‘ইয়েস, স্যার—৷’
‘আমার কিডন্যাপিং সেকশানের এ. সি. সাহেব—মানে, চঞ্চল সরকার—উনি ওই ক্যাসেটটা দেখার জন্যে একেবারে উতলা হয়ে পড়েছেন৷ তা ছাড়া আমারও ইন্টারেস্ট আছে৷ আপনি মেয়েটাকে নিয়ে—আর ওই ক্যাসেটটা নিয়ে—হেডকোয়ার্টারে চলে আসুন, কেমন?’
অনুজ ইতস্তত করতে লাগলেন৷
ও-প্রান্ত থেকে অধৈর্য গলা শোনা গেল, ‘কী হল?’
কয়েক সেকেন্ড অপেক্ষা করার পর অনুজ বললেন, ‘ক্যাসেটটার খোঁজ এখনও আমরাই জানি না, স্যার৷ প্রিয়াংকাকে অনেকবার জিগ্যেস করেছি৷ কিন্তু ও খুব সেনসিবল মেয়ে৷ ও বলছে, ক্যাসেটটাই ওর বেঁচে থাকার লাইসেন্স৷ টপমোস্ট লেভেল ছাড়া ওই ক্যাসেট ও জমা দেবে না…ও খুব কশাস…৷’
‘দ্যাটস গুড৷ সত্যিই খুব সেনসিবল মেয়ে৷ কিডন্যাপারদের ডেন থেকে যেভাবে ও টেলিফোনে বাইরের ওই ছেলেটার সঙ্গে কনট্যাক্ট করেছে…কী যেন নাম? মিমো…রিয়েলি, ভাবা যায় না৷ আপনি প্রিয়াংকাকে আমার মোবাইল নম্বরটা দিয়ে দিন—ও যখন খুশি আমার সঙ্গে কনট্যাক্ট করে নেবে…নাঃ, আপনি বরং ফোনটা একমিনিটের জন্যে মেয়েটিকে দিন…আমি একটু কথা বলি…৷’
অনুজ ‘ইয়েস, স্যার—,’ বলে মোবাইলটা প্রিয়াংকার দিকে এগিয়ে দিলেন৷ ওকে নীচু গলায় বললেন, ‘ডিসি ডিডি ওয়ান৷ তোমার সঙ্গে পারসোনালি কথা বলতে চান…৷’
প্রিয়াংকা ফোন নিয়ে কথা বলল, ‘স্যার, আমি প্রিয়াংকা বলছি৷’
‘কনগ্র্যাটস, ব্রেভ লেডি৷ এ বছরের সেরা সাহসী মেয়ে বলে তোমার নাম আমি গভর্নমেন্টের কাছে রেকমেন্ড করব৷ ওই ক্যাসেটটা তোমার কাছে সেফ জায়গায় রাখা আছে তো?’
‘হ্যাঁ, স্যার৷ জায়গাটা মোর দ্যান সেফ—আমি ছাড়া কেউ খুঁজে পাবে না৷’
‘গুড৷ তা হলে ক্যাসেটটা নিয়ে আমরা কখন বসছি? তুমি কি ঘণ্টাদুয়েকের মধ্যে লালবাজারে আসতে পারবে? আমি গাড়ি পাঠিয়ে দেব৷ আর তোমার সবরকম প্রোটেকশানের বন্দোবস্ত করব৷ কোনও চিন্তা নেই—৷’
প্রিয়াংকার ভীষণ ক্লান্ত লাগছিল৷ চোখের পাতা ঘুমে যেন জড়িয়ে আসছিল৷ ও আলতো গলায় বলল, ‘স্যার, আজ আমার ভীষণ টায়ার্ড লাগছে৷ তা ছাড়া আমি এখনও বাড়ি যাইনি৷ বাপি বা ভাইয়ের সঙ্গে এখনও দেখা হয়নি৷ যদি…মানে, কাল বা পরশু আপনার সঙ্গে কথা বলতে গেলে কি খুব অসুবিধে হবে?’
‘না, না—ঠিক আছে, ঠিক আছে৷ কোনও অসুবিধে হবে না৷’ ওপাশ থেকে হেসে বললেন ডিটেকটিভ ডিপার্টমেন্টের চিফ, ‘শুধু একটা কথা৷ ক্যাসেটটা কোথায় আছে কাউকে বলবে না৷ ওটা কাউকে দেখাবে না৷ মোটকথা, ওটা নিয়ে কারও সঙ্গে একটি কথাও বলবে না৷ আন্ডারস্টুড?’
‘পারফেক্টলি আন্ডারস্টুড, স্যার৷’ বলল প্রিয়াংকা৷
‘গুড গার্ল৷ আমি এক্ষুনি তোমার টপ প্রায়োরিটি প্রোটেকশানের ব্যবস্থা করছি৷ কোনও চিন্তা কোরো না৷ য়ু উইল বি অ্যাবসোলিউটলি সেফ৷ কেউ তোমাকে ডিসটার্ব করবে না৷’
‘থ্যাংক য়ু, স্যার৷’
‘আর একটা কথা৷ ইন্সপেক্টার দাশগুপ্ত তোমার সঙ্গে আমাদের টপ সিক্রেট মিটিং-এর ব্যাপারটা কো-অর্ডিনেট করবেন৷ তবুও তুমি ওঁর কাছ থেকে আমার মোবাইল নম্বরটা নিয়ে রাখো৷ দরকার মনে করলেই ফোন করবে৷ ও. কে.?’
‘ও. কে., স্যার৷’ প্রিয়াংকার এবার সত্যি-সত্যিই ভীষণ ঘুম পাচ্ছিল৷
ও ফোনটা অনুজ দাশগুপ্তকে ফিরিয়ে দিল৷ দাশগুপ্ত চিফের সঙ্গে আরও কিছুক্ষণ কথা বলার পর ফোন ছাড়লেন৷ মিমোকে লক্ষ করে বললেন, ‘মিমো, থানায় গিয়ে আমরা খাওয়া-দাওয়া করব৷ তা ছাড়া তোমার আর বাবলির সঙ্গেও কিছু পেপারওয়ার্কের কাজ আছে৷ দরকার হলে তোমার মাকে একবার ফোন করে দেব৷’
খাওয়ার কথায় মিমো একটু লজ্জা পেয়ে গেল৷ তবে সত্যিই ওর খিদে পাচ্ছিল৷ পাওয়ারই কথা—কারণ, বেলা প্রায় দুটো বাজে৷
একটু পরেই মানিকতলা থানায় পৌঁছে গেল ওরা৷ সেখানে মহেন্দ্র শর্মা ও আরও দুজন অফিসারকে নিয়ে দাশগুপ্ত ব্যস্ত হয়ে পড়লেন৷ বাবলি, মিমো আর প্রিয়াংকা একপাশে বসে নিজেদের মধ্যে গল্প করতে লাগল৷
বেশ কিছুক্ষণ পর দাশগুপ্ত প্রিয়াংকাকে নিয়ে গাড়িতে উঠলেন৷ সঙ্গে মিমো আর বাবলিকেও তুলে নিলেন৷ বললেন, ওদের বাড়িতে নামিয়ে দিয়ে তারপর প্রিয়াংকাকে বাড়ি পৌঁছে দেবেন৷
প্রিয়াংকা মিমো আর বাবলিকে বলল, ‘এসব ঝামেলা মিটলে তোমরা আমাদের বাড়িতে একদিন আসবে৷ বাপি আর সোনম তোমাদের দেখতে চেয়েছে৷ সেদিন খুব জমিয়ে গল্প করা যাবে—’
মিমো বাড়ির কাছে নেমে যাওয়ার আগে প্রিয়াংকা মিমোর মোবাইল নম্বরটা নিল৷ প্রিয়াংকার মোবাইল ফোন এতক্ষণে নিশ্চয়ই পুলিশের জিম্মায়৷ বাপিকে বলে আগে ও একটা নতুন ফোন কিনবে৷
বাড়িতে ওকে নামিয়ে দেওয়ার সময় অনুজ দাশগুপ্ত যথেষ্ট ভরসা দিলেও প্রিয়াংকার মাথা থেকে ভয়টা কিছুতেই যাচ্ছিল না৷ আর একইসঙ্গে মাইক্রো-ক্যাসেটের দুশ্চিন্তাটা মনের ভেতরে পাগলের মতো ঘুরপাক খাচ্ছিল৷
৷৷সাত৷৷
ঘরে হালকাভাবে এসি চলছিল৷
ঘরের একদিকের দেওয়ালের কাছে মেটাল স্ট্যান্ডে দাঁড় করানো রয়েছে একটা প্রোজেকশান স্ক্রিন৷ তার কাছাকাছি একটা টেবিলে বসানো একটা ল্যাপটপ কম্পিউটার আর এলসিডি প্রোজেক্টার৷ টেবিলের পাশে চেয়ার নিয়ে বসে আছে একজন অপারেটর৷ তার ভঙ্গি দেখেই বোঝা যাচ্ছে নির্দেশ পেলেই সে কাজ শুরু করবে৷ এলসিডি প্রোজেক্টার চালু হয়ে যাবে৷ সামনের পরদায় ফুটে উঠবে ছবি৷