দ্বিতীয়বার ‘সিনেমা’ শেষ হওয়ার পর মিস্টার প্রধান সুশান্তর কাছ থেকে সিডিটা চেয়ে নিলেন৷ তারপর ওকে ছুটি দিয়ে দিলেন৷ সুশান্ত ঘর থেকে বেরিয়ে গেল৷
কিছুক্ষণ সবাই চুপচাপ৷
চঞ্চল সরকার চোয়ালে হাতে বোলাচ্ছেন৷ সুন্দরলাল প্রধান সোফার হাতলে আঙুলের টোকা মারছেন৷ অনুজ দাশগুপ্ত মাথা ঝুঁকিয়ে বসে আছেন৷ আর প্রিয়াংকা তিনজন পুলিশকর্তার দিকে প্রত্যাশা নিয়ে দেখছে৷
বেশ কয়েক মিনিট পরে মিস্টার প্রধান বললেন, ‘ছবির এই দুটো লোকের ফটোগ্রাফ প্রিন্ট করে আমাদের ডকুমেন্টেশান সেলকে দিতে হবে…যদি কোনও ক্লু পাওয়া যায়৷ আর হেস্টিংস থানা থেকে এই মার্ডারের ফাইলটা আনাতে হবে৷ তারপর আমাদের টোটাল ইনভেস্টিগেশানে ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে৷ মনে হচ্ছে, একটা বড়সড় ক্রিমিনাল নেটওয়ার্ক এর সঙ্গে জড়িয়ে আছে৷’
‘আমারও তাই ধারণা—’ চঞ্চল সরকার বললেন৷
মিস্টার প্রধানকে লক্ষ করে অনুজ দাশগুপ্ত বললেন, ‘স্যার, আমাদের কী করতে হবে বলবেন৷ আপনি যেমন-যেমন ইনস্ট্রাকশন দেবেন আমরা ঠিক সেইভাবেই এগোব…৷’
‘ঠিক আছে৷ সময়মতো সব জানাব৷ এবার আপনি যেতে পারেন৷ প্রিয়াংকা একটু থাকুক৷ ওর সঙ্গে সিডির কনটেন্ট নিয়ে আমার কিছু কথা আছে৷ আপনি যাওয়ার সময় ওর বাবাকে বলুন ওয়েট করতে৷ কথা হয়ে গেলে আমি স্পেশাল প্রোটেকশানের ব্যবস্থা করে ওদের বাড়ি পৌঁছে দেব৷ আপনি কোনও চিন্তা করবেন না৷ ও. কে.? আর বাইরের পাহারাকে একটু বলুন, আমাদের যেন কেউ ডিসটার্ব না করে…৷’
‘ও. কে., স্যার—’ বলে প্রিয়াংকার দিকে একপলক তাকিয়ে অনুজ ঘর থেকে বেরিয়ে গেলেন৷
মিস্টার প্রধান এবার সোফা ছেড়ে উঠে দাঁড়ালেন৷ পায়ে-পায়ে চঞ্চল সরকারের কাছাকাছি এগিয়ে এলেন৷ বেশ মোলায়েম গলায় অনুরোধের সুরে বললেন, ‘মিস্টার সরকার, যদি কিছু মনে না করেন…মানে, আমি প্রিয়াংকার সঙ্গে একটু আলাদা কথা বলতে চাই৷ হোপ য়ু উডন্ট মাইন্ড…৷’
চঞ্চল সরকার সঙ্গে-সঙ্গে সোফা ছেড়ে উঠে দাঁড়ালেন৷ আড়চোখে প্রিয়াংকার দিকে একবার দেখলেন৷ তারপর ‘অফ কোর্স আই ডোন্ট মাইন্ড—’ বলে ঘর ছেড়ে বেরিয়ে গেলেন৷
কয়েক সেকেন্ড ওঁর চলে যাওয়া দেখলেন প্রধান৷ তারপর আপনমনেই বললেন, ‘বাঘের ঘরে ঘোগের বাসা৷’ প্রিয়াংকার দিকে তাকালেন : ‘দেখলে তো, ডিপার্টমেন্টের মধ্যেই তোমার মাইক্রো-ক্যাসেটের ডেটা সিডিতে ট্রান্সফার করতে গিয়ে কীরকম হর্টিকালচার শো-র ছবি হয়ে গেল! কাউকে বিশ্বাস করার জো নেই৷ সেইজন্যে আর সবাইকেই চলে যেতে বললাম৷’
ঘরের দরজার কাছে চলে গেলেন৷ ছিটকিনি এঁটে দিলেন ভেতর থেকে৷ তারপর হাতে হাত ঘষে হাত ঝাড়তে-ঝাড়তে চলে এলেন প্রিয়াংকার কাছে৷
‘তুমি খুব ইনটেলিজেন্ট বলে একটা ব্যাকআপ সিডি তৈরি করে রেখেছিলে৷ য়ু আর রিয়েলি স্মার্ট৷ তোমার মতো শার্প মেয়েরা পুলিশ ফোর্সে জয়েন করলে পুলিশ ফোর্স ইনটেলেকচুয়ালি আরও স্ট্রং হত৷ সত্যিই তোমাকে পুরস্কার দেওয়া দরকার—৷’
প্রিয়াংকা ওঁর দিকে তাকিয়ে সামান্য হেসে বলল, ‘থ্যাংক য়ু, স্যার৷’
মিস্টার প্রধান এবার কম্পিউটারের কাছে গেলেন৷ মনিটরের কয়েকটা আইকনে মাউস ক্লিক করে সিডিটা আবার চালালেন৷ প্রিয়াংকার তোলা সিনেমা আবার শুরু হল৷
ছবিটা আবার কেন চালানো হল প্রিয়াংকা ঠিক বুঝতে পারছিল না৷ চোখে প্রশ্ন নিয়ে মিস্টার প্রধানের দিকে তাকাতেই তিনি স্নেহমাখানো হাসি হেসে বললেন, ‘ডোন্ট বি উয়ারিড৷ এই ছবি নিয়ে তোমার সঙ্গে কয়েকটা কথা আছে৷’ পায়ে-পায়ে হেঁটে ছবির পরদার কাছে গিয়ে দাঁড়ালেন : ‘ছবির এই লোকদুটোকে তুমি কি চেনো?’
প্রিয়াংকা এপাশ-ওপাশ মাথা নাড়ল৷ বলল, ‘না—চিনি না৷’
‘তোমাকে কিডন্যাপ করে যেখানে আটকে রেখেছিল সেখানেও এই দুজনের কাউকে দ্যাখোনি?’
‘না, স্যার—দেখিনি৷’
‘যে-লোকটা ভিকটিম—মানে, যাকে মার্ডার করা হল—তাকে কি তুমি চেনো?’
আবার মাথা নাড়ল প্রিয়াংকা : ‘না—চিনি না৷’
‘তা হলে তোমার কাছ থেকে তো বাড়তি কোনও হেলপ আমরা পাব বলে মনে হয় না৷’ মিস্টার প্রধানের কপালে দুশ্চিন্তার ভাঁজ পড়ল৷
প্রিয়াংকা খুব দ্রুত ভাবছিল, কীভাবে ও পুলিশকে হেলপ করতে পারে৷ ও কয়েক সেকেন্ড চুপ করে থাকার পর বলে উঠল, ‘স্যার, এই সিডি থেকে আমি এই তিনজন লোকের এনলার্জড ফটোগ্রাফ প্রিন্ট করে দিতে পারি৷ সেগুলো আপনারা খবরের কাগজে, টিভিতে, ইন্টারনেটে সারকুলেট করতে পারেন৷ তখন কেউ যদি এদের চিনতে পারে তখন তার কাছ থেকে আরও ইনফরমেশান পাওয়া যেতে পারে…৷’
‘গুড আইডিয়া…৷’ মিস্টার প্রধানের কপালের ভাঁজগুলো নরম হল কিন্তু পুরোপুরি মিলিয়ে গেল না৷
‘…তারপর এই ভিডিয়োর সাউন্ড ট্র্যাকটা রেস্টোর করা যেতে পারে৷ তা হলে কথাগুলোর স্পষ্ট রেকর্ডিং পাওয়া যাবে৷ তখন সেগুলোর ফ্রিকোয়েন্সি অ্যানালিসিস করে…মানে, স্যার, টেকনোলজির হেলপ নিয়ে উই ক্যান ডু আ লট৷ এই ক্রিমিনালগুলো ভাবতেও পারবে না আমরা কতদূর যেতে পারি৷’ উৎসাহ আর উদ্দীপনায় একনিশ্বাসে কথাগুলো বলে গেল প্রিয়াংকা৷
নাঃ, এই মেয়ে সহজে থামবার নয়৷ সুন্দরলাল প্রধান ভাবলেন৷
পরদায় ছবি শেষ হয়ে গিয়েছিল৷ প্রধান ধীরে-ধীরে পা ফেলে প্রিয়াংকার কাছে এলেন৷ আচমকা ওর পাশে বসে পড়লেন৷ বললেন, ‘রিল্যাক্স, গার্ল৷ এবারে বলো তো, সেদিন ভোরবেলা তুমি কী দেখেছ, কী শুনেছ৷ মার্ডারটা ঠিক কীভাবে হল? মোট ক’জন লোক ছিল? তুমি কীভাবে ব্যাপারটা দেখে ফেললে? একেবারে গোড়া থেকে সব ডিটেইলসে বলো…৷’