‘আপনি ভয় পাবেন না৷ পুলিশ আপনার বাবার সঙ্গে কনট্যাক্ট করেছে৷ ওঁর মোবাইল ট্যাপ করার ব্যবস্থা করেছে৷ এ ছাড়া পুলিশ অফিসাররা এর মধ্যেই গাড়ি নিয়ে আপনার খোঁজে বেরিয়ে পড়েছেন৷ সেই গাড়িতেই আমি বসে আছি—৷’
‘আপনার নাম কী?’
মিমোর খেয়াল হল, সকাল থেকে নিজের নামটাই প্রিয়াংকাকে কখনও বলা হয়নি৷ ও ফোনে নাম বলল৷ তারপর আরও বলল, ‘ভয় পাবেন না৷ একটু ওয়েট করুন৷ আর কিছুক্ষণের মধ্যেই আমরা আপনাকে খুঁজে বের করব…৷’
হঠাৎই দাশগুপ্ত মিমোর কাছ থেকে মোবাইল ফোনটা চেয়ে নিলেন৷ প্রিয়াংকাকে বললেন, ‘প্রিয়াংকা, মানিকতলা থানার অ্যাডিশনাল ও.সি. অনুজ দাশগুপ্ত বলছি৷ য়ু আর রিয়েলি আ ব্রেভ গার্ল৷ যা করার আমরা করছি৷ এয়ারপোর্ট এরিয়ার থানাগুলোকে আমরা অ্যালার্ট করে দিয়েছি৷ লালবাজারের ডিটেকটিভ ডিপার্টমেন্ট এর মধ্যেই অ্যাকশানে নেমে পড়েছে৷ মনে হয় আর এক-দেড় ঘণ্টার মধ্যেই আমরা তোমাকে রেসকিউ করতে পারব৷ য়ু জাস্ট হ্যাং অন৷ ডোন্ট গেট নার্ভাস৷ আচ্ছা, ওই লোকগুলোর কাছে কি আর্মস আছে?’
‘হ্যাঁ—আছে৷ রিভলভার৷’
‘ডোন্ট উয়ারি, প্রিয়াংকা৷ আমরাও তৈরি আছি৷ তুমি একটুও ভয় পেয়ো না৷ আর ড্রাস্টিক কিছু করতে যেয়ো না৷ ও. কে.?’
‘যা করার তাড়াতাড়ি করুন৷ আজ সকালের মধ্যেই আমার ব্যাপারে ওরা যা হোক একটা ফাইনাল ডিসিশান নিয়ে…এই রে, মাসি এসে গেছে৷’ কথাটা বলেই টেলিফোনের লাইন কেটে দিল প্রিয়াংকা৷
দাশগুপ্ত মিমোকে মোবাইলটা ফেরত দিতে-দিতে জিগ্যেস করলেন, ‘মাসিটা কে?’
মিমো বলল৷ তারপর ওর সঙ্গে প্রিয়াংকার যা-যা কথাবার্তা হয়েছে সেগুলো খুঁটিয়ে-খুঁটিয়ে জানাল৷ পিছনের সিটে বসা মহেন্দ্র কাগজ পেন বের করে পয়েন্টগুলো সংক্ষেপে টুকে নিলেন৷
মিমোর মুখে ‘মাইক্রো-ক্যাসেট’-এর কথা শুনে দাশগুপ্তর ভুরু কুঁচকে গেল৷ তিনি জিগ্যেস করলেন, ‘এই মাইক্রো-ক্যাসেটের ব্যাপারটা কী?’
মিমো ঠোঁট উলটে বলল, ‘কী জানি—জানি না৷ এই ফার্স্ট টাইম শুনছি৷ পরের বার ফোন করলে জিগ্যেস করব৷’
গাড়িতে বসে কিছুক্ষণ আলোচনার পর দাশগুপ্ত পকেট থেকে একটা একশো টাকার নোট বের করে মহেন্দ্রকে বললেন সামনের দোকানগুলো থেকে কিছু খাবার কিনে নিতে, আর সঙ্গে স্প্রাইটের একটা দু-লিটারের বোতল৷ তা হলে চলন্ত গাড়িতে বসেই খাওয়ার কাজটা সেরে নেওয়া যাবে৷ শুধু-শুধু আর সময় নষ্ট হবে না৷
মহেন্দ্র খাবার কিনে নিয়ে ফিরে আসতেই ধনিয়া গাড়ি ছুটিয়ে দিল৷ অনুজ দাশগুপ্ত ওদের সবাইকে খাবার ভাগ করে নিতে বললেন৷ নিজেও নিলেন৷ তারপর খাওয়া শুরু করার আগেই কোথায় যেন ফোন করে কথা বলতে লাগলেন৷
মিমো হাঁ করে দাশগুপ্তর কথাগুলো গিলতে লাগল৷ ওর ভেতরে-ভেতরে একটা অদ্ভুত উত্তেজনা চারিয়ে যাচ্ছিল৷ ও বুঝতে পারছিল, দাশগুপ্ত অন্য কোনও থানার পুলিশ অফিসারদের সঙ্গে কথা বলছেন৷
‘…হ্যাঁ, আপনারা এয়ারপোর্টের কাছাকাছি এলাকায় চক্কর দিন৷ আর এটা লক্ষ রাখবেন—সবুজ রঙের তিনতলা ফ্ল্যাটবাড়ি…বাড়ির ছাদে মোবাইল সার্ভিস প্রোভাইডারের লাল আর সাদা রঙের টাওয়ার…মানে, ভোডাফোন, এয়ারটেল, টাটা ইন্ডিকম—এইসব কোম্পানির টাওয়ার৷ লোকেট করতে পারলেই লালবাজারের ডিটেকটিভ ডিপার্টমেন্টে জানাবেন৷ ওরাই ব্যাপারটা সেন্ট্রালি ডিল করছে৷ …এই অপারেশানটার নাম হচ্ছে ‘‘অপারেশান ব্ল্যাক’’৷ ওরা আমাকে এই অপারেশানের কো-অর্ডিনেটর করেছে৷…হ্যাঁ, আমিই ইন্সট্রাকশন দেব, তবে ইনফরমেশান আপনারা যা পাবেন সবই লালবাজারে জানাবেন৷ ওরা আমাকে সবসময় আপডেট করবে৷…হ্যাঁ, হ্যাঁ—ও. কে.৷’
দাশগুপ্ত ফোন শেষ করে সিটে হেলান দিয়ে আরাম করে বসলেন৷ শুরু থেকেই মানুষটার বিশ্রাম নেই—একের পর এক ফোন—হয় আসছে, নয় যাচ্ছে৷ এখন একটু ফুসরত পেয়ে খেতে শুরু করলেন৷
মিমো, বাবলি, ধনিয়া আর মহেন্দ্রর খাওয়া প্রায় শেষের দিকে৷ স্প্রাইটের বোতলটা ওদের হাতে-হাতে ঘুরছিল৷ মহেন্দ্র এবার বোতলটা দাশগুপ্তর দিকে এগিয়ে দিয়ে বললেন, ‘এই নিন, স্যার৷’
দাশগুপ্ত মুখ উঁচু করে খুব সাবধানে দু-ঢোঁক স্প্রাইট খেলেন৷ মিমো লক্ষ করল, স্যারের যাতে ওভাবে কোল্ড ড্রিংক খেতে অসুবিধে না হয় সেজন্য পাইলট ধনিয়া গাড়ির স্পিড অনেক কমিয়ে দিল৷
মহেন্দ্র মাথা চুলকে বললেন, ‘স্যার, লগতা হ্যায় বহত সারে ক্রিমিনাল লোগ ব্যাপারটার মধ্যে জড়িয়ে আছে৷ প্রথমে তিনটে লোক—তারপর ওই ‘‘বস’’৷ আর পাহারাদার মাসি৷’
দাশগুপ্ত একটা বড় শ্বাস ফেলে বললেন, ‘হুঁ৷ তার ওপর মহেন্দ্র, আর-একটা ব্যাপার নোট করো : কিডন্যাপাররা টাকা চাইছে না—চাইছে স্রেফ হ্যান্ডিক্যামের একটা মাইক্রো-ক্যাসেট৷’ বাইরের ছুটে যাওয়া রাস্তার দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইলেন দাশগুপ্ত৷ তারপর আপনমনেই বললেন, ‘কী আছে ওই মাইক্রো-ক্যাসেটে—যেটা এত ডেসপারেটলি ওদের দরকার?’
মিমো মনে-মনে ভাবল, মাইক্রো-ক্যাসেটটা কি কোনও গুপ্তধনের খোঁজ দেবে? নইলে একটা সামান্য ক্যাসেটের জন্য এত হইচই হাঙ্গামা!
ওদের টাটা সুমো বাগুইআটির জমজমাট মোড় পেরিয়ে গেল৷ জায়গাটা অটোরিকশো, সাইকেল, সাইকেল রিকশোয় একেবারে থিকথিক করছে৷ তার ওপরে অফিসটাইমের মানুষজন, গাড়ি, বাস আর মিনিবাসের ভিড়৷