড়ে আছে পাশেই। গুলি সম্ভবত বুকেই লেগেছিল। আঘাতের তীব্রতায় খাট থেকে নিচে ছিটকে পড়ে ছিল সে। দৃশ্যটা সহ্য করতে পারলেন না স্টেফানিয়া, ড্রেসিংটেবিলের সামনে রাখা ছোট্ট টুলটায় বসে পড়লেন ধপ করে।
”ম্যাম মনে হচ্ছে লোকটি আপনার চেনা?” রুদ্রাণী মেয়েটি নিজেই খচাখচ ফোটো তুলছিল, স্টেফানিয়াকে দেখে এগিয়ে এসে জিজ্ঞেস করেছে।