দাশগুপ্ত আপনমনেই বিড়বিড় করলেন, ‘সবুজ রঙের তিনতলা ফ্ল্যাটবাড়ি, তার সঙ্গে মোবাইল ফোনের টাওয়ার…৷’ তারপর মহেন্দ্রকে লক্ষ করে বললেন, ‘শর্মা, চলো দোকান-টোকানগুলোয় জিগ্যেস করি—কোথায় আছে ওই ফ্ল্যাটবাড়ি আর ওই টাওয়ার৷ যদি কপাল ভালো থাকে তা হলে এর মধ্যেই হয়তো ভোডাফোন কোম্পানি থেকে টাওয়ারের ইনফরমেশান এসে পড়বে…৷’
মিমো বলল, ‘স্যার, আমি আর বাবলিও একটু এদিক-ওদিক ঘুরেফিরে খোঁজ করি?’
অনুজ ঠোঁট কামড়ে কয়েক লহমা কী ভাবলেন৷ তারপর বললেন, ‘বি কেয়ারফুল—বেশি দূরে যেয়ো না৷ কোনও প্রবলেম হলেই গাড়িতে ফিরে আসবে৷ তা ছাড়া যে-কোনও সময় আমরা টাওয়ারটার খোঁজ পেয়ে যেতে পারি…৷’
মিমো ঘাড় কাত করে বলল, ঠিক আছে৷ তারপর ও আর বাবলি টাওয়ার আর ফ্ল্যাটবাড়ির সন্ধান করতে রওনা হয়ে গেল৷
রাস্তার দুপাশে ছোট-বড় দোকান৷ একটা বড়সড় মিষ্টির দোকানে গিয়ে বাবলি টাওয়ারটার কথা জিগ্যেস করল৷ দোকানদার এমনভাবে ওর মুখের দিকে তাকাল যে, মিমোর মনে হল ভদ্রলোক মঙ্গলগ্রহের কিম্ভূতকমাকার এক প্রাণী দেখছে৷ তাই ওরা আর কথা না বাড়িয়ে তাড়াতাড়ি সরে এল৷
এরপর একটা স্টেশনারি দোকান আর একটা ওষুধের দোকানে খোঁজ করে হতাশ হওয়ার পর ওরা একটা মোবাইল ফোনের দোকান খুঁজে পেল৷
মিমো বলল, ‘এই দোকানটায় নিশ্চয়ই ঠিক খবর পাওয়া যাবে৷’
দোকানটায় ঢুকে সবে জিগ্যেস করতে যাবে, এমন সময় মিমোর মোবাইল বেজে উঠল৷
প্রিয়াংকার ফোন ভেবে ও চটপট বোতাম টিপে ফোন কানে চেপে ‘হ্যালো’ বলল৷
ফোনটা করেছেন অনুজ দাশগুপ্ত৷
‘মিমো, এক্ষুনি গাড়িতে চলে এসো৷ আমরা টাওয়ারটার খোঁজ পেয়ে গেছি৷ কুইক৷’
সঙ্গে-সঙ্গে মিমো আর বাবলি পিছনে ফেলে আসা রাস্তা ধরে ছুটতে শুরু করল৷
যখন ওরা টাটা সুমোর প্রায় কাছাকাছি এসে গেছে তখনই প্রিয়াংকার ফোন এল৷
‘হ্যালো…হ্যালো…প্রিয়াংকা বলছি…৷’
‘বলুন—৷’
টেলিফোনে এমন কড়কড় শব্দ হচ্ছিল যে, মিমোর ভয় হল লাইনটা এক্ষুনি কেটে না যায়৷
‘আপনারা কোথায়?’
‘আপনার আস্তানার খুব কাছাকাছি৷’
‘ওরা আমাকে শিফট করার কথা ভাবছে৷ শুনলাম, এক্ষুনি গাড়ি আসবে৷ তা ছাড়া মাসির সঙ্গে টাকাপয়সার হিসেব মেটাচ্ছে৷ আপনারা তাড়াতাড়ি করুন৷’
‘মনে হয় আর দশ-পনেরো মিনিটের মধ্যে আমরা আপনার কাছে পৌঁছে যাব৷’
‘হাতে আর বেশি সময় নেই৷ ওই ‘‘বস’’ লোকটা আবার ফোন করেছিল৷ ক্যাসেটটা ওর চাই-ই চাই৷ আমার ভীষণ ভয় করছে৷ আর কতক্ষণ এভাবে টেনশান নিয়ে থাকতে পারব জানি না৷ প্লিজ, তাড়াতাড়ি করুন…৷’
‘হ্যাঁ, হ্যাঁ—করছি৷ কিন্তু ওই ক্যাসেটটা কোথায় লুকিয়ে রেখেছেন? কী আছে ওই ক্যাসেটে?’ কৌতূহল চাপতে না পেরে জানতে চাইল মিমো৷
‘সরি৷ আপনি আমার অনেক উপকার করছেন কিন্তু তবুও এ ব্যাপারে কিছু বলতে পারব না৷ ওই ক্যাসেটটায় কী আছে, ওটা কোথায় রেখেছি—এসব কাউকেই বলব না৷ এগুলোই আমার বেঁচে থাকার লাইসেন্স৷ আগে এখান থেকে পুলিশ আমাকে রেসকিউ করুক—আমি স্টেবল লাইফে ফিরে যাই—তারপর টপ লেভেলে ওই ক্যাসেট জমা দেব…৷’
প্রিয়াংকার কথাবার্তায় একটা জেদি ভাব ছিল৷ সেটা বুঝতে পেরে মিমো আর ঘাঁটাল না৷
এমন সময় একটা প্লেনের শব্দ শোনা গেল৷ কাছেই এয়ারপোর্ট থেকে একটা প্লেন আকাশে উড়েছে৷
প্রিয়াংকা বলল, ‘একমিনিট ওয়েট করুন৷ একটা প্লেন উড়ে যাচ্ছে—বড্ড শব্দ হচ্ছে—কোনও কথা শোনা যাবে না…৷’
‘এই তো! প্লেনটা আমার মাথার ওপর দিয়ে যাচ্ছে৷ ওটার পেটে লাল আর সবুজ রঙের পটি আঁকা—৷’
‘আমি ঘরের ভেতরে৷ প্লেনটা দেখতে পাচ্ছি না—শুধু শব্দ শুনতে পাচ্ছি৷ মনে হয় আমরা একই প্লেনের কথা বলছি৷ ওঃ, আপনারা তা হলে এত কাছে এসে গেছেন৷ আমার…৷’
প্রিয়াংকার কথার মাঝখানে লাইনটা কেটে গেল৷
গাড়ির কাছে পৌঁছে মিমো আর বাবলি রীতিমতো হাঁপাতে লাগল৷ অনুজ আর মহেন্দ্র গাড়ির বাইরে দাঁড়িয়ে ওদের জন্যই অপেক্ষা করছিলেন৷ ওরা আসামাত্র সবাই চটপট গাড়িতে উঠে পড়লেন৷ ধনিয়া এক ঝটকায় গাড়িটা ছুটিয়ে দিল৷
দাশগুপ্ত মোবাইলে কথা বলতে শুরু করলেন৷ ওঁর কথা শুনে বোঝা গেল আরও দুটো গাড়ি আর্মড অফিসারদের নিয়ে একই টার্গেট লক্ষ্য করে এগোচ্ছে৷ সবমিলিয়ে আর কয়েক মিনিটের মামলা৷
মহেন্দ্র শর্মা কোমর থেকে রিভলভারটা বের করে একবার আগেপিছে খটাখট করে দেখে নিলেন অস্ত্রটা রেডি আছে কি না৷ ফোনে কথা বলতে-বলতেই মহেন্দ্রকে লক্ষ করলেন দাশগুপ্ত৷ সামান্য হেসে চোখের ইশারায় যেন বলতে চাইলেন, ‘এই তো চাই! অলওয়েজ বি প্রিপেয়ারড বিফোর অ্যাকশান৷’
একটু পরেই মিমোরা পৌঁছে গেল তিনতলা একটা ফ্ল্যাটবাড়ির সামনে৷ বাড়িটার রং হালকা সবুজ৷ আর ছাদে মোবাইলের টাওয়ার৷
দাশগুপ্ত মিমোকে বললেন, ‘মিমো, তুমি বলেছিলে, ইস্টের দিকে তাকিয়ে প্রিয়াংকা এই ফ্ল্যাটবাড়িটার পেছনদিক দেখতে পেয়েছিল—তাই না?’
‘হ্যাঁ স্যার—৷’
‘তা হলে আমাদের এখন পেছনদিকে যেতে হবে৷’ বলেই ধনিয়ার দিকে তাকালেন দাশগুপ্ত : ‘ধনিয়া, কুইক৷’
গাড়ি আবার স্টার্ট দিল৷ সুযোগ পেয়ে মিমো দাশগুপ্তকে প্রিয়াংকার শেষ ফোনটার কথা বলল৷ বলল, ‘ওরা প্রিয়াংকাকে শিফট করবে৷ এখুনি গাড়ি আসবে৷’
এদিক-ওদিক গাড়িটা ঘুরিয়ে ধনিয়া এক জায়গায় গাড়িটা এনে দাঁড় করাল৷ দরজা খুলে একলাফে নেমে পড়লেন অনুজ৷ মোবাইল ফোনে আবার ব্যস্তভাবে কথা বলতে শুরু করলেন৷ বোঝা যাচ্ছিল, তিনি রাস্তার ডিরেকশান দিচ্ছেন৷