আবার থুতু ফেলল বব। তিনপেগ খেয়েছে মাত্র। অবশ্য পুরোটাই নিট। মুখটা কেমন টক লাগছে। থুতু উঠছে বারেবারে। নার্ভাস হয়ে গেল নাকি? ধুস। সব কাজের—ই শুরু আছে। জলে একবার নেমে পড়ে কুমিরের ভয় করলে চলে না। জ্যাকেটের ভিতরের পকেটে হাত রাখল সে। শীতল ধাতব স্পর্শ। মগজটাকেও এমন সলিড আর কুল রাখতে হবে। কয়েক মিনিটের তো কাজ। বুড়োসাহেবটা ছাড়া ”হেভেনস অ্যাবোড” বিলকুল ফাঁকা। মিয়াম্মা নামে একটা বউ রান্নাবান্না করে। কাজ সেরে অনেক আগেই হাপিস হয়েছে সে। একদম ফাঁকা গোল। চোখ বুজেও নেট করা যায়।
বাইক লক করে এগিয়ে চলল বব। হ্যান্ডেলে ঝোলানো কেকের প্যাকেটটা হাতে নিয়েছে। এটা হল এনট্রিপাস। অন্ধকার নামছে চুইয়ে চুইয়ে। হেভেন’স অ্যাবোড ঝাপসা হয়ে গিয়েছে। চারিপাশ খুব ভালো করে জরিপ করে নিল সে। ফলস চাপদাড়িটা দেখে নিল হাত দিয়ে। থোবড়াটা একটু চেঞ্জ করে নেওয়াই বেটার। কাঠের গেট খুলে নুড়ি বিছানো পথ বেয়ে গাড়িবারান্দায় এসে দাঁড়াল সে। তিনধাপ হোয়াইট মার্বেলের সিড়ি বেয়ে মেন দরজা। একবার পিছনে চাইল। কেউ কোত্থাও নেই। কুল সিন। তবু হঠাৎই বুকের ভিতর একডজন মোটরসাইকেলের ইঞ্জিন স্টার্ট নিয়েছে যেন। উঁহু, নার্ভাস হলে চলবে না। চোয়াল শক্ত করে কলিংবেলের সুইচে চাপ দিল বব। শীতকাল বলে একটা সুবিধা, উলেন গ্লাভস পরাই আছে হাতে। ফিংগারপ্রিন্ট উঠে যাওয়ার সমস্যা নেই।
এক দুই তিন… সেকেন্ড গুনছিল বব। বত্রিশের মাথায় ভাবছিল আবার টুং টাং ঘণ্টা বাজাবে কিনা, তক্ষুনি খট করে দরজাটা খুলল।
”হুম ওয়ান্ট?”—প্রত্যাশামতোই বুড়োসাহেব দরজা খুলেছে। জলহস্তীর মতো বিশাল চেহারা। ম্যাম বলেছিল নব্বুইয়ের কাছাকাছি বয়স। দেখে কিন্তু অতটা মনে হচ্ছে না। সোজা দাঁড়িয়েছে একদম। হাতে লাঠিও নেই। এই শীতেও প্লেন নাইটড্রেস। জাস্ট একটা সিল্কের গাউন। মাল টানছিল মনে হয়, মুখে ভালোই গন্ধ। ববের ইচ্ছে করছিল, এখনই কাজটা সেরে দেয়। কিন্তু সেটা রিস্কি হয়ে যাবে। দরজা খুলে রেখে অ্যাটলিস্ট খুন—টুন করা চলে না। তা সে যতই সেক্লুডেড প্লেস হোক না কেন। কথায় বলে দেওয়ালেরও কান আছে। তাছাড়া ম্যাম নীল রঙের একটা মেটাল স্টার দিয়েছেন, কেন কে জানে, গুলি চালানোর আগে সেটা নিয়েও একটু নকশা দেখানো আছে। পুরনো কী ক্ষার আছে কে জানে!
”গুড ইভনিং স্যার। উন্নিসাব এটা পাঠিয়ে দিলেন—হ্যাপি নিউ ইয়ার স্যার।” হাতের প্যাকেটটা দেখিয়ে ইংরেজিতে উত্তর দিল বব।
”ওহ দ্যাটস নাইস।” বলে হাতির পায়ের মতো হাতটা বাড়িয়ে প্যাকেটটা নিয়েছে বুড়ো। দরজা প্রায় বন্ধ করে আর কি।
”স্যার একটা কাজ আছে, গ্যাস সার্ভিস করে যেতে হবে। জাস্ট আ রুটিন চেক। ডোন্ট ওরি স্যার। স্পেয়ার ওনলি টেনমিনিটস।” গলা না কাঁপিয়ে ঢোঁক—ফোক না গিলে মোটামুটি স্মার্টলিই বলল বব।
”ক্যুরিয়ার কাম গ্যাস মেকানিক?” ভুরু কপালে উঠেছে বুড়োর।
”ইয়েজ স্যার। কনফেকশনারিটা আমার ভাইয়ের, তাই…”
”ও কে! ক্যারি অন।” দরজার পাশ থেকে সাদা জলহস্তী সরে গেল। ঘরে ঢুকে পড়ল বব। এটা ড্রয়িংরুম। বেশ সাজানো—গোছানো ছিমছাম। দেশি বিদেশি জিনিস ভরিয়ে বেশ একটা ককটেল ডেকরেশন করেছে উন্নিবুড়ো। ডলার টানার কায়দা আর কি।
”সোজা গিয়ে ডানদিকের লাস্টরুমটা কিচেন।” জলহস্তী নির্দেশ দিল গমগমে গলায়। ধপাস করে বসেছে বিশাল একটা আর্মচেয়ারে। সামনেই টি—উডের প্যাঁচালো টেবিল। বুড়ো মাল—ই গিলছিল। স্কচ রাম না হুইস্কি কে জানে! টেবিলের উপরেই রয়েছে ছিপিখোলা বোতলটা। হেবি দেখতে। ঢাউস একটা সেন্টের শিশি যেন। জলটল নেই। ডাইরেক্ট বোতল থেকে মারছে। লিভারের জোর আছে বটে। হয়তো বা ওটারও। কয়েকহাত তফাতে এলসিডি টিভির স্ক্রিনে বৃষ্টিভেজা নায়ক—নায়িকার উদ্দাম নৃত্য। হিন্দি মিউজিক চ্যানেল। সাউন্ড প্রায় শোনাই যাচ্ছে না। দরকারও নেই। ঢুলুঢুলু চোখে নায়িকা আর তার সঙ্গিনীদের ললিত লোভন লীলা গিলছে। ববের পদ্মিনীর মুখটা মনে পড়ল। পরক্ষণেই ওর শরীরের না ঢাকা জায়গাগুলো। চোদ্দোমাস চরকি হয়ে ঘুরছে। এখনও নাকাব সরাতে পারল না। পেমেন্টটা হাতে আসুক, তখন দেখবে কত জোর পদ্মিনীর।
নাঃ, দেরি করে লাভ নেই। সদর দরজাটা বন্ধ করে দিল বব। বুড়ো ফিরেও চাইল না। বড্ড নিরিমিষি কাজ। শিকড় উপড়ানো একটা গাছকে কাটতে হবে। জ্যাকেটের বুকপকেট থেকে মেটালের নীল তারাটা বের করল ও। লোকটার কোনো খেয়াল নেই। ভারতীয় সুন্দরীর নিতম্বদুলুনি দেখছে তন্ময় হয়ে। দ্যাখ ব্যাটা। শেষবারের মতো দ্যাখ। সোজা গিয়ে টেবিলের উপরে নিজের বাঁ পাটা রাখল বব। স্টারটা একদম লোকটার নাকের ডগায় ধরেছে।
”এটা চিনতে পারেন স্যার?” ম্যামের শিখিয়ে দেওয়া কথাগুলো বলল সে।
ভুরু কুঁচকে গেল বুড়োর। মুখের জ্যামিতি দ্রুত পাল্টাচ্ছে। গল্প আছে তো!
”হেই…ইউ ব্লাডি সোয়াইন…” চাপা হুঙ্কার দিয়ে উঠল জলহস্তী। আর দেরি নয়। স্টারটা পকেটে পুরে চট করে টেবিলের উপরে রাখা টিভির রিমোটটা উঠিয়ে নিল বব। ফুল ভল্যুমে তুলে দিল টিভির সাউন্ড। এটা করার খুব প্রয়োজন হয়তো ছিল না। এক কিলোমিটারের মধ্যে কোনও বসতি নেই। তবু, রিস্ক নিচে চায় না সে। কিন্তু ফোল্ডিং ছুরিটা বের করতে যাওয়ার আগেই প্রতিরোধটা এল। চোয়ালের উপর নেমে এল হাতির পায়ের মতো হাতটা। শেষ মুহূর্তে ছিটকে গিয়েও পাঞ্চটা এড়াতে পারল না সে। কানের পাশে হাতুড়ির মতো পড়ল ঘুষিটা। চার—পাঁচ সেকেন্ডের জন্যে পুরো ব্ল্যাকআউট। সংবিৎ ফিরতে না ফিরতেই জলহস্তি ভিতরের ঘরের দিকে ছুটেছে। জ্যাকেট থেকে ছ’ইঞ্চির ফোল্ডিং চাকুটা টক করে বের করে পেলল বব। তারপর যতটা জোর আছে ঠুসে দিল লোকটার পিঠে। বিকট চিৎকার করে একটা পাক খেয়ে হুমড়ি খেয়ে পড়ল জলহস্তীটা। পিঠের ডানদিক দিয়ে ফিনকি দিয়ে রক্ত বেরিয়ে আসছে।