ব্যর্থ চেষ্টা করেছিলাম…
কেন? জিজ্ঞেস করল সোহানা।
কি কেন? অবাক হলো রানা।
কে কোথায় খুন হলো, সেজন্যে পুলিস বিভাগ রয়েছে–তুমি কেন তা! করতে গেলে? কোথাও কোন খুন-খারাবি হলেই তোমার পিছু ধাওয়া করতে হবে?
যাকে খুন করা হলো, সে যদি আমার ঘনিষ্ঠ কেউ হয়? ধরো, তুমি বা মারিয়া.. কথাটা শেষ করল না রানা একসঙ্গে ওদের দুজনকে চমকে উঠতে দেখে।
ঘনিষ্ঠ নোক মানে? ছানাবড়া হয়ে গেল মারিয়ার চোখজোড়া। আপনি চেনেন লোকটাকে? যে মারা গেল
আমারই লোক। জরুরী খবর নিয়ে দেখা করতে এসেছিল, আমার সঙ্গে। নিজের মোক বলেই বলছি না, অত্যন্ত সাবধানী এবং বুদ্ধিমান লোক ছিল ও। আমি ছাড়া আর কারও পক্ষেই জানা সম্ভব ছিল না যে ও আসছে শিফলে আমার সাথে দেখা করতে–এতই সাবধানে মেসেজ পাঠিয়েছিল ও তিন হাত ঘুরিয়ে। কিন্তু পৌঁছে কি দেখলাম? আরও কেউ জেনে গিয়েছে এই গোপন সাক্ষাতের কথা, কথা শুরু করবার আগেই শেষ করে দিয়েছে ইসমাইলকে। এখন সবচেয়ে বড় প্রশ্ন যেটা তা হচ্ছে আমার একজন সহকর্মী। সম্পর্কে ওরা এতটা ওয়াকিফহাল; বাকি দুজন সম্পর্কে ঠিক কতটা ওদের জানা আছে বুঝে নেয়া দরকার প্রথমে। আর ইউ শিওর ইউ আর ইন ক্লিয়ার?
ব্যাপারটার গুরুত্ব টের পেল ওরা। পরস্পরের মুখের দিকে চাইল সোহানা ও মারিয়া। তারপর নিচু গলায় বলল মারিয়া, তা কি করে বলব? আমরা যতদূর জানি এখন পর্যন্ত ঠিকই আছি আমরা। কেউ আমাদের চিনে রেখেছে কিনা সেটা তো সেই বলতে পারবে। আপনার কি মনে হয়। আমাদেরও প্রাণের আশঙ্কা…
আছে। সেইজন্যেই অত আপত্তি করেছিলাম আমি তোমাদেরকে সাথে আনতে।
বিপদের সম্ভাবনা বেশ সহজ ভাবেই গ্রহণ করল ওরা দুজন। রীতিমত ট্রেনিং পাওয়া এজেন্ট ওরা, একটুতেই ঘাবড়ে যাওয়ার মত ঠুনকো নয়। রানার চোখে চোখ রাখল সোহানা। তোমার পেছনে নিশ্চয়ই লেগে গেছে। ওরা? রানাকে মাথা ঝাঁকাতে দেখে বলল, কোথায় কোন হোটেলে উঠেছ। জানা আছে ওদের?
নিশ্চয়ই। তা নইলে হোটেলের অর্ধেক স্টাফ আমার ওপর নজর রাখতে যাবে কেন? সাইড ডোরেও ওয়াচার বসানো হয়েছে, আমি বেরোতেই গুটগুট। করে হাঁটতে শুরু করল পেছন পেছন।
খসিয়ে দিয়েছেন ওকে? জিজ্ঞেস করল মারিয়া।
হয় অযোগ্য ছিল, নয়তো প্রোতভাকেট করবার চেষ্টা করছে। আক্রমণের লক্ষণ দেখতে পাচ্ছি না। ওদের ছোট ছোট চালে আমার কি রি অ্যাকশন হয় তাই লক্ষ করছে ওরা দূরে বসে।
কিছু দেখতে পেয়েছে? জানতে চাইল সোহানা।
পাবে, উঠে দাঁড়াল রানা। যতটা আঘাত করবে, ঠিক ততটাই প্রত্যাঘাত পাবে ওরা আমার কাছ থেকে। চলি এখন। দেখা হবে কাল।
চট করে রানার হাত ধরল সোহানা।
সাবধানে থেকো, রানা। তুমি একা, ওরা অনেক।
তবু ভয় পাচ্ছে ওরা আমাকে। হাসল রানা। ভেব না, কোন কোন সময় আমি একাই একশো হয়ে যেতে পারি। তোমরা এখন সাবধানে থাকতে পারলে হয়।
.
০৩.
টিপ টিপ বৃষ্টির মধ্যে ফিরে এল রানা হোটেলে। সোজা ভেতরে না ঢুকে সাইড স্ট্রীট ধরে চলে এল ফায়ার এসকেপের সিঁড়ির কাছে। ঠিক এক মিনিট পর ছাতের দরজাটা সামান্য একটু ফাঁক করে উঁকি দিল। কেউ নেই ছাতে। প্যারাপেট ডিঙিয়ে শুয়ে পড়ল সে কার্নিসের ওপর। মাথা বাড়িয়ে দেখবার চেষ্টা করল ওর কামরার পেছনের ব্যালকনিটা।
প্রথমটায় কিছুই দেখতে পেল না রানা, কিন্তু গন্ধ পেল ধোয়ার। সিগারেটের নয়–গাঁজার। প্যারাপেটের গায়ে পা বাধিয়ে যতদূর সম্ভব। সামনের দিকে ঝুঁকে প্রায় পড়ি পড়ি অবস্থায় দেখতে পেল সে রেলিঙের ওপর। একজোড়া জুতোর চকচকে মাথা। পরমুহূর্তে দেখা গেল একটা জ্বলন্ত সিগারেটের টুকরো বাকা হয়ে নেমে গেল নিচের দিকে। ব্যালকনির গায়ে পা তুলে দিয়ে আয়েশ করে অপেক্ষা করছে কেউ ওর জন্যে।
নিঃশব্দে উঠে দাঁড়াল রানা, পা টিপে চলে এল ফায়ার এসকেপের কাছে, কয়েক ধাপ নেমে আস্তে করে খুলল সাততলার দরজাটা। করিডরে কাউকে না দেখে সোজা এসে দাঁড়াল সে নিজের স্যুইটের দরজার সামনে। কান পেতে কোন আওয়াজ পাওয়া গেল না ভিতর থেকে। কোমরে জড়ানো ক্যানভাস বেল্ট থেকে নকল চাবির গোছা বের করে নম্বর মিলিয়ে নিয়ে আলগোছে খুলল দরজার তালা। চট করে ভিতরে ঢুকেই বন্ধ করে দিল সে দরজাটা আবার, কেননা হাওয়া লেগে সিগারেটের ধোয়া দুলে উঠলে লোকটার সতর্ক হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
কিন্তু সতর্কতার মুডে নেই লোকটা। কয়েক পা এগিয়ে দেখতে পেল রানা একটা চেয়ারে বসে চোখ বুজে সুখটান দিচ্ছে সে মারিজুয়ানা পোরা সিগারেটে। পা দুটো নাচাচ্ছে ব্যালকনির রেলিঙের ওপর তুলে দিয়ে। সেই ফ্লোর ওয়েটার। ডানহাতটা কোলের ওপর, হাতে পিস্তল।
নিশ্চয়ই ঝাঁ ঝাঁ করছে ওর মাথার ভিতরটা কারণ, রানার উপস্থিতি কিছুই টের পেল না সে। চেয়ারের পেছনে এসে দাঁড়াল রানা, লোকটার কানের কাছে পিস্তল ধরে বামহাতটা আলগোছে রাখল ওর কাঁধের ওপর। চমকে উঠে চট করে ঘাড় ফিরিয়ে পেছন দিকে চাইবার চেষ্টা করল লোকটা, পিস্তলের মাথা দিয়ে ডান চোখে গুতো খেয়ে বিদঘুটে এক শব্দ বেরিয়ে এল ওর মুখ থেকে। ব্যথা পেয়ে দুই হাতই চোখের কাছে চলে এল ওর নিজেরই। অজান্তে। কোলের ওপর থেকে টপ করে পিস্তলটা তুলে নিয়ে পকেটে ফেলল। রানা। পরমুহূর্তে ওর থুতনির নিচটা গলা ধাক্কার ভঙ্গিতে ধরে জোরে এক. ঠেলা দিল পেছন দিকে। চেয়ার, উল্টে ডিগবাজি খেয়ে চিৎ হয়ে পড়ে গেল। ফ্লোর ওয়েটার মেঝের ওপর, জোরে ঠুকে গেল মাথার পেছনটা। দশ সেকেন্ড ঝিম ধরে পড়ে রইল লোকটা মেঝেতে, দিশে হারিয়ে ফেলেছে ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে। তারপর উঠে বসল ধড়মড়িয়ে। রানাকে চিনতে পেরেই হিংস্র জানোয়ারের মত ছোট্ট একটা গর্জন ছাড়ল লোকটা, ঠোঁট দুটো সরে গিয়ে। নিকোটিনের দাগ লাগা দাঁত বেরিয়ে পড়েছে, দুই চোখের তীব্র দৃষ্টিতে ঘৃণার। বিষ। চাপা গলায় গোটাকয়েক ডাচ গালি দিয়ে টলতে টলতে উঠে দাঁড়াল। ভাঙা ইংরেজিতে বলল, কি চাও তুমি? মারপিট? শক্তি পরীক্ষা?