ঠিকানা বের করে নিতে অসুবিধে হবে না। নামটা পরিচিত বলে মনে হচ্ছে। মাথা ঝাঁকাল ডি গোন্ড। কিন্তু ওদের বিরুদ্ধে কোনদিন কোনকিছু শুনেছি বলে মনে পড়ছে না। আইনের চোখে টিকবে, এমন কোন চার্জ আছে। আপনার ওদের বিরুদ্ধে?
না। তা নেই।
তাহলে বিশেষ করে ওদের সম্পর্কেই আপনার এই কৌতূহল কেন?
তা বলতে পারব না। কসম। আমি আসলে জানতে চাই, কেন এই কৌতূহল জাগছে আমার মধ্যে। আজ সন্ধের পর গিয়েছিলাম আমি ওদের ওখানে…
বন্ধ দেখে ফিরে এসেছেন।
না ফিরে আসিনি। আবার হাসল রানা। একগোছ চাবি বের করে কর্নেলের নাকের সামনে দোলাল।
বিপদে ফেলবেন দেখছি! খেপে গেল কর্নেল। আপনি জানেন, এ ধরনের যন্ত্রপাতি সঙ্গে রাখা আইনের চোখে গুরুতর অপরাধ?
চট করে পকেটে ফেলল রানা স্কেলিটন চাবির গোছা। কোন ধরনের যন্ত্রপাতি, কর্নেল?
না, কিছু না। দৃষ্টিবিভ্রম। চোখ দুটো ছোট হয়ে এল কর্নেলের।
সিগারেট ধরাল রানা। বুক ভরে ধোঁয়া টেনে ছাতের দিকে ছাড়ল। তারপর অনেকটা আপন মনে বলল, ওদের অফিসঘরের স্টীলের দরজায় টাইম লকের ব্যবস্থা কেন করা হলো জানবার কৌতূহল বোধ করছি। আমার কৌতূহল ওদের কাছে বাইবেলের স্টক কেন। ক্যানাবিসের গন্ধ আর পুতুলের আড়ালে সজাগ দুটো চোখের কথা চেপে গেল সে। কিন্তু আমার আসল কৌতূহল ওদের সাপ্লায়ারদের সম্পর্কে। ওদের লিস্ট অভ সাপ্লায়ার হাতে পেতে চাই আমি।
ঠিক আছে। সার্চ ওয়ারেন্ট একটা যে কোন প্রিটেক্সটে তৈরি করে নেয়া যাবে। আমি নিজে যাব আপনার সঙ্গে। কাল সকালে। কিন্তু আপনার এই কৌতূহল সম্পর্কে আরও কিছু জানাতে হবে কাল। এবার গাড়ির প্রসঙ্গে আসা যাক। ইন্সপেক্টর মাগেনথেলার চমৎকার এক সাজেশন দিয়েছে। স্পেশাল এঞ্জিন লাগানো একটা পুলিস-কার আছে আমাদের, হ্যাঁন্ডকাফ থেকে শুরু করে টু-ওয়ে রেডিও পর্যন্ত সবই রয়েছে ওটাতে–কিন্তু বাইরে থেকে দেখতে সাধারণ একটা ট্যাক্সি। দুই মিনিটের মধ্যেই পৌঁছে যাবে ওটা। তবে ট্যাক্সি চালানোর ব্যাপারে রাস্তায় কিছু সমস্যা দেখা দিতে পারে।
হেসে ফেলল রানা। বুঝলাম। বাড়তি কিছু রোজগার করি, সেটা। আপনার সহ্য হচ্ছে না। যাই হোক, আমার জন্যে আর কোন খবর আছে?
আসছে। দুই মিনিট অপেক্ষা করতে হবে। আপনার ওই গাড়িতে করেই আসছে সংবাদ রেকর্ড অফিস থেকে।
ঠিক দুই মিনিট পর একটা ফাইল দিয়ে গেল একজন সেপাই কর্নেলের ডেস্কের ওপর। মুহূর্তে ওটার মধ্যে ডুবে গেল ভ্যান ডি গোল্ড, কয়েকটা পাতা উল্টে চোখ তুলল।
বিট্রিক্স শেরম্যান। ডাচ ফাদার, গ্রীসিয়ান মাদার। ওর বাপ ছিল এথেন্সের ভাইস কনসাল–মারা গেছে। মা কোথায় কি অবস্থায় আছে, জীবিত কি মৃত জানা যায় না। বয়স চব্বিশ। ওর সপক্ষে বা বিপক্ষে কোন কিছুই নেই। আমাদের হাতে। ফাইলের পাতায় চোখ রেখে গড়গড় করে বলে চলল কর্নেল। তরে ব্যাকগ্রাউন্ড বেশ কিছুটা আবছা বলে মনে হচ্ছে আমার। ব্যালিনোভা নাইট ক্লাবে কাজ করে হোস্টেসের, থাকে কাছেই একটা অ্যাপার্টমেন্ট হাউজে। আত্মীয় বলতে একজনই আছে ওর হেনরী, ছোটভাই, বয়স বিশ। এই দেখুন, এতক্ষণে একটু জমে উঠছে বলে মনে হচ্ছে–ভাইটি ছমাসের জন্যে জেলের ভাত খেয়েছেন।
কি ব্যাপারে? ড্রাগস?
অ্যাসল্ট এবং অ্যাটেম্পটেড রবারী। অ্যামেচারিশ প্রচেষ্টা। ভুল করে বেচারী এক সাদা পোশাক পরা গোয়েন্দা পলিসকে পাকড়েছিল শিকার হিসেবে। স্বীকার যায়নি, কিন্তু পুলিসের সন্দেই–ছোকরা অ্যাডিক্ট। ড্রাগস। কেনার পয়সার জন্যে ডাকাতি করবার চেষ্টা করেছিল। ব্যস। এই হচ্ছে। বিট্রিক্স শেরম্যান সংক্রান্ত যাবতীয় তথ্য। কয়েকটা পাতা উল্টে আরেক পৃষ্ঠায় স্থির হলো কর্নেলের দৃষ্টি। আর ওই যে নম্বর দিয়েছিলেন অর্থ উদ্ধারের জন্যে…একটা নম্বরের মানে বের করা গেছে। MOO144 হচ্ছে বেলজিয়ান কোস্টার মেরিনোর কল-সাইন। আগামীকাল এসে ভিড়বে আমাদের ঘাটে। বেশ কিছু কাজের লোক আছে আমার, কি বলেন?
হ্যাঁ। কখন পৌঁছবে মেরিনো?
দুপুরে। সার্চ করতে হবে ওটাকে?
সার্চ করে কিছু পাবেন না। কাজেই দয়া করে ওটার কাছেও যাবেন। আমার কাজের অসুবিধে হবে তাহলে কর্নেলকে ফাইল বন্ধ করে দিতে দেখে জিজ্ঞেস করল রানা, বাকি দুটো নম্বর থেকে কিছু বের করা গেল?
উহু। কিছুই বোঝা যায়নি… আবার ফাইলটা খুলল কর্নেল। কত যেন ছিল নম্বরগুলো? নাইন ওয়ান ডাবল জিরো টু জিরো, আরেকটা টু সেভেন। নাইন সেভেন। আচ্ছা! ভুরু কুঁচকে কয়েক সেকেন্ড চুপ করে রইল ডি গোল্ড। শেষেরটা সেভেন নাইন সেভেনের ডবল না তো? দেখুন তো, সেভেন নাইন সেভেন সেভেন নাইন সেভেন-নম্বরটা পরিচিত মনে হয়?
মাথা নাড়ল রানা।
ড্রয়ার টেনে একটা টেলিফোন ডাইরেকটরি বের করল কর্নেল, কিন্তু আবার ওটা রেখে দিয়ে টেলিফোনের রিসিভার কানে তুলে নিল। একটা টেলিফোন নাম্বার দিচ্ছি, লিখে নাও। সেভেন নাইন, ডাব- সেভেন নাইন। সেভেন। টেলিফোনটা কার নামে আছে বের করে জানাও আমাকে। এক্ষুণি।
ঠিক বিশ সেকেন্ড পর বেজে উঠল টেলিফোন। রিসিভারটা কানে তুলে চুপচাপ তিন সেকেন্ড শুনে নামিয়ে রাখল কর্নেল। রানার দিকে চাইল হাসিমুখে।
বালিনোভা নাইট-ক্লাব।
সত্যিই এফিশিয়েনসি আছে আপনাদের, স্বীকার করতেই হয়, বলল রানা মুখে। মনে মনে বলল তবু কি করে বছরের পর বছর কাজ চালিয়ে। যাচ্ছে ভয়ঙ্কর এক গুপ্ত দল আপনাদের নাকের ডগায় বসে? কেন আমাকে আসতে হচ্ছে সুদূর বাংলাদেশ থেকে?