এত কিছু কি করে জানলেন আপনি? আমার নাম, আমার ভাইয়ের পরিচয়…।
কি করে জানলাম. বলে মনে হয় তোমার? ভুরু নাচাল রানা। ভুলে যাচ্ছ আমাদের একজন কমোন বয়ফ্রেন্ড ছিল।
বয়ফ্রেন্ড? আমার কোন বয়ফ্রেন্ড নেই।
আছে বলিনি, বলেছি ছিল। অতীতের বয়ফ্রেন্ড বা মরহুম বয়ফ্রেন্ড-যা। খুশি বলতে পারো।
আমেদ? অস্ফুট কণ্ঠে জিজ্ঞেস করল মেয়েটা।
ঠিক ধরেছ। ইসমাইল আহমেদ। তোমার পাল্লায় পড়ে ছেলেটা মারা গেছে ঠিকই, কিন্তু মরার আগে কিছু তথ্যও দিয়ে গেছে আমাকে। মিথ্যের আশ্রয় নিল রানা। এমন কি তোমার একটা ছবিও রয়েছে আমার কাছে।
ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেল বিট্রিক্স। কিন্তু তাহলে এয়ারপোর্টে
এয়ারপোর্টে তোমাকে চিনতে পারিনি কেন? ঠিকই চিনেছিলাম। কিন্তু যদি সেটা প্রকাশ করতাম, হত্যার সঙ্গে জড়িত থাকার দায়ে হাজতে বাস করতে হত তোমাকে এতক্ষণে। যাই হোক, কিছু একটা জেনে ফেলেছিল বলেই মরতে হয়েছে ইসমাইলকে। আমি জানতে চাই কি সেটা।
দুঃখিত। এ ব্যাপারে আমি কোন সাহায্য করতে পারব না আপনাকে।
পারবে না, নাকি করবে না?
নিরুত্তর রইল বিট্রিক্স।
তিনমাসে যথেষ্ট ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল তোমাদের মধ্যে—তাই না?
চোখ নিচু রেখে মাথা ঝাঁকাল বিট্রিক্স।
ইসমাইল কেন, কি কাজে এখানে এসেছিল বলেছে তোমাকে?
মাথা নাড়ল মেয়েটা।
কিন্তু তুমি আঁচ করতে পেরেছিলে, তাই না?
এবার মাথা ঝাঁকাল।
এবং কি আঁচ করেছিলে সেটা জানিয়েছিলে কাউকে?
ঝট করে চাইল বিট্রিক্স রানার মুখের দিকে। না। কাউকে কিছুই বলিনি আমি। সত্যি।
তোমাকে দিয়ে ওকে কিছু বলিয়েছিল কেউ, তাহলে?
জানি না। হতে পারে। জেনেশুনে কোন ক্ষতি করিনি আমি আমেদের।
আমার সম্পর্কে কোন কথা বলেছিল ইসমাইল তোমাকে?
না।
কিন্তু তোমার ভাল করেই জানা আছে আমি কে?
চুপ করে রইল বিট্রিক্স। জল ভরে উঠল দুচোখে। চেয়ে রইল রানার। দিকে, কিন্তু জবাব দিল না।
তুমি ভাল করেই জানো যে ইন্টারপোল থেকে এসেছি আমি নারকোটিকসের ব্যাপারে। চুপ করে রইল মেয়েটা। কাঁধ ধরে ঝাঁকাল ওকে রানা। উত্তর দাও। জানা নেই তোমার?
নীরবে মাথা ঝাঁকাল মেয়েটা।
ইসমাইল যদি তোমাকে বলে না থাকে, কে বলেছে?
আবার চুপ। দুচোখ থেকে পানি ঝরতে শুরু করল। ফুঁপিয়ে উঠে মাথাটা একপাশে ফিরিয়ে নাড়ল মেয়েটা।
প্লীজ। কিছুই বলতে পারব না আমি। আপনি এখন যান। আপনার পায়ে ধরি, একা থাকতে দিন আমাকে।
অসহায় ভঙ্গিতে দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল রানা। বুঝল এদিক থেকে আর এগোনো যাবে না। কাজেই দিক পরিবর্তন করল সে। খোলা দরজা দিয়ে ঘুমন্ত হেনরীর কঙ্কালটার দিকে চেয়ে বলল, হেনরী সংসারের কোন খরচ, দেয়? কিছু উপার্জন-টুপার্জন করে?
ও উপার্জন করবে কি করে? কাজ করবার ক্ষমতাই নেই ওর। এক বছর ধরে সম্পূর্ণ বেকার। কিন্তু এসবের মধ্যে আবার ওর কথা কেন? এসবের– সঙ্গে ওর কি সম্পর্ক?
ওর সঙ্গেই জড়ানো আছে সবকিছু। বিছানার পাশে গিয়ে দাঁড়াল রানা। স্থিরদৃষ্টিতে পরীক্ষা করল ওর মুখটা। একটা চোখের পাতা তুলে দেখল কিছুক্ষণ, তারপর ওটা নামিয়ে দিয়ে ফিরল বিট্রিক্সের দিকে। এই রকম জ্ঞান। হারালে কি করো?
কি আর করব? কিছুই করার নেই।
মাথা ঝাঁকাল রানা। আস্তিন গুটিয়ে দেখল ক্ষতবিক্ষত কঙ্কালসার হাতটা। কত হাজার বার ছিদ্র করা হয়েছে হাতটা তার ইয়ত্তা নেই। ইরিনের হাতটা এর তুলনায় কিছুই না। সোজা হয়ে দাঁড়াল রানা। ঠিক বলেছ। সীমার বাইরে চলে গেছে একেবারে। কারও কিছু করবার নেই এখন। ওর সেরে ওঠার সব পথ বন্ধ–ব্যাপারটা জানা আছে তোমার?
জানি। একটা রুমাল বের করে চোখ মুছল বিট্রিক্স। জানি, মারা যাচ্ছে। ও কিছুদিনের মধ্যেই।
যারা হত্যা করছে ওকে, তাদের বিরুদ্ধে একটা আঙুল তোলারও সাহস নেই তোমার। ঠিক আছে, এজন্যে দোষ দিচ্ছি না আমি তোমাকে। কয়েকটা সহজ প্রশ্নের উত্তর দাও দেখি? কতদিন নাগাদ এই অবস্থা চলছে হেনরীর?
তিন বছর।
কতদিন যাবৎ কাজ করছ তুমি ব্যালিনোভায়?
তিন বছর।
কাজটা ভাল লাগে তোমার?
ভাল! লক্ষ্মীপেঁচার মত মুখ করে হাসল বিট্রিক্স। ওই রকম একটা জঘন্য নাইট-ক্লাবে কাজ করা যে কি, কল্পনাও করতে পারবেন না আপনি। বাপের বয়সী সব বুড়োরা লোভাতুর
ইসমাইল আহমেদ তো বাপের বয়সী ছিল না?
না। ওর কথা বলছি না…
দেখো, বিট্রিক্স। মারা গেছে ইসমাইল। কেন মারা গেছে জানো? মারা গেছে নাইট-ক্লাবের এক হোস্টেসকে বিশ্বাস করতে গিয়েছিল বলে, সে নিজেই ব্ল্যাকমেইলের শিকার।
আমাকে কেউ ব্ল্যাকমেইল করছে না।
তাই নাকি? তাহলে কারা চাপ সৃষ্টি করছে তোমার ওপর? কাদের ভয়ে চুপ করে থাকছ উত্তর দিচ্ছ না আমার প্রশ্নের? কাদের ভয়ে যে কাজ এত অপছন্দ তোমার সেই কাজ করতে বাধ্য হচ্ছ? কিসের জোরে চাপ সৃষ্টি করতে পারছে ওরা? হেনরী নয়? কি করেছে ও, যেজন্যে বাধা পড়ে গেছ তুমি? কারা বাধ্য করছে তোমাকে আমার ওপর নজর রাখতে? একটি প্রশ্নেরও জবাব দিতে পারল না বিট্রিক্স। কাজেই আবার ইসমাইলের প্রসঙ্গে ফিরে গেল ও।, ইসমাইল আহমেদের মৃত্যুর সঙ্গে তোমার কি সম্পর্ক? কিভাবে ও মারা গেছে আমি জানি; দেখেছি নিজের চোখেই। কিন্তু কারা। মারল ওকে? কেন
আমি জানতাম না ওকে মেরে ফেলবে! ফুঁপিয়ে উঠে দুই হাতে মুখ ঢাকল বিট্রিক্স। সত্যিই জানতাম না মেরে ফেলা হবে ওকে।